সত্য অনুসন্ধানী বিবেকের কাছে প্রশ্ন!!!
লিখেছেন লিখেছেন মনির হোসেন ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:৪৬:৪৪ রাত
আপনারা কি আবদুল কাদের মোল্লাকে চিনেন? যিনি- ক. ১৯৮১ সালে মানারাত স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। খ. যিনি রাশেদ খান মেনন ও মতিয়া চৌধুরীর সাথে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেবার আগে। গ. স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যিনি সদরপুরের আড়াইরশি বাজারে ব্যবসা করতেন। ঘ. ১৯৭২ সালে যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ঙ. যাকে প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরি দেন। চ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উদয়ন স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ছ. আওয়ামীলীগের এমপি রনির ভাষ্যমতে যিনি মুক্তিযোদ্ধার ট্রেনিং নিয়েছিলেন। জ. যিনি ১৯৭৭ সালে রাইফেলস্ স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন। ঝ. যিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাচিত সহসভাপতি ছিলেন দু’বার। ঞ. যার বিরুদ্ধে ২০১০ সাল পর্যন্ত একটি মামলা বা কোনো থানায় একটা জিডিও হয়নি! সেই কাদের মোল্লাহকে বানানো হইছে মস্ত বড় রাজাকার, যিনি একাই চার’শ মানুষ হত্যা করছে! অথচ গত ৪০ বছরে কেউ তার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ করলো না, কোনো কাগজে উঠলো না। লক্ষ্য করুন, ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনায় প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। এর গেজেট হয় ১৯৭১ সালের ২ আগষ্ট। পিস কমিটি গঠন হয় ৮ এপ্রিল ১৯৭১। আল-বদর বাহিনী প্রতিষ্ঠা হয় ২২ এপ্রিল জামালপুরে। আল বদর বাহিনীর সাথে ছাত্র সংঘ জড়িত ছিল। এখন প্রশ্ন হইলো সরকারীভাবে রাজাকার গঠন করার আগেই কি কাদের মোল্লা খুন খারাবি শুরু করে দিয়েছিলো? তবে কি সে পাক বাহিনীতে কর্মরত সোলজার ছিল, নাকি বিহারী? শেখ হাসিনার আইসিসি বলছে, আব্দুল কাদের মোল্লা বিহারীদের সাথে হযরত আলীকে হত্যা করে। তো, এই কাদের কি কাদের মোল্লা, নাকি বিহারী কসাই কাদের? পিস কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনের আগেই ইসলামী ছাত্র সংঘ খুন খারাবিতে লিপ্ত হয় কি করে, এটা কেউ বলতে পারবে? জবাব নাই। যে অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লাকে অবৈধ-কারাদন্ড বাড়িয়ে ফাঁসি রায় দিতে গিয়ে আইন বদলাতে হলো, সেটা হলো, “১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মিরপুরের কালাপানির ৫ লাইনের ২১ নম্বর বাড়িতে ঢুকে কাদের মোল্লার নির্দেশে আওয়ামীগ কর্মী হযরত আলী লস্করের বড় মেয়ে মোমেনা ও মেঝ মেয়ে আমেনাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হয়রত আলীর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করা হয়। ২ বছরের শিশুকে আছাড় দিয়ে মারা হয়।” এই অভিযোগটির একমাত্র সাক্ষী হযরত আলী লস্করের মেয়ে মোমেনা বেগম। তার স্বাক্ষ্যর ভিত্তিতে ফাঁসির রায় দেয়া হয়। ঘটনার সময় মোমেনার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর, অর্থাৎ নাবালক। অথচ হযরত আলীর মেয়ে মোমেনা বেগম ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মিরপুরের জল্লাদখানায় মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের কর্মকর্তা জাহেদা খাতুন তামান্নার কাছে দেয়া সাক্ষাতকারে তার পরিবারের হত্যাকান্ডের ঘটনা বর্ণনা করেন, তাতে কোথাও আব্দুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি। ঐ সাক্ষাৎকারেই মোমেনা জানায়, যখন তার পরিবারের সদস্যদের গণহারে হত্যা করা হয়, তখন তিনি সেখানে ছিলেন না। ঘটনা শোনার পরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন এবং তিন বছর অসুস্থ ছিলেন। সাক্ষাৎকারটি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত আছে। আশ্চর্য্যজনকভাবে, এটি আদালত গ্রহন করেনি। ১৩/৮/২০১১ তারিখে মোমেনার জবানবন্দীতে তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী হিসেবে আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু ১৭/০৭/২০১২ তারিখে এক নারীকে বোরখা পড়িয়ে মোমেনা বেগম পরিচয় দিয়ে ক্যামেরা ট্রায়াল করে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডের সাক্ষ্য নেয়া হয়! তিনি নাকি ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী!! এবং এই সাক্ষ্য দিয়েই কাদের মোল্লাকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়। এই মেমেনা কি সত্যিকারের মেমেনা? নাকি তৈরী করা? বিস্ময়করভাবে রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, ”এখানে (মোমেনাকে) অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই...বরং তাকে স্বাভাবিক প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীই মনে হয়েছে!!!” এখন, এতে কি কারো কোনো সন্দেহ আছে যে, বিহারী কসাই কাদেরের দায়ভার কাদের মোল্লাহর উপর চাপিয়ে তাকে হত্যা করতে চাইছে হাসিনার সরকার? কার অপরাধ কার উপর চাপাচ্ছে??? এটা বিচার হয়েছে? কাদের মোল্লা সত্যিকারের অপরাধী হলে, তার একবার নয় দশ বার ফাঁসি হোক। হত্যাকারীর ফাঁসি হতে দোষ নাই। কিন্তু অন্যের অপরাধে নয়। আরেকটি কথা, আবদুল কাদের মোল্লাহর এই রায় বহাল থাকলে আওয়ামীলীগের এমপি গোলাম মাওলা রনিকে গ্রেফতার করে তাকে কাদের মোল্লাহর সহযোগি হিসাবে চরম দন্ড দিতে হবে। কেন রনি জাতিকে জানান দিলেন যে, কাদের মোল্লা রাজাকার নয়, মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন; কেন তিনি বললেন, যুদ্ধকালে কাদের মোল্লা সদরপুরের আড়াইরশি বাজারে ব্যবসা করতেন। কারন রনির জন্মস্থান হলো ঐ সদরপুর, এবং তিনি এলাকার ঘটনা ভালো করে জানেন। যুগে যুগে দেশের প্রয়োজনে অনেককে জীবন দিতে হয়। সরকারকে বলছি, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যদি আবদুল কাদের মোল্লাহর লাশ খুব প্রয়োজন হয়, তবে তাকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করুন, আজই। কিন্তু কোনো জুডিশিয়াল মার্ডার করবেন না। কারন, বেইনসাফি বিচারে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে। যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, তারা এটা মানেন যে, আল্লাহ ন্যায় বিচার করতে বলেছেন, অবিচার নয়। মহান আল্লাহ হলেন- আহকামুল হাকীমিন, সকল বিচারকের বিচারক। বড় বড় অবিচার হলে দেশে আল্লাহর গজব নেমে আসে। কাদের মোল্লাহর ভাগ্যে যে ভাবে মৃত্যু লেখা আছে, সেটা হবেই। তবে অন্যায়ভাবে তাকে ফাঁসি দিলে মজলুম হিসাবে তিনি শহীদি মৃত্যুই পাবেন। মাটির মানুষ মাটিতেই যাবে। (সংগৃহিত)
বিষয়: বিবিধ
১১৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন