যে কারণে র্যাব বাতিলের বিরোধিতা করি
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মাদ নেছার উদ্দিন ০৬ নভেম্বর, ২০১৪, ০৩:৫৪:২৫ দুপুর
আমি শুরুটা একটা গল্প দিয়েই করি। মারুফ স্থানীয় সরকার দলীয় প্রভাবশালী এক নেতা। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে। তাই থানার ওসি গেছেন তদন্ত করতে। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আসামীকে গ্রেপ্তার করতে গেলেন। আসামীর কাছে গিয়ে যখন তাকে ধর্ষণের অপরাধে গ্রেপ্তার করবে বললো, তখন সে ওসির
গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিলো। ওসিকে নানাভাবে অপমান করলো। নেতা যেহেতু সরকারদলীয় তাই অপমান সহ্য করে গ্রেপ্তার
না করে চলে যেতে হলো। গ্রেপ্তার করলে তার চাকরি নাও থাকতে পারে। ওসি থানায় গিয়ে এসপিকে জানালেন ঘটনা। এসপি বললেন সরকার দলীয় লোকের বিরুদ্ধে মামলা নিতে গেলে কেন?
যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন চুপ থাক। নয়তো তোমার চাকরি তো যাবেই সাথে আমার চাকরি নিয়েও টানাটানি হবে। ঘটনা চেপে গেলেন পুলিশ। প্রভাবশালী নেতা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে অপকর্ম।
আবারও ধর্ষণ করলেন তিনি, এইবার অভিযোগ পুলিশের কাছে যায়নি। অভিযোগ গেছে র্যাবের কাছে। র্যাব আসলো, সরকারদলীয় একই নেতাকে গ্রেপ্তার করে নিয়েও গেলো। কিছু বলার সাহসও পেলো না। আচ্ছা ব্যাক্তি একটাই, উভয় অবস্থায় একই ব্যাক্তি সরকারদলীয়। তাহলে র্যাবের সাথে এত সহজ
সরল আচরণ আর পুলিশের সাথে কঠিন আচরণের কারণ কি? কারণ আর কিছুই নয়, কারল হচ্ছে র্যাবের সাথে বাড়াবাড়ি করলেও র্যাব তাকে ছেড়ে দিবে না। র্যাবের কাছে স্থানীয় পাতি নেতাদের কোন ভ্যালু নেই। র্যাবকে যদি রাজনৈতিকভাবে অপব্যাবহার করতেই হয়, তবে অবশ্যই সেটা মন্ত্রনালয় থেকে করতে হবে। অন্যদিকে পুলিশের রাজনৈতিক অপব্যাবহার সরকারদলীয় ওয়ার্ড সভাপতিও করতে পারে। র্যাবের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অভিযোগ করা হচ্ছে র্যাব নাকি গুম করছে, এই ধরনের অভিযোগ অতীতে ছিলো ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে ডিবি পুলিশের গুমের বিষয়টি প্রমানিত হলেও র্যাবের গুমের বিষয়টি অপ্রমানিত। তবে র্যাবের বিরুদ্ধে সব চাইতে বড় যে অভিযোগ সেটি হচ্ছে নারায়নগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা। ৭ খুনের
ঘটনায় র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে র্যাবই যে এই ঘটনা ঘটেছে তার কোন প্রমান কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি। কিন্তু, আমাদের দেশের মানুষ বিশ্বাস করে। কেন বিশ্বাস
করে? কারণ, মিডিয়া। মিডিয়া হচ্ছে এমন এক জগৎ যেটার মধ্য দিয়ে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানানো ১ দিনের কাজ। নারায়নগঞ্জের ৭ খুনে র্যাব ছাড়াও আরো যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুলিশের এসপি এবং নারায়নগঞ্জ
জেলা প্রশাসক। ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর পরই এসপি এবং জেলা প্রশাসককে বদলি করে দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মিডিয়ার কোন প্রচার ছিলো না। মিডিয়ার সকল প্রচার ছিলো যত দোষ নন্দ ঘোষের মত র্যাবের বিরুদ্ধে। যার ফলে এখন সবাই বিশ্বাস
করছে র্যাবই এই খুনগুলো করেছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে র্যাবের সাফল্যই সবচাইতে বেশী। কিছুদিন
আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করেছিলো র্যাব, তারও কিছুদিন আগে খাগড়াছড়িতে অপহৃত সেনাসদস্যকে উদ্ধার করেছিলো র্যাব। এইরকম আরো কত অপহৃত মানুষকে র্যাব উদ্ধার করছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
সব খবর তো আর মিডিয়ায় আসে না। একটি কথা বলেই শেষ করবো, বাতিল করা যত সহজ তৈরী করা ততটাই কঠিন। বাংলাদেশ থেকে যদি সন্ত্রাসকে নির্মুল করতে হয় তবে র্যাবকে টিকিয়ে রাখতেই হবে। তবে হ্যা, র্যাবের রাজনৈতিক অপব্যাবহার বন্ধ করা আবশ্যক।
মোহাম্মাদ নেছার উদ্দিন, সভাপতি, বাংলাদেশ
জনতা ফোরাম।
বিষয়: রাজনীতি
১২৮৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন