আমি আপনার ভালেন্টাইন নই।
লিখেছেন লিখেছেন শিকারিমন ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৫৩:৫২ রাত
ভার্সিটি তে ও আর আমি একসাথে ভর্তি হয়েছিলাম। বিভাগ ভিন্ন ছিল , কিন্তু থাকতাম একই রুমে। ১৯৯৯ -২০০০ সালের দিকের কথা। হল জীবনের প্রথম দিন হতে তার সাথে আমার সম্পর্ক টা ছিল অন্যরকম, যাকে বলে ভালবাসায় মাখামাখি। আমার আর তার মধ্যে কিছু মৌলিক আর পছন্দের বিষয় মিল থাকায় বন্ধুত্বের রসায়ন টা ছিল খুব ই চমত্কার। আবার কিছু বিষয়ে ওর সাথে আমার চোখে পড়ার মত অমিল ও ছিল। সে ছিল অস্বাভাবিক ছটফট , সারাদিন হই হুল্লোড় আর মারাত্মক ক্রেজি ঘরনার ছেলে। হলে , ভার্সিটি তে , রাস্তায় কিংবা খেলার মাঠে তার উপস্থিতি না দেখেও খুব সহজে বলে দেওয়া যেত বান্দা হাজির । আর আমার অবস্থা ঠিক তার উল্টো, সব জায়গায় থেকেও নেই ,কিছুটা চাপা সভাব। দুজনের মাজে সমস্যা যে হতনা ঠিক তেমন না। আবার কখন যে কিভাবে সলভ হয়ে যেত টের ও পেতাম না। আমাদের দু জনের মনের টান টা কেমন ছিল তা একটি বিষয়ে উধ্হারণ দিলেই পরিস্কার হবে। ভার্সিটি বন্ধ থাকলে কিংবা কোনো কারণে আমি রুম ছেড়ে বাড়িতে বেড়াতে গেলে , সে তখন আর হলে থাকতনা। আমি জিগ্যেস করলে বলত বেটা তুই নাই , আমি কিভাবে থাকি। আর আমার ক্ষেত্রে হত কি , ও যতক্ষণ হলে না থাকত আমার কেমন জানি মন টিকতনা রুমে। কখনো পত্রিকা রুমে , কখনো খেলার রুমে , যবে সে হলে ফিরত আমিও ফিরতাম রুমে তার সাথে।
জীবন চলার পথে আজ কত পরিবর্তন দুজনার মাঝে। দেশ ছেড়ে দুজন আজ পৃথিবীর দু মহাদেশের দু প্রান্তে।
আমার সেই বন্ধুর ভালেন্টাইন এক কাহিনী মনে পড়ল আজ।
তার থেকে দু বছরের জুনিয়র এক নিকট আর্তীয় কে সে খুব পছন্দ করত , শুরুটা প্রাইমারি লেভেল হতে। দুজনার সম্মতিতে তাদের ভালবাসার সপ্ন ডানা মেলল , মেয়েটির মেট্রিক পরীক্ষার পর। নিস্পাপ , দুরন্ত , নিস্কুলুশও দুজনের স্পর্সহীন ভালবাসা চলছিল। এখন যেমন ভালবাসার কথা অনুভুতি গুলো ইথারে ভেসে আসে তাই প্রেমিক প্রেমিকা দুরে থেক ও কাছে থাকত । তখন কিন্তু ও রকম টা খুব বেসি হতনা। মুঠোফোনের প্রচলন ছিল কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ব্যায় বহুল হওয়ায় ডাকপিওন মারফত তাদের ভালবাসার অনুভুতিগুলো চালাচালি হত। বন্ধুর প্রেমিকা টি খুব ই মেধাবী ছিল , ইন্টার পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় মেয়েটি তার পড়ালিখার বিষয়ে খুব বেশি সিরিয়াস হয়ে উঠলো। কিন্তু আমার প্রেমিক বন্ধুটি পড়ালিখার বিষয়ে অত বেশি সিরিয়াস কখনো ছিলনা। যত সিরিয়াস সে তার প্রেমের ব্যপারে। অপর দিকে বন্ধুর প্রেমিকা টি যত বেশি তার কেরিয়ার নিয়ে সচেতন হচ্চিল ,ঠিক উল্টো ভাবে তার প্রেমের প্রতি উত্সাহ কমে যায়। একসময় বন্ধুর প্রেমিকা বুয়েটে ভর্তির সুযোগ হয়। তারপর থেকে মোটামুটি মেয়েটির পক্ষ হতে যোগাযোগ বন্ধ। বন্ধু তো অস্থির পাগল প্রায়। ওদের বাসায় যায় , দেখা হয়না তার সাথে। আগের মত হই হুল্লোড় , চঞ্চলতা সব কিছুতেই ভাটা। এইসব দেখতে আমার ও ভালো লাগতনা। আমি নিজ থেকেই একদিন মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করলাম , কথা বললাম তাদের বিষয় নিয়ে , যোগাযোগ হীনতা নিয়ে। মেয়েটির স্পষ্ট কথা , এখন পড়ালিখার সময় , তার অনেক কঠিন পড়ালেখা।ওই সবে সময় দিলে কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে। তার উপর শুধুমাত্র অতি সাধারণ একটা বিষয়ে পড়ুয়া আমার বন্ধুটির ভবিস্যত নিয়ে সে চিন্তিত ছিল। নিরবে চলে এলাম , কিছুটা অপমানিত বোধ করলাম। সব খুলে বললাম বন্ধুকে, আমি মনে মনে ভাবতেছি এই বুঝি চরম প্রতিক্রিয়া দেখতে হবে আমাকে। কিন্তু না সব কিছু কেমন জানি ঠান্ডা , স্বাভাবিক। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম এমন প্রতিক্রিয়া হীন অবস্থা হওয়ার তো কথা না। জীবনের সব ক্ষেত্রে নন স্টপ সার্ভিস এর মানুষ টি কেমন জানি গতিহীন মানুষে পরিনত হলো। দিন , মাস যায় আবার তার মাথায় পুরনো প্রেম মাথা ছাড়া উঠে। যোগাযোগের সে কি চেষ্টা , কিছুতেই কিছু হয়না। রাতের পর রাত নিদ্রাহীন কেটে যায় তার। আমাকে বলে কিছু একটা করতে , আমার অপারগতায় মনে বড় কষ্ট পায় , আমার ও যেন কিছু করার থাকেনা। আমি তখন যায়যায় দিনের নিয়মিত পাঠক এবং বিশেষ সংখা গুলোতে মাঝে মাঝে লিখতাম। যায়যায় দিনের কারণে ভালেন্টাইন দিবসের বিষয় টি মাথায় আসে। বন্ধুকে বললাম এক কাজ করতে পারিস , ভালবাসা দিবসে তাকে কিছু গিফট দিতে পারিস , যাচাই করে নিতে পারিস , তোদের সম্পর্কের বিষয়টি। লুফে নিল বন্ধুটি। পাঠিয়ে দিল বেশ কিছু দামী গিফট , সাথে অনেক কাকুতি মিনতি ভরা এক চিঠি। ১৪ ই ফেব্রুয়ারির পরের সপ্তাহে আমার ঠিকানায় বন্ধুর নামে একটি চিটি আসলো। স্রেফ দুটো লাইন এর এক চিঠি " আমি আপনার ভালেন্টাইন নই দয়া করে আমার সাথে আর যোগাযোগ করবেন না"
সেই থেকে বন্ধুটির চলার পথ শুরু হলো নতুন করে। অতি মাত্রায় কেরিয়ার সচেতন হয়ে উঠলো , সিরিয়াস ভাবে শুরু করলো পড়ালিখা। টোফেল করলো , ভালো স্কোর করলো , স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকার একটা নামকরা ভার্সিটি তে ভর্তি হলো। রেজাল্ট ভালো করলো , এখন সে ওখানে সেটেল্ড। কয়েক বছর আগে বিয়ে করলো , মনে হয় খুব সুখে আছে জামাই বউ।
আর বন্ধুর সেই অতীত , অতি আত্তবিস্সাসী প্রেমিকাটি লেখা পড়ার মাঝ পথে অন্যের ভালেন্টাইন হয়ে গেল। বন্ধ হয়ে গেল লেখা পড়া, এখন সে পুরো দুস্তর একজন গৃহিনী। সর্বশেষ শুনলাম কোনমতে ইঞ্জিনিয়ারিং টা শেষ করলো। হয়ত এটি ছিল তার নিয়তি।
আজ আমার বন্ধুটি সোসাল মিডিয়ার একজন কঠিন ইসলামিস্ট একটিভিস্ট। এইত গতকাল তার একটা লিখা পড়লাম। বিষয় ছিল ভালবাসা দিবসের নেতিবাচক দিক গুলো নিয়ে। মুসলিম তরুণ তরুনীদের ভালবাসা দিবসের নামে পাপাচার হতে সতর্ক করা তার লিখার উদ্দেস্য।
আমি বন্ধুর লিখা পড়ে আর হাসি। বন্ধু, যে ভালবাসা দিবসে তুই প্রত্যাখিত হয়ে , পেয়ে গেছিস নতুন জীবন। আর যে তোকে প্রত্যাখ্যান করলো সে হারালো তার পথ। অবাক ! আমি তথাকথিত ভালবাসা দিবস তোর রূপ দেখে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৯ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে
ও ভালো থাকুক।
পড়েছেন, এবং মন্তব্য করেছেন , এজন্য অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন