একটি কপি পেস্ট লেখা , রহস্য মানব আবু রেজা নদভী

লিখেছেন লিখেছেন শিকারিমন ৩০ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:২০:১৬ সন্ধ্যা



আবু রেজা নদভিঃ জামাতি? না কি আওয়ামী? আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভি এক বিস্ময় মানব, জীবন্ত এক কিংবদন্তী। চট্টগ্রাম সাতকানিয়ার এক দরিদ্র মাদ্রাসা শিক্ষক মওলানা ফজলুল্লাহর ছেলে। এককালে মাদ্রাসার লিল্লাহ ফান্ডের খরচে তার পড়ালেখা ও হোষ্টেলে থাকা খাওয়া চলতো। আর আজ আবু রেজা নামে ও বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি বহর, বাগানবাড়ি, রক্ষিতা ও ঘেটুপুত্রের দল, আন্তর্জাতিক কানেকশন। একটা এনজিও ছাড়া তার কাগজে কলমে কোন উপার্জনের উৎস নেই, আর তার সম্পদেরও সীমা নেই এখন। আবু রেজার নেটওয়ার্ক, এমন যোগাযোগ ও প্রতিপত্তি বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রীরও নেই। আবু রেজার টাকার উৎস বিদেশ, টাকা থেকে মুনাফা জেনারেটও হয় বিদেশ সংক্রান্ত উপার্জন থেকে। অস্ত্র ও মানব (নারী ও শিশু পাচার) ব্যাবসায় আবু রেজা লগ্নি করে, কিন্তু সরাসরি জড়িত হয় না। নিজের ব্যাক্তিগত বিষয়কে মিডিয়া ও লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে আবু রেজা সবসময়ই সচেতন থেকেছে। শেখ হাসিনা তাকে যথাযথ কারণ ছাড়া নমিনেশন দেয়নাই। তার এই অদ্ভুতভাবে উপরে উঠার মূলকথা একটাই, যে দেবতা যেই ফুলে সন্তুষ্ট, আবু রেজা ঠিক সে ফুল দিয়েই সে দেবতার পুজা করে। কোন মানুষটা কি পেলে খুশী, তা বের করায় তার সমকক্ষ মানুষ তেমন একটা নাই। নিজ মেধায় ভালো রেজাল্ট করে ভারতের নদওয়া মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে আবু রেজা চট্টগ্রামের দারুল মারিফ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করে। আশির দশকের শেষদিকে ঐসময় রোহিঙ্গা আফগানিস্তান প্রভৃতি কারণে মধ্যপ্রাচ্যের শেখরা সদ্যপ্রাপ্ত পেট্রোডলারের খুচরা খাচরা নিয়মিত দান করতো, ঐ খুচরা খাচরাই ছিলো কোটি কোটি টাকা। এর বড় একটা অংশ আবার বাংলাদেশ হয়ে চ্যানেলিং হতো, বাংলাদেশেও কিছু ভিক্ষা দেয়া হতো। যে কোন আরব্য শেখ চট্টগ্রামে আসলেই তার অভ্যর্থনা সভায় আবু রেজা তার নামে আরবীতে অন্তমিল মিলিয়ে প্রশংসা-কবিতা লিখতো ও তেলাওয়াত করতো। এভাবে কয়েক বছরের মধ্যে সউদি আরব, কাতার, কুয়েত, আমিরাত, বাহরাইন, ওমান এসব দেশের ধনাঢ্য শেখদের সাথে আবু রেজার ব্যক্তিগত যোগাযোগ গড়ে উঠে। একসময় সে ঐসব শেখদের কাছে ঐসব দেশে যাওয়া শুরু করে এবং মাদ্রাসা এতিমখানার জন্য অনুদান আনা শুরু করে। নদভি ধারার সিনিয়র মওলানাদের আবু রেজা খুশি করে শ্রদ্ধা ও বিনয় দিয়ে। আর আরব শেখদেরকে চাটুকারিতা ও সকল প্রকার সেবা দিয়ে। এসময় তার ক্রমাগত উত্থান ও যোগ্যতা দেখে দারুল মারিফ মাদ্রাসার মালিক মওলানা সুলতান যওক নিজ কন্যার সাথে আবু রেজার বিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনাও করেন। কিন্তু এক কালোরাত্রিতে এক এতিম কচি বালক ভিকটিম আবু রেজার রুম থেকে আংশিক ভেজা লুঙ্গি সহ বেরুতে গিয়ে অন্য ছাত্রদের হাতে ধরা পড়ে। আবু রেজা সমকামিতায় ধরা পড়লেও তাকে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করা হয়নি। সোনার ডিমপাড়া হাস জবাই করা মওলানা যওকের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে তিনি নিজের মেয়ের বিয়ে দেন মহিব্বুল্লাহ নামের অন্য আরেকজন তরুণ শিক্ষকের সাথে। নদভী ধারার মওলানাদের সাথে জামায়াত জামায়াতের সম্পর্ক অর্ধেক শত্রুতা অর্ধেক বন্ধুতার। নদভী ধারার প্রতিষ্ঠাতা আবুল হাসান এককালে মওদুদীর সাথে মতভিন্নতা করে জামায়াত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সেই নদভী ধারার মওলানার জামায়াতে যোগ দেয়ার বিষয়টা একটু ব্যাতিক্রম। কিন্তু একসময় আবু রেজা বুঝতে পারে সামনে এগুতে হলে ভোল পাল্টানোটা জরুরী। সে জামায়াত পরিচালিত চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়। পুরো আরব বিশ্বে আবু রেজা এবার একটি ফুল ফ্লেজেড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রতিনিধি হয়ে উঠে। জামায়াত নেতাদেরকে আবু রেজা খুশি করে এলিজিয়েন্স ও টুকরা টাকরা অনুদান দিয়ে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মওলানা মুমিনুল হকের মেয়ের জামাই হওয়ার পর আবু রেজার উত্থান অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। আরেক নেতা আবু তাহেরের পৃষ্ঠপোষকতায় আবু রেজা পৌছে যায় গোলাম আযম, নিজামী সহ সব পলিসি মেকিং নেতার কাছে। তাদের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের দুতাবাসগুলোর যোগাযোগে আবু রেজা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারির আরেকটি সমকামিতার ঘটনায় ধরা খেলেও আবু রেজার গায়ে কেউ একটা চিমটিও দিতে পারেনি। সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসন নিয়ে জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী আর শামসুল ইসলামের আভ্যন্তরীণ টানাটানিতে আবু রেজা তার নিজের জন্য সুবর্ণ সুযোগ দেখতে পায়। একসময় সে প্রধামনন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতে থাকে, এক হারিস চৌধুরীকেই কয়েক কোটি টাকা ভেট দেয় আবু রেজা বিএনপি সরকারের সময়। নিজ বাপের নামে প্রতিষ্ঠা করে এনজিও, আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন। অন্য এনজিওগুলোকেও কোটি কোটি টাকা দিয়ে হাতে নিয়ে আসে। আবু রেজা সব সমস্যার করা শুরু করে টাকা দিয়ে। সাংবাদিক পুলিশ রাজনৈতিক নেতা সবাই তার পকেটে আসতে শুরু করে। দুই কোটি টাকা দিয়ে একটা মসজিদ বানাবে, ইট সিমেন্টের কাজ দেয় বিএনপি নেতাকে, রড, মিস্ত্রি আর পরিবহনের কাজ আওয়ামী নেতাকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিংক খুঁজে পেতে আবু রেজার বেশ পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের দুতাবাসের মাধ্যমে ও নিজস্ব রাজনৈতিক সূত্রে শেষ পর্যন্ত সে বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে পৌছতে পারে। বিদেশী একাউন্টে মিলিয়ন ডলার, দেশে জমি, একটা পাজেরো গাড়ি আর ঢাকার গুলশানে মাসে দুইমাসে এক রেষ্ট হাউজে একেক নায়িকার সাথে রাত কাটানোর দাওয়াত, ইত্যাদি পেয়ে হাছান মাহমুদ তাকে প্রমোট করা শুরু করে। গত তিনবছরে শেখ হাসিনার প্রায় সবগুলো (আক্ষরিক অর্থেই, কয়েকটা ছাড়া) বিদেশ ভ্রমণের ডেলিগেশনে আবু রেজা অন্তর্ভূক্ত ছিলো। নরডিক দেশ, ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে এশিয়ার যত দেশে হাসিনা গেছে, আবু রেজাও সাথে ছিলো। এখন যদি এখানে আবু রেজার মোবাইল নাম্বারটা দেই, ফোন করলে আজ যদি সুইডেন তো কাল কুয়েত, পরশু হয়তো আমেরিকা। কিন্তু এমনকি আওয়ামী লীগের মানুষরাও তার পরিচয় তেমন জানেনা, তাদের কাছেও আবু রেজা এক রহস্যমানব। নেত্রীর ভ্রমণের দলে চুপচাপ থাকে, আর বিদেশীদের সাথে মিটিং করে। কি নিয়ে মিটিং, কেউ জানেনা। আর যাদের জানা দরকার, তারা পেয়েছে টাকা, গাড়ি, জমি অথবা মেয়ে। যেই দেবতা যে ফুলে খুশি, আবু রেজা সে ফুলের যোগানদার। আবু রেজার সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাতকানিয়া লোহাগাড়ার মানুষের ভোট জোগাড় করা। দীর্ঘদিনের গোপনীয়তা ভেঙ্গে এখন তাকে সামনে আসতে হচ্ছে। অনেকেই অনেক কথা বলছে, কিন্তু আবু রেজাকে যারা চেনে তারা এখন অপেক্ষা করছে জনগণ নামের দেবতাকে আবু রেজা কোন ফুল দিয়ে সন্তুষ্ট করে তা দেখার জন্য। আর আবু রেজাকে যারা সত্যিকার অর্থে চিনে, তারা জানে আবু রেজা এমপি হবেই। আবু রেজার পরিচয় কি? জামাতি? মুজিব সেনা?? না। আবু রেজার পরিচয় হলো সে আবু রেজা। এমনকি কোন একদিন যদি জিহাদি ছাগ্লার দল বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে, কালের বিবর্তনে আবু রেজা সেই দেশের রাষ্ট্রপতি হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

বিষয়: বিবিধ

২৫৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File