মুহাম্মদ ইউসুফ এর দুইটি প্রবন্ধ

লিখেছেন লিখেছেন মন সমন ২৩ জুলাই, ২০১৪, ০১:১৮:২৩ দুপুর

# # মুহাম্মদ ইউসুফ এর দুইটি প্রবন্ধ # #

দুইজীবন ; বস্তুবাস্তবতা, ভাববাস্তবতা

... ... মু হা ম্ম দ ই উ সু ফ

Email:

একজন লেখক, দার্শনিক, কবি বা শিল্পী শেষ পর্যন্ত কোথায় বাস করবেন ?

নিজের অন্তরজগতে, অন্তর্বাস ?

কবি’র নির্জনতাকে কি একাকীত্বের স্বেচ্ছানির্বাসনে ফেলা হবে ?

আত্মভুবনে বসবাস কি আত্মমুখিতা ?

জীবনের ছুটাছুটি, রুটিরুজির শ্রম-গ্লানি অন্তরের শূন্যতাকে পূর্ণ করে না ।

পূর্ণতা, স্থিতি চায় অন্তর-আত্মা-মন ।

চায় মিলন ও মুক্তি ।

এ মিলন, স্থিতি ও পূর্ণতার আকাঙ্ক্ষা তীব্র কিন্তু কেন ?

মৃত্যু কি জীবনকে খণ্ডিত করেছে ? নাকি পূর্ণতা দিয়েছে ?

জীবন আকর্ষনীয় । জীবনে অভাব থাকলেও মোহ আছে, প্রেম আছে,

স্নায়ু-সুখ আছে, উত্তেজনা আছে, উল্লাস আছে ।

কিন্তু তারপরেও কি-যেন-একটা নেই । এই কি-যেন-টা দেশজয়ে, মাটির দখলে, অর্থ- বিত্তে, আপাত ক্ষমতার দাপটে, ভোগসুখে পাওয়া যায় না । এখানেই মানুষের অপূর্ণতা, শূন্যতা, একাকীত্ব । এই অপূর্ণতা, শূন্যতা, একাকীত্ব অধিকাংশ মানুষই অতিক্রম করতে পারে না ।

মানুষের মুক্তির, স্থিতির, পূর্ণতার আকাঙ্ক্ষা কীযেননেই-টাকে অর্জন করার লক্ষ্যে ।

জ্ঞানীমাত্র এই সত্যটা তীব্রভাবে উপলব্ধি করেন ।

আমরা কোথায় ছিলাম ?

যেখানে ছিলাম সেখানে স্থিতি ও শান্তি ছিল নিশ্চয়ই ।

এটা একারণে বলছি যে,

স্থিতি ও শান্তির অভাবটা এখানে (পৃথিবীতে) এসে বুঝতে পারছি ।

আমি অভাবী । আমার খাদ্যের প্রয়োজন ।

জীবনধারনে আমাকে দৌড়াতে হয় । চাকুরি, ব্যবসা করতে হয় ।

আমাকে তাড়না দেয়া হয়েছে । বাধ্য করা হয়েছে ।

অবশ্য জীবনধারনে আনন্দ নিশ্চয়ই আছে, ফলে শ্রম গায়ে লাগে না, মনে লাগে না ।

ক্ষুধা নিবারণে রসনার তৃপ্তি আছে । সহধর্মিনীর প্রেমে যাদু আছে ।

কিন্তু মনের শূন্যতা ?

কি-যেন নেই । কি-যেন নেই । কি-যেন চাই । কি-যেন চাই ।

এখানেই রহস্যটা । এই রহস্যটা নিয়েই নোবেল বিজয়ী আফ্রিকান ঔপন্যাসিক নাদিন গার্ডইমার বলেছেন, ‘ আমার মধ্যে যে প্রকৃতিগত কল্পনাশক্তি রয়েছে তার মাধ্যমে যে সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটবে তা কিন্তু আমার বাস্তব জীবন থেকে আলাদা হবে । একজন লেখককে প্রকৃত আন্তরিক বিস্ময় নিয়ে পৃথিবীকে দেখায় অভ্যস্ত হতে হবে ।‘

এটি কেন ?

এটি একারণে যে, জ্ঞানীমাত্র জীবনের গ্লানিকে পাশ কাটাতে চান ।

জ্ঞানীগণ হাঁসের মত জীবনযাপন করেন । হাঁস পানিতে সাঁতার কাটে কিন্তু তীরে এসে গাঝাড়া দিয়ে ময়লা পানি, আবর্জনা ফেলে দেয় । এইযে ‘ধরি মাছ নাছুঁই পানি‘ – এটার প্রয়োজন আছে । এই প্রয়োজনীয়তা প্রকৃতিগত । তা নাহলে মোহের পাঁকে অন্ধগলিতে জীবনবাস হবে । সত্যভুবনে প্রবেশ করা যাবে না ।

‘বাস্তব জীবন থেকে আলাদা’ যে সৃজনশীলতার জগত, যে বোধের জগত, মননের জগত, চিন্তার জগত, চিন্তাভ্রমণের জগত – এটিই প্রকৃত জগত । এই সত্যজগতটিতে একমাত্র মানুষেরই প্রবেশাধিকার, অন্য কোনো প্রাণীর প্রবেশাধিকার নেই, দেয়া হয়নি ।

এইযে বাস্তবজীবনে ( পার্থিব জীবনে ) বসবাস করেও অন্যভুবনে, অন্যজগতে বসবাসের তীব্র আকাঙ্ক্ষা – ‘হেথা নয়, হোথা নয়, অন্য কোনোখানে’ – অন্য কোনো লোকে, জগতে বসবাসের আগ্রহ এবং অন্যজগতে বসবাসের আকাঙ্ক্ষায় স্থিতি, মুক্তি ও শান্তিলাভের চিন্তা ও প্রবল আগ্রহ – এটাই প্রমাণ করে যে, আমরা আসলে অন্যজগতে ছিলাম এবং যখন, যে সময়ে অন্যজগতে ছিলাম তখন দুশ্চিন্তা ছিল না, অভাব ছিল না, অভিযোগ ছিল না । শান্তিতে, নিরাপদে ছিলাম ।

তাহলে আমরা কি দেখলাম, বুঝলাম ?

ক।

শান্তি, স্থিতি ভঙ্গ হয়েছে ।

খ।

অভাবে পড়ে গেছি ।

গ।

বিচ্ছিন্ন হয়েছি ।

হ্যা, বিচ্ছিন্নতাই মূল সমস্যা ।

মানবজীবনের, মানবাত্মার মূলসমস্যা এই যে, মানবাত্মা পরমাত্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে ।

যখন সে (মানবাত্মা ) পরমাত্মায় ছিল, কোনো সমস্যা ছিল না ।

তাহলে এই সিদ্ধান্তে আসতেই হয় যে, সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে ।

অন্তরের, আত্মার শূন্যতা ও একাকীত্ব ঘুচাতে যদি আমরা ব্যর্থ হই তাহলে নোবেল বিজয়ী ওকতাভীও পাজ-এর মতো আমাদেরকে ক্রমাগত ধারাবাহিকভাবে সারাজীবন ধরে একথাটি বলে যেতে হবে – ‘মানুষ কখনও একাকীত্ব অতিক্রম করতে পারে না’ ।

কথাটি ‘শূন্যতা অতিক্রম’ কিংবা ‘একাকীত্ব অতিক্রম’ বলা ঠিক হবে না । কথাটি হবে – ‘বিচ্ছিন্নতা অতিক্রম করা’ অর্থাৎ পরমকে পাওয়া, পরমের ( আল্লাহ্‌র ) সান্নিধ্যলাভ,

নৈকট্যলাভ । এখানে একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আল্লাহ্‌র নৈকট্যলাভ বা সান্নিধ্যলাভে

পরমাত্মায় ( অর্থাৎ আল্লাহ্‌ পাকের জাতসত্ত্বায় ) সম্পূর্ণ বিলীন হওয়ার ( ফানা হয়ে একেবারে মিশে যাওয়া ) ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল, অলীক উদ্ভট কল্পনা । কারণ, পরমাত্মা ( আল্লাহ্‌ ) তাঁর এক ও একক সার্বভৌমত্ব ও মহাপরাক্রম জাতসত্ত্বা নিয়ে আছেন । মহান আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান ও সর্বশ্রোতা । আমরা সর্বমহান আল্লাহ্‌র নিকট থেকে এসেছি এবং সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্‌র নিকটেই ফিরে যাচ্ছি । এটি চরম সত্য ।

আল্লাহ্‌র নৈকট্যলাভ বা সান্নিধ্যলাভে স্বস্তি-সুখ-শান্তি-নিরাপত্তা অবশ্যই পাওয়া যাবে ।

এই নিরাপত্তাবোধ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের মনের গভীরে নেই । দৃঢ়বিশ্বাস ( প্রতীতি ), জ্ঞানের গভীরতা, অটলতা-দৃঢ়তা না থাকার কারণে বেশীরভাগ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, একাকীত্ব অতিক্রম করতে পারে না । ফলে মানবজীবন ( সাধারণ মানুষের জীবন ) শেষপর্যন্ত শূন্যতা ও একাকীত্বের লক্ষ্যহীন বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ।

কূটনীতি, দেশদখল, ভোট, দেশাত্ববোধ, জাতীয়তাবোধ, ভাষাবোধ ইত্যাদি যে আকাঙ্ক্ষা থেকে জন্ম নিয়েছে তাহলো একসাথে, একযোগে থেকে পার্থিব জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্যে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসমাত্র ।

কিন্তু মানবমনের মূলসমস্যা – বিচ্ছিন্নতাবোধের সমস্যা ।

কূটনীতি, পরমাণু গবেষণা, ভোট, দেশাত্ববোধ, জাতীয়তাবোধ, ডলার-পাঊণ্ড, তেল, বুলেট, রাজনীতি, কম্পিউটার, মহাকাশ গবেষণা, মিসাইল দিয়ে মানবমনের মূলসমস্যা – বিচ্ছিন্নতাবোধের সমস্যার সমাধান হবে না ।

অস্তিত্ব রক্ষার্থে ( মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত ) তেল-আলুর প্রয়োজন ।

কিন্তু শুধুমাত্র তেল-আলুতে মন ভরে না ।

‘পাগল মন, মনরে, মন কেন এত কথা বলে ... ‘ মন এতকথা একারণে বলে – মন, আত্মা যে পরমাত্মার ( আল্লাহ্‌র ) নিকট থেকে থেকে এসেছে সেই পরমাত্মা ( আল্লাহ্‌ ) অনেক কথা বলেন । মহাপবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন মহান আল্লাহ্‌রই কথা । যেহেতু পরমাত্মা ( আল্লাহ্‌ ) অনেক কথা বলেন, সেহেতু আমরা যারা পরমাত্মা ( আল্লাহ্‌ ) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি আমরা তো আরও বেশি কথা বলব !! আমাদের তো দুঃখকষ্ট, যন্ত্রণা আরও বেশি । বাজার করতে হয় আমাদের, বিরূপ আবহাওয়া মোকাবেলা করতে হয়, রোগবালাই আছে, রুটিরুজির জন্যে অধিকাংশ মানুষকে জীবনের বেশীরভাগ সময় ব্যয় করতে হয় ।

আমরা ( মানুষ, মানবাত্মা ) পরমাত্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি ।

একারণেই আমাদের মন সারাক্ষণ বিরহী, মিলনের তীব্র আকাঙ্ক্ষী ।

[ পাগল মন বলা ঠিক নয়, কারণ, বিচ্ছিন্ন মন-আত্মা মূল পরমআত্মার ( আল্লাহ্‌র )

কাছাকাছি থাকতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক, মন-আত্মার এই আকাঙ্ক্ষা খুবই স্বাভাবিক,

তাই মনকে পাগল বলা হলো অজ্ঞতা, মূর্খতা ]

বিচ্ছিন্ন কেন করা হলো ?

লক্ষ্য কি ? কারণ কি ?

কারণ এই যে, আল্লাহ্‌ প্রকাশিত হতে চেয়েছেন ।

সৃষ্টির কারণেই আল্লাহ্‌র সকল গুণাবলী প্রকাশিত হয়েছে ।

মোমিনের কলবের আয়নায় আল্লাহপাক নিজেকে প্রকাশিত-প্রতিফলিত দেখতে চেয়েছেন ।

মোমিনের (দৃঢ়-অটল বিশ্বাসী আমলকারি মুসলিম [প্রেকটিসিং মুসলিম])

কলবে ( আত্মা-আয়নায় ) আল্লাহ্‌ প্রকাশিত -প্রতিফলিত ।

আল্লাহ্‌কে মানবীয় চামড়ার চোখে দেখা অসম্ভব ।

মোমিনগণ কলবের আয়নায় ( আত্মার আয়নায় ) আল্লাহ্‌কে উপলব্ধি করেন,

শুকরিয়া আদায় করেন ( ধন্যবাদ দেন ) এবং স্থিতি-শান্তি-নিরাপত্তা লাভ করেন ।

মানবাত্মার স্থিতি-শান্তি- নিরাপত্তা লাভের এই একটিই উপায়-পদ্ধতি ।

অর্থাৎ মহান আল্লাহ্‌র নিকট আত্মসমর্পণ করা ।

মানবাত্মা-পরমাত্মার এই রহস্যই জীবন ।

এই জীবনরহস্যরসে বিস্ময়ে–আনন্দে মেতে থাকাই, ডুবে থাকাই জীবনের একান্ত, প্রকৃত আস্বাদন এবং অবশ্যই তা ভাববাস্তবতার চিন্তাভ্রমণে । ‘হেথা নয়, হোথা নয়, অন্য কোনোখানে’ – এই অন্য কোনোখানেটা মূলে, বিরহে, এবং যুগপৎ মিলনে । পরমাত্মা আল্লাহ্‌কে খুঁজতে, কাছে পেতে মানুষকে যেমন প্রকৃতিকে ( নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ) পাঠ করতে হয় ( গবেষণা করতে হয় ), তেমনি আত্ম-পাঠ অর্থাৎ নিজেকেও পাঠ করতে হয় । ‘নিজেকে চেন, তাহলে আল্লাহ্‌কে চিনতে পারবে’ । এভাবেও বলা যায় – ‘আল্লাহ্‌কে চেন, তাহলে নিজেকে চিনতে পারবে’ ।

বিষয়টি অত কঠিন কিছু নয় । আন্তরিকতার সাথে গভীর মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করলেই হয় । কারণ, মহান স্রষ্টা আল্লাহ্‌পাক তাঁর স্বভাবেই আমাদেরকে সৃষ্টি করে এখানে ( পৃথিবীতে ) পাঠিয়েছেন । ফলে মনটা-আত্মাটা নির্মল, পবিত্র, মোহমুক্ত থাকলে তাঁকে ( আল্লাহ্‌কে ) নিজের ভিতরই উপলব্ধি করা যায় ।

আফ্রিকান ঔপন্যাসিক ( নোবেল বিজয়ী ) নাদিন গারডিমার বলেছেন, ‘সৃজনশীলতা বাস্তব জীবন থেকে আলাদা হবে এবং একজন লেখককে আন্তরিক বিস্ময় নিয়ে পৃথিবীকে দেখায় অভ্যস্ত হতে হবে’ – একথাটির মৃদু সংশোধন প্রয়োজন । কথাটি আসলে হবে – সৃজনশীলতা বস্তুজীবন থেকে আলাদা হবে । বস্তুজীবনও কিন্তু বাস্তবজীবন । বস্তুজীবনকে অস্বীকার কিংবা একেবারেই বাদ দেয়া যেহেতু যায় না, সম্ভব নয় বলেই – এটি অবশ্যই পার্থিব জীবনের সীমাবদ্ধতা – যেটি কবি ইকবাল বলেছেন ।

বস্তুজীবনও বাস্তবজীবন এবং ভাবজীবন বা চিন্তাভ্রমণের জীবনও বাস্তবজীবন ।

এই দুইজীবনের বৈপরীত্য বা সংঘর্ষই জীবনের গ্লানির কারণ, একঘেয়েমির কারণ ।

অবশ্য, গর্দভ-মূর্খ ধরনের মানুষ জীবজীবনই কাটিয়ে দেয় সমগ্র জীবনসময়ে ।

বস্তুজীবনে, স্নায়ুজীবনে, ভোগজীবনে তুষ্ট থাকে, খায়-দায়-ল্যাদায় । ভাবজীবনের, সত্যজীবনের সত্যজগতের আনন্দসংবাদ পায় না, সত্যজগতের ( আল্লাহ্‌ময় জগতের ) আনন্দভ্রমণে যেতে পারে না । অবশ্য বিপদে-আপদে পড়লে তারা আল্লাহ্‌কে ডাকে, বিপদ কেটে গেলে আবারও জীবজীবনে বসবাস শুরু করে ।

বিস্ময়কর ও দুঃখজনক সংবাদ এই যে, গর্দভ-মূর্খ ধরনের মানুষের জঙ্গলই দুনিয়াজোড়া ।

ভাববাস্তবতার বিষয়টি পৃথিবীতে কম আলোচিত হয় । মানুষ জীবন নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে, হাইজাম্প, লংজাম্প দেয় – একসময় বৃদ্ধ হয় । মৃত্যুর আগে একটুআধটু চিন্তা হয়, ভয় হয় ।

তখন দুর্বল মস্তিষ্কে, দুর্বল স্নায়ুতে আর কতটুকু সংবেদনশীলতা থাকে ? সত্যজগতে প্রবেশের সাধনার সময় তখন থাকে না । ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ – লালন বলেছেন ।

তাছাড়া দীর্ঘ জীবনাচার ( অভ্যাস ) তাকে ‘ঘোর’-এ রাখে ।

অবশেষে – ‘ আইলাম আর গেলাম, পাইলাম আর খাইলাম,

দেখলাম-শুনলাম কিছুই বুঝলাম না’ ।

পৃথিবীব্যাপী ভাববাস্তবতার উর্বর চাষাবাদ করা গেলে ৭০০ কোটি মানুষের

এই পৃথিবী সম্পূর্ণ অন্যরকম আনন্দময় হতো ।

যা নিউ মিলেনিয়ামের মানবসম্প্রদায় কল্পনা-ধারণা করতে পারছে না ।

ভাববাস্তবতার জীবন এক জ্যোতির্ময়-আনন্দময় শক্তিশালী জীবন ।

এজীবনে হতাশা নেই, ক্ষয় নেই, গ্লানি নেই, ভয় নেই ।

আছে স্থিতি ও নির্ভরতা । আছে শান্তি-শোকর-আনন্দ ।

শূন্যতার হাহাকার নেই, অভিযোগ নেই, অভাব নেই ।

পরিপূর্ণ এক মানবজীবন ।

ভাববাস্তবতাই চরম ও পরম বাস্তবতা ।

বস্তুবাস্তবতাকে অস্বীকার করে নয়, পূর্ণ পাশ কাটিয়ে নয়,

বস্তুবাস্তবতাকে ব্যবহার করেই, বস্তুবাস্তবতার ঘোড়ায় চড়েই

ভাববাস্তবতার জ্যোতির্ময়-আনন্দময়-আলোকিত জগতে/জীবনে

বসবাস করতে হবে এখানে ( পৃথিবীতে ) থেকেই ।

তাহলেই আলোকিত জীবন, তাহলেই সার্থক মানবজীবন ।

তাহলেই ‘বিপদে মোরে রক্ষা কর, এ নহে মোর প্রার্থনা’ –

তাহলেই আত্মা-পরমাত্মায়

( মানবাত্মার সাথে মহান সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহ্‌র মিলন )

মিলন – তাহলেই স্থায়ী আনন্দবাস ।

MATERIAL VERSUS PHENOMENAL REALITIES

… M u h a m m a d Y u s u f

Email:

Where a philosopher, poet and/or artist do finally chooses to live in ?

Within his/her own self ?

Is a poet’s love for solitary confinement synonymous with self-exile ?

Does living within one’s own abode lead to self-centeredness ?

No.

For, struggle for living in the real world doesn’t fill the vacuum in human mind which demands a sense of completion and stability vis-à-vis engagement and liberty.

What do the engagement, stability and completion refer to ?

Has death divided life? Or, it has completed the cycle of life ?

Life has glamour, of course. Despite the existence of want there are attraction, love, nervous feeling of happiness, excitement and joy in life. Even after all these something appears to be non-existent. This feeling of non-existence cannot be changed into existence by conquering new land or by increased enjoyment.

Here lies man’s incompleteness, vacuum and loneliness which human can’t usually overrides.

Man’s desire for liberty and stability is aimed at achieving this unachieved. Wise folks be he a poet, artist, philosopher or a non-author feel this reality.

Where had we been before our birth ?

Of course, there were peace and stability in our previous dwelling world. I am asserting on this point in particular as because we have been feeling the need of peace and stability after coming to this world. I am the man in want.

I need food to live on. I have to run here and there in order to live by a livelihood. I am always under stress. I am compelled to bear the burden of this life. Of course, there is joy in life which is why we don’t feel the pain of labor, get satisfied after having a good dish and get spell-bound by the love of spouse. Even in the old age some of us feel the excitement of adolescence.

But, what about the vacuum in mind ?

Our mind demands something different.

Here lies a mystery about which noble laurite Nadin Gordimar says, ‘‘the expression of my creativity which comes out of the naturally built-in power of imagination will be different from my material life. A writer must have to be habituated to look at the world in surprise. ’’

Why so ?

Because a wise man always seeks way out to bypass defeat.

He desires to live like ducklings. Duckling after swimming in the pond removes all filths of the body. This policy of ‘catch the fish not touching the water’ is needed in life as it is an urge from Nature. Otherwise, our course of life will be detracted and we shall fail to enter into the Abode of Truth.

The Abode of creativity that contains imagination, perception, intellectuality, thought and thought-process is different from material life. The existence of such an abode is the Phenomenal Reality. Only human has the entry pass to this abode, not any other living being. Human’s intense desire for living in another world with stability, liberty and peace proves that, in fact, we once lived in another world without anxiety, want and accusation. We lived there in peace and safety.

Then what happened ?

A. Peace and stability were violated.

B. We feel to the grip of want.

C. We got alienated.

The first problem is the sense of alienation that refers to the fact that human soul [human life] has been alienated from the Absolute Soul. No problem was there when human soul was the part and parcel of Absolute Soul. Out of this line of logic we reach to a conclusion that a problem arose and we have been thrown into it.

Who has thrown ? What for ?

Prior to settling this question man can’t remove his sense of alienation. In that case, he has to repeat noble laurite Octavio Puzz : ‘‘Man never can override his loneliness.’’

The issue is not about overriding state of alienation that is to get attached with the Absolute. This attachment doesn’t refer to complete merger as the Absolute is Sovereign and Almighty. He is in essence Supreme, One and Alone. Having got attached with Him peace, happiness and safety is perceived to be achieved. Most of the folks of our world do not enjoy the sense of safety due to lack of in-depth knowledge and faith. Therefore, their lives rotate within the cycle of emptiness and loneliness.

The arts of diplomacy, conquest of land, nationalism, and patriotism etc, originated out of desire to solve earthistic problems building solidarity with other human beings. But the first problem of human mind – the sense of alienation – Can’t be solved by diplomacy, nuclear research, patriotism, nationalism, dollar-pound, oil, bullet or computer. Oil and potato are needed for feeding the body. But the vacuum of mind can’t be filled by it.

‘‘পাগল মন, মনরে, মন কেন এত কথা বলে ... ’’

[ Mind ! Crazy mind !! Why does mind speak out too much ? ]

Mind speaks out too much as The Absolute Soul [ Allah, All-Mighty, All-Wise, The Creator, The Greatest ] from which it has sourced out speaks many things to it. As the Absolute Soul [Allah, All-Mighty, All-wise, The Creator, The Greatest] speaks out frequently, therefore, we the living beings who have been alienated from Him [Allah] are supposed to speak out much more, we feel pain, grief and stress. Allah has alienated us. Therefore, our crazy minds stay in pain for communion with Him [Allah].

What was the purpose of our alienation ?

Due to the Great Affection.

Great affection just not pulls near alone, but also pushes away sometimes. Why does it push away? Isn’t it more enjoyable to stay near?

Allah says He is the nearest to us. We shall feel provided if we sincerely look for Him. Then, the feeling of alienation will be killed. If so happens, can we settle we have not been really separated? Or, we indeed got separated? It remains a mystery between human and Absolute Soul [Allah, All-Mighty, All-Wise, The Creator, and The Greatest].

The other name of this mystery is human life.

Passing the days in surprise and joy within the

frame of this mystery is the functional dimension of life.

It happens in the thought process of phenomenal realities.

The essence of Allah, All-Mighty, and All-Wise

is interesting because in order to find Him [Allah]

man has to read the Nature [from Earth to the Sky]

as well as his own self too.

The act of reading is not so tough, though, as Allah sent us to this world having given some of the attributes of His [Allah] own self. Hence, a clean mind which is free of all greed can easily comprehend Allah.

Noble laureate Nadine Gordimar states, The abode of Creativity must stay separate from real life and an author must be habituated to see the world in sincere and spontaneous surprise etc.

The statement requires a correction.

The abode of creativity must stay separate from material, not real, life as material life also is real which can’t be ignored. It is the limitation of earthistic life as stated by great Poet Iqbal.

Suppose, man is compelled to do many works which lack dignity and beauty. Such compulsion is the rule of material life.

Out of this analysis it can be settled that both material and phenomenal aspects of human life are real. They are diametrically opposite to each other and sometimes clash happens between them. Such clash is the reason behind mental disorder and disgrace in human life.

Usually, ignorant folks stay satisfied with material life.

They eat, drink and make merriment but never feel the joy of facing the real in totality. Perhaps, due to this reason noble laurite Nadin Gordimar insisted to separate real life from the abode of reality.

Phenomenal Reality as an issue is less discussed in our surroundings as the huge bigger portion of human life is spent after struggle for existence. Latter our weak nerve can’t run with high thinking in the old age.

Each and every member of the billion strong human race would feel the happiness of Paradise on this earth if they were aware of the Phenomenal realities of their lives.

[ Translation : Mohammad Basir-ul Haq Sinha ]

মৃত্যু, নৈঃসঙ্গ , স্রষ্টা, প্রেম ও মানুষ

... ... মু হা ম্ম দ ই উ সু ফ

Email :

‘‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে / মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’’ । মৃত্যুকে পাশ কাটাতে চায় মানুষ, এড়িয়ে যেতে চায়, কিন্তু সম্ভব নয় ।

সম্ভব হলে অর্থাৎ মৃত্যুকে অস্বীকার করার, রদ-রহিত করার ক্ষমতা পেলে

নিঃসন্দেহে মানুষ স্রষ্টাকেও এড়িয়ে যেত, পাশ কাটাত ।

মানুষের ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এভাবেই স্রস্টার আইন এবং ইচ্ছাশক্তি প্রবলভাবে কার্যকর ।

কাজেই এটা উজ্জ্বল সত্য ও স্বচ্ছ-পরিষ্কার যে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিত-সুনির্দিষ্ট

প্ল্যান ও ডিজাইনে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন ।

‘‘খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে, হে বিরাট শিশু আনমনে’’ – এই চিন্তাভঙ্গীও গ্রহণযোগ্য নয় একারণে যে, বিরাট শিশু আনমনে খেলতে থাকলে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না । ‘আনমনে খেলা’ অনেক অসতর্ক মুহূর্তের জন্ম দেবে, সৃষ্টিজগত পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে ।

স্রষ্টা বিশ্ব নিয়ে খেলতে পারেন না একারণে যে, তিনি [ স্রষ্টা ] কঠোর শৃঙ্খলা-নিয়মনীতি ও সৌন্দর্যের সমন্বয়ে সৃষ্টিজগত পরিচালনা করেন এবং একাজে তিনি ক্লান্ত হন না । সৃষ্টিজগত পরিচালনায় স্রষ্টা অত্যন্ত মনোযোগী, দৃঢ়, শৃঙ্খল ও অটল ।

হেডমাষ্টারের মত অবস্থান স্রস্টার । সকল ছাত্রের প্রতি হেডমাষ্টারের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ থাকে । ক্লাসের ফার্স্ট বয়ের প্রতি থাকে অপার স্নেহ কিন্তু হাতে থাকে প্রশাসনের কঠোর বেত ।

কাজেই, কোনো যুক্তি-প্রতিযুক্তিতেই স্রষ্টাকে ‘বিরাট শিশু’ বলা যায় না ।

স্রষ্টা বিরাট শিশু নন । মহান স্রষ্টার [ সর্বজ্ঞানী, সর্ব শক্তিমান আল্লাহ্‌ তায়ালা ] সরলতা ও উদারতাকে শিশুর সারল্যের সাথে তুলনা করা যেতে পারে কিন্তু স্রষ্টার কঠোর, কঠিন শাসক-প্রশাসক-বিচারক সত্ত্বার রূপটিকে তাতে অস্বীকার করা হয় ।

কঠিনে-কোমলে মেশানো সত্ত্বাকে [ আল্লাহ্‌কে ] ‘বিরাট শিশু’ মনে করা বিরাট ভুল

এবং যুক্তি ও সত্যবর্জিত আবেগ-উচ্ছ্বাস মাত্র ।

অধিকাংশ মানুষ পার্থিব জীবনে যে-কাজ করে সময় ব্যয় করে সেই কাজগুলোকে বরং স্রষ্টা ‘ক্রীড়া-কৌতুক মাত্র’ বলেছেন । ‘যাহা চাই, ভুল করে চাই / যাহা পাই তাহা চাই না’ – এই বিভ্রান্তি অধিকাংশ মানুষের ।

মানুষ ঘরের টানে-আকর্ষণে ঘর বাঁধে কিন্তু ঘরের প্রয়োজনেই তাকে বেশীরভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকতে হয় ।

মানুষের জীবনে দুঃখবোধকে দেয়া হয়েছে সুখবোধকে স্বচ্ছ-সূক্ষ্ণভাবে উপলব্ধি করে আত্মিক-মানসিক পরিপক্কতা অর্জনের লক্ষ্যে । অসুস্থ শরীরেই তীব্রভাবে উপলব্ধি করা যায় সুস্থকালীন সুখবোধকে ।

ধারাবাহিক সুখ কিংবা ধারাবাহিক দুঃখ দুটোই একঘেয়ে, বৈচিত্রহীন । মানুষ বৈচিত্রপ্রিয়, কারণ স্রষ্টা আল্লাহ্‌ পাক নিজেই বহুমাত্রায় বৈচিত্রপ্রিয় সত্ত্বা ।

[ মহান আল্লাহ্‌ পাক মানুষকে তাঁর ( আল্লাহর ) নিজের স্বভাবে সৃষ্টি করেছেন ; প্রাণীজগতে ও উদ্ভিদজগতে বৈচিত্রের লক্ষ লক্ষ উদাহরণ ও উপাদান রয়েছে । ]

মানুষের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন-সাধ বাস্তবে পূরণ হয় না ।

কেন পূরণ হয় না ?

পর্দার অন্তরালের সত্ত্বা, স্রষ্টার [ সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সকল ক্ষমতার একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ্‌ পাক ] ইচ্ছার কারণেই পূরণ হয় না ।

আল্লাহর ইচ্ছাই যে কার্যকর, আল্লাহ্‌র কাছেই যে সকল ক্ষমতা-শক্তি ও দান সামগ্রী এবং তিনিই যে দাতা-সম্পদশালী-ধনী তা বুঝিয়ে দেয়ার জন্যই মানুষের সকল ইচ্ছা-স্বপ্ন পূরণ হয় না ।

মৃত্যু না-থাকলে মানুষ স্রষ্টার অস্তিত্বকে হয়তো অস্বীকার করতো না,

কিন্তু আমার মনে হয়, মানুষ অন্তত একথা স্রষ্টাকে বলতো যে,

আপনি স্রষ্টা, আপনি আপনার কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকুন,

আমরা আমাদের কাজকর্ম নিয়ে খুবই ব্যস্ত আছি,

আমাদের সংসার আছে, বাজার করতে হয়, দ্রব্যসামগ্রী বানাতে হয়,

বাসস্থান বানাতে হয়, গুলি-বোমাও বানাতে হয়, দেশ দখল করতে হয় ।

কত কাজ আমাদের !!! কর্মই আমাদের ধর্ম, আপনাকে [ স্রষ্টা ] স্মরণ করা,

আপনার কথা ভাবনা-চিন্তা করার মত সময় আমাদের নেই, দুঃখিত ।

একথা বলছি একারণে যে, মৃত্যু দেয়ার পরও মানুষ মৃত্যু ভুলে থাকতে চায়,

ভুলে যায়, অন্যায়- অত্যাচারে-অবিচারে-শোষণে পৃথিবীকেই জাহান্নাম বানিয়ে ছাড়ে ।

ভোগ-পেয়ালায় ছুটে তুফান-টর্নেডো, উল্লাস-উত্তেজনার তাৎক্ষণিক ক্ষণস্থায়ী স্নায়ুসুখ

নিয়ে সুখী হতে চায়, বেঁচে থাকতে চায় মানুষ ।

মানুষের প্রকৃত অভাবের চেয়ে তার অভাববোধের মাত্রা বেশী ।

ফলে সে সবসময় অস্থির-তটস্থ থাকে এবং নিজেই নিজের শান্তিনষ্টের কারণ হয় ।

স্নিগ্ধ-অনাবিল প্রকৃত শান্তি-আনন্দ প্রতিষ্ঠিত হয় না পৃথিবীতে । লক্ষ্যভ্রষ্ঠ হয় মানুষ ।

মানুষ স্রষ্টার প্রকাশ । স্রষ্টা নিজেকে প্রকাশিত করতে চেয়েছেন । প্রকাশিত হয়েছেন ।

মানুষের সাথে স্রষ্টার সম্পর্কের বিষয়টিই পৃথিবীর মানুষদের জন্যে মৌলিক বিষয়, মূলজ্ঞান ।

এবিষয়ে তেমন গবেষণা কোথায় ?

পদার্থবিজ্ঞানী স্টীফেন হকিং ঈশ্বরের মন বুঝতে চেয়েছেন ।

কীভাবে তিনি ঈশ্বরের ( সর্বজ্ঞানী, সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বশক্তিমান, মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা )

মন বুঝবেন ?

আল্লাহ্‌র মন বুঝতে চাইলে আল্লাহ্‌র কথা বুঝতে হবে,

আল্লাহ্‌র কথায় দৃঢ়-পোক্ত-অটল বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে,

মহান আল্লাহ্‌র কথাসমূহ হলো মহাপবিত্র মহাগ্রন্থ আল কোরআন ।

পৃথিবীর অনেক চিন্তাবিদ এবিষয়ে একমত যে, সমগ্র জ্ঞানের ( Total Wisdom ) বড় অংশকেই আড়ালে রাখা হয়েছে । আড়ালে রাখা সমগ্র জ্ঞানের বড় অংশের বিষয়ে কোনোদিনই মানুষ জানতে পারবে না । সৃষ্টির পূর্বের অনন্ত সময়ের বিষয়ে মানুষ কিছুই জানে না, জানা সম্ভব নয়, কারণ, তখনতো মানুষের সৃষ্টিই হয়নি ।

অবশ্য, একটি সুসংবাদ মহান আল্লাহ্‌ পাকের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে ।

আল্লাহ্‌ বলেছেন যে, ‘‘তোমরা আমার কাছে ( আল্লাহ্‌র কাছে )

জ্ঞান বাড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রার্থনা কর’’ ।

অর্থাৎ কিছু জ্ঞান মানুষের মধ্যে ( ধীশক্তিতে-প্রজ্ঞায়-মননে ) দেয়া হয়েছে সৃষ্টির শুরুতেই ।

সেই জ্ঞান মানুষের ধীশক্তিতে-প্রজ্ঞায়-মননে সুপ্তভাবে বিরাজমান ।

লালন-বিকাশ ও চর্চায় সেই জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে ।

সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বপ্রদাতা, সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহ্‌ পাক সম্পর্কিত

জ্ঞান আল্লাহ্‌ পাকের নিকট থেকেই পাওয়া সম্ভব ; মুক্তচিন্তায় অসম্ভব ।

বুদ্ধি ও জ্ঞান-প্রজ্ঞা এক নয় । যাদের স্মৃতিশক্তি ভাল, মুখস্ত-বিদ্যায়

পারদর্শী তাদেরকে বুদ্ধিমান বলা হয় । বুদ্ধিমানরা প্রজ্ঞাবান নয়,

তাদের অন্তর্দৃষ্টি-দূরদৃষ্টি এবং সৃজনশীলতা নেই । পৃথিবীতে বুদ্ধিমান

প্রাণী-মানুষের সংখ্যাই বেশী, বুদ্ধিমান দেশনেতাদের সংখ্যাই বেশী,

জ্ঞানীদের সংখ্যা স্বল্প ।

আর একারণেই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বিভ্রান্ত,

সত্যপথ খুঁজে পায় না, স্থায়ী সুখ-আনন্দের আল্লাহ্‌ময়

জগতের সদস্য হতে পারে না ।

ক্ষণস্থায়ী স্নায়ু-সুখ, উত্তেজনা-উল্লাসজনিত বিকারসুখ, যৌনসুখ-উত্তেজনা, পেটুকতা,

ক্রীড়া ( খেলাধুলা ) নিয়ে মাতামাতি, অর্থলিপ্সাজনিত বিকার-বিকৃতি

( হাজার কোটি টাকা কেউ কবরে নিয়ে যায় না, কিন্তু টাকার জন্যই পাগল সবাই, আরও চাই, আরও, টাকাই ধর্ম, টাকাই মা-বাপ, টাকাই সব তাদের কাছে, টাকাই তাদের বিকারগ্রস্থ মনের দেবতা, ভগবান, ঈশ্বর, স্রষ্টা, আল্লাহ্‌ । )

নিয়েই ব্যস্ত ও ব্যর্থ জগতের অধিকাংশ বুদ্ধিমান প্রাণীমানুষ ।

মানুষ অবশ্য এ রিস্ক-ঝুঁকি নিতে পারে যে, সে অকৃতজ্ঞ হবে, মূর্খ থাকবে

( বাস্তবেও তাই, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অকৃতজ্ঞ এবং মূর্খ, কারণ, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরই সত্য- ধর্মজ্ঞান নেই, সত্য-ধর্মজ্ঞান অর্জনে আগ্রহও নেই, তারা শুধু খায়-দায়-ল্যাদায়, যৌনকর্ম করে, টাকা উপার্জন করে, বাড়ি বানায়, সন্তান উৎপাদন করে, পশুজীবন লালন করে, পশুজীবন ধারণ করে, অবশেষে মারা যায় )

এবং সত্য-অস্বীকারকারী হবে ।

স্রষ্টা আল্লাহ্‌ পাককে খালি চোখে দেখা যায় না ।

বিমূর্ত সত্ত্বা হওয়ার কারণে এবং জ্ঞান ও শক্তির মাধ্যমে

সমগ্র সৃষ্টিজগত পরিচালনা ও ধারণ করলেও

স্রষ্টা আল্লাহ্‌র অবস্থান সৃষ্টিজগতের বাইরে ।

মহান আল্লাহ্‌ পাক শূন্যমণ্ডলে বিরাজমান এবং পবিত্র-আলোকিত মোমেনের

( সুদৃঢ়-অটল বিশ্বাসী মুসলমান, যিনি আল্লাহ্‌ পাককে একমাত্র মাবু’দ-ইলাহ-প্রভু-মালিক জানেন, মানেন এবং মুহাম্মদকে [সাঃ] রাসুলুল্লাহ [আল্লাহ্‌র রাসুল] স্বীকার করেন, সত্য-সাক্ষ্য দেন, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহকে [সাঃ] সত্যের একমাত্র মাপকাঠি-মানদণ্ড মেনে জীবনাদর্শ হিসেবে অনুসরণ করেন )

কলবে [ আত্মায় ] প্রতিফলিত-প্রকাশিত ।

মোমেনের আত্মা [ কলব ] আল্লাহ্‌র জন্য আয়না স্বরূপ ।

স্রষ্টা আল্লাহ্‌ সৃষ্টিজগত থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে একথা বলা যায় না যে,

এটা গাছ, এটা চাঁদ, এটা সূর্য, এটা গ্যালাক্সি-ছায়াপথ এবং ওই যে উনি হচ্ছেন আল্লাহ ।

এজন্যেই মানুষকে গায়েবে ( অদৃশ্যে ) বিশ্বাস করতে হয় ।

মানুষ রিস্ক [ঝুঁকি] নিয়ে স্রষ্টাকে [ আল্লাহ্‌কে ] অস্বীকার করলে সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বপ্রদাতা, সর্বশ্রেষ্ঠ, সকল ক্ষমতার একমাত্র মালিক আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন [ জগত সমূহের মালিক, প্রতিপালক ] মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে [ আখেরাতে ] ন্যায়বিচার করে পাপী- অকৃতজ্ঞ-অত্যাচারীদের কঠিন শাস্তি দেবেন [ দোজখের আগুনে নিক্ষেপ করবেন ] ।

মৃত্যুর পরে মানুষ তো আল্লাহ্‌র কাছে ফিরে আসছেই, ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেই ।

কাজেই এটাই কঠিন সত্য যে –

প্রবলেম মানুষের, বিপদ মানুষের, ঝুঁকি মানুষের,

খারাপ অবস্থানে আছে মানুষ ।

আর একারণেই, “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে ...” – একথা বলে কোনো লাভ নেই, এ আকাঙ্ক্ষার বিন্দুমাত্র মূল্য নেই বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে, বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নেয়াই প্রজ্ঞার লক্ষণ । প্রজ্ঞাবান-পুণ্যবান ব্যক্তি [ মোমিন, মুসলমান ] জীবনের যে কোনো সময়ে পৃথিবীকে গুডবাই জানানোর জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবে, অটল-দৃঢ় থাকবে ।

কাজেই, মানুষকে তার নিজের অবস্থান ও অবস্থা সম্পর্কে

সম্পূর্ণ তথ্য–তত্ত্ব –উপাত্ত পেতে হবে ।

মানুষের জন্যে সুসংবাদ এবং দুঃসংবাদ সমমাত্রায়-সমওজনে রয়েছে ।

জ্ঞানীগণ অতৃপ্ত হবেন বাস্তবতাকে পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্যে,

অতৃপ্তিই জ্ঞানীকে ঊচ্চ মনোআত্মিক-আধ্যাত্মিক স্তরে নিয়ে যাবে ।

বাগানে আঙ্গুর গাছে পাকা আঙ্গুর ঝুলে আছে । আমরা যদি আঙ্গুর না-খাই এবং না-বলি-যে, আঙ্গুর মিষ্টি ফল, খেলাম, স্রষ্টা আল্লাহ্‌কে ধন্যবাদ, তাহলেও কিন্তু আঙ্গুর ফলের মিষ্টতার বিষয়টি, ব্যাপারটি মিথ্যা হয়ে যায় না । কিন্তু খেয়ে যদি কৃতজ্ঞতা, শুকরিয়া, বিনয় প্রকাশ করে স্রষ্টা আল্লাহ্‌কে ধন্যবাদ দেই, তাহলে আঙ্গুর সৃষ্টি করার ব্যাপারটি, ঘটনাটি সার্থক হয় ।

তেমনিভাবে, আল্লাহ্‌র যাবতীয় গুণাবলী ও সত্ত্বার বিষয়ে জ্ঞানীগণের সত্য-সাক্ষ্য মহান আল্লাহকে অনুপ্রাণিত করে ।

নির্বিকার, অভাবহীন, ভ্রূক্ষেপহীন আল্লাহ্‌ পাক বলেছেন যে, আমার [ আল্লাহ্‌র ] সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আমি একাই [ অর্থাৎ সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, সর্বপ্রদাতা, সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহ্‌ নিজেই ] যথেষ্ঠ ।

কাজেই, মানুষের নিজের অবস্থান কোথায় এটা ভেবে দেখা খুবই জরুরী বিষয় ।

মানুষের মনোজগতে একধরনের ভয়মিশ্রিত আশ্রয়-আকাঙ্ক্ষা কাজ করে ।

মানুষ যখন স্রষ্টা আল্লাহ্‌র বিমূর্ত সত্ত্বায় আশ্রয়লাভের মানসিক-আত্মিক দৃঢ়তা-অটলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়, তখন একধরনের ভয়তাড়িত অবস্থায় এক মানুষ অন্য মানুষের কাছে আশ্রয় খুঁজে-খুঁজে হয়রান-ক্লান্ত-অবসাদগ্রস্থ হতে থাকে । [ “ ক্লান্তি আমার ক্ষমা কর প্রভু ’’ – কবি বলেছেন ]

দুর্বল মনের মানুষ অপেক্ষাকৃত সবল মনের মানুষের কাছে আশ্রয় চায় ।

এই আশ্রয়-আকাঙ্ক্ষা, দেহের টান–আকর্ষণ এবং বৈষয়িক স্বার্থচিন্তাকেই নারী-পুরুষ

প্রেম/ভালবাসা মনে করে ।

বৃদ্ধ বয়সে এসে মানুষ মোহমায়ার এই বিষয়টি, পার্থিব জীবন যে ক্রীড়া-কৌতুকমাত্র এই বিষয়টি বুঝতে পারে, অবশ্য অধিকাংশ মানুষ তাও পারে না ।

কিন্তু প্রকৃত সত্য-উদ্ধারে, সত্যমণ্ডিত হয়ে সত্যজগতের সদস্য

হওয়ার বিষয়টিতে তখন অনেক দেরী হয়ে যায় ।

মোহ ও মিথ্যার ফানুসে উড়ে যায় প্রকৃত জীবনবোধ ।

মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায় । পাশ কাটাতে চায় ।

সম্পদ-ক্ষমতার মিথ্যা মুখোশে নিজেকে ঢেকে রাখে ।

অবশেষে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয় কিন্তু মানুষের ভুল ভাঙ্গে না ।

অধিকাংশ মানুষের এই পরাজয় ক্লান্তিকর, একঘেয়ে, দুঃখজনক ।

পৃথিবীর মানবজঙ্গলে দালানকোঠা অনেক উঠেছে,

তথ্যপ্রবাহে ভেসে যাচ্ছে কম্পিউটার-স্ক্রিন কিন্তু

সত্যপ্রবাহে ভেসে যেতে পারছে না মানুষ ।

পারছে না আল্লাহ্‌ময় সত্যজগতের, ন্যায়-শান্তি ও

আনন্দজগতের সদস্য হতে ।

নোবেল বিজয়ী অকতাভিও পাজ মানুষের নৈঃসঙ্গতার কথা বলেছেন ।

তিনি বলেছেন, মানুষ মূলতঃ একা,

মানুষ কখনোই তার একাকীত্ব অতিক্রম করতে পারে না ।

এতো মানুষের ব্যর্থতার কথা, পরাজয়ের কথা ।

পরাজয়ের কথা, পরাজয়ের সংবাদ নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই ।

নাটোরের বনলতা সেন কবি জীবনান্দ দাশকে দু’দণ্ডের শান্তি দিয়েছিলেন ।

দু’দণ্ডের বাইরে বাকি সময়ের বিষয়ে আমরা জানি না ।

প্রচলিত আছে যে, তিনি ট্রামের নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন ।

নির্জনতার কবি জীবনান্দ দাশের মত আমরা আত্মহত্যা করতে পারি না ।

আমাদেরকে হাঁসের মত জীবন যাপন করতে হবে ।

ময়লা পানিতে সাঁতার কেটে তীরে উঠে গা-ঝাড়া দিয়ে হাঁসের মতো

ময়লা পানি ঝেড়ে ফেলতে হবে ।

অর্থাৎ নির্মোহ-নির্লোভ দৃষ্টিভঙ্গী/মনোভঙ্গী নিয়ে

আমাদেরকে পৃথিবীতে বাস করতে হবে যেন

পার্থিব লোভ-লালসা –মলিনতা –পঙ্কিলতা

আমাদের মনকে স্পর্শ করতে না পারে ।

২১-০৭-২০০৩

ঢাকা, বাংলাদেশ ।

বিষয়: বিবিধ

৮৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File