জেমসের আজকের জেমস হয়ে ওঠার গল্প
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ ফয়সাল ০৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০২:০০:৩৯ দুপুর
পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। উত্তরবঙ্গের এই ছেলে নওগাঁর পত্নীতলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবি, সেই সুত্রে ছোট বেলা থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বাবার সাথেই ঘুরে বেড়াতে হত । বাবা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারমান হলেন আর তাকেও থাকতে হলো চট্টগ্রামে সেখান থেকে মাথায় উঁকি দিলো নতুন পাগলামী। আর এই পাগলামীই আজ তাকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরেছে।
নাইনে পড়া অবস্থায় তার বাবা যখন বুঝলো ছেলের দ্বারা পড়াশোনা সম্ভব নয় তখন ঘর থেকে তাকে বের করে দেয়া হলো । ঠাই হলো চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং এ । আর এই আজিজ বোর্ডিং হয়ে উঠে তার
গানের জগত। আজিজ বোর্ডিং জেমসের জীবনে বিশাল স্মৃতিময় রেখা আলোকপাত করে গেছে।
‘অনন্যা’ জেমসের প্রথম একক এলবাম। যেটা বের হয় ১৯৮৭ সালে। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ফিলিংস’ এ যোগ দেন। সে সময় ঘর ছাড়া জেমস ও’ ফিলিংস’ ব্যান্ড যাদের অনুশীলন থেকে শুরু করে থাকা ,খাওয়া সব হতো সেই “আজিজ বোর্ডিং” এর এক কামরায়। সেই কামরায় তাঁদের কত বিনিদ্র রাত কেটেছে শুধু গান তৈরির নেশায়।
১৯৮৯ সালে বের হয় ফিলিংস এর ব্যানারে প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’। ১৯৯২ সালে জেমস ভালোবেসে বিয়ে করেন মডেল ও অভিনেত্রী রথি কে বিয়ে করেন এবং ২০০১ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায় পরবর্তীকে বেনজীর কে বিয়ে করেন। ‘জেল থেকে বলছি’ নিয়ে আসা জেমস ও ফিলিংস আবার ঝলসানি দিয়ে ওঠে। সেটা ১৯৯৩ সাল। আবার জানান দেন জেমস আছে।
কনসার্টে উন্মাদনা শুরু জেমস থেকেই। জেমস যখন দেশের সঙ্গীতবাজারে আলোচিত নাম সেই সময় তার ভয়াবহ কিছু সমালোচক তৈরি হয়। বিরোধীতা করতে শুরু করে জেমসের গায়কীর ধরনকে। ৯৬ সালে সেই সব সমালোচকদের মুখে ছুঁড়ে মারেন ‘মান্নান মিয়ার তিতাস মলম’ অথবা কবি শামসুর রাহমানের ‘সুন্দরীতমা আমার’। সুন্দরীতমা গানটি কবি শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে করা গান যা জেমস অনুমতি নিয়ে করেন। ‘আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেবো’ তখন পাড়া মহল্লায় বড় ছোট সকলের মুখে।
জেমস যে শুধু জেমস এই দুর্লভ সত্য প্রতিষ্ঠিত করেন ‘দুঃখিনী দুঃখ করোনা’ । এই এলবাম এতটাই শ্রোতাপ্রিয়তা পায় যে ব্যান্ড বলতে যাদের নাক ছিটকে যেত সেই মুরব্বীরাও মনোযোগ দিয়ে শুনলেন দুঃখিনী দুঃখ করোনা। প্রেমিক প্রেমিকাদের মনে জেমস স্থান করে নেয়, স্থান করে নেয় পাড়ার রকের আড্ডাবাজদের মনে। অনেকেই বলেন এই এলবামের ‘যদি কখনও ভুল হয়ে যায়’ গানটি জেমস এর সর্বকালের সেরা একটি গান কেননা এই গানে জেমস এর আবেগ এতোটাই ভয়াবহ ছিল যে কোন মানুষ এর চোখে জল আনতে বাধ্য করতো।
লেইস ফিতা লেইস অ্যালবামটি ব্যানারে সর্বশেষ এলবাম । এই এলবামের ‘সিনায় সিনায় লাগে টান’ গানটা শ্রোতাদের হৃদয়ের খুব গভীরে পৌঁছেছে। সেই সময়ের সেরা সব গীতিকার- লতিফুল ইসলাম শিবলি,বাপ্পি খান,দেহলভি, আনন্দ,তরুন, মারজুক রাসেল, গোলাম মোরশেদ, প্রিন্স মাহমুদ ও জুয়েল-বাবুদের জেমস এর জন্য আলাদা ভাবে গান লিখতে হত। কেননা জেমসের গানট শুধুমাত্র সুর নির্ভর নয় তারচেয়ে বহুগুন বেশি কথা নির্ভর।
লতিফুল ইসলাম শিবলি,বাপ্পি খান, আসাদ দেহলভি, আনন্দ, তরুন, মারজুক রাসেল, গোলাম মোরশেদ লায়ন, প্রিন্স মাহমুদ ও জুয়েল-বাবু জেমস এর জন্য আলাদা ভাবে গান লিখতেন। যে গানের কথাগুলো ছিল একটার চেয়ে আরেকটা অসাধারণ সব কথায় ভরপুর যা একবার শুনে মন ভরতো না। আসাদ দেহলভীর সাথে সম্পর্কের টানাপড়েন পরে বিচ্ছেদ এই অভাব বুঝতে দেননি প্রিন্স মাহমুদ। আফসোসের ব্যাপার গোলাম মোরশেদ লায়ন এখন সঙ্গীত থেকেই দূরে।
‘জেমস’ বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে অন্য দেশেরও একটি প্রিয় গায়ক রুপে পরিচিত হয়েছেন। ২০০৬ সালে ভারতের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় প্রযোজক, পরিচালক মহেশ ভাট এর ‘গ্যাংস্টার’ ছবিতে ‘ভিগি ভিগি’ গান দিয়ে হয়েছেন ভারতের কোটি জনতার প্রিয় শিল্পী। এরপর একই প্রযোজকের ‘ওহ লামহে’ ‘মেট্রো’ ছবিতেও কণ্ঠ দিয়ে চমকে দিয়েছেন পুরো ভারতকে। সর্বশেষ ওয়ার্নিং সিনেমায় টাইটেল সং ‘বেভাসি’ ধারাবাহিকতা ঠিক রাখার সাথে নিজের জনপ্রিয়তাকেও উর্ধ্বমুখি করছেন।
হিন্দি ছবির প্লে-ব্যাকে ধারাবাহিক সাফল্যের পর এবার জেমস ফিরছেন হিন্দি অডিও এ্যালবামের মধ্য দিয়ে। এরই মধ্যে মুম্বাই স্টুডিওতে রেকর্ড করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিজের জনপ্রিয় গানগুলোর হিন্দি ভার্সন, যা অনেক দিন ধরেই করার কথা চলছিল। যে গানের তালিকায় থাকছে মা, মীরা বাই, তেরো নদী সাত সমুদ্দুর, দুখিনির দুঃখ, যেদিন বন্ধু, জেল থেকে বলছিসহ জনপ্রিয় ১০টি গান।
বিষয়: বিবিধ
২৫৩৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন