আল-কুরআনের সুশৃংখলতা ও ধারাবাহিকতাঃ উপলব্ধির মৌলিক নীতি ও সৌন্দর্য

লিখেছেন লিখেছেন আহমাদ আল সাবা ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ০২:০৪:৫৩ দুপুর

এটি সূরা বাকারাহ



__1. ঈমান বনাম কুফুর (1 – 20).

________2. আল্লাহর সৃষ্টি ও জ্ঞান (21 – 39).

_____________3. বনী ইজরাঈলদের শরীয়া দেওয়া (40 – 103).

_________________4. ইব্রাহীম আঃ এর পরীক্ষা (104 – 141).

5.—————-নতুন কিবলা – কা’বা শরীফ (142 – 152).

_________________4. মুসলিমদের পরীক্ষা করা হবে (153 – 177).

_____________3. মুসলিমদের শরীয়া দেওয়া (178 – 253).

________2. আল্লাহর সৃষ্টি ও জ্ঞান (254 – 284).

__1. ঈমান বনাম কুফুর (285 – 286).

(ছবি দ্রষ্টব্য)

একটানে দেখছেন নিশ্চয়। ঠিক মাঝখানে কাবার স্থাপন আর বিপরীত দুই মেরুতে একই ধরণের বিষয়। মাঝখানে হেদায়াত (আল্লাহর ইবাদাতের/তাওহীদের প্রতীক কাবার স্থাপন)। কিন্তু ঠিক দুইপাশের আয়াতগুলো কেমন? একই ধরনের। এর মানে কি জানেন? বনী ইজরাঈলরা একসময় হেদায়াতের উপরে ছিলো। একসময় গিয়ে তারা হেদায়াত থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। এরপর আমরা মুসলিমরা একইভাবে হেদায়াত পাই। কিন্তু??? সূরা বাকারায় তো বণী ইজরাঈলদের মতই আমাদের জন্যও একই রকম বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু কিসের সেই বর্ণনা? ঈমান বনাম কুফুর (হেদায়াত বনাম পথভ্রষ্টতা)। অর্থাৎ আমরা যদি ঐ বনী ইজরাইলদের মতো একই রকম কাজ করি, অকৃতজ্ঞতা দেখাই (বেহশতি খাবারে), পূর্বপুরুষদের (আবাআনা) বিষয়াবলি অন্ধভাবে মেনে চলি, পাদ্রীদের মতো আলেমদের অন্ধ অনুসরণের ফলে পথ হারিয়ে ফেলি (সূরা ফাতিহায় ‘দ্বাল্লিন’) অথবা আল্লাহর রাসূলের আনিত শরীয়াতের চাইতে বেশি বুঝি (যারা সূরা ফাতিহায় মাগদুব) তবে আমরাও ঠিক বনী ইজরাঈলদের মতো কুফুরের দিকেই যাবো! অর্থাৎ বণী ইজরাইলরা আল্লাহর হেদায়াত পেয়েছিলো, কিন্তু তারা কী কী মন্দ বৈশিষ্টের কারণে হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হলো, আমরাও যদি ঠিক সেই কাজগুলো করি তবে আমরাও তাদের মতই হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হবো। সুতরাং সূরা আল-বাকারাহর প্রথম অংশ বণী ইজরাঈলদের ইতিহাস নয় কেবল, আমাদের পুরো শিক্ষা নেওয়ার ইতিহাস ঐটা। ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যেরূপ মুনাফিকের আয়াত দেখলে নিজেকে নিফাকের ভয় পেতেন।

আল-কুরআনের সূরা বাকারার মূল এটিই! এই মূল থিম বা বিষয়কে কেন্দ্র করেই সূরা বাকারাহর সব আয়াতগুলো চলছে মোটাদাগে (তাওহীদ বনাম শিরক, ঈমান বনাক কুফুর)। এর নাম নযম আল-কুরআন (কুরআনের সুশংখলতা, ধারাবাহিকতা)। আল-কুরআন উপলব্ধির সেরা একটি বিষয় এই নযম আল কুরআন। বিশেষ করে সাধারণ মানুষজন আল-কুরআন বুঝতে না পারার বা ভালো না লাগার একটি কারণ নাযম (আল-কুরআনের আয়াত, সূরা ও বিষয়সমূহের শৃঙ্খলা, বিন্যাস ও ধারাবাহিকতা) না আনা।

(এ বিষয়ে ইন শাআ আল্লাহ একটি স্বতন্ত্র বই আনবো)

কি? আল কুরআনের সূরাগুলো বিচ্ছিন্ন মনে হয়?

খাপছাড়া মনে হয়?

বিশৃঙ্খল মনে হয়?

পড়তে গিয়ে ধারাবাহিকতা পাওয়া যায় না?

আমরা সাধারণত যেকোনো বই পড়ি চ্যাপ্টার বা অধ্যায় আকারে এবং এগুলোর ভেতরে অনেক পরিচ্ছেদ থাকে। যার কারণে বইটি একটি ধারাবাহিক বিন্যাস এবং বিন্যাসের কারনে থাকে ধারাবাহিক সম্পর্ক এবং এভাবে থাকে যাতে পূর্ণ উপলব্ধির ক্ষেত্রে কোন গ্যাপ না থাকে। এভাবে পড়তে গেলে কোনো কিছু উপলব্ধির ক্ষেত্রে কোন জটিলতা থাকে না। কারণ পূর্বে যা কিছু বলা হয়েছে তার সাথে সম্পর্ক এবং ধারাবাহিকতা দুটোই চলেছে সমানভাবে প্রত্যেক অধ্যায় ও অনুচ্ছেদের অগ্রগতির সাথে। এ যেন একেকটা পূর্ব অধ্যায় পরের অধ্যায়কে উপলব্ধির চাবিস্বরুপ এবং প্রত্যেকটি অধ্যায়ের ভেতরের পূর্ব অনুচ্ছেদ তার পরের অনুচ্ছেদের উপলব্ধির চাবিস্বরুপ। এভাবে পড়লে কোন কিছু উপলব্ধির ক্ষেত্রে কি বাধা থাকতে পারে? না। কারণ আমার যা সমস্যা থাকতে পারে উপলব্ধির ক্ষেত্রে তা তো পূর্বের অধ্যায় এবং অনুচ্ছেদগুলোতে সেগুলোর ধারাবাহিক বর্ণনা ও পারস্পারিক সম্পর্ক একে পরিষ্কার করেই দিচ্ছে, প্রত্যেকবারই। এভাবে পদ্ধতি বা মেথড অনুসরণ করলেই না বইটি পড়া শেষে একটা ভালো ফল আসবে ব্যবহারের সময়। আর সিস্টেম্যাটিক পড়া না হলে এর ফলও কিন্তু বিচ্ছিন্ন বা ভুল আসতে বাধ্য…কারণ উপলব্ধি বা সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে যেই ফল আসার কথা তা আসবে না ভুল পদ্ধতিতে ভুল উপলব্ধির কারণে।

তাহলে কুরআনের মাঝে যদি এরকম প্রত্যকে সূরা এবং আয়াতগুলোর মাঝে ধারাবাহিক যোগসূত্র ও সেগুলোর মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক থাকতো বিষয়বস্তুর আলোকে, তবে কুরআন উপলব্ধির অনেক বড় একটি জটিলতা দূর হয়ে যেতো না?। কিন্তু আমরা কি জানি এই কুরআনের মাঝেও রয়েছে এরকম বিষয়বস্তুগত আলোচনা, পারস্পারিক সম্পর্কগত ধারাবাহিকতা—ঠিক যেমনটি বই এর প্রতিটি অধ্যায় আরেকটি অধ্যায়কে উপলব্ধির ক্ষেত্রে পরিষ্কার করে দিচ্ছে সব, প্রতিটি পরিচ্ছেদ পরের পরিচ্ছেদকে উপলব্ধির ক্ষেত্রে সব কিছুকেই পরিষ্কার করে দিচ্ছে। বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা এবং এদের মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক-এর মাঝে সকল ধরণের জটিলতাকে একদম পষ্ট আকারে তুলে ধরে উপলব্ধির দুয়ারকে একেবারে খোলাসা করে দিচ্ছে। যার কারণে কুরআনের সঠিক উপলব্ধির কারণে সঠিক ব্যবহারিক প্রয়োগও সম্ভব এবং এর বিপরীতে ভুল পদ্ধতিতে উপলব্ধি বা বিচ্ছিন্ন উপলব্ধি কিন্তু ভালো ফল দেবে না কখনই।

এভাবে কুরআনের প্রতিটি আয়াত তার পূর্বের ও পরের আয়াতের সাথে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। প্রতিটি সূরা তার আগের ও পরের সূরা সাথে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। প্রতিটি সূরার একেকটি বিষয়বস্তু রয়েছে, সেগুলোর মাঝেও সূরার যাবতীয় আয়াতের সাথে এসব সম্পর্ক ও ধারাবাহিকতা বিদ্যমান।

তদ্রুপ ১১৪ টি সূরা যেন বিষয়বস্তুর আলোকে বিভিন্ন বড় বড় গ্রুপে বিভক্ত এবং এসব বিভক্তির মাঝেও বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা ও পারস্পারিক সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রেখেই চলেছে সম্পূর্ণ কুরআন জুড়ে।

এ থেকে স্পষ্টত বুঝা যায় যে, সম্পূর্ণ কুরআন একটি সুশৃংখল, ধারাবাহিক ও পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে সবকিছু পরিষ্কার রেখেই সাজানো হয়েছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ওহীভিত্তিক নির্দেশে। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেভাবে তাঁর কুরআনকে সাজিয়েছেন আয়াত, সূরা এবং বিষয়বস্তর ধারাবাহিক বিন্যাস ও পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে-ঠিক সেভাবে উপলব্ধিই আমাদেরকে তাঁর হিকমাহর গভীরতা বুঝতে ও ইসলামের সঠিক অনুধাবনে সাহায্য করবে। আর ঠিক এ সাজানো পদ্ধতি ব্যতীত বিশৃংখল পদ্ধতিতে গেলেও আমাদের উপলব্ধিতেও বিচ্ছিন্নতা বা বিশৃংখল উপলব্ধ আসবে-সঠিক উপলব্ধি না আসার সম্ভাবনাই প্রবল।

বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা এবং পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে কুরআন পড়লে, কুরআনের কোথাও কোন অসংলগ্নটা বা অমিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। যার কারণে যেকেউ নিজের ইচ্ছামত ব্যবহার করলেই আপনি এর ভুল এবং অপপ্রয়োগকে ধরতে পারবেন। এই ধারায় কুরআনের উপলব্ধির মাত্রা সাধারণ বিচ্ছিন্ন উপলব্ধির বাহিরে এই সাজানোর পদ্ধতিতে যে কুরআনের জ্ঞানের এবং ইসলাম শিক্ষার মাঝে প্রজ্ঞা রয়েছে-যা উপলব্ধি ইসলাম উপলব্ধির জন্য একান্তই প্রয়োজন, এবং এর উপলব্ধিহীনতা আমাদের ভারসাম্যের পরিবর্তে চরমপন্থা ও আমাদের মাঝেও ইসলাম উপলব্ধির বাহিরে বিশৃংখলা বয়ে নিয়ে আসবে-যা আজকের দিনে আমরা অহরহ দেখছি।

নাযম আল-কুর’আন?

------------------------------

কুরআনের নাযম বলতে বুঝায় কুরআন এমন সামঞ্জস্য ও সংগতিপূর্ণ কিতাব, যার শব্দগুলো পদ্ধতিগতভাবেই সংকলিত এবং এতে কোন বিশৃংখলা নেই। এটা এমন কিতাব যার শব্দমালা সিস্টেম্যাটিক ও পারস্পারিক বিন্যাসসমৃদ্ধ যা একে অপরের সাথে সংযুক্ত। এতে কোন বিচ্ছিন্নতা, বা অসংলগ্ন বক্তব্য নেই। প্রত্যেকটি সূরাই একেকটি মৌল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করে এবং পূর্ণ কুরআনটিও সুন্দর গাঠনিক কাঠামোতেই লিপিবদ্ধ।

এই নাযম আল-কুরআনের ব্যাপারে সর্বপ্রথম পূর্ণভাবে গুরুত্ব দেন এবং অনেকটাই লিপিবদ্ধ করেন মাওলানা হামিদ উদ্দীন ফারাহি (রাহিমাহুল্লাহ) এবং পূর্ণাংগ আকারে নিয়ে আসেন মাওলানা আমিন আহসান ইসলাহী (রাহিমাহুল্লাহ)।

আল-কুরআন উপলব্ধি, এর হিকমাহ পাওয়া, এর থেকে শিক্ষাগুলো নেওয়া, পড়তে গিয়ে খাপছাড়া বা বিশৃঙ্খল মনে না হয়ে বরং পড়তে আনন্দ পাওয়া, উত্তমভাবে শিক্ষা নেওয়া – এসবই থাকছে আর থাকছে আরো চমৎকার কিছু- আল-কুরআন উপলব্ধির জন্য।

বুকিশ পাবলিশার থেকে যে ইমাম আল-শারাওয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) এর যে জীবনঘনিষ্ঠ তাফসিরটি আসছে, এতে সেই নাযম আল-কুরআন পূর্ণ মাত্রায় রয়েছে! পড়তে গিয়ে কখনই আল-কুরআন খাপছাড়া বিচ্ছিন্ন মনে হবে না। প্রতিটি আয়াত ও বিষয়বস্তু তাঁর আগের ও পরের আয়াত ও বিষয়বস্তুর এবং সূরার সাথে ওতপোতভাবে সংযুক্ত, শৃংখলায় আবদ্ধ, ধারাবাহিকভাবে চলেছে এই ধারা! ফলে আমরা যারা সাধারণ লোকেরা তাফসির পড়তে ভয় পাই, কিছু বুঝি না সেই সমস্যা আর থাকছে না! একে তো যুগোপযোগী তাফসির, রয়েছ জীবনঘনিষ্ঠতা আর এর উপরে পূর্ণমাত্রায় রয়েছে আল-কুরআন উপলব্ধির সিস্টেম্যাটিক পদ্ধতি!

আমাদের মূল সমস্যা আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণিত আল-কুরআন ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরতে পারিনি ভালো মতো। এর কারণ আল-কুরআনকে যুগের আলোকে উপলব্ধির অভাব (ইবাদাত নির্দিষ্ট বা কাতঈ, এগুলো কখনো পরিবর্তিত হয় না, তবে এগুলোর পেছনের হিকমাহ ও সৌন্দর্য আবিষ্কৃত হতে পারে ক্রমাগত), আল-কুরআন পাঠকে প্রজ্ঞার আলোকে দেওয়া অভাব।

সাহাবীরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) আরবী জানতেন, এজন্য আল-কুরআনের গভীরতা এমনিতেই বুঝতে পারতেন, তন্ময় হয়ে পড়তেন, উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তো অধিকাংশ সময় আল-কুরআন নিয়েই পড়ে থাকতেন কাজের বাইরে। তারা ভাষার ভেতরেই নাযম আল-কুরআন পেতেন। কিন্তু আমরা আরবী জানি না, ফলে আমাদেরকে ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে। এর মাঝে যে আল-কুরআন পাঠের মজা আছে, উপলব্ধির ভান্ডার আছে, আছে প্রজ্ঞা ও হুকুমের হিসেব, সেটা না জানলে হয়তো জানাই যাবে না।

ইন শাআ আল্লাহ, এই মাসেই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে Bookish Publisher থেকে জীবনঘনিষ্ঠ, যুগোপযোগী ও নাযমভিত্তিক ‘তাফসির আল-শারাওয়ী’ (“আল-ফাতিহা” অংশ)

বইটির প্রি অর্ডার শুরু হয়েছে ফেইসবুকের

https://www.facebook.com/bookishpublisher পেইজে ।

https://www.facebook.com/bookishpublisher/posts/706352869734820?__tn__=K-R

বুকিশ পাবলিশার প্রি-অর্ডার লিংকঃ https://goo.gl/nkiw1D

বা মোবাইলেঃ +01645261821

রকমারি প্রি-অর্ডার লিংকঃ https://goo.gl/bk3K7F (নাম্বারঃ 16297 / 015 1952 1971)

বিষয়: বিবিধ

৯২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File