আধ্যাত্মিক প্রাচীর
লিখেছেন লিখেছেন তালিমুল ইলম ২০ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:২৩:৩৯ সকাল
গভীর রাত। সামান্য চন্দ্রালোকিত পথে আমি নিঃশব্দে হেঁটে যাচ্ছি। আমি জানি প্রভাত হওয়ার পূর্বেই আমাকে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে। কিন্তু আমি অনুভব করলাম, মানব-সত্তার আশা-আকাঙ্খা আর বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতার মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রাচীর আমার সমস্ত চিন্ত-চেতনা আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এখন সময় এসেছে এ প্রাচীর ভেঙ্গে সকল বাধার অপসারণ করা। আমি এই প্রাচীরটির কথা ভাবছি, কেন এটি আমাকে এভাবে ভাবিত করে তুলেছে?
আমি প্রাণপনে এ সমস্যাটির সমাধান করার চেষ্টা করছি। কিন্তু অনুভব করছি আমার মন বিভ্রান্ত। আমি অনুভব করলাম আমি অসুস্থ বোধ করছি এবং পথ হারিয়ে ফেলেছি। আমি জানি না কোন পথ অবলম্বন করব এবং তা অব্যাহত রাখব। এক সুবিশাল পাথুরে প্রাচীর আমার সমস্ত পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে। আমি যখন ক্রমশ ধৈর্যহীন হয়ে পড়ছি তখন একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম না সে নারী না পুরুষ।
আমি তার দিকে হেঁটে গেলাম এবং তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমি তার মুখমণ্ডল খুব ভাল দেখতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু অনুভব করলাম সে বেশ বন্ধুভাবাপন্ন। সে আমার দিকে এমন গভীরভাবে তাকাল যেন সে আমার সব কষ্ট শুষে নিচ্ছে। অতঃপর জিজ্ঞেস করল: “তুমি কোথায় যেতে চাও, বন্ধু ? হয়ত আমি তোমাকে পথ দেখাতে পারব? কিন্তু প্রথমে তুমি আমাকে তোমার জীবনের পরিকল্পনা জানাও যা তুমি তোমার সমগ্র জীবন দিয়ে বাস্তবায়ন করতে চাও। তবে আমার নিকট হতে কোন কিছূ লুকোবে না।”আমি তাকে আন্তরিকতার সাথে আমার জীবনের পরিকল্পনা জানালাম। সে জিজ্ঞেস করল: “কিন্তু কোন বিষয়টি তোমার কাঙ্খিত চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে?” আমি তাকে প্রাচীরটির কথা বললাম, যা আমার পথের মাঝখানে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সে হেসে উঠল এবং আমাকে আশ্বস্ত করে বলল: “তুমি আসলে হারিয়ে যাও নি, বন্ধু! তুমি জান, তোমাকে এগিয়ে যেতে হলে প্রথমে অবশ্যই এ প্রাচীরটি অতিক্রম করতে হবে।” সে আমাকে প্রাচীরটির পাদদেশে নিয়ে এল। আমি পাথরের গন্ধ এবং শীতলতা অনুভব করতে পারলাম। সে বলল: “তুমি বিয়য়টি দেখছ ভুল দৃষ্টিকোন থেকে, হে বন্ধু! তুমি তোমার সমস্যাগুলোর কথা ভাবছ, তুমি ভাবছ এ বাধা অতিক্রম করতে হলে কোন কোন জিনিস তোমাকে হারাতে হতে পারে; তাই নয় কি?
সম্ভবত তুমি ভাবছ! তুমি ভালোবাসা বা অর্থ হারাবে অথবা অন্যদের চোখে গুরুত্বহীন হয়ে উঠবে!!!
এখন মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোন! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি ভাবছ তুমি কি হারাতে পার, ততক্ষণ তুমিই তোমার প্রাচীরটিকে বড় করে তুলছ। বরং ভাব, তুমি তোমার জীবন সফল করে তুলতে পার, যদি তুমি তোমার সমস্ত শক্তি তোমার চারপাশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে নিবেদন কর এবং তুমি যদি তাতে সফল হও, তবে তারাও তোমার সাথে অন্যদের দুঃখ-যাতনা লাঘবের দায়িত্ব তুলে নেবে। এর মাধ্যমে তুমি তাদের জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
অতঃপর এক গভীর নিস্তব্ধতায় আমি অনুভব করলাম প্রাচীরটি ক্রমশ ভেঙ্গে পড়তে শুরু করল; ... এবং এক সময় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। অপরিচিত অভিযাত্রীটি বিদায় নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল, ততক্ষণে প্রাচীরটি সম্পূর্ণ অপসারিত হয়েছে এবং আমি নিজের মধ্যে এক বিজয়ানন্দ অনুভব করলাম।
আমি জনপদের দিকে পথ অতিক্রম করতে শুরু করলাম, সূর্য পূর্বদিগন্ত রেখায় উঁকি দিচ্ছে আর আমার হৃদয় আশা, ভালোবাসা এবং বিশ্বাসে পূর্ণ হয়ে উঠল।
(সূত্র: আল-কোর’আনের সূরা আল-বালাদ বা জনপদ)
বিষয়: বিবিধ
১২২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন