কিতাবের উপর ইমানের স্বরূপ
লিখেছেন লিখেছেন আবু আয়শা ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৫:০২:০৯ বিকাল
কিতাবের উপর বিশ্বাসের মুল কথা হল এতে উল্লেখিত যাবতীয় চিন্তা-দর্শন-নীতি-আদেশ নিষেধ ও এর দাবী গুলো অবহিত হয়ে সেগুলোর সাথে সহমত হওয়া ও সেগুলোর বাস্তবায়নে ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করা।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (র) বলেছেন: আমাদের মধ্যে যখন কোন ব্যক্তি দশটি আয়াতের তিলাওয়াত শিখত তখন সামনে আর অগ্রসর হত না, যতক্ষণ না সে দশটি আয়াতের অর্থ অনুধাবন করত ও সে মোতাবেক ‘আমাল করত। (তাফসীরে তাবারী, ৪০ পৃষ্ঠা)
অর্থাৎ দশটি আয়াত প্রথম তিলাওয়াত, তারপর অর্থ-তরজমা অনুধাবন, অত:পর হিসাব নেয়া যে, এর বাস্তবায়ন আমার জীবনে কতটুকু। এ রকমই ছিল সহাবায়ী কিরামের কুরআন তিলাওয়াত পদ্ধতি।
কুরআনের উপর ইমান আনার হাকিকত কেবল এই নয় যে এখানে উল্লেখিত কথা গুলো আল্লাহর বলে বিশ্বাস করা। বরং এতে উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে চিন্তা ও কর্মে সমর্থন করাও জরুরী। যদি আমরা কুরআনের কথা গুলো না জানি তাহলে ঠিক কিসের উপর ইমান আনলাম? ফলস্বরূপ এই অস্পষ্ট বিশ্বাস আমাদের বিশ্বাস ভঙ্গের কারন হবে। আমাদের অনেক চিন্তা-চেতনা এমন রয়ে যাবে যা কুরানের মৌলিক মুল্যবোধের বিরোধী। আর এটা অনিচ্ছা আর অজ্ঞাতসারেই ঘটে যাবে তা আপনি যতই অনুরাগী হন না কেন!
কিতাবের উপর ইমানের স্বরূপ প্রথমত মুমিন এর কোন শিক্ষা অস্বীকার করবে না। সন্তুষ্ট চিত্তে আস্থার সাথে মেনে নেবে।
وَآمِنُوا بِمَا أَنزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُونُوا أَوَّلَ كَافِرٍ بِهِ ۖ وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ [٢:٤١]
আর তোমরা সে গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি সত্যবক্তা হিসেবে তোমাদের কাছে। বস্তুতঃ তোমরা তার প্রাথমিক অস্বীকারকারী হয়ো না আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ। [2-41]
মুমিন এই কিতাবের কিছু মানবে আর কিছু ছেড়ে দেবে তা নয়। নিজের প্রয়োজন বা লাভের জন্য নয় বরং কিতাবের চাহিদা অনুযায়ী এর শিক্ষাকে গ্রহন করতে হবে।
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ [٢:٨٥]
তাহলে তোমরা কি ধর্মগ্রন্থের অংশবিশেষে বিশ্বাস কর ও অন্য অংশে অবিশ্বাস পোষণ কর? অতএব তোমাদের মধ্যের যারা এরকম করে তাদের ইহজীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া আর কী পুরস্কার আছে? আর কিয়ামতের দিনে তাদের ফেরত পাঠানো হবে কঠোরতম শাস্তিতে। আর তোমরা যা করছো আল্লাহ্ সে-বিষয়ে অজ্ঞাত নন। [২-৮৬]
কুরআন হচ্ছে চিন্তা চেতনা ও মুল্যবোধের ভিত্তিতে আবর্তিত কিছু নিতিমালা। এটা কেবল তাসবিহ নয়। অন্যান্য কিতাব থেকে এর অনন্যতা বা মর্যাদা হচ্ছে না বুঝে তিলোয়াত করলেও লাভ পাওয়া যায় যেটা অন্য কোন বইয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তবে আল্লাহর উদ্দেশ্য কেবল এই নয় যে তার বান্দারা তার প্রেরিত চিঠিটা কেবল পড়ে যাবে অন্তর্নিহিত আবেদনে সাড়া না দিয়েই। কুরআন জানার ও মানার বিষয়। এটা এমন একটা দর্শন যার গভিরতা কেবল চিন্তা গবেষনা দ্বারাই উপলব্ধি করা সম্ভব। শুধু পড়ে গেলে এটা সম্ভব নয়।
কুরআনের কোন আয়াত কেন নাযিল হয়েছে তা না জানলে আল্লাহর চিন্তা ও চাওয়াকে অনুধাবন করা অসম্ভব। সুতরাং তার বিস্তারিত তাফসির জানা আবশ্যক। আজকে মুসলমানরা ওযু-গোসল-তাইমুমের মাসায়ালা সম্পর্কে যা জানে তাওহীদ সম্পর্কে ততটুকুও জানে না। এর প্রধান কারন তারা কুরআন কে সেভাবে পড়ছে না যেমনি পড়া সে দাবী করে। এমনকি পত্রিকার পাতার দামও যেন তার নাই! ধ্বংস হোক! মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ।
মহান আল্লাহ কুরআনে যেখেনে আরবী ভাষার উল্ল্যেখ করেছেন সেখানে আরবী ভাষার মর্যাদা বর্ননা করেন নি বরং মূলত এটা বুঝিএছেন যে তোমাদের জানা আরবী ভাষায় নাযিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার। সতরাং এই নির্দেশ তোমাদের কছে অস্পষ্ট নয় যে এর অযুহাতে তোমরা মুখ ফিরিয়ে নেবে।
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ [١٢:٢]
আমি একে আরবী ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। [12-2]
إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ [٤٣:٣]
আমি একে করেছি কোরআন, আরবী ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝ। [43-3]
وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا وَصَرَّفْنَا فِيهِ مِنَ الْوَعِيدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ أَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا [٢٠:١١٣]
আর এইভাবেই আমরা এটি অবতারণ করেছি -- একখানি আরবী কুরআন, আর তাতে বিশদভাবে বিবৃত করেছি সতর্কবাণী- গুলো থেকে যেন তারা ধর্মপরায়ণতা অবলন্বন করে, অথবা এটি যেন গুণকীর্তনে তাদের উপদেশ দান করে। [20-113]
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا أَعْجَمِيًّا لَّقَالُوا لَوْلَا فُصِّلَتْ آيَاتُهُ ۖ أَأَعْجَمِيٌّ وَعَرَبِيٌّ ۗ قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاءٌ ۖ وَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ فِي آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى ۚ أُولَٰئِكَ يُنَادَوْنَ مِن مَّكَانٍ بَعِيدٍ [٤١:٤٤]
আমি যদি একে অনারব ভাষায় কোরআন করতাম, তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় বিবৃত হয়নি কেন? কি আশ্চর্য যে, কিতাব অনারব ভাষায় আর রসূল আরবী ভাষী! বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার। যারা মুমিন নয়, তাদের কানে আছে ছিপি, আর কোরআন তাদের জন্যে অন্ধত্ব। তাদেরকে যেন দূরবর্তী স্থান থেকে আহবান করা হয়। [41-44]
قُرْآنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِي عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ [٣٩:٢٨]
আরবী ভাষায় এ কোরআন বক্রতামুক্ত, যাতে তারা সাবধান হয়ে চলে। [39-28]
كِتَابٌ فُصِّلَتْ آيَاتُهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِّقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٤١:٣]
এটা কিতাব, এর আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত আরবী কোরআনরূপে জ্ঞানী লোকদের জন্য। [41-3]
وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا ۚ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَمَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا وَاقٍ [١٣:٣٧]
এমনিভাবেই আমি এ কোরআনকে আরবী ভাষায় নির্দেশরূপে অবতীর্ণ করেছি। যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন আপনার কাছে জ্ঞান পৌঁছার পর, তবে আল্লাহর কবল থেকে আপনার না কোন সাহায্যকারী আছে এবং না কোন রক্ষাকারী।[13-37]
কুরআন আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে এর অন্য কোন কারন নাই যে যার উপর নাযিল হয়েছে তিনি যেন তা বুঝতে ও বোঝাতে পারেন। অন্যান্য কিতাবগুলোও স্ব স্ব নাবীর মাতৃভাষায় নাযিল হয়েছে। ভাষাটা এখানে মুখ্য নয়। মুখ্য হল বার্তা বা সংবাদ যা মহান আল্লাহ তার বান্দাদের বোঝাতে চান।
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ۖ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ [١٤:٤]
আর আমরা এমন কোনো রসূলকে পাঠাইনি তাঁর স্বজাতির ভাষা ব্যতীত, যেন তাদের জন্য তিনি সুস্পষ্ট করতে পারেন। তারপর আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট হতে দেন যাকে তিনি ইচ্ছে করেন, আর যাকে ইচ্ছে করেন সৎপথে চালান। আর তিনিই তো মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী। [14-4]
بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ ۗ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ [١٦:٤٤]
স্পষ্ট প্রমাণাবলী ও যবূর নিয়ে। আর তোমার কাছে আমরা অবতারণ করেছি স্মারক গ্রন্থ যেন তুমি লোকদের কাছে সুস্পষ্ট করে দিতে পার যা তাদের কাছে অবতীর্ণ হয়েছিল, আর যেন তারা চিন্তাও করতে পারে। [16-44]
كَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِّتُنذِرَ أُمَّ الْقُرَىٰ وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۚ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ [٤٢:٧]
এমনি ভাবে আমি আপনার প্রতি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মক্কা ও তার আশ-পাশের লোকদের সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সমাবেশের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [42-7
وَمِن قَبْلِهِ كِتَابُ مُوسَىٰ إِمَامًا وَرَحْمَةً ۚ وَهَٰذَا كِتَابٌ مُّصَدِّقٌ لِّسَانًا عَرَبِيًّا لِّيُنذِرَ الَّذِينَ ظَلَمُوا وَبُشْرَىٰ لِلْمُحْسِنِينَ [٤٦:١٢]
এর আগে মূসার কিতাব ছিল পথপ্রদর্শক ও রহমতস্বরূপ। আর এই কিতাব তার সমর্থক আরবী ভাষায়, যাতে যালেমদেরকে সতর্ক করে এবং সৎকর্মপরায়ণদেরকে সুসংবাদ দেয়। [46-12]
কুরআন নিয়ে চিন্তা গবেষনা করা এর মৌলিক দাবী। যারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা করে না তাদের অন্তরকে তালাবদ্ধ বলে কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে।
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا [٤٧:٢٤]
তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? [47-24]
আল্লাহ তায়ালা কুরআন বোঝার জন্য উদ্ভুদ্ধ করে এর সহজতাকে উল্ল্যেখ করেছেন,
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ [٥٤:١٧]
আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? [54-17]
আবূ নুমান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ পূর্বাচল থেকে একদল লোকের অভ্যুদয় ঘটবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, তবে তাদের এ পাঠ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে শিকার (ধনূক) থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত তীর ধনুকের ছিলায় না আসে। বলা হল, তাদের আলামত কি? তিনি বললেনঃ তাদের আলামত হল মাথা মুণ্ডন। [বুখারী ৭০৫২]
অনেকে তো এমন যে কিতাবে কি আছে তা জানারই প্রয়োজন মনে করে না। কাল্পনিক কিছু বিশ্বাস ও আকাঙ্ক্ষা ছাড়া তাদের কোন পুজি নাই। কুরআনে আছে এমন বলে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করে ঠিকই কিন্তু আদৌ তা আছে কিনা জানে না। দুনিয়ার শিক্ষায় সুদক্ষ হলেও দ্বীনি শিক্ষায় নিরক্ষর। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ إِلَّا أَمَانِيَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ [٢:٧٨]
তোমাদের কিছু লোক নিরক্ষর। তারা মিথ্যা আকাঙ্খা(আমানিইয়্যা) ছাড়া আল্লাহর গ্রন্থের কিছুই জানে না। তাদের কাছে কল্পনা ছাড়া কিছুই নেই। [২-৭৮]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা শাওকানী (রহ,) বলেন, ‘আমানীয়্যার অর্থ হল তরজমা অনুধাবন ব্যাতিত শুধু তিলাওয়াত করা অর্থাৎ তিলাওয়াত করা ছাড়া তাদের কিতাব সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। অর্থ বুঝে না, গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করে না।’ (তাফসীর ফাতহুল কাবীর)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ,) বলেন ঃ ‘আল্লা-হ রব্বুল ‘আলামীন এ আয়াত ও পূর্ববর্তী আয়াতে দু’ ধরনের লোকদের তিরষ্কার করেছেন। প্রথমতঃ যারা আল্ল-হর কিতাবকে বিকৃত করেছে, দ্বিতীয়তঃ যারা তিলাওয়াত ছাড়া আল্ল-হর কিতাবের আর কোন খবর রাখে না। অর্থ অনুধাবন ব্যতীত তিলাওয়াতকেই বলে আমানীয়্যা।’ (বাদায়ে আত-তাফসীর)
হাসান বাসরী (রহ,) বলেছেনঃ আল-কুরআন নাযিল হয়েছে এজন্য যে, তা মানুষ বুঝবে ও ‘আমাল করবে। কিন্ত আফসোস! মানুষ আজ শুধু তার তিলাওয়াতকেই ‘আমাল হিসেবেই গ্রহণ করে নিয়েছে। (সিয়ারু আ‘লাম আন-নুবালা)
বিখ্যাত সাহাবী ইবনু মাস‘উদ রাযি, বলেনঃ আমাদের যুগে কুরআন হিফ্য করা কঠিন ছিল আর তা ‘আমাল করা সহজ ছিল। আমাদের পর এমন যুগ আসবে যখন কুরআন হিফ্য করা সহজ হবে কিন্ত তার উপর ‘আমাল করা কঠিন হবে। (আল-জামে লি আহকামিল কুরআন)
আল্লহর রসুল (স হাশরের ময়দানে যে সকল উম্মাত কুরআন ত্যাগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করবেন। আল্লামা ইবনু কাসীর রহ. বলেনঃ যারা কুরআন তিলাওয়াত অগ্রাহ্য করল, তারা কুরআন ত্যাগের অভিযোগে অভিযুক্ত। যারা কুরআনের অর্থ অনুধাবন ও তা গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করল না, তারাও কুরআন ত্যাগের অভিযোগে অভিযুক্ত হবে। যারা কুরআনের বিধি-বিধান মানল না, তারাও কুরআন ত্যাগকারী বলে অভিযুক্ত হবে। (তাফসীর ইবনু কাসীর)
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ, বলেনঃ আল-কুরআন ত্যাগের বিভিন্ন প্রকার আছে তার মাঝে একটি হল কুরআনের তরজমা অনুধাবন পরিহার করা। (বাদায়ে আত-তাফসীর)
বিষয়: বিবিধ
১৩৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন