কেউ ভুলেনা কেউ ভুলে ................

লিখেছেন লিখেছেন শিকারিমন ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০৬:০১:০১ সন্ধ্যা



রাত পোহাবার কতো দেরী পাঞ্জেরী।

আজ ১৯ শে অক্টোবর ১৯৭৪ সালের এই দিনে মুসলিম রেনেসার কবি ফররুখ আহমেদ ইহলোক ত্যাগ করেন। শুধু মাত্র ইসলামী রেনেসার কবি বলে তত্কালীন মুজিব সরকারের সময় এই কবিকে নানারকম মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছিল। কেড়ে নেয়ে হয়েছিল তার আয় রোজগারের একমাত্র মাধ্যম চাকরিটুকু।তার কবিতায় ইসলামী ভাবধারা ছিল বলে তাকে তখনকার কবিরা পাকিস্তান পন্থী বলে গালি দিত। চিকিত্সার অভাবে তার মেয়েটি ও মারা যায়। এই নির্লোভ সাদাসিদে মানুষটি কখনো গোলামী আর দালালি পছন্দ করতেননা। অথচ তখন কবি সামসুর রাহমানের মত কবিরা স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের পা চাটা গোলামী করত। আবার দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পর তারা ঠিকই বোল পাল্টে প্রগতিশীলতার আবরণে মুজিব সরকারের পা চাটতে দেরী করেনি। সেই তালিকায় অনেকের মত সুফিয়া কামাল ও ছিলেন। যিনি কিনা জিন্নাহ কে স্তুতি করে অনেক কবিতা লিখেছিলেন।

কিন্তু সকল লাঞ্চনা যেন কেবল মাত্র কবি ফররুখের জন্যই বরাদ্দ ছিল। আর এই লাঞ্চনার সব কটিই ছিল একমাত্র তার কবিতার জন্য। যে কবিতায় তিনি গাইতেন বিপ্লবের গান , মজ্লুমানের গান , ইসলামী পুনর্জাগরণের গান। আহমেদ ছফার মত বলতে হয় আজকের সমগ্র বাংলা সাহিত্যে কবি ফররুখের মত একজন স্রষ্ট্রা খুঁজে পাওয়া যাবেনা। অথচ এই কবিকে আমরা তিলেতিলে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছি।

কবিই ভাষায় বলতে হয় : এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে ,সেতারা হেলাল এখনো উঠেনি জেগে ,তুমি মাস্তুলে আমি দাড় টানি ভুলে ,অসীম কুয়াশা জাগে শুন্যতা ঘেরি

রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী।

বিষয়: বিবিধ

২০৮৬ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

346380
১৯ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৫
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : May Almighty ALLAH prize him jahhah
২০ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৭
287615
শিকারিমন লিখেছেন : আমিন ।
346404
১৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৮:৪০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : নিজের আদর্শে অবিচলতাই তাঁকে কখনও মাথা নত করতে দেয়নি। সে সময় রাষ্ট্রপতি আবু সাইদ চেীধুরি তার প্রাইভেট সেক্রেটারি কে দিয়ে সাহাজ্য দেওয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কবি তার উপহার গ্রহন করলেও কোন সুবিধা নিতে জাননি।
২০ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৯
287616
শিকারিমন লিখেছেন : এই তথ্য জানানোর জন্য আপনাকে ধনবাদ।
346445
২০ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:১৩
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম ।

আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুণ!
২০ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১০
287617
শিকারিমন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম,
আমিন।
২১ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:০৮
287709
শিকারিমন লিখেছেন : আমার প্রিয় লেখক প্রয়াত আহমদ ছপার একটি লিখা দিলাম পড়ার জন্য।
পড়ে থাকলে ঠিক আছে , না পড়লে দয়া করে পরে নিবেন।
এই লিখাটি লেখার কিছু দিন পরেই কবি ইন্তেকাল করেন।ফন্ট জনিত কিছু বানান ভুল হতে পারে।
আহমদ ছফা “কবি ফররুখ আহমদের কি অপরাধ?” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন (গণকণ্ঠ, ১৬ জুন, ১৯৭৩)। ]
খবর পেয়েছি বিনা চিকিৎসায় কবি ফররুখ আহমদের মেয়ে মারা গেছে। এই প্রতিভাধর কবি যাঁর দানে আমাদের সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে—পয়সার অভাবে তাঁর মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে পারেননি, ওষুধ কিনতে পারেননি। কবি এখন বেকার। তাঁর মৃত মেয়ের জামাই, যিনি এখন কবির সঙ্গে থাকছেন বলে খবর পেয়েছি তাঁরও চাকুরি নেই।
মেয়ে তো মারাই গেছে। যারা বেঁচে আছেন, কি অভাবে, কোন অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিনগুলো অতিবাহিত করছেন, সে খবর আমরা কেউ রাখিনি। হয়ত একদিন সংবাদ পাব কবি মারা গেছেন, অথবা আত্মহত্যা করেছেন। খবরটা শোনার পর আমাদের কবিতাপ্রেমিক মানুষের কি প্রতিক্রিয়া হবে? ফররুখ আহমদের মৃত্যু সংবাদে আমরা কি খুশি হব, নাকি ব্যথিত হব? হয়ত ব্যথিতই হব এ কারণে যে, আজকের সমগ্র বাংলা-সাহিত্যে ফররুখ আহমদের মত একজনও শক্তিশালী স্রষ্টা নেই। এমন একজন স্রষ্টাকে অনাহারে রেখে তিলে তিলে মরতে বাধ্য করেছি আমরা। ভবিষ্যৎ বংশধর আমাদের ক্ষমা করবে না, অথচ কবি ফররুখ আহমদের মরার সমস্ত ব্যবস্থা আমরাই পাকাপোক্ত করে ফেলেছি। আমরা তাঁর চাকুরি কেড়ে নিয়েছি, তাঁর জামাই এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সৎভাবে পরিশ্রম করে বাঁচবার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। রাস্তা-ঘাটে কবির বেরোবার পথ বন্ধ করে দিয়েছি। প্রয়োজনীয় সবগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা ত্রুটি রাখিনি।
কবি ফররুখ আহমদকে আমরা এতসব লাঞ্ছনার মধ্যে ফেলেছি তার কারণ তো একমাত্র কবিতাই। ফররুখ আহমদের একমাত্র অপরাধ তিনি একদা পাকিস্তানের সপক্ষে কবিতা লিখেছেন। তাঁর কবিতার একটি বিশেষ জীবনাদর্শ দুষ্টলোকের ভাষায় ইসলামি জীবনাদর্শ। এখন কথা হল, তখন কি পাকিস্তানের সপক্ষে কবিতা লেখা অপরাধ ছিল? আমরা যতটুকু জানি পাকিস্তান এবং ইসলাম নিয়ে আজকের বাংলাদেশে লেখেননি এমন কোন কবি-সাহিত্যিক নেই বললেই চলে। অন্য অনেককে বাদ দিয়েও কবি সুফিয়া কামালের পাকিস্তান এবং জিন্নাহর ওপর নানা সমযে লেখা কবিতাগুলো জড়ো করে প্রকাশ করলে ‘সঞ্চয়িতা’র মত একখানা গ্রন্থ দাঁড়াবে বলেই আমাদের ধারণা। অথচ ভাগ্যের কি পরিহাস কবি সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হয়ে মস্কো-ভারত ইত্যাদি দেশ সফর করে বেড়াচ্ছেন, আর ফররুখ আহমদ রুদ্ধদ্বার কক্ষে বসে অপমানের লাঞ্ছনায় মৃত্যুর দিন গুনছেন। ফররুখ আহমদের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করে বাংলাভাষার সতীত্ব হানি করেছেন। কিন্তু কবি ফররুখ আহমদ নিজে বলেছেন, তিনি শব্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, কবিতার ক্ষেত্রে তা নিশ্চয়ই দোষনীয় নয়। বিশেষত বাংলাদশে এমন একটা সময় ছিল, কবি-সাহিত্যিকেরা উর্দু, ফারসি ঘেঁষা দেখাতে পারলে বর্তে যেতেন। তাদের অনেকেই এখন বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন। তাছাড়া ইংরেজি, জার্মান, সংস্কৃত ইত্যাদি ভাষা নিয়ে যাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কবিতা, গল্প লিখতে চেষ্টা করেছেন, তাঁদেরকে সে সকল রচনার জন্য পুরস্কৃত করতেও আমাদের বাধছে না। ও সমস্তের ফলে যে বাংলাভাষা সমৃদ্ধ হচ্ছে সত্যিকার অর্থে সে বিচার কে করবে? অথচ অন্য কবি-সাহিত্যিক সকলে বাইরে রয়েছেন। কিন্তু শাস্তি ভোগ করছেন একা ফররুখ আহমদ—এ কেমন ধারা বিচার?
ফররুখ আহমদের বিরুদ্ধে যে দু’টি উল্লেখযোগ্য নালিশ রয়েছে, সেগুলো হল—তিনি রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে চল্লিশজন স্বাক্ষরকারীর একজন। তিনি স্বশ্রদ্ধভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু স্বাক্ষরদানকারী চল্লিশজনের অনেকেই তো এখনো বাংলাদেশ সরকারের বড় বড় পদগুলো অলংকৃত করে রয়েছেন। কিন্তু ফররুখ আহমদকে একা কেন শাস্তি ভোগ করতে হবে? পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন না কে? আজকের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী (শেখ মুজিব) স্বয়ং তো এক সময়ে পাকিস্তান আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। সাতই মার্চের পূর্ব পর্যন্ত তিনি পাশাপাশি জয়-বাংলা এবং জয়-পাকিস্তান শব্দ দু’টো উচ্চারণ করেছিলেন, তাহলে ফররুখ আহমদের অপরাধটা কোথায়? বলা হয়ে থাকে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে তিনি অনেকবেশি সাম্প্রদায়িক বিষোদগার করেছিলেন। সেপ্টেম্বরের যুদ্ধের সমস্ত প্রমাণ এখনো নষ্ট হয়ে যায়নি। বাংলাদেশের সমস্ত লেখক-কবি-সাহিত্যিক সাম্প্রদায়িকতার প্রচাওে কে কার চাইতে বেশি যেতে পারেন সে প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ করেন আমরা দেখিয়ে দিতে পারি। মানুষের স্মৃতি এত দুর্বল নয় যে, হিং টিং ছট ইত্যাদি প্রোগামগুলো ভুলে গেছে। ঐ সমস্ত প্রোগ্রাম যারা করেছে সংস্কৃতির সে সকল কলমধারী গুন্ডারা বাংলাদেশে বুক চিতিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতির আসন দখল করে আছে—কি আশ্চর্য। চাকুরি হারাবেন, না-খেতে পেয়ে মারা যাবেন এক ফররুখ আহমদ।
এতসব দোষের মধ্যেও ফররুখ আহমদের কতিপয় গুণের কথা আমরা না-উল্লেখ করে পারছিনে। সেপ্টেম্বর যুদ্ধের পরে কবি ফররুখ আহমদকে যখন প্রাইড অব পারফরমেন্স দেয়ার কথা ওঠে, তিনি অস্বীকার করেছিলেন। আমরা শুনেছিলম, তিনি বলেছিলেন, একজন কবির ক্ষমতাদর্পীর হাত থেকে নেয়ার কিছুই নেই। খবর পেয়েছিলাম, সে প্রাইড অব পারফরমেন্স এমন একজন সাহিত্যসেবীকে দেয়া হয়েছিল এখন যত্রতত্র তাঁর শোকসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি দলের সকলে তাঁর কথা মনে করে শোকাশ্র“ বর্ষণ করছেন। মজার কথা হল, তিনিও দখলদার পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের সপক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। যাকে নিয়ে এত লাফালাফি তিনি যদি বেঁচে থাকতেন আজ হয়ত কারাগারেই থাকতেন। আমাদের কথা হল, ফররুখ আহমদের মত একজন শক্তিমান স্রষ্টার চাকুরি কেড়ে নেয়া, সপরিবারে তাঁকে মৃত্যু-যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করার পেছনে ন্যায়-নীতিসঙ্গত যুক্তিটা কি হতে পারে?
আমরা বাংলাদেশের আরো একজন খ্যাতনামা কবির কথা জানি (কবি শামসুর রাহমান)। যিনি পাকিস্তানি দখলদার সৈন্যদের তত্ত্বাবধানে সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিকটির (দৈনিক পাকিস্তান) সম্পাদকীয় রচনা করেছিলেন। ঐ পত্রিকার চাকুরি করেন আর একজন কবি সম্পর্কে কানা-ঘুষা শোনা যাচ্ছে যে, তিনি পাকিস্তানি মেজর ক্যাপটেনদের সাহায্যে নাম ভাঙ্গিয়ে লাহোর করাচি ছুটোছুটি করেছেন। কেউ যদি আমাদের বক্তব্যকে অসত্য মনে করেন, বাস্তব প্রমাণ দাখিল করতে পারব।
কত মুসলিম লীগ এবং জামাড়তে ইসলামের গুন্ডা, এনএসএফ-এর চর সরকারি আনুকূল্যে পুনর্বহাল হয়েছে, তাদের সংখ্যা হাজারকে হাজার। একজন দুজন নয়।
কিন্তু শাস্তিভোগ করবেন একজন আত্মমর্যাদাজ্ঞানসম্পন্ন কবি। এ ধরনের অবিচার আমাদের এ বাংলাদেশেই হওয়া সম্ভব। প্রসঙ্গত ভূতপূর্ব পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকার কুখ্যাত বার্তা-সম্পাদক এবিএম মুসার নাম বলতে পারি। এই মুসা সাহেব মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কোলকাতায় যেয়ে হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডে আওয়ামী লীগারদের বিরুদ্ধে যে বিষোদগার করেছিলেন, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের মন থেকে সে স্মৃতি এত তাড়াতাড়ি মুছে যায়নি। মুছে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেমিক সম্মানটি দিতেও রাজি ছিলেন না।
হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডে তাদেও রেবেল বলে অবহিত করেছিলেন। সেই মুসা সাহেব এখন বাংলাদেশের সংসদ-সদস্য (আওয়ামী লীগের)। ফররুখ আহমদের অপরাধ শেষ পর্যন্ত এই দাঁড়ায় যে, তিনি অন্যান্য বিশ্বাসঘাতকদের মত শ্লোগান বদল করতে পারেননি। সৎ কবিরা অনেক সময় ধরতাই বুলিতে গা ঢেলে দিতে পারেন না। সেটাই তাদের একমাত্র অপরাধ। কবি ফররুখ আহমদও এই একই অপরাধে অপরাধী।
অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক যাদের কোন রকমের আদর্শবোধ নেই, চরিত্র নেই, সুবিধেটাই নীতি। আমরা জানি, তারা আজ ফররুখ আহমদের নামে দুটো সমবেদনার কথা কইতে কুণ্ঠাবোধ করেন। তারপরেও আমরা মনে করি ফররুখ আহমদ একজন বীরচরিত্রের পুরুষ। একজন শক্তিমন্ত কবি। ফররুখ আহমদের রুটি রোজগারের পথ খুলে দিতে আবদন করার কোন সার্থকতা নেই। কেননা, এবিএম মুসা সাহেবের মত মানুষেরা এই সরকারের সংসদ-সদস্য, হি টিং ছটের কলমধারী গুন্ডারা এই সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণাদাতা। তাদের যদি বিবেক থাকত, যদি সাহিত্যে এবং সাহিত্যিকদের প্রতি প্রেম থাকত কবি ফররুখ আহমদের মেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যেত না। কবিকে বৃদ্ধ বয়সে উপোস করতে হত না। আমরা ফররুখ আহমদকে বাঁচাবার জন্য, তার পরিবারকে বাঁচাবার জন্য ‘ফররুখ আহমদ সাহায্য তহবিল’ গঠন করার জন্য কবির অনুরাগীজন এবং দেশপ্রেমিক, সংস্কৃতিপ্রেমিক জনগণের কাছে আবেদন রাখছি।
গণকণ্ঠ, ১৬ জুন, ১৯৭৩


346450
২০ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:২৮
নিস্পাপ লিখেছেন : আসেলই আমরা ভূলে গেছি কবি ফররুখ কে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
২০ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১২
287618
শিকারিমন লিখেছেন : ভুলে যান কেন ? কবি ফররুখ কে চিনেন ?
আপনাকে ও ধন্যবাদ।
২২ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:৩৫
287922
নিস্পাপ লিখেছেন : জি খুব ই দুঃখজনক।
346470
২০ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৬:০৩
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : চমৎকার এই পোষ্টের জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা রইলো। তিনি একজন প্রকৃত মানবতার কবি। তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শ্রদ্ধা রইল কবির প্রতি।
২০ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৮:১৮
287642
শিকারিমন লিখেছেন : এটি ব্লগের জন্য লিখিত কোনো পোস্ট ছিলনা। আমার ফেইসবুক স্টাটাসে লিখিছিলাম এই লাইন গুলি।
বিডি ব্লগে ডুকলাম এই মজলুম কবিকে নিয়ে আরো অনেক লিখা পড়ব বলে। আমার বিশ্বাস ও ছিল তাই।
খুব বেশি অবাক হয়েছি , আমার বিশ্বাসের কাছে আমি লজ্জিত হয়েছি।
এই ব্লগে অনেক ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন অনেক ব্লগার আছেন। যারা নিয়মিত লিখেন। সাহিত্য , চলমান ঘটনা , ইসলামী ভাবধারা সহ নানান মজার বিষয় নিয়ে ব্লগে পোস্ট দেন।
অথচ কবি ফররুখ ইসলামী ভাবধারা কে তার কবিতায় , লিখায় প্রকাশ করতে গিয়ে লাঞ্চনা বঞ্চনা আর অপমানের শিকার হয়েছিলেন তত্কালীন শেখ মুজিব সরকারের। মাত্র ৫৬ বত্সর বয়সে কবি রাষ্ট্রীয় জুলুমের শিকার হয়ে অনাহার , চিকিত্সার অভাবে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। অথচ এই দিনে নিয়মিত কোনো বিজ্ঞ ব্লগারদের নিকট থেকে কবির মাগফেরাত জানিয়ে একটি পোস্ট ও চোখে পড়েনি।
গত ১৬ তারিখ ছিল রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লার জন্ম বার্ষিকী। আমি অনলাইন এ আরো বেশ কিছু ব্লগ সাইটে মাঝে মাঝে ভিজিট করি। ১৬ তারিখ ছিল যেন ওই ব্লগ গুলো রুদ্র ময়। রুদ্র ভক্তদের লিখায় সয়লাব ছিল ওই ব্লগ সাইট গুলো। এটাই স্বাভাবিক। অথচ টুডে ব্লগে পাওয়া যায়নি কবি ফররুখ ভক্তদের লেখা একটি পোস্ট।
আপনি হয়ত ভাবছেন আপনার মন্তব্যের উত্তরে আমি এইসব কেন লিখছি। ওই যে আপনি বলেছেন চমত্কার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। এই জন্য এত বড় মন্তব্য। একটি ফেইসবুক এর স্টাটাস দিয়ে এই মজলুম কবিকে বোজানো যায়না। তাই এটি চমত্কার পোস্ট নয়। যারা চমত্কার লিখেন তাদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ছিল আমার এই লিখার শিরোনাম। কিন্তু কেউ লিখলোনা। ভুলে যান সবাই।
ধন্যবাদ আপনাকে।
২০ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:৫৪
287673
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ বিষয়টি ধরিয়ে দেয়ার জন্য। আমরা আমাদের অবহেলার কারণেই এমন মানুষদের আজ ভুলতে বসেছি। কবির অমর কবিতা ‘পাঞ্জেরি’ পড়ে যতটুকু বুঝেছি এর মাধ্যমে কবি ঘুণে ধরা সমাজের লোকদের জাগানোর চেষ্টা করেছেন। আপনার লেখা থেকে জানলাম কোনো প্রলোভনে পড়ে তিনি তার নীতিতে আপস করেননি, দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন, অভাবের সাথে যুদ্ধ করেছেন কিন্তু নীতির বিষয়ে কোনো আপস করেননি। এই গুরুত্ব বুঝার মত মানুষও তো সমাজে থাকতে হবে। তাই কবিকে সম্মান জানানো বলতে শুধু বক্তব্যে ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
ব্লগের কথা বললে সংক্ষেপে বলতে হয় ভালো বিশ্লেষণধর্মী লেখা লেখার মত লেখক/লেখিকা এবং কেঊ লিখলে তাতে মন্তব্য করার মত পাঠক/পাঠিকা এই ব্লগে নেই। ইতিহাস, ঐতিহ্য, গুণীজনদের নিয়ে একমাত্র ব্লগার রিদওয়ান কবির সবুজ ভাই ছাড়া আর কাঊকে লিখতে দেখিনি। আর আগ্রহী কেউ লিখলেও এসব পোস্টে ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ, শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ, সহমত পাঠকের এমন মন্তব্যে যারা লিখে তারাও একসময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কারণ অনেকের মন্তব্য প্রীতি রয়েছে। এর চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস শেয়ার করলে হাজার খানেক ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে শ খানেক লাইক তো পাওয়া যায়-এমন মানসিকতাও রয়েছে অনেকের। আপনার তথাকথিত ইসলামিস্টরাও এর বাইরে নন। অনেকে নিজের মতের সাথে না মিললে মন খারাপ করে ব্লগ ত্যাগ করেন, মন্তব্য না পেলে লিখতে চাননা, অনেকে আবার যুক্তির পরিবর্তে গালিকে শেষ অস্ত্র হিসেবে বেছে নেন । মডারেশন এ যারা আছেন তারাও মাঝে মাঝে বিশেষ দিনগুলোতে লেখা স্টিকি করে সবাইকে জানানোর দায়িত্ব নিতে পারেন। সেটাও তেমন দায়িত্বের সাথে করা হয়না বলে আমার মত সাধারণ পাঠকের কাছে এমন অনেক কিছু অজানা থেকে যায়।
কবি মানুষকে ভালোবেসেছিলেন বলেই মানবতার ধর্ম ইসলামকে ভালোবেসেছিলেন। কবি ফররুখ আহমদ অক্ষম হয়ে পড়েননি। নির্যাতিতদের পক্ষে লড়াই করেছেন। তিনি কাঊকে না পেয়ে একা লড়েছেন কিন্তু আমরা অনেক থেকেও সবাই এক হতে পারিনি। এটাই পার্থক্য। এই অবজ্ঞা করার মানসিকতা ইসলামিস্টদের মধ্যেও রয়েছে বলে কবি রুদ্রের সাথে প্রতিযোগিতায় ফররুখ আহমেদের মত কবিরা এভাবেই হারিয়ে গেছেন। কবির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো। ধন্যবাদ আপনাকে।


২১ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১২:৫১
287693
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : শুকরিয়া দুজনকেইHappy
২১ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:০৫
287708
শিকারিমন লিখেছেন : আমার প্রিয় লেখক প্রয়াত আহমদ ছপার একটি লিখা দিলাম পড়ার জন্য।
পড়ে থাকলে ঠিক আছে , না পড়লে দয়া করে পরে নিবেন।
এই লিখাটি লেখার কিছু দিন পরেই কবি ইন্তেকাল করেন।ফন্ট জনিত কিছু বানান ভুল হতে পারে।
আহমদ ছফা “কবি ফররুখ আহমদের কি অপরাধ?” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন (গণকণ্ঠ, ১৬ জুন, ১৯৭৩)। ]

কবি ফররুখ আহমদের কি অপরাধ? – আহমদ ছফা
===========================
খবর পেয়েছি বিনা চিকিৎসায় কবি ফররুখ আহমদের মেয়ে মারা গেছে। এই প্রতিভাধর কবি যাঁর দানে আমাদের সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে—পয়সার অভাবে তাঁর মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে পারেননি, ওষুধ কিনতে পারেননি। কবি এখন বেকার। তাঁর মৃত মেয়ের জামাই, যিনি এখন কবির সঙ্গে থাকছেন বলে খবর পেয়েছি তাঁরও চাকুরি নেই।
মেয়ে তো মারাই গেছে। যারা বেঁচে আছেন, কি অভাবে, কোন অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিনগুলো অতিবাহিত করছেন, সে খবর আমরা কেউ রাখিনি। হয়ত একদিন সংবাদ পাব কবি মারা গেছেন, অথবা আত্মহত্যা করেছেন। খবরটা শোনার পর আমাদের কবিতাপ্রেমিক মানুষের কি প্রতিক্রিয়া হবে? ফররুখ আহমদের মৃত্যু সংবাদে আমরা কি খুশি হব, নাকি ব্যথিত হব? হয়ত ব্যথিতই হব এ কারণে যে, আজকের সমগ্র বাংলা-সাহিত্যে ফররুখ আহমদের মত একজনও শক্তিশালী স্রষ্টা নেই। এমন একজন স্রষ্টাকে অনাহারে রেখে তিলে তিলে মরতে বাধ্য করেছি আমরা। ভবিষ্যৎ বংশধর আমাদের ক্ষমা করবে না, অথচ কবি ফররুখ আহমদের মরার সমস্ত ব্যবস্থা আমরাই পাকাপোক্ত করে ফেলেছি। আমরা তাঁর চাকুরি কেড়ে নিয়েছি, তাঁর জামাই এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সৎভাবে পরিশ্রম করে বাঁচবার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। রাস্তা-ঘাটে কবির বেরোবার পথ বন্ধ করে দিয়েছি। প্রয়োজনীয় সবগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা ত্রুটি রাখিনি।
কবি ফররুখ আহমদকে আমরা এতসব লাঞ্ছনার মধ্যে ফেলেছি তার কারণ তো একমাত্র কবিতাই। ফররুখ আহমদের একমাত্র অপরাধ তিনি একদা পাকিস্তানের সপক্ষে কবিতা লিখেছেন। তাঁর কবিতার একটি বিশেষ জীবনাদর্শ দুষ্টলোকের ভাষায় ইসলামি জীবনাদর্শ। এখন কথা হল, তখন কি পাকিস্তানের সপক্ষে কবিতা লেখা অপরাধ ছিল? আমরা যতটুকু জানি পাকিস্তান এবং ইসলাম নিয়ে আজকের বাংলাদেশে লেখেননি এমন কোন কবি-সাহিত্যিক নেই বললেই চলে। অন্য অনেককে বাদ দিয়েও কবি সুফিয়া কামালের পাকিস্তান এবং জিন্নাহর ওপর নানা সমযে লেখা কবিতাগুলো জড়ো করে প্রকাশ করলে ‘সঞ্চয়িতা’র মত একখানা গ্রন্থ দাঁড়াবে বলেই আমাদের ধারণা। অথচ ভাগ্যের কি পরিহাস কবি সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হয়ে মস্কো-ভারত ইত্যাদি দেশ সফর করে বেড়াচ্ছেন, আর ফররুখ আহমদ রুদ্ধদ্বার কক্ষে বসে অপমানের লাঞ্ছনায় মৃত্যুর দিন গুনছেন। ফররুখ আহমদের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করে বাংলাভাষার সতীত্ব হানি করেছেন। কিন্তু কবি ফররুখ আহমদ নিজে বলেছেন, তিনি শব্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, কবিতার ক্ষেত্রে তা নিশ্চয়ই দোষনীয় নয়। বিশেষত বাংলাদশে এমন একটা সময় ছিল, কবি-সাহিত্যিকেরা উর্দু, ফারসি ঘেঁষা দেখাতে পারলে বর্তে যেতেন। তাদের অনেকেই এখন বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন। তাছাড়া ইংরেজি, জার্মান, সংস্কৃত ইত্যাদি ভাষা নিয়ে যাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কবিতা, গল্প লিখতে চেষ্টা করেছেন, তাঁদেরকে সে সকল রচনার জন্য পুরস্কৃত করতেও আমাদের বাধছে না। ও সমস্তের ফলে যে বাংলাভাষা সমৃদ্ধ হচ্ছে সত্যিকার অর্থে সে বিচার কে করবে? অথচ অন্য কবি-সাহিত্যিক সকলে বাইরে রয়েছেন। কিন্তু শাস্তি ভোগ করছেন একা ফররুখ আহমদ—এ কেমন ধারা বিচার?
ফররুখ আহমদের বিরুদ্ধে যে দু’টি উল্লেখযোগ্য নালিশ রয়েছে, সেগুলো হল—তিনি রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে চল্লিশজন স্বাক্ষরকারীর একজন। তিনি স্বশ্রদ্ধভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু স্বাক্ষরদানকারী চল্লিশজনের অনেকেই তো এখনো বাংলাদেশ সরকারের বড় বড় পদগুলো অলংকৃত করে রয়েছেন। কিন্তু ফররুখ আহমদকে একা কেন শাস্তি ভোগ করতে হবে? পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন না কে? আজকের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী (শেখ মুজিব) স্বয়ং তো এক সময়ে পাকিস্তান আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। সাতই মার্চের পূর্ব পর্যন্ত তিনি পাশাপাশি জয়-বাংলা এবং জয়-পাকিস্তান শব্দ দু’টো উচ্চারণ করেছিলেন, তাহলে ফররুখ আহমদের অপরাধটা কোথায়? বলা হয়ে থাকে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে তিনি অনেকবেশি সাম্প্রদায়িক বিষোদগার করেছিলেন। সেপ্টেম্বরের যুদ্ধের সমস্ত প্রমাণ এখনো নষ্ট হয়ে যায়নি। বাংলাদেশের সমস্ত লেখক-কবি-সাহিত্যিক সাম্প্রদায়িকতার প্রচাওে কে কার চাইতে বেশি যেতে পারেন সে প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ করেন আমরা দেখিয়ে দিতে পারি। মানুষের স্মৃতি এত দুর্বল নয় যে, হিং টিং ছট ইত্যাদি প্রোগামগুলো ভুলে গেছে। ঐ সমস্ত প্রোগ্রাম যারা করেছে সংস্কৃতির সে সকল কলমধারী গুন্ডারা বাংলাদেশে বুক চিতিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতির আসন দখল করে আছে—কি আশ্চর্য। চাকুরি হারাবেন, না-খেতে পেয়ে মারা যাবেন এক ফররুখ আহমদ।
এতসব দোষের মধ্যেও ফররুখ আহমদের কতিপয় গুণের কথা আমরা না-উল্লেখ করে পারছিনে। সেপ্টেম্বর যুদ্ধের পরে কবি ফররুখ আহমদকে যখন প্রাইড অব পারফরমেন্স দেয়ার কথা ওঠে, তিনি অস্বীকার করেছিলেন। আমরা শুনেছিলম, তিনি বলেছিলেন, একজন কবির ক্ষমতাদর্পীর হাত থেকে নেয়ার কিছুই নেই। খবর পেয়েছিলাম, সে প্রাইড অব পারফরমেন্স এমন একজন সাহিত্যসেবীকে দেয়া হয়েছিল এখন যত্রতত্র তাঁর শোকসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি দলের সকলে তাঁর কথা মনে করে শোকাশ্র“ বর্ষণ করছেন। মজার কথা হল, তিনিও দখলদার পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের সপক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। যাকে নিয়ে এত লাফালাফি তিনি যদি বেঁচে থাকতেন আজ হয়ত কারাগারেই থাকতেন। আমাদের কথা হল, ফররুখ আহমদের মত একজন শক্তিমান স্রষ্টার চাকুরি কেড়ে নেয়া, সপরিবারে তাঁকে মৃত্যু-যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করার পেছনে ন্যায়-নীতিসঙ্গত যুক্তিটা কি হতে পারে?
আমরা বাংলাদেশের আরো একজন খ্যাতনামা কবির কথা জানি (কবি শামসুর রাহমান)। যিনি পাকিস্তানি দখলদার সৈন্যদের তত্ত্বাবধানে সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিকটির (দৈনিক পাকিস্তান) সম্পাদকীয় রচনা করেছিলেন। ঐ পত্রিকার চাকুরি করেন আর একজন কবি সম্পর্কে কানা-ঘুষা শোনা যাচ্ছে যে, তিনি পাকিস্তানি মেজর ক্যাপটেনদের সাহায্যে নাম ভাঙ্গিয়ে লাহোর করাচি ছুটোছুটি করেছেন। কেউ যদি আমাদের বক্তব্যকে অসত্য মনে করেন, বাস্তব প্রমাণ দাখিল করতে পারব।
কত মুসলিম লীগ এবং জামাড়তে ইসলামের গুন্ডা, এনএসএফ-এর চর সরকারি আনুকূল্যে পুনর্বহাল হয়েছে, তাদের সংখ্যা হাজারকে হাজার। একজন দুজন নয়।
কিন্তু শাস্তিভোগ করবেন একজন আত্মমর্যাদাজ্ঞানসম্পন্ন কবি। এ ধরনের অবিচার আমাদের এ বাংলাদেশেই হওয়া সম্ভব। প্রসঙ্গত ভূতপূর্ব পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকার কুখ্যাত বার্তা-সম্পাদক এবিএম মুসার নাম বলতে পারি। এই মুসা সাহেব মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কোলকাতায় যেয়ে হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডে আওয়ামী লীগারদের বিরুদ্ধে যে বিষোদগার করেছিলেন, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের মন থেকে সে স্মৃতি এত তাড়াতাড়ি মুছে যায়নি। মুছে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেমিক সম্মানটি দিতেও রাজি ছিলেন না।
হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডে তাদেও রেবেল বলে অবহিত করেছিলেন। সেই মুসা সাহেব এখন বাংলাদেশের সংসদ-সদস্য (আওয়ামী লীগের)। ফররুখ আহমদের অপরাধ শেষ পর্যন্ত এই দাঁড়ায় যে, তিনি অন্যান্য বিশ্বাসঘাতকদের মত শ্লোগান বদল করতে পারেননি। সৎ কবিরা অনেক সময় ধরতাই বুলিতে গা ঢেলে দিতে পারেন না। সেটাই তাদের একমাত্র অপরাধ। কবি ফররুখ আহমদও এই একই অপরাধে অপরাধী।
অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক যাদের কোন রকমের আদর্শবোধ নেই, চরিত্র নেই, সুবিধেটাই নীতি। আমরা জানি, তারা আজ ফররুখ আহমদের নামে দুটো সমবেদনার কথা কইতে কুণ্ঠাবোধ করেন। তারপরেও আমরা মনে করি ফররুখ আহমদ একজন বীরচরিত্রের পুরুষ। একজন শক্তিমন্ত কবি। ফররুখ আহমদের রুটি রোজগারের পথ খুলে দিতে আবদন করার কোন সার্থকতা নেই। কেননা, এবিএম মুসা সাহেবের মত মানুষেরা এই সরকারের সংসদ-সদস্য, হি টিং ছটের কলমধারী গুন্ডারা এই সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণাদাতা। তাদের যদি বিবেক থাকত, যদি সাহিত্যে এবং সাহিত্যিকদের প্রতি প্রেম থাকত কবি ফররুখ আহমদের মেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যেত না। কবিকে বৃদ্ধ বয়সে উপোস করতে হত না। আমরা ফররুখ আহমদকে বাঁচাবার জন্য, তার পরিবারকে বাঁচাবার জন্য ‘ফররুখ আহমদ সাহায্য তহবিল’ গঠন করার জন্য কবির অনুরাগীজন এবং দেশপ্রেমিক, সংস্কৃতিপ্রেমিক জনগণের কাছে আবেদন রাখছি।
গণকণ্ঠ, ১৬ জুন, ১৯৭৩

২১ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:৩২
287711
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : পড়লাম। শুকরিয়াGood Luck
২১ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৫:২৬
287731
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : এত কিছু জানা ছিলনা। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর প্রতি চরম অবহেলা ও উদাসীনতা প্রদর্শন করলেও বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি প্রতিভার যে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ধন্যবাদ আপনাকে।
354675
২০ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১২:৩৩
জোবাইর চৌধুরী লিখেছেন : কবিরা যখন
দলে দলে ভাগ হয় -
চিৎকার করে
বলিতে ইচ্ছে হয়।

সামান্য বিলাসীতার জন্যে -
এমন ভন্ডামি কি
না করিলে নয়?

কবি ফররুখ আহমেদ অন্যদের মত ভন্ড হতে পারেনি বলেই মানবেতর জীবন শেষে চলে গিয়েছিলেন। লেখাটি আমার পড়া ছিলনা আগে। ভালো লাগল। ধন্যবাদ।
২০ ডিসেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৯
294563
শিকারিমন লিখেছেন : আপনাকে ও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File