ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সুভাষ চন্দ্র বসু
লিখেছেন লিখেছেন মাসুদ মোড়ল ২৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:৪৬:২৪ রাত
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সংক্রান্ত ২০টি গোপন ফাইল রয়েছে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে।
কিছু বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে – এই আশঙ্কায় ওই গোপন নথিগুলি প্রকাশ করা যাবে না, এই সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন দেশের সংসদেও ওঠানো যাবে না বলে ভারতের এক সংসদ সদস্যকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে মনমোহন সিংয়ের সচিবালয়।
সম্পর্কিত বিষয়
• ভারত,
• আন্তর্জাতিক
পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভায় সুভাষ চন্দ্র বসুর বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাওয়ার পরেও কেন সেই প্রশ্নগুলি করতে দেওয়া হচ্ছে না – তারই খোঁজ করতে গিয়ে পার্লামেন্ট সচিবালয় থেকে এই নোট পাঠানো হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস দলের সংসদ সদস্য সুখেন্দু শেখর রায়ের কাছে।
মি. রায় বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “আমরা যখন বিদেশী রাষ্ট্রের অধীনে ছিলাম, তখন সুভাষ চন্দ্র বসুর অন্তর্ধান সংক্রান্ত নথি গোপন রাখা হয়েছিল – সেটা বোঝা যায়। কিন্তু স্বাধীনতার এত দশক পরেও আমাদের নিজেদের সরকার কেন এই তথ্য গোপন করে রাখছে। এটা অবিশ্বাস্য, অস্বাভাবিক এবং অন্যায়।”
১৯৪৫ সালে তাইহোকুতে একটি বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যু হয়েছিল বলে ধারণা দেওয়া হয়।
"আমরা যখন বিদেশী রাষ্ট্রের অধীনে ছিলাম, তখন সুভাষ চন্দ্র বসুর অন্তর্ধান সংক্রান্ত নথি গোপন রাখা হয়েছিল – সেটা বোঝা যায়। কিন্তু স্বাধীনতার এত দশক পরেও আমাদের নিজেদের সরকার কেন এই তথ্য গোপন করে রাখছে"
সুখেন্দু শেখর রায়, সংসদ সদস্য
কিন্তু সেই তথ্য সঠিক কী না তা যাচাই করতে গত ছয় দশকে একাধিক তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে – যার মধ্যে প্রথম দুটি ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পক্ষেই মতামত দিয়েছে।
সুখেন্দু শেখর রায়ের প্রশ্ন, ওই দুটি কমিশনের মতামত যদি সত্যিই হয়ে থাকবে, তাহলে তৃতীয় একটি কমিশন কেন গঠন করা হয়েছিল আর কেনই বা সর্বশেষ ওই কমিশনের প্রতিবেদন কোনও কারণ না দেখিয়েই বাতিল করল সরকার।
“পঞ্চাশের দশকে শাহনওয়াজ কমিশন জানিয়েছিল তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনাতেই নেতাজীর মৃত্যু হয়েছে। সেই প্রতিবেদন সরকার মেনে নিয়েছিল। তারপরে আবার যাটের দশকে খোসলা কমিশন গঠন করা হল। তার অর্থ কী সরকারের মনে শাহনওয়াজ কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে সন্দেহ হয়েছিল? আর এই দুটো কমিশনই যখন একই কথা জানাল, তাহলে মুখার্জী কমিশন কেন তৈরি হল,” বলছিলেন, সুখেন্দু শেখর রায়।
সংসদ সদস্য সুখেন্দু শেখর রায়
বিচারপতি মনোজ মুখার্জীর নেতৃত্বাধীন কমিশন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছিল। তাইহোকু বিমানবন্দরের সব নথি খতিয়ে দেখে তারা মতামত দেয় যে ১৯৪৫ সালের ১৮ অগাস্ট সেখানে কোনও বিমান দুর্ঘটনাই ঘটে নি। কোনও কারণ না দেখিয়েই এই তদন্ত রিপোর্ট বাতিল করে দেয় সরকার।
তৃণমূল কংগ্রেস সংসদ সদস্যের কথায় এই তথ্য গোপন করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটা ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
মি. রায় বিবিসিকে বলছিলেন, “যদি বিমান দুর্ঘটনাতেই নেতাজী মারা গিয়ে থাকবেন, তাহলে সেই তথ্য প্রকাশ পেলে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কেন খারাপ হবে? দুর্ঘটনায় তো যে কেউই মারা যেতে পারেন! তাহলে কি আমরা ধরে নেব কোনও কোনও রাষ্ট্র নেতাজীর অন্তর্ধানের জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল? সরকার যে যুক্তি দিচ্ছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এই রহস্যজনক নিরবতা পালন করার পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থ নিশ্চিতভাবে জড়িত আছে।”
“সেইসময়ের কোনও কোনও রাজনৈতিক নেতা – যাদের দেশের মানুষ দারুণ সম্মান দিয়ে থাকেন, গোটা ঘটনায় তাদের জড়িয়ে থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে, সেই জন্যই এই নীরবতা পালন করা হচ্ছে, তথ্য গোপন করা হচ্ছে,” মন্তব্য সুখেন্দু শেখর রায়ের।
এর আগেও সুভাষ চন্দ্র বসুর পরিবার ও ভক্তরা তাঁর অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে সঠিক তথ্য জানতে চেয়েছিলেন কিন্তু সরকার প্রতিবারই তথ্য জানাতে অস্বীকার করে।
সুখেন্দু শেখর রায় এবং অন্য কয়েকজন এবার আইনের সাহায্য নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১১৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন