কসম করে বলছি আমিও ভালবাসি। আমাকে ভালবাসতেই হবে।
লিখেছেন লিখেছেন শিকারিমন ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৫:৩১:৪৭ সকাল
আজ শুক্রবার আমার ছুটি চলছে। তাই গত চার পাচ দিন হতে মোটামুটি প্লান করে রেখেছি শুক্রবারে মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করব। প্রবাসের পাশ্চাত্যের এই দেশটাতে আছি প্রায় পাচ বছর। জব প্লেছ হতে কখনো শুক্রবারে ছুটি মিলতনা। তার উপর দেশ টির রাজধানী হতে দুরে এক শহরে থাকতাম বলে সেখানে মসজিদ পাওয়া বড় দুস্কর ছিল। এমনিতে এখানে মুসলিম সংখ্যা নেহায়েতি কম বলে মসজিদ ও হাতে গোনা। যাও কয়েকটি আছে দেশটির রাজধানী কেন্দ্রিক। তাই ইচ্ছা থাকা সর্তেও অনেক সময় জুমার নামাজ মিস করতাম। তাই লম্বা ছুটি তে দেশটির রাজধানী তে একটি বাংলাদেশী মেসে উঠেছি কিছু দিনের জন্য। এই শহর টা তে বাংলাদেশী লোকজন ঘরওয়া ভাবে দুটি মসজিদ নির্মান করাতে অনেকেই এখানে ঈদ ,জুমা সহ অন্য নামাজ গুলো আদায় করে। আসার পর হতে আমি একটি মসজিদে নামাজ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত যেতাম। যার ফলে এই মসজিদের অনেক মুসল্লি ও বড় ছোট অনেকের সাথে একটা ভালো সম্পর্ক হয়। অনেক দিন জবের কারণে বাইরে থাকায় অনেকের সাথে সরাসরি যোগাযোগের ব্যাঘাত ঘটে। তাই চিন্তা করলাম ওই মসজিদে গেলে অনেকদিন পর জুমা পড়া ও সাথে অনেকের সাথে দেখার ও সুযোগ হবে। শুক্র বার দুপুর বেলায় গোসল সেরে মসজিদের দিকে রওয়ানা দিলাম। ট্রেন , বাসে দুটো তেই যাওয়া যায়। বাসে যেতে যদিও সময় অনেক বেশি লাগে , তারপর ও আমি বাস কেই বেছে নিলাম। পাতাল ট্রেনে দ্রুত যাওয়া যায় , কিন্ত আমার কাছে পাতাল ট্রেন কে মনে হয় চলন্ত , জীবন্ত গণ কবর। আকাশ , বাতাস , প্রকৃতি কিছু দেখা যায় না , তাই সচরাচর আমি পাতাল ট্রেন কে এডিয়ে চলি। বাস পেলাম , লম্বা পথ যেতে হবে তাই জানালার পাশে সিট নিয়ে বসে পড়লাম। আমার পাশের সিট সামনের এক স্টপেজ পর্যন্ত খালি ছিল। তাই রিলাক্স মুড নিয়ে বসে বসে আমার সাথে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা আশ পাশের গাছ পালা , বিল্ডিং গুলো আর প্রকৃতি দেখছি। যেটি হয়ত পাতাল ট্রেনে চড়লে সম্ভব হতনা। পাচ মিনিট চলার পর একটি স্টপেজ এ বাস থামল। যথা নিয়মে বাসে নতুন নতুন মানুষের আমদানি , রপ্তানি হলো। আমার পাশের বসার জায়গায় ও পূরণ হয়ে গেল। বাংলাদেশী ভাই , সম্ভবত দেশে ফোনে ব্যাস্ত , তাই আমার দিকে তাকিয়ে হাই হাল্লো করার সুযোগ হয় নাই। আমিও তেমন ইচ্ছা প্রকাশ করি নাই , পাছে তার কথার ডিস্টার্ব না হয়। বাস চলছে , গতি বাড়ছে , বাংলাদেশী ছেলেটার কথার গতি ও বাড়ছে। আমর কান ঝালা পালা হয়ে যাচ্ছে, কথা বলছে তো বলছে। ' এই শুননা , সত্যি বলছি তোমাকে খুব লাভ করি , কি বিশ্বাস হয়না এই দেখো আমার মাথা ছুয়ে বলছি। আর কাহাতক সয্য হয় বলুন , মেজাজ আমার চরম তিরিক্ষী হয়ে উঠছে , না পারছি কিছু বলতে , না পারছি হজম করতে। আমার কপালটাই এত যে খারাপ সবসময় পকেটে ইয়ারফোন থাকে , অথচ সেটা পকেটে রাখতেই আজ ভুলে গেছি। জিনিসটা থাকলে না হয় কানে রেখে মুক্তি মিলত।' প্লিজ রাগ করনা লক্ষিটি , কি বলছ বুজতেছিনা , এই এত ঝাপসা কেন তোমার চেহারা'। ছেলেটি সম্ভবত ভিডিও চ্যাট করতেছে। ' কি নাতো আরে বাবা দাড়ি রাখতেছিনা , নো টেন্স আজকে সেভ করে ফেলবো', এই প্রমিজ করলাম। ওই বদ টার কথা বলার আওয়াজ এত্ত পেইন যে , বাসের মধ্যে প্রায় ৫০ জন মানুষ আছে। তাদের চেহারায় চরম বিরক্তি ফুটে উঠছে। বদ টা ভালবাসায় এত বেশি মগ্ন হয়ে উঠলো যে তার আশ পাশে একই ভাষা বাসী লোকজন আছে সেটি ও তার দৃষ্ঠি গোচর হয় নি। শুধু আমি নই ঠিক আমার পাশের সিটে দুজন বাংলাদেশী মহিলা বসা আছে তারাও ছেলেটির কথাতে চরম বিরক্তি আর লজ্জা পাচ্ছে। মন চায় তার কান থেকে ইয়ারফোন টা খুলে ফেলি। তোর ভালবাসার গোষ্টি কিলাই, ভালবাসা কর বেটা তোর ঘরে গিয়ে। কি আর করব ছেলেটার কথা, গতকাল মধ্য রাত হতে আমি জলছি এই জালায়। এখানে এসে যে বাসায় উঠলাম , সেখানে আরো কয়েকজন বাংলাদেশী ছেলে থাকে। অল্প সময়ের জন্য থাকব তো তাই বাসা নিয়ে বেশি খোজাখুজি করিনাই। কি বলিব দুক্ষের কথা রাত বারোটার পর শুরু ভালবাসা কাহানি। আমার ডানে চলে , বামে চলে ,উপরে , নিচে ভালবাসার ছড়া চড়ি। মনে হয় রাত বারোটার পর দুনিয়ার সব ভালবাসা আমার বাসার উপর ক্রমাগত নাজিল হচ্ছে। আর সেই ভালবাসায় ভেসে যাচ্ছে আমার পাশের গোটা চারেক যুবক। সেই ভালবাসা নিতে ব্যার্থ হচ্ছি আমি এক অবলা কপাল পোড়া যুবক। গোষ্টি মারি তোদের ভালবাসার। মাঝে মাঝে চুক চুক , কুচ কুচ সহ অসংক্ষ্য আন সেন্সরড সংলাপ কানে আসছে। আবার অনেক কাকুতি , মিনুতি , চল চাতুরী কথাবার্তা , মনে হয় সামনে পাইলে , পাইছি তোরে খাইছি তোরে , দু প্রান্তের দু যুবক যুবতীর সংলাপের মূল সুর। ভুল তো আমারই , অবিবাহিত যুবকদের সাথে থাকলেই এই অবস্থা। অবস্য আমি ও একই গোত্রের লোক। তবে মনে হয় আমি নিরামিষ , বাসাবাসি নাই। ভালবাসা দিবস নিয়েই যুবক কুলের এই প্রেম সাধনা। অবশেষে সারা রাত মোটামুটি নির্ঘুম থেকে ফজর পড়েই রাতের ঘুম দিলাম। দেখেন বাসে এসে ও একই কান্ড। নছিব টাই খারাপ বোধ হয়। অবশেষে মুক্তি মিলল বাস গন্তব্যে আশায়। ক্রোধ দৃষ্ঠি নিয়ে ছেলেটির দিকে তাকালাম। বাস লাস্ট স্টপেজ এসে গেছে কোনো খবর নাই। ভালবাসা দিতে আর নিতে মগ্ন সে। মর তুই ভালবাসায় , আমি যাই মসজিদে। নামাজ শেষ হলো দেখা সাক্ষাত পর্ব শেষ , ঘরে ফেরার ফালা। বাসের জন্য স্টান্ডে অপেক্ষা করছি , আর ভাবছি ভালবাসা দিবস নিয়ে। গত কাল রাত হতে আমার চারপাশে যে হারে ভালবাসার স্রোত দেখলাম সেটি মিলাতে লাগলাম আমার চারপাশের এখানকার লোকাল মানুষদের সাথে। কোথায় ভালেন্টায়নের ভালবাসা , সব কিছু তো স্বাভাবিক। অন্য সব দিনের মত তাদের আজকের জীবন। নেই সাদা চামড়ার যুবক যুবতীদের অতিরিক্ত ভালবাসার মাখামাখি। এদেশের সকাল বেলায় মিডিয়া গুলোতে দেখলাম না ভালবাসা নিয়ে অতিরঞ্জিত কিছু। তবে কেন বলা হয় পাশ্চাত্য হতে ধার করা এই দিবস। নাকি আমার ভুল পর্যবেক্ষণ। নাকি ওরা সব ভালবাসা আমার দেশে রপ্তানি করে দিল অন্য কিছুর মত। নয়তো কেন বাংলাদেশের সকল ইলেকট্রিক মিডিয়া , প্রিন্ট মিডিয়া , সোশ্যাল নেটে যে ভাবে লাভের পসরা বসেছে , তাতে তো মনে হয় বাংলাদেশ উল্টো রপ্তানি করতে পারবে এই ভালবাসা। যাক বাবা আমি নিরামিষ মানুষ আমার এত কিছুর ভাবার দরকার নাই। তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে চারটা খেয়ে রাতের ঘুম কাভার দিতে হবে। বাস আসলো চেপে বসলাম সিটে। বাসে আমার সাথে অনেক বাংলাদেশী মুসুল্লি ও উঠলো। চিন্তা করলাম আমার মত হয়ত নিরামিষ মানুষ ওরা। ভালো বাসাবাসি তে ওরা নাই , জুমা পড়তে আসলো , এখন গন্তব্যে ফিরছে। হায় আল্লাহ একই শুনছি , একই ভেসে আসছে আমার কানে। '' শোনো রাগ করেনা আমার লক্ষী সোনা , আরে বাবা বলছিনা জুমা পড়তে গেছি তাই তোমার ফোন ধরি নাই। রাগ করেনা যান , জানো আমি তোমাকে কত টুকু মিস করছি। এই ভালবাসা দিবসে আমি তোমাকে আবার বলছি........... . একই হলো আমার , কিছক্ষণ আগ পর্যন্ত যে কথা শুনলে বিষের মত গা জলত। এখন ওই কথা গুলো শুনছি আমি , কিন্তু আমি কেন বিরিক্ত হচ্ছিনা। আমার কি হলো আমাকে কি ভালবাসায় আসর ক ফেলল নাকি ? আমার কেমন জানি ভালবাসতে ইচ্ছে হচ্ছে। কেন ইচ্ছে হবেনা , আমি তো ভালবাসতে জানি। ভালবাসায় তো ভারপুর আমার হৃদয়। আমি তো খুব করে ভালবাসতাম তাকে। তাকে না দেখে ভালবাসার কত গভীরতা সে তো শুধু আমি জানি। কত নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিয়াছি তার গল্প শুনতে শুনতে। তাকে নিয়ে কত গান , কবিতা শুনেছি , দেখেছি। তার গল্প শুনে কতবার অশ্রু ঝরেছে আমার হৃদয় ভেঙ্গে। কত প্রাণ খুলে হেসেছি তার কর্ম শুনে। ওগো আমি তোমাকেই ভালবাসি , প্লিজ তুমি আমার ভালবাসা গ্রহণ কর। তুমি যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও জানো আমার এই জন্ম বৃথা। দয়া করে আমায় গ্রহণ কর। তোমাকে শুধু একটি বার দেখব বলে কত পন করেছি , তোমার কাছে ছুটে যাওয়ার। আমার প্রিয় পিতা মাতা কে তোমার চেয়ে আমি বেশি ভালবাসা দিতে পারিনা , পারবনা। তুমি জানো কিনা জানিনা তোমাকে নিয়ে কেউ যদি কোনো অশ্লীল কথা বলে আমি সইতে পারিনা, আমি খুন করে ফেলতে পারি তাকে। বল সেটি কি আমার দোষ হবে ? মাঝে মাঝে তোমার ভালবাসার চেয়ে অন্য কিছু কে অধিক প্রাধান্য দিয়ে থাকি। দয়া করে সেটি কে তুমি ক্ষমার চোখে দেখবে।কারণ তোমাকে ভালবাসতে যে ধরণের পবিত্র মন দরকার , মাঝে মাঝে আমি তার গভীর অভাব অনুভব করি। সব কিছুর পরেও সবচেয়ে বেশি তোমাকে বেশি ভালবাসতেই হবে। শুধু তোমার একটু খানি ভালবাসা পেতে আমি ছাড়তে পারি এই সুখের দুনিয়া। কারণ তোমাকে ভালবাসার মাঝেই আমি পাব আমার জীবনদান করি মহান আল্লাহ কে। হে রাসুল প্রিয় মুহাম্মদ আই লাভ ইউ ফর এভার। ইউ আর ইন মাই হার্ট। ............
বিষয়: বিবিধ
২৬৯৩ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনাকে।
এবং প্রথম মন্তব্য করেছেন। আর সব কিছুর উপরে তো আমাদের রাসুল মুহাম্মদ কেই ভালবাসা উচিত নয় কি ?
চুক চুক
দারুন লাগলো অনেক ধন্যবাদ
চুক চুক
আপনি পুরো টা পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
হেনির পোলা, আশি টাকা তোলা!!!!
হা হা
অথচ পুরুষ , মহিলা ফারাক করতে পারেন না।
বড়ই আফসোস আপনার জন্য।
আপনার ছবিতা বোরকা পরা একটি মেয়ে দেখতে পেলুম- আরেক কথা হচ্ছে আপনার নিক নামে মেয়ে মাইন্সের গন্ধ!!!!!!!
আর বিয়ের গল্প লিখেছেনযে তখন কিন্তু আপনাকে পুরুষ মহিলায় কিছুতেই উল্লেখ করেনায়- চুক চুক
আরেক কথা আপনি যদি মহিলা মা হোন তাহলে কি? হাহ আহ আহ
ডোণ্ট মাঈণ্ড,
আলোর আভাকে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেটের চুবেচ্ছা-
যদিও আমি সিগারেট খাইনা- হা হা চুক চুক
আলোর আভা ডোণ্ট মাঈণ্ড-
খুব মজা হা হা হা হা !!!
আমরা দুইজন যখন মারা-মারি করে আদালটে যাবো- তখন কিন্তু সাক্ষি আপনি? তা বুঝেন? হা হা হা চুক চুক
আমরা সাদা দের থেকে ধার করা অনেক কিছু নিয়ে , এত বেশি মাখামাখি করি
আমার বিশ্বাস সাদারা যদি এসব দেখত , ওরা নিজেরা টাসকি খেত।
ধন্যবাদ আপনাকে খুব করে।
বর্ণনা শুনে তো ইউরোপ মনে হচ্ছে
আমার দেখা একটি কাহিনী।
পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
কিছু মনে করবেন না , একটি অতি ব্যক্তিগত কারণে দেশ এবং শহরের নাম উল্লেখ করছিনা।
আবারও আপনার কাছে দুক্ষ প্রকাশ করলাম। আশা করি সুন্দর দৃষ্ঠিতে দেখবেন।
লেখা ভালো হয়েছে। ধৈর্য্য সহকারে পুরোটা পড়েছি তাই আমাকে ধন্যবাদ দিতেই হবে
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন