শিশু আইলানের প্রতিবাদী পশ্চাতদেশ ,আর মুসলমানদের দায়।
লিখেছেন লিখেছেন শিকারিমন ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:১০:৩৪ বিকাল
লাল জামা আর নীল্ প্যান্ট পরা আইলানের নিথর নিস্তব্দ আর ঘুমন্ত লাশের ছবিটা এখন অনলাইনের সবচেয়ে টাচিং নিউজ। আইলান দের মত ছোট শিশুরা এ ভাবেই ঘুমাতে খুব পছন্দ করে। আইলান ও ঘুমাচ্ছে এক অনন্ত ঘুমের যাত্রী হয়ে। এই ভোগবাদী আর দানবীয় সমাজের নিপীড়ন অবহেলার শিকার হওয়ার হাত থেকে বেছে গিয়েছে। হয়ত বাচার সাধ আর বেছে থাকার আনন্দ তাকে ও ঘিরে রেখেছিল। তার বেছে থাকার সময় ফুটবল নিয়ে দুরন্ত পনার আরেকটি ছবির স্থির দৃশ্য সেটির ও ইঙ্গিত দেয়। তাই তো অভিমানী চেহারা টা বালুর মুখে গুজে দিয়ে ছোট্ট পশ্চাতদেশ টা দেখিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে গেল এই পৃথিবীর সকল মানুষদের।
এগুলো দেখলে আমরা ব্যথিত হই , অনলাইন কাপিয়ে দেই প্রতিবাদের ভাষায়, এখনো দিচ্ছি। আর আমরা জজবাওয়ালা মুসলমানরা তো আরো একধাপ এগিয়ে। প্রতিবাদে ধুয়ে দিচ্ছি ইউরোপ আমেরিকা আর জাতিসংঘের হর্তাকর্তাদের। প্রশ্ন তুলি তাদের মানবিকতা নিয়ে। পরনের কাপড় মাথায় তুলে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে একহাত দেখে দেই। নিজের ঘরে আগুন লগিযে দিয়ে শয়নে স্বপ্নে যাদের শত্রু ভাবি তাদের কাছেই আবার মানবিক সাহায্যে নিয়ে হাউকাউ। সেই কাফের আর নাফরমানদের কে আহবান করি ত্রাণকর্তা রূপে ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এতোবড় শরণার্থীর ঢল আর নামেনি। মানুষজন দলে দলে ইউরোপের দিকে পাড়ি জমাচ্ছে, মারা যাচ্ছে বা আশ্রয় খুজছে চুড়ান্ত অসহায় হয়ে। পরিবারগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
কই এইসব অসহায় মুলিম শরনার্থীদের জন্য চোখে পড়ার মত কোনো সাহায্য তো কোনো যুব্বাওয়ালা দেশের দেখা যায় নি। বড় যুব্বাওয়ালা সৌদি আর কথিত পরমানু ইরান কি করছে এই মুসলিম অসহায় দের জন্য। পত্রিকায় দেখলাম কয়েকদিন আগে সৌদি যুব্বাওয়ালা তার রাজপরিবার ও আমীর ওমরা মিলে প্রায় হাজার খানিক বিলাসী শরণার্থী নিয়ে আসে প্যারিসে। কোনো এক সমুদ্র কুলে তাদের জন্য করা হয় মিনি অবকাশ কালীন কেন্দ্র। কি ছিলনা তাতে কেনাকাটার জন্য মার্কেট, আর রসালো বিনোধনের জন্য মোহনীয় সাধা চামড়ার রমনীকুল। আরব শেখ রা দু হাতে উড়িয়েছে পেট্রোডলার। আর ফ্রান্স সরকার তার ভঙ্গুর অর্থনীতির কিছুটা হলেও প্রলেপ দিয়েছে শেখ দের উড়িয়ে দেয়া পেট্রোডলার দু হাত ভরে। আর দুবাই আর কাতারের কথা বলে কি আর শেষ করা যায়। অথচ তাদের ই পাশের দেশ হতে জীবন বাচাতে জীবন হাতে পাড়ি দিচ্ছে ইউরোপে।
কথিত শিয়া সুন্নি নব্য খেলাফতের দাবিদার আই সিস আর বাসার বাহিনীর দানবীয় ধর্মের না অধর্ম যুদ্ধে অসহায় এই মানুষ গুলো। ইরান আর সৌদি আরবের গালফে তাদের ক্ষমতা জাহিরের বলি হচ্ছে ফিলিস্তিন , মিসর আর ইয়েমেনের জনগণ। আর আমরা মোটা মাথার মুসলমানরা গেয়ে যাওয়া বুলির মত ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে যাই নিরন্তর। আরে এই সব ইহুদি নাসারাদের কাজ , মুসলমানদের মাঝে যেন ঐক্য না হতে পারে এই তাদের চক্রান্ত। তাদের চক্রান্তের ফাদে মুসলমানরা পা দিয়ে আজ এই অবস্থা। এই বলে ইহুদি নাসারা আর খ্রিস্টান দের গোষ্ঠী উদ্ধারে আমাদের সময় পার। আবার সেই তাদের তৈরী জাতি সংঘের নিকট আমাদের মানবিকতার আহবান। আমরা কি ভুলে যচ্ছি রোহিঙ্গা দের সাথে আমাদের ব্যবহার , নাসাকা বাহিনীর হাতে নির্যাতিত মুসলমানরা বাচার আশায় উত্তাল নাফ নদী পাড়ি দিয়ে জীবন বাচাতে আসতে চেয়েছিল বাংলাদেশে। আমরা তাদের কে বন্ধুকের গুলির ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি আবার উত্তাল নাফের জলের বুকে।
পাশ্চাত্য সভ্যতাকে একহাত দেখিয়ে আর সারা জীবন গালি দিয়ে মুসলমানদের দায় কখনো এড়ানো যাবেনা। এই অসহায় পরিবার আর শিশু আইলান দের মৃত্যুর জন্য মূল দায়ী হলো তারই সম্প্রদায় ভুক্ত মুসলমানরা। আর এই দায় যদি ভাঙ্গা রেকর্ডের মত গড়পরতায় পাশ্চাত্য সভ্যতাকে দিয়ে যাই তাহলে শুধু এখন নয় কেয়ামত পর্যন্ত আইলানরা মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে আজীবন পশ্চাতদেশ দেখিয়ে যাবে আমাদের। ঐ শিশুকে কিংবা তার মতো হাজারো শিশুকে বাঁচানোর সত্যিকার উপায় হলো শক্তি অর্জন করা। সভ্যতা আর জ্ঞানে ভারী হওয়া। সেটি করার সময় কি হবে আমাদের নাকি আমাদের ব্যর্থতার দায় তাদের উপর চাপানোর জন্য ভাঙ্গা রেকর্ড প্লে করেই যাব।
বিষয়: বিবিধ
১৭০৮ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনাকে।
বন্চিত , অসহায় মানুষের কাফেলা এখন ছুটছে অলটাইম বেনিফিশিটারী পশ্চিমাদের দিকে ।
এটা এক সময় না এক সময় আসতোই । আরও কঠিন জিনিস ফেস করতে হবে ভোগবাদী পশ্চিমাদের ।
বাংলাদেশীরা যখন মুক্তিযুদ্ধ করছিল তখন পাকিস্তানীদের কাছেও দাঙ্গাবাজ ছিল ।
যারা নিজেদের দেশ থেকে উৎখাত হচ্ছে পশ্চিমা মদদপুষ্ট শোষকদের দ্বারা , যারা এতদিন মারের পর মার সহ্য করে গেছে - তারা এখন ফাইট-ব্যাক করায় পশ্চিমামনষ্কদের কাছে দাঙ্গাবাজ হয়ে যাবে - এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় না ।
ডাকাত আপনাকে লুটবে , মারবে , হত্যা করবে সেটা ঠিক আছে। কোন প্রতিবাদ করলে , বাধা দিলে বা ডাকাতদের ধরে মাইর দিলে সেটা হয়ে যাবে অনেক খারাপ একটা কাজ ?
যাদের এতদিন লুটে গেছেন আপনারা এখন তারাই আপনাদের কাছে আসছে তাদের হিস্যা নিতে । এটা হতই , কত আর ঠেকাবেন ?
শুনেছি ২/১ টা ইউরোপিয়ান দেশ নাকি আশ্রয় দিতে চেয়েছে । সেটা হবে সেই টাকায় যেটা তারা এসব দেশ থেকে একদা লুটে এনেছিল , নিজেদের উন্নত করে এখন সভ্য দেশ এর তকমা লাগিয়েছে । তাদের এই সভ্যতার আস্তিন উল্টালে দেখা যাবে এসব দেশের মানুষদের রক্ত মেখে আছে ।
মনে রাখা দরকার রাত যত গভীর হয় , প্রভাত তত নিকটে আসে। ইনশা আল্লাহ মুসলমানদের এই দুর্বলতা কেটে যাবে একদিন নিশ্চয়। সেদিন আবার তারা দুনিয়াকে জয় করবে। মানবিক আর শান্তির আবাস ভূমি হবে সেদিন এই পৃথিবী।
মন্তব্য করতে লগইন করুন