ইমনরা কি ধোয়া তুলসীপাতা?
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ওমর ফারুক ০৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৩৮:৫০ দুপুর
এক]
সবাই যখন বেপরোয়া মুরাদ সাহেবকে ধুয়ে দিতে ব্যস্ত তখন এক জোড়া ‘তুলসি-পাতা’ আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন। বলা যায় বর্তমান সংকটে যেখানে মুরাদের প্রাণই যায় যায় অবস্থা তখন তার মৃত্যু পরোয়ানা নিলামে তুলে বেঁচে যাচ্ছেন তাকে সঙ্গ দেয়া, সাহায্য করা অন্যসব অনুসঙ্গিরা। সাধারণ মানুষের দৃষ্টি, আলোচনা থেকে তারা মুক্তই থেকে যাচ্ছেন কারণ সবাই মুরাদের প্রতি সমস্ত রাগ আর ক্ষোভ ঝারছেন এবং এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু কথা হলো একজন মুরাদতো আর নিজে নিজে তৈরি হয় না। একা একা একটা দানব তৈরি হওয়া সম্ভব না। বরং তার জন্য তেমন দানবীয় পরিবেশ লাগে, সাথী-সঙ্গী লাগে, অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা লাগে। মোটকথা একটা দল লাগে, যেখানে উপরে ক্ষমতাসীনরা বসে থাকবেন আবার নিচে লোলুপ জিহবা বের করে ইমনদের মত চামচা-দালালরা বসে থাকবেন। ঠিক এমন একটা পরিবেশেই বেপরোয়া মুরাদরা ফোন করে বলতে স্বস্তি বোধ করেন ‘ঐ ওরে এক্ষণ তুইলা নিয়া আয়- আমি ইচ্ছামতো ধর্ষন করবো’
[দুই]
আমরা যদি এটাকে স্রেফ একটা ঘটনা মনে করি তাহলে মনে হয় ভুল করবো। বরং এটা একটা সিস্টেম যা খুব ভালোভাবেই তৈরি হয়ে আছে। বলা যায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। হয়তো মুরাদের একটা ফোন-কল সামনে এসেছে বলে তারটা আমরা জেনেছি কিন্তু এর মাধ্যমেই সিস্টেমের একটা ট্রেইলার প্রকাশ পেয়েছে অবশ্যই।
রেকর্ডটি সচেতন যেকোন মানুষ একবার শুনলেই বুঝতে পারবেন কোন উদ্দেশ্যে কে কি কথা বলছেন।
নায়ক ইমন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন ‘মন্ত্রীকে সামাল দেয়ার চেষ্টায়’ উনি যেটুকু করার শুধু সেটুকুই করেছেন। যথেষ্ট হাস্যকর।
অথচ তাদের সেই কথোপকথন শুনলে যেকেউই বুঝবে কতোটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল তাদের মাঝে। যাস্ট হুট করে কেউ ফোন দিলে কখনোই তাদের কথোপকথনের ধরণ এমন হবেনা। ‘তুই’ করে সম্মোধন, জ্বি ভাইয়া, জ্বি ভাইয়া, এসব কি যাস্ট সামাল দেয়ার বিষয় ছিল?
কথাবার্তার এক ফাঁকে ইমনকে আগবাড়িয়ে বলতে শোনা যায় ‘আমি তো সৈন্য ভাইয়া’
একজন একনিষ্ঠ সৈন্য কি মনিবকে সামাল দেয় নাকি সহযোগিতা করে?
মূলত সত্য এটাই। এরা সৈন্য, একনিষ্ঠ সৈন্য। এই সৈন্যদের বহর নিয়েই মুরাদ মুনিবরা টিকে থাকে, যুগ যুগ ধরে রাজত্ব করে যায়।
[তিন]
আচ্ছা নায়কের কথায় ধরে নিলাম তিনি অপারগ ছিলেন, সহযোগী ছিলেন না। কিন্তু একজন নায়ক কিভাবে এমন অন্যায় প্রস্তাবে ঠিক এভাবে ‘জ্বি ভাই, জ্বি ভাই’ করতে পারেন? আগবাড়িয়ে আমি আপনার সৈন্য এই কথা বলতে পারে? পর্দার নায়কের কি ব্যক্তিজীবনে এতটুকু আত্মসম্মানবোধ নেই যে অন্তত ভদ্রভাবে ‘না’ বলতে পারে? একজন মানুষ হলেই তো এটা পারার কথা। বরং রেকর্ডে তার ভূমিকা মেরুদণ্ডহীন একটা চামচার উৎকৃষ্ট পরিচয়ই দিয়েছে।
এবার আসি নায়িকা মাহিয়া মাহির আলোচনায়। এই রেকর্ডে যেহেতু ওনার খুব বেশি কথা শোনা যায়নি তাই বিস্তর ভূমিকা নিয়েও কথা বলা যাচ্ছে না। তবে তার নিরবতা, বা বার বার না করাটা অবশ্যই তার অপারগতা প্রকাশ করে। কিন্তু একজন মানুষ যখন তাকে একদম মুখের উপর ‘মা**’ বলে গালি দেয় সেটা তিনি কিভাবে চুপ করে হজম করেছেন তা আমার বোধগম্য না। অন্তত হাসিমুখেও আপত্তি জানাতে পারতেন। এটুকু জানালে কি তাকে খুন করে ফেলতো?
যেখানে আমরা দেখি একজন পরিমণি সামান্য কেঁদে ভিডিও করলে পুলিশের লাইন লেগে যায় সেখানেও এতটুকু বলতে আমাদের নায়িকাদের এত ভয়?
[চার]
সংবাদ মাধ্যমের বরাতে জানলাম ডিবি পুলিশ ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। মুরাদের সাথে অনেক নায়িকা-মডেলদের সখ্যতা ছিলো এমন তথ্যও তাঁরা হাতে পেয়েছেন। হতে পারে নায়িকা মাহি সেদিন বেঁচে গিয়েছেন। মুরাদের ডেরায় যেতে চাননি৷ কিন্তু বাকি যারা স্বেচ্ছায় গিয়ে মুরাদের হুইস্কির বোতল খুলে তাকে প্রতিষ্ঠিত ধর্ষক হতে সাহায্য করেছেন তাদের বেলায় আমরা কি বলবো? তাদের কি বিচার হবে এমন একটা বলয়ের সহযোগী হওয়ার জন্য?
শুধু একজন মুরাদকে পদত্যাগ করালে বা শাস্তি দিলেই এই অরাজকতার শেষ হবে বলে মনে করি না। বরং এই মুরাদদের দানব হওয়ার যেই পরিবেশ, যেই সিস্টেম সেটাকে ধ্বংস করলেই হয়তোবা আমরা ভালোকিছু আশা করতে পারি। সেই সিস্টেমের ভেতরে থাকা রাজাকার সাথী-সঙ্গী, রাতের রানীরাও বিচারের আওতায় আসবে বলে বিশ্বাস করি।
মাসুদ মান্নান
( কপি পোস্ট।)
বিষয়: রাজনীতি
৫০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন