কাদের মোল্লার ফাসি কার্যকর নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামিলিগ।

লিখেছেন লিখেছেন শিকারিমন ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৩২:৫৬ রাত

গোটা শাসনামলের ট্যক অব দ্যা কান্ট্রি, পরবর্তীতে ট্যক অব দ্যা ওয়াল্ড ছিলো যুদ্ধোপরাধীদের বিচার, বিশেষ করে জামায়াত-শিবির। বিশেষ করে স্কাইপি কেলেংকারির পর বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম পদত্যাগ করলে বিশ্বের মিডিয়ায় এই ট্রাইবুনাল নিয়ে বিতর্কেও ঝড় ওঠে। এখন কয়েক নেতার ফাঁসির রায় হয়েছে, কয়েক জনের বিচার চলছে, কিন্তু ফাঁসির চুড়ান্ত কার্যকর করার অপেক্ষায় আব্দুল কাদের মোল্লার রায়। সুত্র মতে- রিভিউ দেয়া না দেয়া নিয়ে বিতর্ক চলছে। রিভিউ না দিলে এই বিচার আরো বিতর্কের মুখে পড়বে। কেউ কেউ মনে করে এ বিচার নিয়ে এমনিতেই বিতর্ক আছে, আবার পশ্চিমারা ফাঁসির দন্ডেরও বিরুদ্ধে। আবার পৃথিবীতে অনেক প্রশ্নবিদ্ধ বিচারের কারণে সংশ্লিষ্টদের আইনের মুখোমুখীও হতে হয়েছে সময়ের ব্যাবধানে। সুতরাং সব মিলিয়ে এ নিয়েও রয়েছে আওয়ামীলীগের মধ্যে রয়েছে দ্বিধাবিভক্তি। এই বিভক্তি রয়েছে উপর থেকে তৃনমুল পর্যন্ত। খোদ আওয়ামীলীগের অনেক নেতাই মনে করেন জামায়াত-শিবিরকে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করতে আওয়ামীলীগ-ই দায়ী। যদি তাই না হতো স্বাধীনতার পর থেকে জামায়াত এই প্রথম স্থানীয় নির্বাচনে এতো ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। সিনিয়ন নেতাদের জেলে ঢুকিয়ে তরুণ ক্লিন ইমেজ সম্পন্ন নেতাদের তৈরী করে দিয়েছে আওয়ামীলীগ। কারণ রাজনীতিতে অপপ্রচার ও একটা প্রচার। যে ভুলটি আমরা তারেক রহমানের ক্ষেত্রে করে তাকে অবিসংবাদিত নেতা বানিয়ে দিয়েছি। এখন জামায়াতের ক্ষেত্রেও সেই একই ভুল আমরা করলাম। আপনি দেখেন সাঈদী জেল থেকে বের হলে তার ওয়াজে কত লক্ষ লোক হয়। আপনি কিভাবে ঠেকাবেন?। মানুষের আবেগ কে শক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রন করতে নেই। আর তাদের নেতার তো অভাব নেই। এই দেখলেন। জামায়াতের সব সিনিয়র নেতারা জেলে, অথচ নেতৃত্ব অথবা অন্য কিছু নিয়ে কোন জামেলা হয়নি। তাদের মধ্যে গনতন্ত্র আছে, আছে আদর্শ। নেই দলাদলি, পদপদবি নিয়ে কাড়াকাড়ি যেটি অন্য সব দলে আছে। এই দেখলেন না এরশাদ পাগল এবার মিডিয়ার সামনে নিজেকে আজীবনের নেতা ঘোষনা দিয়ে দিলো। আতœহত্যার হুমকি, নারী কেলেংকারী ,দূর্নীতি এই সব এখন আমাদের জাতীয় নেতাদের ভ’ষণ!! আমি মনে করি এরশাদ কে নিয়ে আওয়ামীলীগের এই অনৈতিক খেলা আওয়ামী রাজনীতির দেওলিয়াত্বের বহি:প্রকাশ। তাকে হিরো বানোনো হচ্ছে রাজনীতিতে। আমরা, ভাসানী বঙ্গবন্ধু থেকে রাজনীতির যে শিক্ষা পেয়েছি তাই আমাদের পূঁজি। এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগের এক সিনিয়র নেতা মনে করেন- জামায়াতের মত শক্তিশালী ও ক্যাডার ভিত্তিক দল কে দমনে আমাদের নেত্রীকে ভুলভাবে পরিচালিত করা হয়েছে। এটি কামরুল আর টুকুদের নির্বুদ্ধিতার ফল। কারণ জামায়াততো আমাদের দু,দলের মতো জুয়া চুরি করেনা। জামায়াত কে নিয়ে চুড়ান্ত কিছুই করার সময় এখন আর নেই। মাঝামাঝি রেখে তাদের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালানোই বেশী লাভ। তাদের অধিকাংশ পড়ালেখা করে বুঝে শুনে দল করে। সাম্প্রতিক আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামীলীগের এই নেতার মূল্যয়ন তৃনমূল পর্যায়ে সরকার এখন বিচ্ছিন্ন। আর ১৮ দলের আন্দোলন এতই শক্তিশালী ও দানবীয় রূপ নিয়েছে এখন মনে হচ্ছে আজীবন ক্ষমতা আর পুলিশ পটেকশনের কোন বিকল্প নেই। এটা আওয়ামীলীগের মত একটি প্রাচীন রাজনৈতিক দলের জন্য লজ্জাজনক। কারণ নেত্রীর আশপাশে যেসব চাটুকার আছে তারা তৃণমুলের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে দেয়না। আমাদের এবারের পরাজয় হবে অনেক ভয়াবহ। নেত্রী ক্ষমতার প্রান্তে এসে হয়ত এটা বুঝলেও এখন কিছুই করার নেই। কারণ সব শ্রেণীর লোকই যেনো ক্ষিপ্ত, আমাদের এত উন্নয়ন বিলবোর্ড প্রচারনা কোনটাই কাজে আসছেনা। ক্ষমতার শেষের দিকে দলের ভিতরে তো সুবিধা বঞ্চিত রাগ বিরাগতো আছেনই। আওয়ামীলীগ যেনো অগ্নিকুন্ডের উপর দন্ডায়মান।

তৃনমুল আন্দোলনে এখনো জামায়াত-শিবির ১৮দলীয় জোটের মধ্যে অন্যতম শক্তির উৎস, তাদের নিয়ন্ত্রন আর প্ল্যানে চলছে। আওয়ামীলীগের অনেক নেতাই কেউ কেউ মনে করে রিভিউ দিলে আসামী পক্ষ সময় পাবে, এরি মধ্যে সমঝোতার ক্ষেত্রে ভারত ব্যাতিত জাতি সংঘ সহ সারা পৃথিবীর চাপ রয়েছে। এছাড়া সরকারের পতন কিংবা বিদায় যাই হোক। রায় কার্যকর না হওয়ার আশংকা-ই বেশী। কারো চাপে সমঝোতায় বাধ্য হলেও আওয়ামীলীগ এই রায় কে তুরুপের তাস বানাতে চায়। এরশাদ নির্বাচন চুড়ান্ত ভাবে বর্জন করলে, সাথে সাথে মোল্লার রায় কার্যকর করার উদ্যোগ নিবে সরকার। কারণ মোল্লার রায় কার্যকর করলে, জামায়াত-শিবির সারা দেশে জীবনবাজি রেখে চুড়ান্ত লড়াইয়ে নামবে। এটিকে ইস্যু বানিয়ে জারি হবে জরুরী অবস্থা জারি, এবং সর্বদলীয় সরকার দিয়ে দেশ চলবে অনেকদিন। মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করে,স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে আবার ঐক্যবদ্ধ্য হওয়ার শেষ আহবান জানাবে শেখ হাসিনা। অপশক্তিকে মোবাবেলার জন্য। শাহবাগের মত সারা দেশে আবার গর্জে উঠবে সবাই। সংখ্যালঘুদের ঘর-বাড়িতে ব্যাপক হামলা চালানো হবে, মিডিয়া কর্মী,বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ আক্রান্ত হবে, মিডিয়া তাকে তান্ডব আর নাশকতা বলে ঝড় তুলবে। বিএনপি এই ইস্যুতে পড়বে বিপাকে। আওয়ামীলীগের এই পরিকল্পনার সাথে দ্বিমত আছে আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে তৃনমুল পর্যন্ত। এর বিপরীত নাম-প্রকাশ না করা শর্তে আওয়ামীলীগের এক নেতা বলেন- আওয়ামীগের মত দল এত অ-জনপ্রিয় হওয়ার জন্য দায়ী হচ্ছে আওয়ামীলীগ কমিউনিষ্ট আর আমলারা। তার ভাষায় পাগল অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনপ্রতিমন্ত্রী, নাস্তিক শিক্ষামন্ত্রী, দিক হারা ভারতপ্রীতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মিলে শেখ হাসিনার সরকারের বারোটা বাজিয়েছে। আর তথ্যমন্ত্রী মিডিয়া বন্ধ করে, অতিকথন দিয়ে শেষ ধবংসটা করছে। তিনি বলেন যাদের সারা দেশে লোক-জন নেই তারাই এখন বড় আওয়ামীলীগার। বামরা কথার ফুলজুরি ছাড়া তাদের কি আছে? যদিও আমরা বলি বিএনপির জন্য বড় বোঝা জামায়াত। এটা রাজনৈতিক বক্তব্য। এখন এগুলো বলেও লাভ নেই। কারণ যে গরু দুধ দেয় তার লাথিও ভালো। মহাজোটে বাম-জাতীয়পার্টি কারোই রাজপথের কর্মী নেই। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- এখন শাহবাগী ইমরান সাহেবরা কোথায়?? এই সহিংসতার সময়। অথচ শাহবাগীরাই হেফাজত তৈরী করেছে। বিগত সিটি নির্বাচনে এমন পরাজয়ের জন্য হেফাজত আর জামায়াত বড় ভ’মিকা রেখেছে। কারণ জামায়াত কে নিয়েইতো আমরা কেয়ারটেকার আন্দোলন করে ছিলাম বিএনপির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন বাম-চাটুকারদের কথায় যদি কাদের মোল্লাকে নেত্রী ফাসিঁর রসিতে ঝুলায়, তাহলে আমার নেত্রী শেখ সাহেবের বেটী হয়ত শেষ ভুলটা করবেন। যে ভুলের ক্ষত আওয়ামীলীগকে সইতে হবে অনেক দিন। কারণ রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছ’ নেই। তাছাড়া আওয়ামীলীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পেছনে জামায়াতের অবদান কিছু হলেও আছে বলে মনে করেন এই নেতা। তিনি বলেন- আমার নেত্রী কি ভুলে গেছেন, আমু ভাই তোফায়েল ভাইরাতো জানেন জামায়াত কে সাথে নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করার প্রস্তাব যখন প্রথম দেয়া হয়, তখন নিজামী সহ অনেকেই এর বিরোধীতা করেছে, রাজি ছিলনা, পুরানো ইতিহাস কে খেয়াল করে। কিন্তু আমাদের ফরিদপুরের ছেলে মোল্লা কে দিয়ে গোলাম আযমের খুব কাছের হিসেবে শেখ হাসিনা আস্তে আস্তে জামায়াত কে একসাথে আন্দোলন করতে রাজি করায়। আজকের মত এত শক্তিশালী না হলেও জামায়াত আওয়ামীলীগ রাজপথে আন্দোলন করে সফল হয়, আওয়ামীলীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে। সুতরাং রাজনৈতিক কারণে আজ আমি শিকার না করলেও প্রথমবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পেছনে জামায়াতের অবদান, বিশেষ করে কাদের মোল্লার অবদান অস্বীকার করতে পারবেন কি? কিন্তু আমি এটাও মনে করি সুযোগ ফেলে রাজনৈতিক শত্রু পথের কাঁটা যত কেটে ফেলা যায় ততই ভালো বলে মনে করেন এই নেতা। এই নেতা মনে করেন আগামী দিনে আমাদের আদর্শিক আসল শত্রু জামায়াত-শিবির এতে কোন সন্দেহ নেই। সেটি আরো অনেক পর। কিন্তু এখনতো বিএনপি। সুতরাং কৌশলতো সেই ভাবে ঠিক করতে হবে। জামায়াত কে চিহিূন্ন করার কৌশলে আমরা ভুল কওে ফেলেছি। কারণ দার্শনিক ষ্টোলর্স পার্ল মতে- বন্ধু সেজেই শত্রুুর খতম করতে হয়, এর বিপরীত যদি কর তোমার পরিনতিও মাথায় রেখো” জামায়াত-শিবির না থাকলে এখন আন্দোলন কে করতো? বিএনপি নেতারাতো মাঠে নেই। বিশেষ করে ঢাকায়। আওয়ামীলীগ এখন আওয়ামীলীগের হাতে নেই। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামীলেিগর অবদান মূল্যয়ন এ দেশের মানুষ করেনি, যদি করত তাহলে আজ অবদি তাদের-ই ক্ষমতায় থাকা উচিৎ। এই নেতা মনে করেন- ভারত আওয়ামীলীগের প্রকাশ্য সহযোগীতা করে ক্ষতি করছে। কারণ আমাদেও দেশের মানুষ ভারতের আধিপত্য কে সহ্য করেনা। আর বাকী ক্ষতি এরশাদ করে দিয়েছে সুজাতা গোপন বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশ করে। তাছাড়া ভারতের হাই-কমিশনারের সাথে শেখ রেহানার একান্ত বৈঠক, তোফায়েল আমু সুরঞ্জিতরও তৎপরতা প্রশ্নবিদ্ধ!!! তাদের মন্ত্রী না বানানো পদপদবি থেকে বাদ দেয়ার ক্ষোভ তো আছেই। মেনন-ইনু সাহেব, তাদের ৩০ হাজার নেতা কর্মী হত্যার প্রতিশোধ নিতে এমন বক্তব্য আর কু-পরামর্শই দিয়ে যাচ্ছেন কি?। কমিনিউনিষ্ট, হাইব্রীড আর চাটুকাররা মিলে স্বাধীনতার নেতৃত্ব দানকারী বঙ্গবন্ধুর গড়া এই প্রচীন রাজনৈতিক দল আর তার কন্যা শেখ হাসিনা কে জনপ্রিয়তার তলানিতে ঠেকানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে!!!

বিষয়: বিবিধ

১৬৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File