পরনিন্দা কিভাবে পরিহার করা যায়!!
লিখেছেন লিখেছেন তুনীরের শেষ তীর ১৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:৫০:৪১ বিকাল
প্রায়ই আমরা যখন কোন আড্ডায় থাকি তাতে গীবত বা পরনিন্দাকে প্রশ্রয় দেই অর্থাৎ কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে অহেতুক মন্তব্য করি। গীবত এড়ানো প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে কেননা গীবত ছাড়া আড্ডার মজাই যে থাকেনা!যদিও তার ফলাফল আমাদেরকে ভীত করে তোলে কিন্তু দুঃখের বিষয় ইহা একটি কমন ঘটনা :(
হে ঈমানদারগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ। দোষ অন্বেষণ করো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু।(আল হুজুরাত: ১২)
এই আয়াতের মাধ্যমে পরনিন্দা করা যে কত জঘণ্য পাপ তা বুঝতে পারি।আমাদের মধ্যে কেউ কি মানব মাংস খেতে পছন্দ করবে?
আল্লাহ গীবত করাকে মানুষের মাংশ খাওয়ার সমান বলেছেন।।
কেন?পরনিন্দা ব্যক্তিজীবনে,সামাজিক জীবনে,পারিবারিক জীবনে অকল্যাণ বয়ে আনে।কখনো তা অপরাধ ঘটায়।এজন্যই আল্লাহ তার বান্দাদের পরনিন্দা পরিহার করতে বলেছেন একটি উদাহরণ দিয়ে যা মানুষের জীবনে গীবতের খারাপ প্রভাব বোঝার ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-"তোমরা কি জান গীবত (পরনিন্দা) কি?" সাহাবারা বললেন-"আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসূলই ভাল জানেন"। হুজুর সা. বললেন-"তোমার (মুসলমান) ভাইয়ের এমন কোন আলোচনা করা যা সে অপছন্দ করে।" কোন কোন সাহাবা বললেন-"আমার ভাই সম্পর্কে যা বলি তা যদি তার মধ্যে থাকে?" (আর সে তা অপছন্দ করে তবুও কি তা গীবত বা পরনিন্দা হবে?) রাসূল সা. বললেন-"তুমি যা বললে তা তার মধ্যে (বাস্তবে) থাকলেই গীবত হবে। আর যা তুমি বললে তা তার মাঝে না থাকলে তবে যেন তুমি তাকে অপবাদ দিলে। (যা গীবতের থেকে মারাত্মক গোনাহ)" (সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-৬৭৫৮)
গীবত কেন করে?
গীবত কিভাবে এড়ানো যায় তা আলোচনা করার পূর্বে আলোচনা করা প্রয়োজন কেন মানুষ গীবত করে।প্রধানত ৫টি কমন কারণ দেখা যায় গীবতের পেছনেঃ
১. পরশ্রীকাতরতা-:
এটাই প্রধান কারণ যার ফলে মানুষ অন্যের অনুপস্থিতিতে তার নিন্দা করে।পরশ্রীকাতরতা হল পরের অর্জন এবং খ্যাতি দেখলে হিংসা করা।তাই যারা অন্যের প্রতি হিংসুক হয় আপনাআপনিই তা দোষ খুঁজতে এবং তা প্রচার করে বেড়াতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে।
২. ক্ষোভ-:
কেউ আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করলে আমরা ক্ষমা করার এবং ভুলে যাওয়ার পরিবর্তে তাকে নিয়ে যতটা সম্ভব কটু কথা বলি। তখন মনে হয় যেন অন্তরটা প্রশান্ত হয়েছে,অথচ আমরা বুঝতে ব্যর্থ হই যে আমাদের হৃদয়টা অন্ধকার মেঘে ছেয়ে গেছে :(
৩. বিনোদন-:
কিছু ব্যক্তি অন্যের অনুপস্থিতিতে তার দুর্বলতা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে অন্যকে হাসতে পছন্দ করে।তারা এতে মজা পায় কারণ তারা যত বেশি বলে মানুষ তত হাসে।
৪.আনন্দ-:
কিছু ব্যক্তি এমনিতেই অন্যের দোষ ত্রুটি বলে বেড়াতে পছন্দ করে।যাদের প্রচুর সময় থাকে অকাজের তারাই এসব করে।তা খুব-ই বিপজ্জনক কেননা তারা নিজেরাও জানেনা তারা কি বলে এবং তা তাদের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে!!
৫. স্বার্থপরতা-:
যেসব লোক যারা সর্বদা নিজ স্বার্থের কথাই চিন্তা করে তাদের সবসময় আশেপাশের মানুষগুলোকে পঁচানোর যথেষ্ঠ সময় থাকে। তারা অন্যের অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে এই আশায় মানুষের কাছে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বাজে ইম্প্রেশন সৃষ্টি করতে পারবে।যা খুব-ই বড় অন্যায়.........।
গীবত থেকে বাঁচার উপায়?
১. আল্লাহর ভয়-:
যখন আপনি কারো সাথে যোগাযোগ করবেন,মনে রাখবেন আ্ল্লাহ আপনাকে দেখছেন।তিনি কোরআনে গীবতের ব্যাপারে যা বলেছেন তা স্মরণ করুন।এমনকি কেউ যদি গীবত শুরু করে, আপনি অনাগ্রহ প্রকাশ করবেন এই ভয়ে আপনার অপ্রয়োজনীয় অংশগ্রহণের জন্য আ্ল্লাহ আপনার প্রতি রাগান্বিত হবেন।এটাও মনে রাখবেন যে গীবত আপনাকে কেবল আল্লাহর দয়া থেকে কেবল সরিয়েই দিবেনা বরং তা শয়তানের ফাঁদেও ফেলবে।
২. মৃত্যুভয়-:
কিহবে তখন যদি মরণ এসে যায় যখন আমরা গভীরভাবে গীবত গাইতে মগ্ন থাকি??কেউ কি চায় এমন পরিসমাপ্তি?? :( তাই যখনি কোন আড্ডায় থাকিনা আমাদের তা মনে রাখা উচিত।ইনশা'আল্লাহ তা আমাদেরকে গীবত থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে।
৩. বাহানা করা-:
আমরা প্রায়ই বলি,'বাহানা করোনা'।যখনআপনি কোন গীবতের আড্ডায় এসে পড়েন, সিম্পলী একটা বাহানা তৈরী করুন;কেননা আপনি ইনডিভিজুয়্যাল কাউকে বলছেননা বরং একটি গ্রুপে আছেন যেখানে conflict হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেশি!!বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই;কেবল বলন 'আমি দুঃখিত।আমা যেতে হবে।'এতে তারা বুঝতে পারবে আপনি এই আলোচনায় আগ্রহী নন এবং শীঘ্রই তারাও বুঝবে তারা কি করছে!!
৪. তাদেরকে বোঝানো-:
যদি ইনডিভিজুয়্যাল কারো সাথে এমন আলাপ হয় তবে বলুন,আপনারএ ব্যাপারে কিছুই করার নেই আর তা অহেতুক কেননা কারো সম্পর্কে কিছু বল্লেও তা তার মধ্যে প্রভাব ফেলবেনা।তাকে বোঝান যে ইহকাল ও পরকালে গীবত কেবল ক্ষতিই বয়ে আনবে।এটাই অন্যকে বোঝানোর উত্তম উপায়; এবং আপনি যদি যথেষ্ট আত্মপ্রত্যয়ী হোন যে আপনি একটি গ্রুপের সামনে গিয়ে স্ট্রংলী বোঝাতে পারবেন, তবে এগিয়ে যান,তাদেরকেও বোঝান।
৫. তার অবস্থানে নিজেকে চিন্তা করো-:
কখনো কখনো গীবত করার সময় আনন্দ লাগতে পারে।তখন ঐ ব্যক্তির অবস্থানে নিজেকে চিন্তা করুন। আপনার কেমন লাগবে এমনভাবে কেউ যদি আপনার গীবত করে?এভাবে চিন্তা করলে কেবল আপনি পরনিন্দা পরিহার করতে পারবেন শুধু তাই নয় বরং তা আপনাকে আরো নম্র ও উদার হতে সাহায্য করবে।
৬. ভাল নিয়ে মন্দের উৎপাটন-:
গীবত থেকে বাচাঁর সর্বোত্তম উপায় এবং ইহা ফলপ্রসূও বটে যখন আপনি কোন গ্রুপে থাকো।যার পরনিন্দা করা হচ্ছে তার ভালোগুণ সবার সামনে উপস্থাপন করুন।হতে পারে তা তাদের মধ্যে অপরাধবোধ জন্মাবে।আর যদি আপনি নিজেই গীবতে তৃপ্তিবোধ করেন তবে তাদের ভালোদিকগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। তাতে আপনার খারাপ চিন্তাগুলো দূর হবে।
৭.নীরবতা-:
'Silence is golden', এই কথাটির সাথে আমরা খুব পরিচিত।কিন্তু কখনো ভেবেছ কেন?কারণ তা আমাদেরকে খারাপ বলা থেকে বিরত রাখে এবং অন্তরকে বিশুদ্ধ রাখার সর্বোত্তম উপায়।
রাসূল(সাঃ) বলেছেন ভালো কথা বলতে অন্যথায় নীরব থাকতে, কিন্তু নীরবতাই কি যথেষ্ঠ?কিছু ব্যক্তি ভালো মন্দ সবকিছুতেই মাথা ঘামাতে চায়। তারা ভাবে এইটা পাপ নয়।কিন্তু মনে রেখ, এমনকি সামান্য ইশারাও যা গীবতের উদ্দেশ্যে করা হয় তাও একই ক্যাটেগরীতে অন্তর্ভুক্ত হবে।
৮. কেউই পারফেক্ট নয়-:
পরনিন্দা করার আগে নিশ্চিত হও যে তুমি ১০০% পারফেক্ট। যদি না হও,তবে একটি কলম নাও,যেখানেই থাক ব্যাপার না,তোমার ১০টা ডিফেক্টস এর লিস্ট বানাও।এখন লিস্টটা দেখ এবং কিভাবে এসব থেকে পরিশুদ্ধ হবে চিন্তা কর।
৯. সহানুভূতিশীল হোন-:
কেউ ভুল করেছে শুনলে তার জন্য , তার জন্য দুঃখবোধ করুন।আল্লাহর কাছে তার হিদায়াত প্রার্থনা করুন এবং আল্লাহকে ধন্যবাদ জানান এই জন্য যে তিনি আপনকে এমন ভুল থেকে দূরে রেখেছেন।
১০. যাবেননা-:
যেসব স্থানে বেশি গীবত করা হয় তা জেনে থাকলে সেখানে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।যতটা সম্ভব পারবেন এড়িয়ে চলুন কেননা পরিবেশ আ্মাদের জীবনে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
ব্যতিক্রমঃ
হ্যা, কিছুক্ষেত্রে অনুমতি আছে।
উপদেশ দিতে-:
যদি আপনি কোন স্কলারের কাছে কারো ব্যাপারে ইনফরমেশন জানতে চান যাতে আপনি ঐ ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে পারেন তবে তার নাম মেনশন না করে তার ব্যাপারে বলতে পারেন।
দাবী আদায়-:
যদি কোন ব্যক্তি আপনার প্রতি অবিচার করে তবে আপনি আপনার দাবী আদায়ের লক্ষ্যে কারো কাছে তার ব্যাপারে অভিযোগ করতে পারেন।
সাহায্য করতে-: যদি আপনি কাউকে কোন পাপ করতে দেখেন তবে আপনি তা অন্যকে বলতে পারেন এই ইন্টেননশন নিয়ে সে ঐ ব্যক্তিকে পাপ থেকে বিরত হতে সাহায্য করবে।
সনাক্ত করতে-:
সনাক্ত করার জন্য কাউকে তার ব্যাপারে বলতে পারেন।
সতর্ক করতে-:
যারা সমাজে ক্ষতি করে তাদের ব্যাপারে সতর্ক করা যেমন চোর।
ব্লগটা অনুবাদ করার সময় আমার নিজেরও যে কতটা ভয় লেগেছে জানিনা।
কি বলব?? এক গ্রুপের ছাত্রীরা/ছাত্ররা অন্য গ্রুপের ছাত্রী/ছাত্রকে মোটেও সহ্য করতে পারেনা...।। একটা দোষ পেলেই হল :(
ভাল্লাগেনা...।পরনিন্দা এখন স্মার্টনেসের একটা অংশ >:o
সংগৃহীত এবং অনূদিত
বিষয়: বিবিধ
২৩০১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ অন্যায়কারীর অন্যায়ে চুপ করে থাকা , তার বিরুদ্ধে জনমত না গড়ে তোলা কি গীবত থেকে বেঁচে থাকা ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন