পেশা ও জীবনবোধ

লিখেছেন লিখেছেন আবু আয়শা ২৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:৫৩:০৪ রাত

একদিন জুমুআর নামাযের পর ওমর ফারুক -রাদিয়াল্লাহু আনহু- দেখতে পেলেন একদল লোক মসজিদের এক কোনে বসে আছে। তিনি তাদের পরিচয় জানতে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কারা তোমরা? উত্তরে তারা বললেন, আমরা আল্লাহর উপর ভরসাকারী সম্প্রদায়। শুনে ওমর (রা) ছড়ি উঁচিয়ে কড়া ধমক লাগালেন এবং বললেন, তোমাদের কেউ যেন জীবিকা অন্বেষণ ছেড়ে অকর্ম বসে না থাকে আর আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে যে 'হে আল্লাহ আমাকে জীবিকা দান কর' অথচ তার জানা আছে আকাশ স্বর্ণ বা রূপার বৃষ্টি বর্ষাবে না এবং আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন,

فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٦٢:١٠]

অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।[৬২-১০]

পেশা পার্থিব জীবনের একটা গুরুত্বপুর্ন দিক। এটা জীবনের গতি। সবাইকে রিযিকের অনুসন্ধানে কোন না কোন পেশায় কম বেশি জড়িত থাকতে হয়। আমরা কথা বলব মুমিনের পেশা নির্বাচন ও অবলম্বনের প্রকৃতি নিয়ে। পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে জীবনবোধের প্রত্যক্ষ্য ভুমিকা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবনবোধই ঠিক করে তার কর্মের গতি প্রকৃতি। । কেননা মানুষ এটা বিচার বিশ্লেষন করেই তার মর্যাদা নির্নয় করে। উচিত না হলেও সমাজ ব্যবস্থা তাই বলে। পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের মুল্যবোধ সাধারনত আখিরাতমুখী নয়। কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া আমদের পেশা নির্বাচনের মুল কারন দুটি ১। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ২। সামাজিক পরচিতি/ ক্ষমতা বা লৌকিকতা। মানবিক বা সামাজিক দায়বদ্ধতা এখানে গৌন। মানব ধর্মের অনুসারীরাও ব্যতিক্রম নয়।

ছোট বেলায় aim in life রচনা লেখেন নি এমন শিক্ষিত লোক বিরল। মনে পড়ে সেখানে কি লিখেছিলাম? ৬০% ডাক্তার, ৩০% প্রকৌশলী, ৫% শিক্ষক (তার মধ্যে ১% সত্যিকারার্থে) ইত্যাদি হয়ে কে কিভাবে সমাজসেবা করবে তাই ছিল মুখ্য বিষয়। বিশ্বাস করুন সমাজসেবা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুখ্য নয়। মুখ্য হল অর্থ। যাহোক জানা কথা জানিয়ে লাভ নাই। তবু প্রমান হিসেবে একটা উদাহরন দিচ্ছি। নিয়মিত ধর্ম কর্ম করে এমন কিছু লোককে প্রশ্ন করে দেখতে পারেন কে এই সমাজের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি? কে পার্থিব জীবনে সবচেয়ে সফল? সে হয়ত বলবে যে ব্যাক্তি নামাজ কালাম করে, সৎ ও ধার্মিক আখিরাতে জান্নাত পাবে সেই তো সৌভাগ্যবান। সে হিসেবে মসজিদের ইমাম খতিব মুয়াজ্জিনেরই এই কাতারে থাকার সুযোগ বেশি। এবার খোঁজ নিয়ে দেখুন তো তার পাঁচ পুত্রের কয়জনকে মসজিদের ইমাম সাহেব করতে চেয়েছেন। এই হল ধার্মিকের সত্যবাদিতার নমুনা।

মুল্যবোধ হচ্ছে যে জিনিস যতটুকু মুল্যবান তাঁকে ততটুকু মুল্য দেওয়া। ইসলামিক মুল্যবোধ হচ্ছে ইসলাম যাকে যতটুকু মুল্য দেয় তাঁকে ততটুকু মুল্য দেওয়া। ইসলাম এই দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দিয়েছে কাকে? নবী ও রসূলদের। দা’য়ী আলিম উলামাগনদের। তাদের পেশা কি ছিল? মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা, দীন ইসলামের ফেরি করা। জীবনের উদ্দেশ্যকে বোঝানোর জন্য, সমগ্র জাহানের মালিকের পরিচয় মানুষকে জানানোর জন্য দিন রাত খেটেছেন। অথচ আমরা আজ তাদের অনুসারীরা কয়জন আমাদের পেশাকে তাদের পেশার সাথে মিলিয়ে নিয়েছি?

মেলানোর মানেটা পরিস্কার করা দরকার কেননা অনেকের ধারনা দাওয়াকে পেশা হিসেবে নেওয়া মানে জীবিকার অন্য ব্যাবস্থা না করে পরনির্ভরশীল হয়ে বা দাওয়ার কাজের মাধ্যেই অর্থ উপার্জনের উপলক্ষ খোজা। মুলত তা নয়। পেশা হিসেবে কেউ ১৬ ঘণ্টা কাজ করে, কেউ ১২, কেউ ৮ আবার কেউ ৪ ঘণ্টা। চাহিদা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ঠিক হয় কাজের ব্যাপ্তি। মুল উদ্দেশ্য প্রয়োজন পুরন করা। দাওয়া পেশাটাও এরকম। প্রয়োজন ও যোগ্যতার ভিত্তিতে লক্ষ্য স্থির করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে এমন দায়িত্ব দেন নি যার যোগ্যতা আমাদের মধ্যে সৃস্টি করেন নি। সুতরাং খাওয়া পরার ব্যাবস্থা করার ইবাদতকে উপেক্ষা করার অবকাশ নাই। বরং মুল উদ্দেশ্য দাওয়াকে রেখে পার্থিব চাহিদাকে সীমিত করে সময়কে ব্যাবহার করতে হবে। আখিরাতের চাহিদা সময়ের সাথে বাড়বে আর পার্থিব চাহিদা সীমিত হতে থাকবে। আর এটাই হচ্ছে দাওয়াকে পেশা হিসেবে নেওয়ার ফলাফল। তবে কোনভাবেই দাওয়ার মাধ্যমে জীবিকা অর্জন নয়। দ্বীনের বিনিময় দুনিয়া নয়, দুনিয়ার বিনিময়ে দ্বীন। যিনি মানুষকে দিন রাত দাওয়াত দিয়েছেন বলে কুরআনে মহান আল্লাহ উল্লেখ করেন সেই সন্মানিত নাবী নুহ(আ) তার কওমকে বলেন,

وَيَا قَوْمِ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مَالًا ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ

আর হে আমার জাতি! আমি তো এজন্য তোমাদের কাছে কোন অর্থ চাই না; আমার পারিশ্রমিক তো আল্লাহর জিম্মায় রয়েছে। [১১-২৯]

অনুরুপভাবে হুদ (আ) তার কওম আদকে বলেন,

يَا قَوْمِ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى الَّذِي فَطَرَنِي

হে আমার জাতি! আমি এজন্য তোমাদের কাছে কোন মজুরী চাই না; আমার মজুরী তাঁরই কাছে যিনি আমাকে পয়দা করেছেন [১১-৫১]

কা‘ব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দুটি ক্ষুধার্ত বাঘকে কোন ছাগলের পালের মধ্যে ছেড়ে দেয়া, ছাগলের পালের জন্য ততটা ক্ষতিকর নয়, যতটা ক্ষতিকর হয় একজন মানুষের দ্বীনের জন্য, যখন তার মধ্যে ধন-সম্পদ, ইজ্জত-সম্মান ও ক্ষমতার লোভ থাকে” [তিরমিযি ২৩৭২]

এটা হল সর্বোচ্চ পর্যায়ের পেশা। সবার হয়ত এ পথে হাটা হবে না। হওয়া জরুরীও নয়। একটা জনগোষ্ঠিতে একজন ভালো দায়ী যথেষ্ঠ হতে পারে। বাকীরা ফরজ হুকুম অনুযায়ী সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা দিলে জানা বিষয়টা অন্যকে জানালেই দাওয়ার হক আদায় হয়ে যায়। সার্বিক ইসলামের দাওয়া অনেক জ্ঞান ও গুনের দাবী রাখে।

সাধারনভাবে যেকোন মুমিনের পেশা নির্বাচন করতে হবে আখিরতকে সামনে রেখে। আখিরাতের সর্বোচ্চ প্রস্তুতিকে কিছুমাত্র বাধাগ্রস্থ করা যাবে না। প্রথমত এমন পেশা যা আমাদের শারিয়াহ বিরোধী তা থেকে ইস্তফা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে হারাম বস্তু গ্রহণই কেবল হারাম নয় বরং উৎপাদনে জড়িত থাকা ও বিক্রয় করাও হারাম। অনুরুপভাবে কোন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কারও উপর জোড় জবরদস্তি করা, অন্যায়ভাবে বল প্রয়োগ করা সুস্পষ্টভাবে হারাম। একথা বলার সুযোগ নাই যে আমার তো লাভ নাই, আমিতো কেবল চাকুরি করি। যে জিনিসগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ সেই জিনিসের সাথে জড়িত সকল কর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন সুদী ব্যাংক ও সমিতি, গান-বাজনা-নাটক সিনেমা তৈরী ও প্রচার, নেশাজাত দ্রব্য তৈরী ও বিক্রয়, লটারী প্রচার ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট সকল পেশা হতে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ আমাদেরকে পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন।

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। [৫-২]

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদের সাথে জড়িত ১০ প্রকার ব্যক্তিকে লানত করেছেন (১) মদ প্রস্ত্ততকারী (২) মদের ফরমায়েশ দানকারী (৩) মদপানকারী (৪) মদ বহনকারী (৫) যার জন্য মদ বহন করা হয় (৬) যে মদ পান করায় (৭) মদ বিক্রেতা (৮) মদের মূল্য ভোগকারী (৯) মদ ক্রয়কারী (১০) যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। [মিশকাত, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, হা/২৭৭৬)]

জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদদাতা, গ্রহীতা এবং এর লেখক ও সাক্ষীদ্বয়কে অভিশাপ দিয়েছেন।'[মুসলিম : ৭৫৯৭]

[বর্তমান সমাজে যেহেতু সুদ এবং গানের ব্যাবসা খুব বেশি তাই এগুলোর নিষিদ্ধতা সম্পর্কে কিছু দলিল পেশ করছি।

সুদঃ

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَن جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٢:٢٧٥]

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- 'যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।[২-২৭৫]

আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- 'সুদের তিয়াত্তরটি স্তর রয়েছে। সর্বনিম্নটি হলো নিজের মায়ের সঙ্গে জেনা করার সমতুল্য। আর অপর ভাইয়ের সম্মান নষ্ট করা সবচে' নিকৃষ্ট সুদ। [মুস্তাদরাকে হাকেম : ২/৩৭]

আবি জুহায়ফা রা. তদীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, 'নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্ত ও কুকুরের মূল্য নিতে এবং দাসীর উপার্জন গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। অভিশাপ দিয়েছেন উল্কি অঙ্কনকারী, উল্কি গ্রহণকারী এবং সুদ গ্রহীতা ও সুদদাতাকে। আরও অভিশাপ দিয়েছেন তিনি চিত্রাঙ্কনকারীকে।'[বুখারি : ২২২৮]

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- 'যখন কোনো জনপদে সুদ ও ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ে তখন তারা নিজেদের ওপর আল্লাহর আজাব বৈধ করে নেয়।[মুস্তাদরাকে হাকেম : ২/৩৭]

গান বাজনাঃ

গান-গায়িকা এবং এর ব্যবসা ও চর্চাকে হারাম আখ্যায়িত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণ নেই। জেনে রেখ, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম।-জামে তিরমিযী হাদীস : ১২৮২; ইবনে মাজাহ হাদীস : ২১৬৮

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন , আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পাল্টিয়ে তা পান করবে এবং বাদ্যযন্ত্র সহকারে গান করবে । আল্লাহ তাআলা তাদের ভুগর্ভে বিলীন করে দিবেন এবং কতকের আকৃতি বিকৃত করে বানর ও শুকরে পরিনত করে দিবেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ , সহীহ ইবনে হিব্বান , জামিহ আল কাবির বুখারী কৃত , সুনানে বায়হাকী , মুসান্নাফে ইবনে শায়বা , আল মুজাম তাবরানী কৃত , বগভী সহ আরো অনেক ]

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন , “আমার উম্মতের উপর এই আযাবগুলি আসবে “ভুগর্ভে বিলীন হওয়া , আকৃতি বিকৃত হওয়া , পাথর বর্ষন হওয়া । জনৈক সাহাবী প্রশ্ন করলেন , হে রসুলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) এগুলো কখন হবে ? তখন রসুলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) বললেন , “যখন গায়িকা নারী ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপক প্রচলন হবে এবং মদ্যপান সুরু হবে । [ তিরমিজী শরীফ, আদ দানি , ইবনে আবি দুনিয়া ইত্যাদি , এই হাদীসটি আনুমানিক আরো ৭ টি সনদে বর্নিত হয়েছে ]

হযরত নাফে(রহ) বলেন , একবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) রাস্তা দিয়ে চলার সময় বাশীর আওয়াজ শুনে কানে আংগুল ঢুকিয়ে দেন এবং বার বার আমাকে জিজ্ঞেস করেন হে নাফে এখনও আওয়াজ শোনা যায় ? আমি বললাম জ্বী এখনও শোনা যায় । কিছু দুর যাওয়ার পর আর শোনা যাচ্ছে না বলাতে উনি হাত নামিয়ে নেলেন এবং রাস্তার দিকে ফিরে আসলেন । তারপরে বললেন আমি রসুলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) কে একদা এমন করতে দেখেছি ।

হযরত জাবের (রা) বলেন , গান বাজনা থেকে সতর্ক থাক । কেননা , তা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়… এবং শয়তান ছাড়া আর কেউ গান করে না [ ওমদাতুল কারী ]

হযরত ওমর (রা) এক দল ব্যক্তির পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন । তিনি দেখলেন এক ব্যক্তি গান করছে , বাকীরা বসে শুনছে । তখন তিনি বললেন – “আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তোমাদের শ্রবনের যোগ্যতা নষ্ট করে দিন অর্থ্যাৎ তোমাদের বধির হয়ে যাওয়াই শ্রেয় । [ এত্বেহাফ ]

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) বলেন “গান বাজনা মানুষের অন্তরে কপটতা সৃষ্টি করে” ।

ইমাম আবু ইউসুফ , ইমাম মুহাম্মদ , ইমাম শাফী , ইমাম মালিক এবং ইমাম আহমদ মত দিয়েছেন যে কেউ যদি কারো বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলে তাহলে সে দায়ী হবে না ( যেহেতু গান বাজনা নিষেধ ) এবং কারো জন্য বাদ্যযন্ত্র ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ নয় । [ উমদাতুল কারী ]

গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইমাম মালেক রাহ. কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।-কুরতুবী ১৪/৫৫ ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন যে, গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক। তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯; কুরতুবী ১৪/৫৫

হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লেখেন, বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম।-আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮৮

ইমাম শাফেয়ী রাহ. শর্তসাপেক্ষে শুধু ওলীমা অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশ আছে বলে মত দিয়েছেন। কেননা বিয়ের ঘোষণার উদ্দেশ্যে ওলীমার অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশের বর্ণনা হাদীসে রয়েছে।-জামে তিরমিযী হাদীস : ১০৮৯; সহীহ বুখারী হাদীস : ৫১৪৭, ৫১৬২]

হালাল উপার্জন দোয়া কবুলের শর্ত। সুতরাং পেশা হালাল হওয়ার কোন বিকল্প নাই।

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ব্যতীত কিছু গ্রহণ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের কে ঐ বিষয়ে আদেশ করেছেন যা তিনি রাসূলগণকে আদেশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র রিযিক থেকে ভোগ করো এবং ভাল কাজ করো এবং তিনি বলেছিলেন, হে মুমিন গণ তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তার মধ্যে পবিত্র বস্তু থেকে ভোগ করো। তারপর মহানবী উল্লেখ করলেন, লোকে দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করে এবং (দোয়া কবুল হওয়ার আশায়) আলু থালু কেশে ধুলায় দূসরিত অবস্থায় দু' হাত আসমানের দিকে বাড়িয়ে ডাকে আয় প্রভু! আয় প্রভু!! অথচ তার খাবার হারাম তার পাণীয় হারাম, তার পোশাক হারাম এবং হারাম খাদ্য তাকে খাওয়ানো হয়ে থাকে, তা হলে কিভাবে তার মুনাজাতের জয়াব দেয়া হবে? (মুসলিম)

সম্পদ হালাল নাকি হারাম সে ব্যাপারে মুমিনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা নাবী (স) বলেছেন, আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- 'এমন এক সময় উপস্থিত হবে যখন লোকেরা পরোয়া করবে না সম্পদ হালাল নাকি হারাম উপায়ে অর্জিত।'[২৩]

দ্বিতীয়ত বৈধ পেশার অবৈধ বাধাকে ছুড়ে ফেলতে হবে। এমনও অফিস আছে যেখানে জামাতে সলাত আদায় করার সুযোগ নাই আবার মসজিদেও যেতে দেওয়া হয় না, কোথাও কাজ উদ্ধারের জন্য ঘুষ দিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়, কোথাও গ্রাহকের সাথে প্রতারনামুলক আচরন করতে বাধ্য করা হয়, কোথাও বেপর্দা নারীর সাথে মিলে মিশে কাজ করতে হয়। দাড়ি টুপির এলার্জি তো সাধারন বিষয়। এসব কর্মস্থান হয় দাওয়া দিয়ে ঠিক করতে হবে অথবা সালাম দিয়ে বিদায় দিতে হবে। মুমিনকে শ্মরন রাখতে হবে দুনিয়ার সমস্ত রিযিক আল্লাহর। সুতরাং সেখান হতে কিছু পেতে চাইলে তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিকল্প নাই। মুমিনের উত্তম রিযিকের জন্য চাই তাকওয়া ও সবর। যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তাকে সকল দুশ্চিন্তা থেকে বের হয়ে আসার পথ করে দেন। সকল সঙ্কট থেকে মুক্তি লাভের উপায় বের করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا

যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন’ [সূরা তালাকঃ ২]

তিনি তাকে এমন জায়গা থেকে রিযকের ব্যবস্থা করেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। তাই যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে। তাকওয়া অবলম্বন করে দুনিয়া তার জন্য কখনো সঙ্কীর্ণ হয় না। জীবন-জীবিকা, রিযক-দৌলত তার জন্য সঙ্কুচিত হয় না। ইরশাদ হয়েছে,

وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَىٰ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ

আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। [৭-৯৬]

রিযিকের পেরেশানিতে যেন তার নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন না করি সেজন্য বলেছেন পৃথিবীতে এমনও অনেক প্রানী আছে যারা খাদ্য সঞ্চয় করে না অথচ তারা অভুক্তও থাকে না। আল্লাহই রিযিক দাতা, চাকুরী বা ব্যাবসা নয়।

وَكَأَيِّن مِّن دَابَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَا اللَّهُ يَرْزُقُهَا وَإِيَّاكُمْ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ [٢٩:٦٠]

এমন অনেক জন্তু আছে, যারা তাদের খাদ্য সঞ্চিত রাখে না। আল্লাহই রিযিক দেন তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।[২৯-৬০]

রিযক যার ভাগ্যে যেটুকু লেখা আছে তা শেষ না করে কেউ এ ধরাধাম পরিত্যাগ করে যাবে না।

জাবের রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (স) বলেন,“রিযক দেরিতে আসছে বলে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করো না। কেননা কোনো বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মারা যায় না যতক্ষণ না তার নির্ধারিত শেষ রিযক তার কাছে পৌঁছে যায়। অতঃপর তোমরা হালাল রিযক সুন্দরভাবে তালাশ করো। আর হারাম থেকে বিরত হও” [ইবনে হাব্বান, সহীহ]।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,'নিশ্চয় রূহুল কুদস আমার অন্তরে ফুঁকে দিয়েছেন যে কোনো প্রাণীই নিজ হায়াত ও রিযক পরিপূর্ণ করা অবধি মৃত্যু রবণ করবে না। সুতরং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সুন্দররূপে তা অন্বেষণ কর। রিযকের উপস্থিতি ধিরুজ ও বিলম্বিত হলে তোমাদের কাউকে যেন সেটি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে-অবৈধ পথে অন্বেষণে প্ররোচিত না করে। কারণ আল্লাহর কাছে থাকা করুনা কেবলমাত্র তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমেই অর্জন করা যায়। [ তবরাণী ও হাকেম, তিনি এটিকে সহীহ বলে প্রমাণ করেছেন]

মালেক বিন আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, “মালিকের ওস্তাদ রবিয়া আর-রাঈ বলতেন, হে মালেক! হতভাগা কমবখত কে? উত্তরে তিনি বলেন, আমি বললাম, যে দ্বীন দ্বারা জীবিকা উপার্জন করে। তারপর সে আবার জিজ্ঞাসা করল, কে তার চেয়ে আরও নিকৃষ্ট কমবখত? সে উত্তরে বলল, যে অন্যের দুনিয়াকে সুন্দর করে নিজের দ্বীনকে বাদ দিয়ে। সে বললেন, আমার উত্তর শুনে আমার উস্তাদ খুব খুশি হলেন এবং আমাকে সাবাস দিলেন” [বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান ৬৯৩২]

এখনই সময়। চুড়ান্ত পরিণতি এই যে সবাই আমাকে গর্তে ফেলে চলে যাবে। কেউ দুবার ফিরে তাকাবে না। সুতরাং সারাদিন পার্থিব ধান্ধা বাদ দেওয়া জরুরী। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু। প্রয়োজনকে পরিমাপ করতে না পারলে কবর তার সীমারেখা টেনে দেবে। আর গায়েব প্রকাশ হলে চিন্তা করারো সুযোগ থাকবে না। পেশাকে ধর্মজ্ঞান করে রাম সাম যদু মধুর জীবন কাটিয়ে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلِكُم ۖ مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ ۗ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ [٢:٢١٤]

তোমাদের কি এই ধারণা যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাবে, অথচ সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট। আর এমনি ভাবে শিহরিত হতে হয়েছে যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে পর্যন্ত একথা বলতে হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্যে! তোমরা শোনে নাও, আল্লাহর সাহায্যে একান্তই নিকটবর্তী। [২-২১৪]

আর জাহান্নাম ঘুরে জান্নাতে প্রবেশ করার আকাঙ্খাও সরিয়ে রাখতে হবে। অনেকের তো ধারনা এই যে একদিন না একদিন তো জান্নাতে যাবই! আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুক! কিভাবে এই চিন্তা করা সম্ভব। এমন না যে মৃত্যুর পরপরই জাহান্নাম আর তারপর কিছুদিন আজাব ভোগ করে এসে জান্নাত। কক্ষনও না। এমন নয়। ধরুন কেউ যদি জাহান্নামে কিছুক্ষন থেকে আল্লাহর দয়ায় জান্নাতে ফিরেও আসে তবুও তো তাঁকে এমন কয়েকটি ধাপ পেরোতে হবে যার একটি অন্যটি থেকে ভয়ংকর।

প্রথমেই মৃত্যু যার ভয়াবহতাই জাহান্নমীদের জন্য যথেষ্ঠ। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, “যিনি ছাড়া কোন রব নেই সেই আল্লাহর কসম, যদি আমার কাছে দুনিয়ার সকল স্বর্ণ এবং রৌপ্য থাকতো, আমি সেগুলোর বিনিময়ে হলেও মৃত্যুর পরে যে ভয়াবহতা রয়েছে তা থেকে বাঁচার চেষ্টা করতাম।”[সাহীহ আত-তাওতিক ফি সীরাত ওয়া হায়াত আল-ফারুক, পৃ ৩৮৩]

যারা পাপাচারী ব্যাক্তি এবং অবিশ্বাসী, সে যখন দুনিয়ার জীবন ত্যাগ করে আখিরাতের দিকে যেতে থাকবে, তখন মৃত্যুরঅন্ধকার ফেরেশতা খসখসে কফিন নিয়ে আগমন করবে যেটা আমদানি হয়েছে জাহান্নাম থেকে। তার পাশে এসে বসে মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, “হে পাপী আত্মা! আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলার ক্রোধ এবং রোষের দিকে ছুটে আস।” তাকে বলা হবে যে, যে তোমাকে এখনই আসতে হবে এবং তোমার জন্য আল্লাহর ক্রোধ অপেক্ষা করছে। যখন মৃত্যুর ফেরেশতা এই ঘোষণা করবে, তখন তার আত্মা দেহের মধ্যে ছুটে বেড়াবে আর সে বের হয়ে আসতে চাইবে না। মৃত্যুর ফেরেশতারা তখন তার আত্মাকে খপ করে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাবে, ভেজা পশমের মধ্য থেকে কাটাঁযুক্ত কিছুকে টেনে আনতে যেমন অবস্থা হয় তেমন। ভেবে দেখুন, আপনার কাছে কাটাঁময় কিছু একটা আছে, যেটাকে আপনি ভেজা পশমের মধ্য থেকে টেনে বের করে আনতে চাচ্ছেন! এটা সবকিছু ছিড়েই ফেলবে।

রাসূল (সা) বলছেন, “যখন এই আত্মাকে টেনে বের করা হবে তখন যেন এটা মাংস এবং স্নায়ুকে ছিড়ে ফেলবে, কারণ এই আত্মা শরীর থেকে সহজে বের হতে চাইবে না।”

মৃত্যুর একটু পরেই কবরের নিঃসঙ্গতা ও ভয়ানক দুর্দশাগ্রস্থ জীবন। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন- ‘আমি কবরের দৃশ্য থেকে অধিক ভয়ানক দৃশ্য কখনো দেখিনি।’ [তিরমিযী: হা.২৩০৮]। তিনি আরও বলেনঃ যখন তাকে কবরস্থ করা হয় তখন কবর তাকে বলে, তোমার আগমন খারাপ আগমন। আর জেনে রাখ, তুমি খারাপ জায়গায়ই এসেছো, আমার উপর চলাফেরাকারীদের মধ্যে তুমিই আমার সবচেয়ে বড় দুশমন ছিলে। আজ তোমাকে আমার কাছে অর্পণ করা হয়েছে, তুমি আমার আয়ত্তে এসে গেছ, এখন তোমার সাথে আমি কিরূপ ব্যবহার করি দেখে নাও। তারপর কবর তাকে এমনভাবে চাপ দেয় যে, তার ডান পাশের হাড় বাম পাশের হাড়ের ভিতর ঢুকে যায়। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য সত্তরটি এমন অজগর সাপ নিযুক্ত করে দেন, যার একটিও যদি জমিনের বুকে শ্বাস ফেলে তাহলে কেয়ামত পর্যন্ত জমিনে কোন কিছু উৎপন্ন হবে না। হিসাবের জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সাপগুলো তাকে কামড়াতে ও দংশন করতে থাকবে।’ [তিরমিযী: হা.২৪৬০]

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ইসরাফীল আ. কে শিংগায় ফুঁক দেয়ার জন্য আদেশ দিলে তিনি ফুঁক দিবেন। আর রূহসমূহ মৌমাছির মতো বের হয়ে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ করে দেবে। অতঃপর রুহসমূহ দেহে প্রবেশ করবে।

وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاءَ اللَّهُ ۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَىٰ فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنظُرُونَ [٣٩:٦٨]

শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, ফলে আসমান ও যমীনে যারা আছে সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন। অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে। [৩৯:৬৮]

আল্লাহ তাআলা মানুষকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করবেন হিসাবের জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا ۖ مَّأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا [١٧:٩٧]

আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব [১৭-৯৭]

এই ভীতিকর ও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পাপাচারী, জালেম, মুনাফিকদের দেখা যাবে অবনত মস্তকে, অপলক নেত্রে। আর তাদের অন্তর থাকবে শূন্য। সেদিন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না। সেদিন মানুষের হৃদয় থাকবে ওষ্ঠাগত, বিষন্ন। কিয়ামতের সে দিনটির দৈর্ঘ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর।

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ ۚ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ [٢٢:١]

يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَىٰ وَمَا هُم بِسُكَارَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ [٢٢:٢]

হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিণী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আযাবই কঠিন। [২২:১-২]

আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘কিয়ামতের দিন মানুষ ঘামতে থাকবে। এমনকি তাদের ঘাম যমীনের সত্তর গজ নীচ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। আর তা তাদেরকে বাকরুদ্ধ করে দেবে এবং তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে’ (মুসলিম)।

আল্লাহ তাআলা ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করবেন। মহান আল্লাহ বলেন:

وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا ۖ وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا ۗ وَكَفَىٰ بِنَا حَاسِبِينَ [٢١:٤٧]

আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট। [২১-৪৭]

রসুলুল্লাহ (স) বলেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তাআলা সরাসরি কথা বলবেন, মাঝখানে কোনো দোভাষী থাকবে না। তখন সে তার ডান দিকে তাকাবে এবং সেখানে সে তার কৃত আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না। সে বাম দিকে তাকাবে, সেখানেও সে তার কৃত আমল ছাড়া অন্যকিছু দেখবে না। সে তার সামনের দিকে তাকাবে এবং আগুন ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। সুতরাং আগুন থেকে বাচোঁ যদিও শুকনো খেজুরের এক টুকরো অথবা একটি ভালো কথা ব্যয় করে হয়’ (বুখারী)।

আল্লাহ তাআলা মানুষের আমলনামা প্রকাশ করবেন।

وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا ۚ وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا ۗ وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا [١٨:٤٩]

আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না। [১৮-৪৯]

হিসাবের পর বান্দাকে মুখোমুখি করা হবে পুলসিরাতের। পুলসিরাতের উপর দিয়ে সকলকেই অতিক্রম করতে হবে। নেককার বিদ্যুৎ, বাতাস ও দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে তা পার হয়ে যাবে। কেউ পার হবে সম্পূর্ণ নিরাপদভাবে। কেউ সামান্য আঁচড় খেয়ে। কেউ আহত হয়ে। আর কেউ হুমরী খেয়ে পড়ে যাবে জাহান্নামে। এমনকি সর্বশেষ ব্যক্তিকে টেনে টেনে নেয়া হবে। সাহাবী আবু সাঈদ রাযি. বলেন,‘পুলসিরাত হবে চুলের চেয়েও চিকন, তরবারির চেয়েও ধারালো।

এরপর সেই জাহান্নাম যেখানে ঘুরে আসার প্লান নিয়ে দিনের পর দিন পার হয়ে যাচ্ছে!

فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ هَاؤُمُ اقْرَءُوا كِتَابِيَهْ(19)إِنِّي ظَنَنْتُ أَنِّي مُلَاقٍ حِسَابِيَهْ(20)فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ(21)فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٍ(22)قُطُوفُهَا دَانِيَةٌ(23)كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الْأَيَّامِ الْخَالِيَةِ(24)وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِشِمَالِهِ فَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُوتَ كِتَابِيَهْ (25) وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيَهْ(26)يَا ‎لَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ(27)مَا أَغْنَى عَنِّي مَالِيَهْ(28)هَلَكَ عَنِّي سُلْطَانِيَهْ(29)خُذُوهُ فَغُلُّوهُ(30)ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ(31)

“যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে সে বলবে, ‘হায়, আমাকে যদি আমার আমলনামা দেয়া না হত’! ‘আর যদি আমি না জানতাম আমার হিসাব’! ‘হায়, মৃত্যুই যদি আমার চূড়ান্ত ফয়সালা হত’! ‘আমার সম্পদ আমার কোন কাজেই আসল না!’ আমার ক্ষমতাও আমার থেকে চলে গেল! (বলা হবে,) ‘তাকে ধর অতঃপর তাকে বেড়ি পরিয়ে দাও।’ ‘তারপর তাকে তোমরা নিক্ষেপ কর জাহান্নামে’।[৬৯;১৯-৩১]

জাহান্নামও তাদের অপেক্ষায় আছে যারা একে আশ্রয়স্থল করে নিয়েছে।

إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا [٧٨:٢١]

لِّلطَّاغِينَ مَآبًا [٧٨:٢٢]

নিশ্চয় জাহান্নাম প্রতীক্ষায় থাকবে, সীমালংঘনকারীদের আশ্রয়স্থলরূপে। [ ৭৮;২১-২২]

জাহান্নাম সম্বন্ধে একটি কথাই যথেষ্ঠ, মহান আল্লাহ বলেন,

فَذُوقُوا فَلَن نَّزِيدَكُمْ إِلَّا عَذَابًا [٧٨:٣٠]

অতএব, তোমরা আস্বাদন কর, আমি আযাব ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করব না। [৭৮-৩০]

আখিরাতের বর্ননা আমাদের বিষয় না থাকলেও আখিরাতের স্মরন ছাড়া কিভাবে এহেন গুরুত্বপুর্ন সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করা যাবে। আর যেহেতু আমরা অফিস আদালত মাঠ ঘাটে এত ব্যাস্ত যেন মনে হয় অফিস আদালত করার জন্যই আমাদের জন্ম। ছোট বেলা থেকে শুরু হয় এই আলোচনা। বাচ্চাকে দেখলেই প্রশ্ন “বাবু বড় হয়ে কি হতে চাও?” বাবুর বড় হয়ে ওঠার গল্পে তাই শুধু কিছু একটা হতে চাওয়ার ধান্ধা! স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি সর্বত্র এই প্রতিযোগিতাই চলে। কথার ৭০ ভাগ আর কাজের ৯০ ভাগ সময় আমরা ব্যায় করি দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠা লাভ করার জন্য। যেন আখিরাতের হিসাব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি।

اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُّعْرِضُونَ [٢١:١]

মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।[২১-১]

দুনিয়ার প্রতি মোহাবিষ্ট থাকার একটি অশুভ পরিণতি হলো, হালাল-হারামের বাছ-বিচার না করা। যা সামনে পাওয়া যায়, কোনো রকম যাচাই-বাচাই না করেই তা লুফে নেয়া। আরেকটি অশুভ পরিণতি হলো, ঈমান ও কুফরের দোলাচলে দুলতে থাকা। দুনিয়ার মোহে পড়ে, মানুষ তার ঈমান বিকিয়ে দেয়। দুনিয়ার মোহাবিষ্ট অনেক ব্যক্তিই যদি মুমিন অবস্থায় সকালে উপনীত হয় তবে সন্ধ্যা বেলায় সে কাফের হয়ে যায়। কাফের অবস্থায় সন্ধ্যায় উপনীত হলে সকাল বেলায় সে মুমিন হয়ে যায়। দুনিয়ার প্রতি মোহাবিষ্ট ব্যক্তি আদর্শিক ও চারিত্রিক দৃঢ়তা হারিয়ে ফেলে। সে টাকা পয়সার অনুরক্ত দাসে পরিণত হয়। রাসূলুল্লাহ (স) তাদের লানত করেছেন।

“দীনারের পূজারী, দিরহামের পুজারী ও পোশাকের পূজারী ধ্বংস হোক! তাকে দেয়া হলে সে খুশি। আর না দিলে নারাজ। সে ধ্বংস হোক, অধঃপতিত হোক”। [বুখারী]

আমরা দুনিয়া নিয়ে অনেক সময় এত ব্যস্ত থাকি যে মনে হয় একটু stablish হয়েই ধর্ম কর্ম শুরু করব। একটা কথা মনে রাখা উচিত দুনিয়ায় আমরা মুসাফির। আর মুসাফিরের জন্য যাত্রা পথে প্রতিষ্ঠা লাভের কিছু নাই।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাঃ) আমার দুই কাঁধে হাত রেখে বললেন, দুনিয়াতে এমনভাবে থাক যে, তুমি যেন একজন প্রবাসী অথবা পথচারী মুসাফির । [বুখারী]

আবার কেউ কেউ তো অবসরের অপেক্ষায় দিন গুনছে। এধরনের লোকের জন্য ব্যস্ততার বৃত্ত থেক বের হয়ে ওঠা দুরহ বটে।

“যে ব্যক্তির জীবনে দুনিয়া অর্জন করাই তার বড় উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার উপর বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দেন। আর দরিদ্রতা ও অভাব তার চোখের সামনে তুলে ধরেন। সে যতই চেষ্টা করুক না কেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার ভাগ্যে যতটুকু দুনিয়া লিপিবদ্ধ করেছেন তার বাহিরে সে দুনিয়া হাসিল করতে পারবে না। আর যে ব্যক্তির জীবনে আখিরাত অর্জন করাই তার বড় উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার অন্তরকে অভাব মুক্ত করে দেন।তার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার সম্পদকে সহজ করে দেন। আর দুনিয়া তার নিকট অপমান অপদস্থ হয়ে আসতে থাকে”। [২৪৬৫, তিরমিযি]

আমরা জন্ম নিয়েছি একটা পরীক্ষাকেন্দ্রে। পিতা মাতা থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সন্তান সন্ততি, ধন সম্পদ প্রত্যেকটি এক একটা প্রশ্ন। এসব প্রশ্নে আমরা কি উত্তর করছি সেটাই তিনি দেখবেন। আত্নীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধবকে দেখানোর জন্য, স্ত্রী সন্তানের বিলাসের জন্য, সমাজের চোখে বড় হওয়ার জন্য, নিজের ইগোর বন্দেগীর জন্য হালাল হারামের মিশ্রন করে এই পরীক্ষায় ফেল করলে কেউ সেদিন উদ্ধার করবে না। সুতরাং ইসলামের মোকাবেলায় কোন কিছুকেই প্রাধান্য দেওয়া যাবে না।

إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ ۚ وَاللَّهُ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ [٦٤:١٥]

তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষাস্বরূপ। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার।[৬৪-১৫]

একটা কথা পরিস্কার মনে রাখতে হবে আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে আমাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন। মহান আল্লাহ ক্রেতা, আমরা বিক্রেতা। বিক্রেতাকেই যে প্রথমে তার দ্রব্যাদি হস্তান্তর করতে হয় এটা কারও অজানা নয়।

إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ

আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। [৯-১১১]

মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক পেশা অবলম্বনের তৌফিক দান করুক। আমীন।

বিষয়: বিবিধ

২৩১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File