সিরাহর উদ্দেশ্য; সিরাহ নাকি ফিকহুস সিরাহ? কোনটি প্রায়োগিক, বাস্তবসম্মত ও প্রাসঙ্গিক?
লিখেছেন লিখেছেন আহমাদ আল সাবা ৩০ আগস্ট, ২০১৫, ০৭:৩০:২৪ সন্ধ্যা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলতেনঃ
“আমরা আমাদের শিশুদেরকে রাসূল ﷺ জীবনী শিক্ষা দিতাম যেরুপ কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতাম”।
অর্থাৎ তাদের শিশুদেরকে গড়ে তুলার জন্য সিরাহ ও কুরআন শিক্ষা দিতেন। এটাই ছিল তাদের ইসলামী সিলেবাস।
তাবেয়িরা (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলতেন:
“আমরা শিশুদের প্রথম যে জিনিসটি শিক্ষা দিতাম সেটা হলো রাসূল ﷺ এর জীবনী; যেন তাঁর জীবনের সাথে তাদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারে”।
ইসলামের মৌলিকতা, এর সত্যতা পুরোটাই প্রাথমিকভাবে রাসূলের সত্যতা, পবিত্রতা, রাহমাহ, চরিত্রর ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। এজন্যই তাঁর সিরাহ এতো এতো গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ বলেনঃ
তুমি বল, আল্লাহ চাইলে আমি তোমাদের নিকট এটি পাঠ করতাম না আর না এটা জানাতাম তোমাদেরকে। কেননা এর পূর্বেওতো আমি তোমাদের মাঝে জীবনের এক দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছি; তবে কি তোমরা এতটুকুও আকল/জ্ঞান খাটাও না?
- ইউনুস: ১৬
অর্থাৎ এখানে দ্বীনের ভিত্তিকেই নবুওয়াতপূর্ব জীবনের সমস্ত চারিত্রিক দিককে লক্ষ্য করেই আবির্ভূত হচ্ছে। আর আমরা যদি এই নবুওয়াতপূর্ব জীবন বা সিরাহকে ভালো করে নাই জানি, তবে আমরা নবুওয়াতের বাণীসমূহকে কীভাবেই বা পৌছাবো অথবা যে ইসলাম বিদ্বেষীরা রাসূলের জীবনকে কলোষিত করে রাসূলের জীবনের ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে, ইসলামের মূলকে আছড়ে ফেলছে, সেগুলোকেই বা কীভাবে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ঠেকাবো।
সিরাহ কেন পড়ব? প্রয়োজনীয়তা কী?
আমরা এখন সালফে-সালেহীন, স্কলার, বিভিন্ন দাঈ এবং সিরাহর উপর কাজ করেছেন এমন আলেম ও বিশেষজ্ঞদের থেকে সিরাহর উদ্দেশ্যগুলো তুলে ধরব। তাদের মধ্যে – ড. শাইখ ইয়াসির কাদি, ড. তারিক রামাদান, শাইখ আব্দুর নাসির জাংদা, ইমাম আনওয়ার আল-আওলাকী (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখ ড. সাঈদ রামাদান আল-বুতি (রাহিমাহুল্লাহ), ড. জামাল বাদাওয়ী, নুমান আলী খান, ড. আলী সাল্লাবি, ড. মোস্তফা হুসনী আস-সিবাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), ইত্যাদি।
বিখ্যাত আলেম ড. সাঈদ রামাদান আল-বুতী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর সুবিখ্যাত বই ‘ফিকহুস সিরাহ’ গ্রন্থে বলেনঃ
“রাসূলের জীবনী অধ্যয়ন মানে কেবল ইতিহাস বা ঘটনা পড়া নয় বরং রাসূলের জীবনে অন্তর্ভূক্ত জীবন্ত ইসলামকে অধ্যয়ন করা; কেবল একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি, নেতা বা বিচারক হিসেবে নয়, এগুলো একজন ব্যক্তির জন্য মুখরোচক হতে পারে কিন্তু প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়। সবার উপরে আল্লাহর নবী ও বার্তাবাহক হিসেবেই তাঁর জীবনী অধ্যয়ন করতে হবে”।
শাইখ মুহাম্মাদ আল-গাযালি (মিশর)(ইনি কিন্তু ইমাম গাজ্জালি রাহিমাহুল্লাহ নয়) এর বর্ণনা এরকম -
“অনেক ঐতিহাসিক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী লিখেছেন। তারা রাসূল ﷺ এর জীবনের বিভিন্ন দিক বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ‘ফিকহুস সিরাহ’র উদ্দেশ্য হলো কোনো কিছু কোন উদ্দেশ্যে ঘটেছিল তার বর্ণনা থাকে যাতে সেগুলোকে বর্তমানের প্রেক্ষিতে বাস্তবে আমরাও প্রয়োগ করতে পারি। এটা যেন প্রাচীন ইতিহাসের জীবন্ত ও আধুনিক ব্যাখ্যার সমন্বয় ও সমসাময়িক প্রায়োগিক দিক। এটি করার উদ্দেশ্য হলো বর্তমানে ঈমানকে জীবন্ত রাখা, চারিত্রিক পবিত্রতা বজায় রাখা, আধুনিক সমস্যাগুলোকে মোকাবিলা করা ও ঈমানের প্রতি দৃঢ় থাকা। বাস্তবতা হলো রাসূল ﷺ এর জীবনী সংরক্ষণের উদ্দেশ্য বাস্তবিক প্রয়োগ; বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা বা আনন্দ দান করা নয়”।
আন্দালুসিয়ার বিখ্যাত ইসলামী স্কলার ইবনে হাযম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
“আল্লাহর কসম, মুহাম্মাদ ﷺ কে যদি তাঁর জীবন এবং যুগ- এর মু’জিযা ব্যতীত অন্য কোনো মুজিযা নাও দেওয়া হতো, তবুও তিনি যে আল্লাহর রাসূল এটা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট হতো। মুহাম্মাদ ﷺ যে আল্লাহর নবী এটা প্রমানের জন্য সিরাই শ্রেষ্ট ঈংগিতবাহী”।
আল্লামা রশিদ রিদা (Rasheed Rida) বলেনঃ
“এগুলো যদি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য নাই হতো, তবে কেবল শাব্দিক কথার নির্দেশনা যথেষ্ট হতো না। কারণ সিরাহ-ই তাদেরকে শিখিয়েছিল কীভাবে কুরআনের মাধ্যমে সঠিক পথ পেতে হবে এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থায় চলতে হবে। সুতরাং আমাদের কাছে শাব্দিক শিক্ষার কুরআন ও সুন্নাহ রয়েছে, কিন্তু এসব কথার শিক্ষা আমরা কিভাবে প্রয়োগ করবো? রাসূল ﷺ ও সাহাবাদের জীবনের বাস্তব প্রয়োগ দেখে। কেননা, তারা আল্লাহর কথার নির্দেশনাগুলোকেই বাস্তবে কাজে পরিণত করেছিল। আমরা দেখতে পাই যে অন্যান্য নবী-রাসূলদের জীবনী হারিয়ে গেছে কিন্তু আমরা জানতে পারি কুরআন কীভাবে প্রয়োগ হয়েছিল, আমরা আরো জানতে পারি কীভাবে রাসূলের সুন্নাহ বাস্তবায়িত ও প্রয়োগ হয়েছিল”।
বাংলা ও ইংরেজিতে পৃথিবী বিখ্যাত স্কলার ও আলেমদের থেকে পিডিএফ বই, অডিও ও ভিডিও লেক্কচারের সামগ্রিক ও চমৎকার রিসোর্স পাবেন।
বিস্তারিত পড়ুন - ১ম পর্ব এখানে - http://tinyurl.com/pesja5c
২য় পর্ব - http://tinyurl.com/nwavp4k
ড. আলী মুহাম্মাদ আস-সাল্লাবী তাঁর বিখ্যাত সিরাহর বই Noble Life of The Prophet তে বলেনঃ
“প্রত্যেক মুসলিমের উচিৎ আল্লাহর রাসূলের জীবনী অধ্যয়ন করা। প্রকৃপক্ষে আমাদের জীবনের অনেক ইসলামী দায়িত্ব-ই রাসূলের জীবনের কেন্দ্রবিন্দুর ওপর নির্ভরশীল। যেমন প্রত্যেকের উচিৎ রাসূলকে ভালোবাসা কিন্তু তাকে না তাঁর সম্পর্কে না জেনে কিভাবে সেটা করবো? রাসূল যখন কুরাইশদের কাছে দাওয়াত পৌছাচ্ছে তখন আমরা জন্মগ্রহণও করিনি। সুতরাং রাসূলের সাথে পরিচিত হবার ও তাকে ভালোবাসার একটি মাত্র পথ বাকী থাকে, সেটা হলো তাঁর কথা ও কাজ অধ্যয়ন করা। আমরা কথা ও কাজ না জানলে কিভাবে তাকে অনুসরণ করবো। এক্ষেত্রে তাঁর জীবনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো “প্রসঙ্গ”- কোন প্রসংগে তিনি কোন কথা বলেছিলেন বা কাজ করেছিলেন”।
বিষয়: বিবিধ
১৯২১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা!!!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন