বাংলাদেশর প্রথম পতাকা উত্তলকারীর উদিৃতি

লিখেছেন লিখেছেন মিরন ২৬ মার্চ, ২০১৪, ০১:৪০:৫০ রাত

যারা ২ মার্চ জাতীয় সঙ্গীতের সূচনা করেছে আজকে তাদের কোনো খবর কেউ নিচ্ছে না। উপরন্তু মানব পতাকার মতো ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার চেষ্টা জাতির জন্য লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলক আ স ম আব্দুর রব।

মঙ্গলবার প্রাইমনিউজ.কম.বিডিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রব বলেন, যারা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে তাদের আওয়ামী লীগ না করার কারণে, আবার আওয়ামী লীগে থাকলে শেখ হাসিনার স্তুতি না করায় তারা অপাংক্তেয়। আওয়ামী লীগের যেসব মন্ত্রী আজকে গাড়িতে পতাকা উড়াচ্ছেন, তারা অনেকে এ পতাকার ইতিহাস জানেন না। যারা ২ মার্চ জাতীয় সঙ্গীতের সূচনা করেছে আজকে তাদের কোনো খবর না নিয়ে জাতীয় সঙ্গীতের রের্কড গড়তে যাচ্ছে সরকার। এটা জাতির জন্য লজ্জা, দু:খ ও অপমানের। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। বেঈমানের বিচার হবেই।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের বড় পৃষ্ঠপোষক বনে গেছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পরেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে ১৯৩২ সালে চট্টগ্রামে ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ ভারত বর্ষে বৃটিশ রাজত্বে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। অথচ ১৯৭১ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কোনো সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন সে খবর আমি শুনিনি। মনে হয় জাতিও জানে না।

তিনি আরও বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন দেশের স্বাধীনতা। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বঞ্চনা ও শোষণমুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি। ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা হয়েছে। বিচারক স্বাধীনভাবে রায় দিতে পারছেন না। এর জন্য আমরা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করিনি, মুক্তিযুদ্ধ করিনি।

আসম আব্দুর রব বলেছেন, স্বাধীনতার সব মৌলিক ইস্যু যেমন-জাতীয় পতাকা নির্ধারণ ও অঙ্কন, জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন, সার্বভৌম দেশের সীমানা নির্ধারণ, বঙ্গবন্ধু উপাধি, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন দেশের সর্বাধিনায়ক, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ২৩ মার্চ সারা বাংলাদেশে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনাসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও পরিকল্পনা করেছে ‘ছাত্রলীগ’ এবং ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’।

স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের পরিকল্পনায় ১৯৭১ সালের ১ মার্চ বিকালে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এ সভায় সিদ্ধান্ত হয় ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠানের। ঐ সভায় ডাকসু ভিপি হিসেবে ছাত্রসমাজের পক্ষে আমি সর্বপ্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করি। আমার পাশে ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ ও আবদুল কুদ্দুস মাখন। একাত্তরের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান পূর্ব ঘোষিত সংসদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করার পর গর্জে ওঠে ছাত্র-জনতা। সংসদ স্থগিত ঘোষণা শোনার পর হাজার হাজার ছাত্র-জনতার এক মিছিল বের করি। মিছিল নিয়ে হোটেল পূর্বাণীতে যাই এবং পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে দিই। বঙ্গবন্ধু তখন হোটেল পূর্বাণীতে অবস্থান করছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবদুল কুদ্দুস মাখন বিশাল মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররম আসার পর, আমরা পল্টন ময়দানে যাই এবং পাকিস্তানপন্থিদের (মাওলানা ফরিদ আহমদের) সভামঞ্চ ভেঙে দিই। ৩ মার্চ ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সভায় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন নূরে আলম সিদ্দিকী। আমি, তোফায়েল আহমেদ ও আবদুল কুদ্দুস মাখন বক্তব্য দিই। এ ইশতেহারেই বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণাসহ স্বাধীন রাষ্ট্রের নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রতিরোধ দিবসের ডাকে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে স্বাধীনতার পতাকা ওড়ে। ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উঠানো হয়। পতাকা উত্তোলনের সময় গান ফায়ারিং করেন জয় বাংলা বাহিনীর উপ-প্রধান কামরুল আলম খসরু। জয় বাংলা বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করি আমি, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ ও আবদুল কুদ্দুস মাখন। জয় বাংলা বাহিনীর পাঁচ শতাধিক সদস্য সামরিক কায়দায় স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে মিছিল করে সারা ঢাকা শহরে। শহর প্রদক্ষিণ শেষে তারা পল্টনে জমায়েত হয়। সেখানে সামরিক কায়দায় বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানানো হয়। জয় বাংলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নতুন পতাকা তাকে উপহার দেওয়া হয়। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে আমি সামরিক কায়দায় স্বাধীন বাংলার পতাকা হাতে তুলে দিয়ে হাঁটু গেড়ে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানাই। বাংলাদেশের সব বিদেশি দূতাবাসে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হয়। সরকারি অফিস-আদালতে এ পতাকা তোলা হয়। এদিন বেতার-টেলিভিশনে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটি প্রচার করা হয়। এদিন হাজার হাজার ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে আমি স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে দিই। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমি সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলে বিএলএফ ট্রেনিং ক্যাম্পে চলে যাই, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পাকবাহিনী ও তার দোসররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ও শামসুন্নাহার হলে ছাত্রীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। রাজারবাগে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বাঙালি পুলিশদের। নিরস্ত্র বাঙালি ক্রমেই সশস্ত্র হয়ে ওঠে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি-রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

বিষয়: বিবিধ

১০৫২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

198044
২৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০১:৫৯
মিরন লিখেছেন : লেখাটি পড়ে লোভ সংবরন করতে না পেরে আপনাদের মত প্রকাশের জন্য ব্লগে হস্তান্তর করা হলো, আমাদের সভাব হলো মূল/আসল ভুলে যাই, এটা কাম্য নয়, তাহলে তো তরুন প্রজন্ত আসল নকলের বিভেদ বুজতে পারবে না,লাখো কন্ঠে সোনার বাংলা নিসন্দেহে একটি যুগন্তরকারী ধারনা,কিন্তু যাদের আত্বত্যগের মহিমায় আজকের দিন উজ্জাপিত হচ্ছে তাদের যথায়থ মূল্যায়ন করা উচিত
198048
২৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০২:২২
সাদাচোখে লিখেছেন : স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস না শত্রুদেশের পেইড নিউক্লিয়াস? সত্য প্রকাশ ও তার যথাযথ বিশ্লেষন হলেই জানা যেত এ সব নিউক্লিয়াস কতটা তৎকালীন দেশের দেশপ্রেম নির্ভর নিউক্লিয়াস ছিল, আর কতটা শত্রুদেশের প্ররোচনায় এ দেশের ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা করে শত্রুদেশের বিজয় নিশ্চিতে কাজ করেছিল।

গ্রে কালার এর এ সব নিউক্লিয়াস যেমন জায়েজ করার চেষ্টা হয় - আজকে শেখ হাসিনার সরকারও তাদের দেশপ্রেমকে জায়েজ করতে অমন সব নিউক্লিয়াসের আওতায় কাজ করতে বাধ্য হয়।

যে দেশের নেতা নামক দ্বিপদী জন্তু ও জানোয়াররা নিজ দেশের স্বার্থের উপর অন্য দেশকে প্রাধান্য দেয় - এবং এ নিমিত্তে যুদ্ধ হতে শুরু করে সকল অপরাধ এ জড়ায় - সে দেশের এজেন্টরূপী নেতা নেত্রীদের এ দুনিয়ায় ও অন্য দুনিয়ায় শাস্তি যেমন পাওয়া চাই ঠিক তেমনি চাই তাদের বঞ্চনা, তাদের নিগ্রহ ও তাদের অপমান ও অপদস্থতা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File