বিশ্বায়ন : আমাদের নীতির সার সংক্ষেপ (Dr. Yusuf al-Qardawi’s Views)
লিখেছেন লিখেছেন তাজুল ২৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০৪:৫২:৪৬ বিকাল
একথা সত্য যে আমরা বিশ্বায়নকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম নই। আমাদের সেই সক্ষমতাও নেই যে আমরা এর বেষ্টনী ও নিষ্পেষণ থেকে নিজেদেরকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারব। এই অবস্থায় এটাকে পরিপূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করা যেমন বাঞ্ছনীয় নয়, তেমনিভাবে অবনত মস্তকে “শুনলাম এবং মেনে নিলাম” এমন পন্থা গ্রহণ করাও সমীচীন নয়। এই নতুন যুদ্ধ থেকে আত্মরক্ষার জন্য মুসলিম বিশ্ব, তার মিত্র রাষ্ট্র ও জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোকে পারস্পরিক ঐক্য এবং সংহতির ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়া উচিৎ। আমাদের জাতিকে এ ব্যাপারে সজাগ-সচেতন করে তোলা এবং চিন্তা-চেতনা, বোধ-বিশ্বাস, সভ্যতা সংস্কৃতিকে রক্ষা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা এই নব উপনিবেশের অনুবর্তী না হয়ে পড়ে এবং নিজ বৈশিষ্ট্য হারিয়ে না ফেলে।
মধ্যম পন্থায় আমাদের জন্য উপযুক্ত পন্থা। আমরা বিশ্বায়নের ইতিবাচক ও কল্যাণকর দিকগুলো গ্রহণ করব। আর এর বস্তুগত, অবস্তুগত যাবতীয় নেতিবাচক দিকগুলোকে বর্জন করব। তবে যেটা গ্রহণ করব যেটা ঈমান-আকীদা অক্ষূণ্ণ রেখে। নিজেদের গৌরবকে সমুন্নত রেখে। গ্রহন ততটুকু করবো যতটুকু আমাদের শক্তিমত্তা বৃদ্ধি ও সুপ্ত সম্ভাবনা বিকাশে সহায়ক হয়। যাতে আমাদের বর্তমান হয় অতীতের চেয়ে সুন্দর। আর ভবিষ্যত হয় বর্তমানের চেয়ে উজ্জ্বল। এ কথার অর্থ এই যে, আমাদেরকে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। জ্ঞানের অস্ত্রে সুসজ্জিত হতে হবে। কাজে কর্মে উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। আমাদের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হবে। উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। শিল্পে উন্নত হতে হবে। ইচ্ছাশক্তিকে শাণিত করতে হবে। এসব কিছুর আগে উন্নতি অগ্রগতির নিয়ামক সেই মানব সম্পদ সম্পদের ব্যাপক উন্নয়ন আবশ্যক। এর জন্য আমাদের ব্যক্তিগত এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী। যাতে বিশ্বকে গড়ার কাজে আমরা অবদান রাখতে পারি। আমাদেরকে যেন পরজীবী, পরনির্ভরশীল হতে না হয়।
আমাদের রাজনৈতিক ত্রুটি-বিচ্যুতি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, সামাজিক ব্যাধি, চারিত্রিক বিকৃতি, বুদ্ধির দৈন-দশা, সর্বোপরি যে মানসিক ব্যধিতে আমরা আক্রান্ত হয়েছি তাকে অকপটে স্বীকার করে নিতে হবে। মেনে নিতে হবে এগুলো আসলেই আমাদের ত্রুটি। এই স্বীকৃতি আমাদেরকে হেয় করবে না। বরং সমাধানের পথকে সুগম করবে। রোগ ও রোগের কারণ চিহ্নিত করতে পারলে নিরাময়ের ব্যবস্থা করাও সহজ হবে। নিরাময়ের প্রথম পন্থা হিসাবে আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোকে খুজে বের করতে হবে। আমাদের এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতির দায়ভার আমরা অন্যের উপর চাপানো চলবে না। আমরা আমাদের অভ্যন্তরীন ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোকে নির্মূল করার চেষ্টা করবো। আমাদের জীবনকে পঙ্কিলতা মুক্ত করতে পারলে আমাদের ভাগ্যও পাল্টাতে শুরু করবে। এভাবে হয়তো একদিন আমরা আল্লাহ তায়ালার বিধানের আলোকে একটি সমাজ বিনির্মাণে সক্ষম হব।
বিষয়: বিবিধ
১৬১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন