সৃষ্টিজগতে মানুষের অবস্থান নির্ণয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধিতে সালাত
লিখেছেন লিখেছেন তালিমুল ইলম ২০ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:১৩:১২ সকাল
সৃষ্টজগতে মানুষের যে বিশেষ অবস্থান এবং মর্যাদা রয়েছে তাতে দেখা যায় যে, জন্ম বা সৃষ্টিগতভাবেই মানুষ যে বৈশিষ্ট্য, দায়িত্ব এবং কর্তব্য দ্বারা ভূষিত হয়েছে তাতে প্রতিটি মানুষের জন্য প্রতিটি মুহূর্ত ঐশী প্রার্থনায় নিমগ্ন থাকা অপরিহার্য, নয়ত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে বিশেষ উদ্দেশ্যে মানুষকে সৃষ্টি করে তাঁরই প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব অর্পণপূর্বক এই চতুর্মাত্রিক স্থান-কালের বিশ্বে প্রেরণ করেছেন সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা বা মানুষের পক্ষে আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা অসম্ভব।
যেকোন দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ। আর যেহেতু মানুষকে সৃষ্টজগতে আল্লাহ প্রতিনিধিত্ব করবার বিশেষ মর্যাদা ও দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে তাই এ প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনের জন্য মানুষকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করতে ঐশীজগত হতে যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে ইসলামী শিক্ষানুযায়ী তাকেই বলা হয় সালাত। মানুষের পক্ষে সৃষ্টজগতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার প্রশ্নে আমাদের এখানে এটি স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, মানুষ মাত্রই এ প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব এবং মর্যাদা অর্জন করার ক্ষমতা জন্মগতভাবে প্রদত্ত হলেও দুর্ভাগ্যবশত মানুষের মধ্যে সকলেই এ মর্যাদার আসনে আসীন হতে সক্ষম হয় না।
সমগ্র বিশ্বজগত সৃষ্টির মহাপরিকল্পনার অংশ হিসাবে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে একদিকে যেমন নানা রকমের ইচ্ছা-আকাঙ্খা এবং প্রয়োজনীয়তা দিয়ে, আবার অন্যদিকে, ভালোবাসা, দুঃখ-কষ্ট ভোগ করার মতো নানা সূক্ষè আবেগ অনুভূতি, জ্ঞানার্জনের প্রতি তীব্র তৃষ্ণা, প্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটনের প্রতি অদম্য কৌতূহল সহ আরো অন্যান্য অনেক বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতা দ্বারা তাকে করা হয়েছে ভূষিত। মানব-অস্তিত্বের এসকল নানা বিশৃঙ্খলতার মধ্যে প্রতিমুহূর্তে মানুষ মুখোমুখি হয় একটি ছেড়ে অন্যটিকে বেছে নেয়ার মতো অস্তিত্বের শঙ্কটে। ব্যক্তি মানুষের জীবনের প্রতিমুহূর্তে বিভিন্ন বিকল্প হতে কোন সুনির্দিষ্ট একটিকে বেছে নেয়ার ফলে শুধু ব্যক্তির বর্তমান, ভবিষ্যত এমনকি অতীতই পরিবর্তিত হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, কখনো কখনো সমস্ত মানবেতিহাসের দিক-দর্শনই পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। সুতরাং এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে স্বাধীন-ইচ্ছা দ্বারা ভূষিত করেছেন সে স্বাধীন-ইচ্ছা যদি সৃষ্টজগত নিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যে মহাপরিকল্পনা তার সাথে সামঞ্জস্য করে পরিচালনা করা না হয়, তবে একদিকে যেমন ব্যক্তির জীবন ধ্বংস প্রকৃতিগতভাবেই অপরিহার্য হয়ে পড়ে, তেমনি সামাজিক জীবনেও নেমে আসতে পারে মহাবিপর্যয়। তাই প্রতিদিন সুনির্দিষ্ট সময়ে পাঁচবার জামা’য়াতের সাথে সালাতের মাধ্যমে ইসলাম মানুষকে আল্লাহ প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের প্রশিক্ষণই প্রদান করে থাকে। তাই এটি বিস্ময়কর নয় যে, ইসলামের নবী মুহাম্মদ (মহিমান্বিত হোক তাঁর ব্যক্তিত্ব) স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন যে, একজন মুসলিম অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছার নিকট নিজের স্বাধীন-ইচ্ছাকে সমর্পণকারী আর একজন অ-মুসলিমের মধ্যে পার্থক্যকারী রেখা হলো সালাত।
বিষয়: বিবিধ
১২৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন