সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণ ৫০ ব্লগ, শতাধিক ব্লগারের ওপর নজরদারি স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,
লিখেছেন লিখেছেন বাঁকশালের কেল্লা ২৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:২২:০৩ রাত
সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণ
৫০ ব্লগ, শতাধিক ব্লগারের ওপর নজরদারি
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,
ঢাকা: সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণ করতে অন্তত ৫০টি ব্লগের ওপর কড়া নজরদারি করছে গোয়েন্দারা। এসব ব্লগে মতপ্রকাশ করে সক্রিয় এমন শতাধিক ব্লগারকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক ওয়েবপেজে যারা বাকস্বাধীনতার নামে বাড়াবাড়ি করেন এ রকম কয়েকজনকেও সতর্ক করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তরা বাংলামেইলকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতাসহ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে ব্লগে এবং ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য পোস্ট করায় কয়েকজনকে সতর্ক করা হয়। দু’জনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া হেফাজতের ইসলামের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চারজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হয়েছে এই নজরদারি।
সাইবার ক্রাইমের ব্যাপারে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এ সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার কমিশনার বেনজরি আহমেদ সাইবার ক্রাইমের ব্যাপারে সচেতনতা এবং নানা সতর্কতার তথ্য উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, দেশে নতুন সরকার গঠনের পর একটি বিশেষ গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপতৎপরতা বাড়িয়েছে। তারা রাজনৈতিকভাবে সরকারকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে নানা ষড়যন্ত্রমূলক লেখা পোস্ট করার পরিকল্পনা করছে।
কয়েকটি ব্লগ নজরদারি করা একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ঘটনা বা ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে একটি গোষ্ঠী, তাদের কাছে এ ধরনের তথ্যও আছে। এর আগে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল ব্লগে লেখালেখির কারণে। এবার গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে আগেই সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা অন্তত ৫০টি ব্লগ নজরদারি করছি। এর সঙ্গে যেসব ব্লগার তথাকথিত একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের ওপরও নজরদারি চলছে। কোনোভাবে কেউ রাষ্ট্রদ্রোহ বা কটূক্তিমূলক কিছু করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘বাকস্বাধীনতায় কোনো বাধা নেই। এটা সবার অধিকার। কিন্তু মতপ্রকাশের নামে কোনো গোষ্ঠী দেশের ভেতরে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলামেইলকে বলেন, ‘ব্লগে লেখালেখির কারণে উগ্রপন্থীদের টার্গেটে পরিণত হয়ে খুনের শিকার হন থাবাবাবা ব্লগের প্রশাসক আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন। একই সঙ্গে চারজন ব্লগারকে বিভিন্ন সময়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে জখম করে উগ্রপন্থীরা। ব্লগে যাতে কেউ উল্টাপাল্টা পোস্ট করে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের উপলক্ষ সৃষ্টিন করতে না পারে সে জন্য কড়া দৃষ্টি রাখা হয়েছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ছাড়াও বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট ইউনিট এ বিষয়ে কাজ করছে।’
বিটিআরসি সূত্র জানায়, সাইবার ক্রাইম অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী অপরাধীর দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজা এবং পাঁচ লাখ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। গত বছর ২৫ জানুয়ারি থেকে বিটিআরসির সিএসআইআরটির ১১ সদস্যের একটি দল সাইবার ক্রাইম শনাক্তে কাজ শুরু করে। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায়- এমন সব ওয়েবসাইট শনাক্ত করছে কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সিএসআইআরটি)। এছাড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ অপরাধের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ওয়েবপেজ বন্ধ করে দেয়া এবং অপরাধীকে সতর্ক করা হবে। এতেও কেউ সতর্ক না হলে প্রচলিত আইন মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সিএসআইআরটি।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ব্লগে আপত্তির পোস্টের জন্য গত বছর আসিফ মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ জন্য তাকে হামলার মুখেও পড়তে হয়। গত বছর ১৪ জানুয়ারি রাতে উত্তরায় তার ওপর হামলা করে উগ্রপন্থীরা। এছাড়া গত বছর ২১ মার্চ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে সামাজিক সাইট ফেসবুকের কয়েকটি পেইজ এবং একটি ওয়েবসাইট বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ব্যবস্থাও নেয় বিটিআরসি। ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যু কামনা করে মন্তব্য পোস্ট করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকেউ গ্রেপ্তার করা হয়।
সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠনের দাবি তোলার প্রেক্ষাপটে তিন ব্লগার সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা এর প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে নামে। এ আন্দোলনের মধ্যেই ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। আপত্তিকর মন্তব্যকারী ব্লগার ও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ৮৪ জনের একটি তালিকাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হয়েছিল। যেখানে ২৮ জন ব্লগারের নাম ছিল। এর আগে ব্লগে লেখালেখির কারণে ২০১১ সালের ১ অক্টোবর আসিফকে ১৮ ঘণ্টা আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন