আমার সাহিত্যে ভাবনা(১)
লিখেছেন লিখেছেন এনামুল মামুন ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:৪৩:০৬ রাত
একজন সাহিত্যেক ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেলে কি আসে যায়? কিচ্ছু আসে যায়না! কিন্তু একজন গুনি সাহিত্যেক ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেলে অনেক কিছু আসে যায়। পৃথিবীতেতো অনেক সাহিত্যেক আছে, আমরা কয়জনের নাম জানি। কয়জনের নাম ইতিহাসে লিখা আছে?
একজন সাহিত্যেকের হাতের ছোঁয়ায় একটি সমাজ বদলে দিতে পারে। সংস্কৃতির উন্নয়নে সাহিত্যেকদের ভুমিকা অনিস্বিকার্য।
সাহিত্যের স্বাদ কেমন, শুদু যারা সাহিত্যের অতল গহ্বরে ডুব দিয়েছে তারাই বলতে পারবে। সাহিত্যে কোন অনৈতিক কাজ করতে পারেনা। সাহিত্যে যেমন সাহেত্যেককে বদলে দেয়, তেমনি একটি সমাজকে বদলে দিতে পারে। যেখানে মানবতার জয়, সেখানেই সাহিত্যে। সাহিত্যের চিন্তা যার মাঝে নেই, সে পরিপুর্ন মানুষ হতে পারেনা।
সাহিত্যে কোথায় থেকে আসে? সাহিত্যে চেতনা থেকে আসে, সাহিত্য আসে বিশ্বাস থেকে। সাহিত্য ফুটে উঠে হৃদয় থেকে।
একজন ভালো সাহিত্যেকের ভালো চেতনা থেকে যে লেখা ভেসে আসে তা হচ্ছে সমাজ বদলে দেয়ার মতো সাহিত্য।
একটি কুৎসিত চেতনা থেকে যে লেখা ফুটে আসে সেটিও সমাজ বদলে দেয়ার মতো সাহিত্যে।
দেখেন উভয় প্রকার সাহিত্যেই সমাজ বদলে দিতে পারে!
কিন্তু কোন সাহিত্যে সমাজকে কোন অবস্থানে নিতে পারে তা নিছে আলোচনা করা হয়েছে।
(১)ধরুন, কোন এক সাহিত্যেক চোটি বই লিখলো। বা কোন একটি বিশ্বাসের উপর আগাত হেনে লিখলো। কিন্তু তার লেখার ব্যাবচ্ছেদ বিশ্লেষন আপনি কিভাবে করবেন? সমাজ এবং সংস্কৃতি কোথায় পৌছতে পারে ঐ লেখায়?
একটি,চোটি বই ধারায় একটি শিশু ও যুবসমাজকে ধ্বংশ করবে তা অনিবার্য। একটি জাতিকে ধ্বংশ করতে ঐ লেখায় যথেষ্ট।
(২)ধরুন আপনি কোন একটি বিশ্বাসের উপর আগাত হেনে লিখলেন, যেমন কোন সম্প্রদায়ের উপর আগাত হেনে লিখলেন। কিন্তু তার পরে কি হবে আপনিও জানেন। আপনি এটাও জানেন, যখন আপনি কোন সম্প্রদায়কে কটাক্ষ করে লিখবেন, তখন তারা আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে। তখন রক্তের বন্যা বইবে দেশে। আমরা ২০১৩ সালেল ৫ ই মার্চ থেকে শিক্ষা নিতে পারি। কিছু মানুষেল রক্তের বিনিময়ে, এই জ্ঞানপাপি গুলা বিখ্যাত হয়ে গেছে। ইতিহাসে নাম লিখেছে। তাদের কি সাহিত্যেক বলা যায়? যারা মানুষের রক্তের নিয়ে খেলা করে, তারা কেমন সাহিত্যেক?
আমার প্রশ্ন হলো সমাজ বিজ্ঞানের জনক কার্ল মার্কস কোন সম্প্রদায়কে কটাক্ষ করে লিখেছে?
আমি আগেই বলেছি, যেখানে মানবতার জয়, সেখানেই সাহিত্যে।
আমার কাছে মাঝে মাঝে মনে হয়, মানবতাই সাহিত্যে। একজন মানুষের কাছে যখন সাহিত্যে চিন্তা আসে, যখন সাহিত্যে নিয়ে খেলে, তখন সে কোন প্রকার অনৈতিক কাজ করতে পারেনা।
হুমায়ন আজাদের কথা বলি, হুমায়ন আজাদের আমার বিশ্বাস বইটা পডে আমি নিরবে শুদু হেসেছি, তার জ্ঞানের পরিধি কতটুকু তা আমি বিশ্লেষন করার মতো ভাষা নেই। হুমায়ন আজাদ উক্ত বইতে লিখেছে, প্রতিটা জেলায় জেলায় যেমন ডিসি, পুলিশ,থানা, ইউনিয়ন, চেয়ারম্যান থাকে, তেমনি ভাবে পতিতালয়ও দরকার। উনি এখানে এমন ভাবে এটাকে উপস্থাপন করেছেন, যেন এটা মহাসম্মানি পেশা। তার লেখা অনুসারে যা বুজলাম কেয় যেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন না দেখে, চাইবে সে একটা পতিতা হতে।
তিনি আবার বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদেরকে চুইংগামের মতো চাপাইতে ইচ্ছা করে।
আচ্ছা আপনারাই বলেন, এটা ইভটেজিং এর রসদ নই?
হুমায়ন আজাদ চোটি বইও লিখেছেন। অথছ তিনিও সাহিত্যেক? এই কীটবস্ত্র গুলাতে সাহিত্যে বললে, সম্মান পাবেন এখানে? এরা সমাজিক চিন্তা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
সাহিত্যের সাধক হতে হলে আপনাকে প্রথমে হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের মিলন গটাইতে হবে। হৃদয়ের বদ্ধ দরজা খুলে উম্মচোন করতে হবে। আপনার সুন্দর হৃদের ছোঁয়া সভাইর মনে ছডিয়ে দিতে হবে। সাহিত্যেকদের মাঝে কোন জেদ থাকতে নেই। আপনাকে কেয় গালি দিলে তাকে ক্ষমা করতে শিখুন। উত্তমও অধম কবিতাটি ফলো করতে পারেন। কুকুরে কামড দিলেও আমরা কুকুরকে কামড দিনা। না হয় পল্লি কবি জসিম উদ্দিনের প্রতিদান কবিতার মতো দাডাইতে শিখুন। আর বলুন- আমার এই ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর। সাহিত্যেতো সাহিত্যেই। সাহিত্যেকে সভাই জয় করতে পারেনা। এর জন্য প্রয়োজন চিন্তা, সুন্দর একটা হৃদয়। হৃদের কথা নিঃসার্থে সভাইর মাঝে বিলিয়ে দেয়ার নাম সাহিত্যে। সাহিত্যে মানেই মানবতা। কিন্তু সকল সাহিত্যে মানবতার নই। কিছু সাহিত্যেকদের লেখার নিছে আছে, হাজার মানুষেল রক্তের দাগ। আছে কোটি মানুষের ছোখেল জল।
প্রথমে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কার জন্য লিখতেছেন। আপনার পাঠক কারা। তাদের সার্থেই লিখতে হবে।
প্রত্যেক সাহিত্যেকের উচিত, একজন সুখি স্বামি, বা বাবা হতে না পারেন, কিন্তু কাজি নযরুল, বা মহাকবি আলাউল হয়ে মরতে শিখুন। আপনার লেখায় যেমন মানবতা থাকবে, তেমনি বিদ্রোহি ভাব থাকতে হবে।
সাহিত্যেক হতে হলে প্রথমে আপনাকে দেশকে ভালোবসাতে হবে। মানুষকে ভালাবাসতে হবে। পরিবেশের সাথে তালমিলিয়ে চলার দক্ষতা থাকতে হবে। ভয় পাওয়ার কিছু নাই, পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলেও হবে। তা হয়ে যাবে, যখন নিচের সুত্রগুলা প্রয়োগ করবেন।
সাহিত্যে আসে হৃদয় থেকে, আর এই হৃদয়কে মেরামত করে ভালোবাস। অবশ্যয় আপনাকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। গভির ভালোবাসাই আপনার হৃদয় হয়ে উঠবে চিন্তার সিন্ধু। আর আপনার ঐ চিন্তার মাঝে আপনি চিরদিনের জন্য ডুব দিতে হবে। তখন আপনার হৃদয় একটি শব্দের সাথে একটি শব্দ জোডা লাগাইতে কোন জডতা বোধ করবেনা। অপনার আজান্তে আপনার হৃদয়ই মিলিয়ে নিবে শব্দগুলো।
একজন সাহিত্যেক ইতিহাস থেকে মুছে গেলে কিচ্ছু আসে যায়না। কিন্তু একজন গুনি সাহিত্যেকের এক ফোঁটা থু-থু হারিয়ে গেলে অনেক কিছু আসে যায়। কাজি নজরুলকে দেখেন, তার বিদ্রোহি কবিতার কথা চিন্তা করেন। রবিন্দ্রনাথের কথা ভাবেন, রবিন্দ্রনাথের মানবতার কথা দেখেন। তার কুসংস্কার বিরোধি লেখা দেখেন। জসিম উদ্দিনের নকশি কাঁথার মাঠ দেখেন। তাদের লেখায় কি ছিল? তাদের লেখায় সমাজের যে উন্নতি সাধন তা স্বিকার করতে বাধ্য।
কাজি নজরুল এমন একজন কবি,এই ভাবে বলতে হয়-
কাজি নজরুল তুমি নিয়েছো মোদের বুকে ঠাঁই।
তোমার বানি অগ্নি ঝলসিত,
তোমায় নিয়ে মোরা গর্বিত।
তোমারই চিন্তা গতিশীল মহিমার ভাস্বর।
তোমার অনুভুতি অনরুদ্ধ জীবনের গতিময় প্রকাশ।
রক্তে রঞ্জিত মাঠে তরঙ্গের নৃত্য, তুমিই কাজি নজরুল।
তোমি অবিনাশি, তুমি অবিনশ্বর,তোমার বিনাশ নাই।
একজন কাজি নজরুল ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেলে অনেক কিছু আসে যায়। যার চিন্তা মায়াময়, যদিও মায়া ক্ষনস্থায়ি বিষয়। যার বানী অগ্নি ঝলসিত। তাকে হারালে আমাদের অনেক কিছু আসে যায়।
একজন হুমায়ন আজাদকে হারালে আমাদের কিচ্ছু আসে যায়না।
চলবে.........
বিষয়: সাহিত্য
১২৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন