এ কেমন অভিযান!
লিখেছেন লিখেছেন আল হোছাইন ০৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:২১:৫৮ রাত
সাতকানিয়ার চরতিতে তল্লাশির নামে ৩০টি ঘরে ভাঙচুর, লুট ও নির্যাতন:
সাজানো গোছানো বাড়িঘর, আসবাবপত্র, গাড়ি, টিভি, কম্পিউটার, ফ্রিজ কোনোটিই অত নেই। লণ্ডভণ্ড ঘরের সব আসবাবপত্র। দেখলে মনে হবে কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার চিত্র। যৌথবাহিনীর অভিযানে সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নের দুরদুরি ও তালগাঁও এলাকায় এ ধ্বংসযঞ্জ দেখা যায়। এতে জামায়াত ও বিএনপি সমর্থিত ৩০টি ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। তাণ্ডব চালিয়ে শেষ নয় লুটপাট করেছে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার ও আসবাবপত্রও। তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাননি ছয়-সাত বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধ মহিলাও। ঘটনাটি ঘটেছে ২ জানুয়ারি রাত পৌন ২টার দিকে। গ্রাম দু’টিতে ২ ঘণ্টা অভিযান চালানো হয়। এ সময় ঘুমন্ত মানুষ ভয়ে দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকে। পুরো চরতি ইউনিয়নে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে প্রত্যদর্শীরা জানিয়েছেন।
চরতি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ডা: রেজাউল করিম ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি জানান, যৌথবাহিনীর শতাধিক সদস্য এবং মুখোশ পরা আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের সদস্যরা চরতি ইউনিয়নের দুরদুরি ও তালগাঁও এলাকায় গভীর রাতে তাণ্ডব চালায়। এ সময় গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই ঘুমিয়েছিলেন। মুখোশ পরা সন্ত্রাসীদের কাছে লাঠি, হকি স্টিক, রাম দা দেখা যায়। তারা ৩০টি ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে প্রবেশ করে আসবাবপত্র গুঁড়িয়ে দেয়। ঘরের লোকজনের ওপর আক্রমণ করে। যাওয়ার সময় ব্যাপক লুটপাট চালায়।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, যৌথবাহিনীর সদস্যরা চরতি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় আমির ডা: রেজাউল করিমের বাড়িতে প্রথমে অভিযান চালায়। এ সময় শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও মুখোশধারী সরকারি দলের ক্যাডার পুরো এলাকা ঘিরে রাখে। তার ঘরের দরজা-জানালা, সোফা ও অন্যান্য আসবাবপত্র তচনছ করে। এ সময় রেজাউলকে খুঁজে না পেয়ে তারা ঘরের লোকজনকে নির্যাতন করা হয়। একই সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী মুহাম্মদ শোয়েবের বাড়িতে অভিযান চালায়। তার ঘরে গিয়ে দেখা যায়, ড্রয়িংরুমের সোফাগুলো ভেঙে চুরমার করে ফেলা হয়েছে। ডাইনিং টেবিল ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাঙা খাট, বিছানাপত্র, কম্পিউটার, টেলিভিশন সব কিছুই পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ব্যবসায়ী শোয়েবের ব্যবহ্নত মোটরসাইকেল ভেঙে ফেলা হয়েছে।
একই রকম তাণ্ডবের দৃশ্য দেখা গেছে চেয়ারম্যান বাড়ির ব্যবসায়ী আকতার হোসেন, নুরুল ইসলাম, প্রবাসী সাব্বির আহমদ, জামায়াত কর্মী মুহাম্মদ ইদ্রিস, মোহাম্মদ হাশেম, আমানুল হক, ওবাইদুল হকের ঘরে। প্রবাসী আহমদ হোসেনের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার স্কুল পড়ুয়া ছেলে সরওয়ার কামাল ঘরের লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে থাকা আসবাবপত্র পাহারা দিচ্ছে। সরওয়ার জানায়, তার বাবা গত এক মাস হলো সৌদি আবর থেকে দেশে বেড়াতে এসেছেন। তাকে বিনা কারণে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এ সময় তার গায়ের ওপর হাত তুলেছে পুলিশের সাথে আসা মুখোশধারীরা। সে জানায়, তার বাবা কোনো রাজনীতির সাথেই জড়িত নয়। এ ছাড়া তার বাবার বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগও নেই।
তালগাঁও এলাকার ব্যবসায়ী আবু তাহের, মোহাম্মদ হাশেম, আহামুদুল হক, ব্যবসায়ী জামাল আহমদ, ফরুখ আহমেদ, নোমান, পশ্চিম দুরদুরির মনির উল্লাহ, আমিন উল্লাহ, ছালে আহমদ বাদশা, ছাবের আহমদ, আলী আহমদ ড্্রাইভার, নেজাম উদ্দিন, মাওলানা ফরুখ, জামাল আহমদ, বিএনপি নেতা মুহাম্মদ হারেস চৌধুরী, আব্দুল কুদ্দুস, মনছুর আহমদ, তালগাঁও এলাকার জামায়াত কর্মী জেবল হোসেন, পশ্চিম দুরদুরির মাহমুদুল হক, প্রবাসী আজমল হক, হাজী আমীর হোসেন, নূর মোহাম্মদ, হাবিবুর রহমান সিকদার ও মাওলানা নুরুল হকের ঘরে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। এ সময় মুখোশধারীরা বাড়িগুলোয় তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিগ্রস্তরা জানান, প্রায় ২৪টি গাড়ি করে র্যাব-পুলিশ, বিজিবি সদস্যদের সাথে লুঙ্গি পরা এবং মুখে মুখোশ পরে শতাধিক লোকজন রাত পৌন ২টার দিকে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। মুখোশধারীদের হাতে রাম দা, হকি স্টিক, লাঠি এবং আগ্নেয়াস্ত্র দেখেছে বলে প্রত্যদর্শীরা জানান।
আমরা চরতীবাসিরা এহেন ন্যাক্কার জনক হামলার তীব্র নিন্দা ও পাশা-পাশি দায়িদের যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে ভাইয়া প্রতিশোধই সব কিছু নয়। আমরাতো তাদের মত নিষ্ঠুর হতে পারিনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন