জর্জ ও তার পরিবারের ঈদ-উল-আযহা উদযাপন
লিখেছেন লিখেছেন তুনীরের শেষ তীর ০৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৩২:৪৬ রাত
জর্জ পঞ্চাশোর্ধ এক আমেরিকান।সে ওয়াশিংটনে তার স্ত্রী পুত্র এবং কন্যার সাথে থাকে।
যিলহজ্ব আসলে জর্জ এবং তার পরিবার যিলহজ্বের সংবাদ ফলো করতে শুরু করে।সে টিভি দেখে, তার স্ত্রী রেডিও শোনে,তার পুত্র ইন্টারনেটে সার্ফ করে…প্রত্যেকে নিউজ পাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে। যখন যিলহজ্ব শুরু হয়,তখন তারা ঈদ-উল-আযহার জন্য প্রস্তুতি নেয় যা হয় আরাফার পরেরদিন ১০ যিলহজ্ব । পরেরদিন পরিবারটি বাইরে গেল ভেড়া কিনতে।তারা খুব যত্ন সহকারে একটি ভেড়া পছন্দ করল ইসলামিক রীতি অনুযায়ী ঈদের প্রথম দিন যবেহ করার জন্য।তারা ভেড়াটিকে তাদের সাথে গাড়ীতে বহন করল, এবং ফেরার পথে ছোট্ট মেয়েটা ঈদের আগমনে আনন্দ প্রকাশ করে বলল,”বাবা আমি ঈদ কত ভালোবাসি!আমি নতুন কাপড়পড়ব,পুতুলের সাথে খেলব,বন্ধুদের সাথে পার্কে যাব!ইশস,প্রতিদিন যদি ঈদ হত!”
যখন তারা ঘরে ফিরল, জর্জের স্ত্রী তাকে বলল,”আমি পড়েছি যে বলা হয়েছে আমাদের কোরবানীকে তিনভাগে ভাগ করতে হবে।এক-তৃতীয়াংশ গরীব ও অভাবীকে দিব,এক-তৃতীয়াংশ আমাদের প্রতিবেশী এলিযাবেথ,ডেভিড ও মার্ককে দিব,আর এক-তৃতীয়াংশ আমরা খাব এবং আগত সপ্তাহের জন্য জমিয়ে রাখব।” ঈদের দিন তারা কনফিউজ্ড হয়ে গেলো কেবলা কোনদিকে তানিয়ে। মক্কার দিকটাকে সঠিক দিক ভেবে নিলো এবং সেটাই যথার্থ ছিল।জর্জ ছুরি ধরলো ভেড়াটিকে কিবলার দিকে রাখলো এবং জবাইকরল। তার স্ত্রী গোশতগুলো তিনভাগে ভাগ করল। হঠাত জর্জের কিছু মনে পরল এবং সে চেঁচিয়ে উঠল,”আমরা গীর্জায় যেতে দেরী করে ফেলেছি,আজ রবিবার।আর আমরা সানডেমাস মিস করব!’ জরজ কখনোই চার্চে যেতে ভুলেনা রবিবারে,বরং সে সবাইকে নিয়েই যায়……।।
বক্তা জর্জ এবং তার পরিবারের গল্প এখানেই শেষ করলেন। শ্রোতাদের মধ্যে একজন বলে উঠল,”আপনি আমাদের দ্বিধায় ফেলে দিলেন।জর্জ মুসলিম নাকি খৃষ্টান?”
বক্তা আহমেদ বললেন,”জর্জ এবং তার পরিবার খৃষ্টান।তারা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করেনা,বরং তারা ভাবে তিনি তিনজনের মধ্যে তৃতীয়। তারা মহানবী(সাঃ) যে শেষ এবং চূড়ান্ত নবী তাও বিশ্বাস করেনা।”
শ্রোতাদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হল। ভীর থেকে একটা কন্ঠ বলে উঠল,”মিথ্যা বলবেননা,আহমেদ।কে বিশ্বাস করবে যে জর্জএবং তার পরিবারএসব করে খৃষ্টান হয়েও?” কেন একজন খৃষ্টান ইসলাম ও মুসলিমদের এসব রীতি মেনে চলবে? যিলহজ্ব মাসের খবর রাখা,ভেড়াকেনা,ঈদের দিন জবাই করা,ইত্যাদি।
আহমেদ হাসিমুখে বললেন,আমার প্রিয় ভাইয়েরা,আমার গল্পটা বিশ্বাস না করার কি আছে? কেন তোমরা বিশ্বাস করতে পারছনা এমন খৃষ্টান পরিবার আছে?? আমাদের মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে কি আবদুল্লাহ,মোহাম্মদ,ফাতিমা,খাদিজা নেই যারা খৃষ্টানদের বা ঈহূদীদের উৎসবগুলো পালন করে? আমরা কি দেখিনা মুসলিমরা নিউইয়ার,খৃষ্টমাস,ভ্যালেনটাইন,হ্যালোউইন,ঈস্টার,বার্থডে পালন করছে? তবে এইগল্প আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? কেন আমরা ইহূদীদেরকে আমাদের বা খৃষ্টানদের উৎসব পালন করতে দেখিনা? এর মানে কি এই নয় যে,প্রত্যেকের আলাদা ধর্ম,বিশ্বাস,উৎসব আছে? তাহলে কেন আমরা বিস্মিত হই এই জেনে জর্জএকজন খৃষ্টান হয়েও আমাদের ঈদ উদযাপন করে এবং তার কাজগুলোকে অস্বীকার করি,অথচ একইসময়ে আমরা নিজের কাজে আশ্চর্যান্বিত হইনা? অবশেষে, আহমেদ বললেন,”আমি যুক্তরাষ্ট্রে ১০বছরের অধিক সময় থেকেছি। আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি,আমি কখনো কোন ইহূদী বা খৃষ্টানকে আমাদের ঈদ উদযাপন করতে দেখিনি। কখনও তাদের কাওকে আমাদের উৎসবের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেও শুনিনি।এমনকি যখন আমি তাদেরকে আমার অ্যাপার্টমেন্টে ঈদুল ফিতরের দাওয়াত দিলাম তখন তারা আসলোনা যখন জানলো তা ধর্মীয় উৎসব। পাশ্চাত্যে আমি এই ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি,কিন্তু যখন আমি আমার মুসলিম দেশে ফিরলাম,আমি মুসলিমদের দেখলাম তাদের হলিডে উদযাপন করতে।”
সংগৃহীত এবং অনূদিত
বিষয়: বিবিধ
১৫৮২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
". . . আমি আমার মুসলিম দেশে ফিরলাম,আমি মুসলিমদের দেখলাম তাদের হলিডে উদযাপন করতে।" - বর্তমান কালে দুঃখজনক অপ্রিয় কিন্তু সত্য . . . !!
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
লেখাটা সংগৃহীত ও অনূদিত
মন্তব্য করতে লগইন করুন