‘অধিকার’ জান্নাতের যাওয়ার মাপকাঠি নয়; ‘দায়িত্ব’ জান্নাতে যাওয়ার মাপকাঠি: দায়িত্ব বনাম অধিকার
লিখেছেন লিখেছেন আহমাদ আল সাবা ০৯ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:৫৯:৩৪ সকাল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইসলামিক নারীবাদীদের থেকে কখনো কি আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্কের কথা শুনেছেন? ইবাদাতে কিভাবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে আল্লাহর অধিক কাছাকাছি যেতে পারে সেটা নিয়ে লিখেছে দেখেছেন? জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া/অন্তরে প্রশান্তি আনা, ইবাদাতে কিভাবে প্রশান্তি, খুশু-খুজু পেতে হয় সেটা লিখতে দেখেছেন?, না, কারণ ইসলামের যে প্রাণ, সেই প্রাণে নারীবাদীদের 'সুবিধা' এর জায়গায় 'দায়িত্ব' এর স্থান।
ইসলামিক নারীবাদীদের শব্দের দরদহীন ব্যবহার দিয়েই বুঝতে পারবেন তারা যে কথাগুলো বলতেছেন সেটা প্রথমত: তাকওয়া বা আখিরাতের নাজাতের জন্য লিখতেছে না, লিখতেছে নিজের সুবিধা আদায়ের জন্য। আর বিপরীতে যেসব ইসলামী স্কলাররা নারী নিয়ে, স্বামী-স্ত্রী নিয়ে ভুলগুলোকে শুদ্ধ করতে চাচ্ছেন, তাদের শব্দমালা ও কথার দিকে লক্ষ করে দেখবেন সেখানে আছে সমাধানের জন্য ভালোবাসা ও দরদমাখাময় ভদ্রতাপূর্ণ সামষ্টিক আলোচনা। কারণ তাদের প্রচেষ্টা কারো পক্ষে বা বিপক্ষের সুবিধা নয় বরং আল্লাহর দেওয়া দ্বীনের সামষ্টিক ও ভারসাম্যময় ব্যাখ্যা; যাতে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়েরই কল্যাণ নিহিত থাকে, কেবল দুনিয়ার সুবিধা এখানে উদ্দেশ্যই নয়।
স্বামী আপনার সব সুবিধা দিলেই আপনি জান্নাত পাবেন, কোথায় আছে?
স্বামী আপনার সব সুবিধা দিলেই আপনি তাকওয়া অর্জন করে সফলতা পাবেন, কোথায় আছে?
স্বামী আপনার সব সুবিধা দিলেই আপনি সালাতে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্কের খুশু-খুজু পাবেন, কোথায় আছে?
স্বামী আপনার সব সুবিধা দিলেই আপনি সুকুন, মুওয়াদ্দাতাহ, রাহমা পাবেন, কোথায় আছে?
কিন্তু কুরআন-হাদিসে আপনার নিজের দায়িত্বের সাথে তাকওয়া পাবেন, খুশু-খুজু পাবেন, আল্লাহর দিদার পাবেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি পাবেন, দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা পাবেন - সবই আছে।
ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া জাহান্নামী স্বামী থেকে নিজে জান্নাতি হলেন, কেন? দায়িত্বের কারনে।
নূহ (আলাইহিস সালাম) তার স্ত্রীকে সকল অধিকার দিয়েছিলেন, কিন্তু স্ত্রী জাহান্নামী হলেন কেন?
সুবিধা বা অধিকার জান্নাতে যাওয়ার মাপকাঠি নয় কিন্তু দায়িত্ব জান্নাতে যাওয়ার মাপকাঠি।
মারিয়াম(আলাইহিস সালাম) এর স্বামী ছিল না, তিনি স্বামী থেকে কোনো অধিকার পান নি, অথচ তার নিজ থেকে নেওয়া দায়িত্বগুলো কুরআনের পাতা থেকে পড়তে থাকুন। তিনি আল্লাহর কাছে দায়িত্ব চেয়েছেন। আরো আশ্চর্যের বিষয় হইলো তার পিতা এমন ছেলে সন্তান চাইছিলেন যাকে তিনি আল্লাহর পথে নিয়োজিত করবেন। কিন্তু মেয়ে হওয়াতে তিনি বিচলিত হলেন, আর আল্লাহ তাকে শান্তনাও দিলেন যে আমি জানি ঐটা মেয়ে সন্তান, ছেলে সন্তান নয়। তার মানে মেয়ে সন্তানও যে দায়িত্ব পালন করতে পারবে সেটাই পিতাকে শান্তনা দিলেন!!! (উস্তাদা মুসলিম পারমাল এর এই সিরিজটি দেখুন http://tinyurl.com/hs6euws What would Mariam do? by Muslema Purmul)
ফাতেমা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)র হাতে কাজের কারণে ঠুসা পরে যেত। কিন্তু স্বামী পারিপার্শিক অবস্থা বিবেচনায় তার কাছে অধিকার চাইতে যান নাই যে ঘরের কাজ করার দায়িত্ব ইসলামে নাই, আমি এগুলো করতে বাধ্য নই। তিনি স্বামীকে কাজের লোকের জন্য চাপ দেয় না অধিকারের নামে - বরং পিতার দ্বারস্থ হয়েছিলেন. মূল কথা হইলো তিনি দায়িত্ব সচেতন ছিলেন।
আসমা বিনতে আবি বাকার (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) স্বামীর কাজ কিভাবে কতটুকু করতেন একবার তার জীবনী খুলে দেখেন, সেই কষ্টগুলোর বর্ণনা তিনি নিজে দিয়েছেন অথচ সেখানে কোনো অভিযোগ পর্যন্ত করেনি বরং নিজের স্বামীর কাজ বলে সেই দায়িত্ব পালন করতেন।
অধিকার জান্নাত দেবে না কিন্তু আপনার নিজের দায়িত্ব পালন বা অবহেলার কারণে আপনি নিজেই নিজের জান্নাত বা জাহান্নামের পথে আগাচ্ছেন।
প্রত্যেক নারীবাদের কথায় আপনি খোটা, ব্যবহারের ক্ষেত্রে খিটখিটে, ডিবেটেবল এবং ঝগড়াটে দেখতে পান কেন? এর সাইকোলজিকাল একটা দিক মুনাফিকদের উদাহরণে আছে। মুনাফিকরা জিহাদে না গিয়ে(দায়িত্ব পালন না করে) গনিমতের মাল চাইতে যাইতো। অর্থাৎ দায়িত্ব পালন না করে সুবিধার কথা ঠিকই বলতো। এইটা হইলো মুনাফিকের খাসলত। এইভাবে সফলতার জন্য আল্লাহ এবং তার রাসূল বললেন দায়িত্বের মাধ্যমে সফলতা আসে কিন্তু নারীবাদীরা কেন দায়িত্বের কথা না বলে অধিকার আর সুবিধার কথা বলে? কারণ তাদের অন্তরের গভীরে আল্লাহ এবং তাকওয়া নেই, যেরূপ নেই মুনাফিকের মাঝে। অথচ আল্লাহর রাসূল যখন বললেন মুহাজিররা সব কিছু নিয়ে যাক আর আনসাররা কেবল আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে ফিরে যাক, এটাই কি তাদের বড় পাওয়া নয়? তারা এক বাক্যে সন্তুষ্টি প্ৰকাশ করলেন, কেউ বললেন না আমরা জিহাদে মাল দিয়ে বেশি সাহায্য করেছি, আমাদের বরং আরো বেশি অধিকার আছে গনিমতের মাল পাওয়ার, তারা আল্লাহ এবং তার রাসূলকে নিয়েই সন্তুষ্ট হলেন !!
একজন ঈমানদার তাকওয়া অর্জন, আল্লাহর সন্তুষ্টি, আখিরাতের নাজাতের জন্য খিটখিটে মেজাজের হতে পারে না, আদবহীন হয় না, ডিবেটেবলে হয় না, দ্বিমত পোষণকারীদের সাথে খোটা মেরে কমেন্ট করে না বা আদবহীন কথা বলে না। কারণ ঈমানদাররা জানে তাওহীদ, তাকওয়া, ঈমান, হুসনুল খুলুক, আদব, দায়িত্ব ইত্যাদি ইসলামের মূল আর দ্বীন নিয়ে ঝগড়া করা পূর্ববর্তীদের ধ্বংসের একটা কারণ।
মজার কথা হইলো দুইজন ভাই-বোনের কথা জানি, যারা নিজেরাও নারীবাদী ইসলামিস্ট ছিল এবং বিয়েও হয়েছিলো, কিন্তু তাদের সংসার টিকে নাই। কেন টিকে নাই সেটার একটা তাওহীদবাদী ও সাইকোলজিকাল ব্যাখ্যা আছে। তাওহীদবাদী ব্যাখ্যা হইলো পশ্চিমে নারীবাদী বা ফেমিনিজম এর উৎস গড বা আল্লাহ থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে শুরু। এর মানে হলো ব্যক্তি নিজেই নিজের কেন্দ্র। মানে গডের প্রতি বা ধর্মের প্রতি তাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই, কেবল নিজ এবং নিজের সুবিধাটুকুই বাকি থাকলো আর এটাই হয়েছে।
আর সাইকোলজিকাল ব্যাখ্যাটা হলো, ব্যক্তি নিজে যখন নিজের কর্তা, আর নিরপেক্ষ কেউ রইলো না (আল্লাহ বা ধর্ম) তখন নিজে যা সঠিক মনে করবে সেটাই সঠিক, আর এভাবে সংসার ভাঙার কারণ তো নিজেই বুঝতে পারছেন। কেউ আল্লাহর দিকে ধাবিত নয়, নিজেই কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক ঠিক করে নিচ্ছে আর অন্যের সঠিক বা বেঠিক মাপকাঠি মানছে না। কারণ নিজেই জিনের অধিকারের বিশুদ্ধতা ও বেঠিক নিরুপন করেছে আর অন্যেরটা মানছে না। এভাবে নিজের অধিকারের বেলায় সে যেটা বলছে সেটাই হয়তো ভিন্ন প্রসঙ্গ এনে অন্যেরটা বেঠিক বলছে। ব্যাস, সুবিধা আদায় না করতে পেরে ধ্বংস।
আশ্চর্যের কথা হইলো ইসলামের ইতিহাসে নারীবাদ বা পুরুষবাদ নিয়ে নারী স্কলার বা পুরুষ স্কলারদের কোনো কথা পাচ্ছেন না। কারণ তাদের কেন্দ্রে ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি, তার আদেশ-নিষেধ পালন এবং দায়িত্ব নিয়ে।
দায়িত্ব নেওয়া নিয়ে কখনো শুনেছেন ঝগড়া হয়েছে? আল্লাহ এই দায়িত্ব পালনের ভিত্তিতেই জান্নাত দিবেন, সুবিধাপন্থীদের ঝগড়াটেওয়ালা পুরুষ-নারীদের নয়। কারণ জান্নাত পবিত্র যায়গা, এখানে ঝগড়াটে, আদবহীন আর দায়িত্ববর্জিত সুবিধাবাধীদের স্থান নয়। কারণ তাকওয়া, ঈমান, অন্তরের খুলুসিয়াত, ইখলাস, ইহসান, সফলতা সবই আল্লাহর দেওয়া নির্ধারিত দায়িত্বের সাথে নির্ধারিত।
ইমাম গাজ্জালী রাহিমাহুল্লাহ কীভাবে ইমাম গাজ্জালী রাহিমাহুল্লাহতে পরিণত হলেন, কীভাবে ইসলামের ইতিহাসে বিখ্যাত 'ইয়াহইয়া উলুম আদ-দ্বীন' লিখলেন, আপনার কি জানা আছে?
তিনি এমন সময়ে ছিলেন সেসময়ে তার আসে পাশে প্রচুর নাস্তিক ছিল, দর্শনগত সমস্যা মুসলিম সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো, বিদাতীদের মাথাচাড়া, বিভিন্ন ফেরকার আগমন ইত্যাদির চরম যুগ ছিল তখন। এসব কিছুকেই তিনি প্রায় একাই প্রতিহত করেছেন; যুক্তি দিয়ে, ডিবেট করে এবং তার খ্যাতি ছিল আকাশছোঁয়া। কোনো ব্যক্তি তার সাথে পারতেন না ডিবেট করে, যুক্তি দিয়ে। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হইল তিনি তখনও আমাদের ইমাম গাজ্জালিতে পরিণত হননি!!!
তার খ্যাতি ছিল আকাশছোঁয়া, ডিবেটে লড়ার মতো কেউ সাহস করতো না, জ্ঞানে ছিল অদ্বিতীয়।
কিন্তু তিনি হয়ে গিয়েছিলেন একেবারেই নিঃস্ব। কেন এমনটি হয়েছিল? যারা অতিরিক্ত ডিবেট করে, ধর্মকে তার জায়গা থেকে ঝগড়াতে নিয়ে যায়, দ্বিমত পোষণকারীদের সাথে অভদ্র আচরণ করে, খোটা দেয়...তাদের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক থাকে না। কারণ এগুলো ধর্মের উদ্দেশ নয় অথচ ইসলামিস্ট নারীবাদীরা সেটাই করে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দ্বায়িত্ব পালনের বিপরীতে পুরুষেরা সেরকম পায় না , পাবার আশাও করে না ।
মহিলাদের মধ্যে দেখা যায় যে , শরিয়ত মোতাবেক তারা কি কি পেতে এনটাইটেলড সেটার জন্য খুবই পেরেশান থাকে । দেবার চেয়ে পাবার বেলায় তাদের বেশী ঝোঁক ।
কোন শরিয়তি বিধান যদি তার মনঃপুত না হয় তাহলে সেটার বিপরীতে মনুষ্য আইনের সুবিধা নেয় এবং দায়িত্ব এড়ানোটাকে রেটিফাই করে নেয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন