এ+ ছাড়া জীবন মূল্যহীন

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মাদ নেছার উদ্দিন ২১ মে, ২০১৪, ০৬:০৫:৪৬ সন্ধ্যা

এইবার এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে মাসুদ। পরিক্ষায় এ+ পাওয়ার স্বপ্নয় ছিলো মাসুদের। কিন্তু, আশানুরুপ রেজাল্ট মাসুদের হয়নি। পরিক্ষায় রেজাল্ট আসলো এ-। এমন রেজাল্টে এমনিতেই মন খারাপ। তার উপর কাঁটা গায়ে নুনের ছিটার মতই চলছে মা-বাবার বকুনি। বার বার বলছে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে। এমন ছেলের আমাদের দরকার নেই। মাসুদ চলে গেছে চাদের উপরে। চাদের উপরে একেবারে উত্তর-পূর্ব কোণে গিয়ে বসলো মাসুদ। সেখানে বসেই অনেক্ষন ধরে নিজে নিজে কান্না করছে। আর ভাবছে, এ+ ই কি সব। এ+ ছাড়া কি জীবন চলে না।। আচ্ছা পাশের বাড়ির মাহমুদ এসএসসিতেও এ+ পেয়েছে, এইচএসসিতেও এ+ পেয়েছে। তারপর আর টাকার অভাবে পড়তে পারেনি। কেউ এগিয়েও আসেনি তার পড়ালেখায় সাহায্য করতে। অভাবের তাড়নায় বন্ধ হয়ে গেছে তার পড়ালেখা। পড়ালেখা বন্ধ হলেও কোন চাকরীও জুটেনি তার কপালে। এখন সে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। আচ্ছা রাসেল এসএসসি, এইচএসসিতে এ+ পেয়েছে। অনেক কষ্টে অনার্সও করছে। কিন্তু, শেষ পরিণতি বেকারত্বই। তাহলে এই এ+ এর মুল্য কি? অনেক কিছুই ভাবে মাসুদ। তার ভাবনার শেষ নেই। মাসুদ এখনো ভাবছে, মাসুদ ভেবেই চলছে। মাসুদ এখন ভাবছে, আচ্ছা আমি যদি না থাকি তাহলে তো কোন ক্ষতি হবে না। মা-বাবা তো সেই কখন থেকেই বলছে আমার মত ছেলের কোন দরকার নেই। মাসুদ সিদ্ধান্ত নিলো বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু, কোথায় যাবে। এমন কেউ নেই যার কাছে। আর টা ছাড়া নিজ এলাকার বাইরে ওর কিছুই চেনা জানা নেই। পরক্ষনে সিদ্ধান্ত পাল্টায় মাসুদ। নাহ, বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না। তাহলে কি করা যায়? ভাবতেই থাকে মাসুদ। হঠাৎ মাসুদের মাথায় কিছু ভাবনা খেলে যায়। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে মৃদু হাসি। এই হাসিই তার জীবনের শেষ হাসি। কারন, কয়েক মুহূর্ত পরেই সে নিজের জীবনের অবসান ঘটাতে যাচ্ছে। এই পৃথিবী ছেড়ে চিরতরে চলে যাবে বলে মনটা খারাপ হয়ে যায় মাসুদের। কিন্তু, কিছুই করার নাই। এ+ ছাড়া মানুষের জীবন মূল্যহীন। তাই এমন জীবন রেখেই বা কি হবে। আর এমনও তো নয় যে, আমি না থাকলে কারো কোন ক্ষতি হবে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে মাসুদ। এই সিদ্ধান্ত আর পরিবর্তন করতে পারছে না সে। হঠাৎ করে বাসার পেছনে কিছু একটা পড়ার শব্দ শুনতে ফেলো সবাই। কিন্তু, কি পড়লো কেউই বুঝতে পারলো না। বাসার জানালা দিয়ে তাকিএ দেখতে চাইলে মাসুদের বোন মাহবুবা। কিন্তু, ঝোপের কারনে স্পষ্ট দেখতে পারলো না কি পড়ছে। মনে হচ্ছে যেন ওখানে আপন কিছু পড়ে আছে। ঘরে এসে বসে পড়লো মাহবুবা। কিন্তু, মন যেন মানতে চাইছে না। মন বার বারই ঝোপের নিছে চাদ থেকে কি পরেছে সেটা জানতে ব্যাকুল হয়ে আছে। অবশেষে মাহবুবা গিয়ে দেখতে পেলো তারই ভাই মাসুদের নিথর দেহ। যেই দেহ এতদিন চঞ্চল ছিল। সেই দেহ আজ নিথর হয়ে পড়ে আছে।

বিষয়: সাহিত্য

১৪৯০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

224261
২১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৩
নোমান২৯ লিখেছেন :




মন খারাপ হয়ে গেল । Liar Liar Liar
২২ মে ২০১৪ রাত ০৯:২৩
172035
মোহাম্মাদ নেছার উদ্দিন লিখেছেন : পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট কে না করতে চাই? তবুও যখন খারাপ রেজাল্ট করে তখন মা বাবার উচিত তাকে শান্তনা দেয়া। কিন্তু, তারা সেটা না করে বকাবকি করে। যা মানসিকভাবে প্রচুর কষ্ট দেয়। প্রায় শুনি পরিক্ষার রেজাল্ট খারাপের কারনে আত্নহত্যার সংবাদ। এইসব আত্নহত্যা কিন্তু মা বাবার এমন ব্যাবহারে অভিমানের ফলেও ঘটে।
224268
২১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৩
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : পড়ে কষ্ট পেলাম তবে জীবনে কিছু করতে হলে ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি ভালো মানুষ দরকার।
২২ মে ২০১৪ রাত ০৯:২৪
172036
মোহাম্মাদ নেছার উদ্দিন লিখেছেন : দুটোই দরকার। তবে ভালো রেজাল্টের চাইতে বেশী দরকার ভালো মানুষ হওয়া।
224794
২২ মে ২০১৪ রাত ০৯:২২
মোহাম্মাদ নেছার উদ্দিন লিখেছেন : দুটোই দরকার। তবে ভালো রেজাল্টের চাইতে বেশী দরকার ভালো মানুষ হওয়া।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File