মৃত্যু, নৈঃসঙ্গ , স্রষ্টা, প্রেম ও মানুষ
লিখেছেন লিখেছেন মন সমন ০২ জুলাই, ২০১৪, ০৮:৩৬:২৮ রাত
মৃত্যু, নৈঃসঙ্গ , স্রষ্টা, প্রেম ও মানুষ
... ... মুহাম্মদ ইউসুফ
Email :
‘‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে / মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’’ । মৃত্যুকে পাশ কাটাতে চায় মানুষ, এড়িয়ে যেতে চায়, কিন্তু সম্ভব নয় ।
সম্ভব হলে অর্থাৎ মৃত্যুকে অস্বীকার করার, রদ-রহিত করার ক্ষমতা পেলে নিঃসন্দেহে মানুষ স্রষ্টাকেও এড়িয়ে যেত, পাশ কাটাত ।
মানুষের ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এভাবেই স্রস্টার আইন এবং ইচ্ছাশক্তি প্রবলভাবে কার্যকর ।
কাজেই এটা উজ্জ্বল সত্য ও স্বচ্ছ-পরিষ্কার যে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিত-সুনির্দিষ্ট প্ল্যান ও ডিজাইনে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন ।
‘‘খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে, হে বিরাট শিশু আনমনে’’ – এই চিন্তাভঙ্গীও গ্রহণযোগ্য নয় একারণে যে, বিরাট শিশু আনমনে খেলতে থাকলে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না । ‘আনমনে খেলা’ অনেক অসতর্ক মুহূর্তের জন্ম দেবে, সৃষ্টিজগত পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে ।
স্রষ্টা বিশ্ব নিয়ে খেলতে পারেন না একারণে যে, তিনি [ স্রষ্টা ] কঠোর শৃঙ্খলা-নিয়মনীতি ও সৌন্দর্যের সমন্বয়ে সৃষ্টিজগত পরিচালনা করেন এবং একাজে তিনি ক্লান্ত হন না । সৃষ্টিজগত পরিচালনায় স্রষ্টা অত্যন্ত মনোযোগী, দৃঢ়, শৃঙ্খল ও অটল । হেডমাষ্টারের মত অবস্থান স্রস্টার । সকল ছাত্রের প্রতি হেডমাষ্টারের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ থাকে । ক্লাসের ফার্স্ট বয়ের প্রতি থাকে অপার স্নেহ কিন্তু হাতে থাকে প্রশাসনের কঠোর বেত । কাজেই, কোনো যুক্তি-প্রতিযুক্তিতেই স্রষ্টাকে ‘বিরাট শিশু’ বলা যায় না । স্রষ্টা বিরাট শিশু নন । মহান স্রষ্টার [ সর্বজ্ঞানী, সর্ব শক্তিমান আল্লাহ্ তায়ালা ] সরলতা ও উদারতাকে শিশুর সারল্যের সাথে তুলনা করা যেতে পারে কিন্তু স্রষ্টার কঠোর, কঠিন শাসক-প্রশাসক-বিচারক সত্ত্বার রূপটিকে তাতে অস্বীকার করা হয় । কঠিনে-কোমলে মেশানো সত্ত্বাকে [ আল্লাহ্কে ] ‘বিরাট শিশু’ মনে করা বিরাট ভুল এবং যুক্তি ও সত্যবর্জিত আবেগ-উচ্ছ্বাস মাত্র ।
অধিকাংশ মানুষ পার্থিব জীবনে যে-কাজ করে সময় ব্যয় করে সেই কাজগুলোকে বরং স্রষ্টা ‘ক্রীড়া-কৌতুক মাত্র’ বলেছেন । ‘যাহা চাই, ভুল করে চাই / যাহা পাই তাহা চাই না’ – এই বিভ্রান্তি অধিকাংশ মানুষের । মানুষ ঘরের টানে-আকর্ষণে ঘর বাঁধে কিন্তু ঘরের প্রয়োজনেই তাকে বেশীরভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকতে হয় । মানুষের জীবনে দুঃখবোধকে দেয়া হয়েছে সুখবোধকে স্বচ্ছ-সূক্ষ্ণভাবে উপলব্ধি করে আত্মিক-মানসিক পরিপক্কতা অর্জনের লক্ষ্যে । অসুস্থ শরীরেই তীব্রভাবে উপলব্ধি করা যায় সুস্থকালীন সুখবোধকে । ধারাবাহিক সুখ কিংবা ধারাবাহিক দুঃখ দুটোই একঘেয়ে, বৈচিত্রহীন । মানুষ বৈচিত্রপ্রিয়, কারণ স্রষ্টা আল্লাহ্ পাক নিজেই বহুমাত্রায় বৈচিত্রপ্রিয় সত্ত্বা । [ মহান আল্লাহ্ পাক মানুষকে তাঁর ( আল্লাহর ) নিজের স্বভাবে সৃষ্টি করেছেন ; প্রাণীজগতে ও উদ্ভিদজগতে বৈচিত্রের লক্ষ লক্ষ উদাহরণ ও উপাদান রয়েছে । ]
মানুষের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন-সাধ বাস্তবে পূরণ হয় না ।
কেন পূরণ হয় না ?
পর্দার অন্তরালের সত্ত্বা, স্রষ্টার [ সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সকল ক্ষমতার একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ্ পাক ] ইচ্ছার কারণেই পূরণ হয় না ।
আল্লাহর ইচ্ছাই যে কার্যকর, আল্লাহ্র কাছেই যে সকল ক্ষমতা-শক্তি ও দান সামগ্রী এবং তিনিই যে দাতা-সম্পদশালী-ধনী তা বুঝিয়ে দেয়ার জন্যই মানুষের সকল ইচ্ছা-স্বপ্ন পূরণ হয় না । মৃত্যু না-থাকলে মানুষ স্রষ্টার অস্তিত্বকে হয়তো অস্বীকার করতো না, কিন্তু আমার মনে হয়, মানুষ অন্তত একথা স্রষ্টাকে বলতো যে, আপনি স্রষ্টা, আপনি আপনার কাজকর্ম
নিয়ে ব্যস্ত থাকুন, আমরা আমাদের কাজকর্ম নিয়ে খুবই ব্যস্ত আছি, আমাদের সংসার আছে, বাজার করতে হয়, দ্রব্যসামগ্রী বানাতে হয়, বাসস্থান বানাতে হয়, গুলি-বোমাও বানাতে হয়, দেশ দখল করতে হয় । কত কাজ আমাদের !!! কর্মই আমাদের ধর্ম, আপনাকে [ স্রষ্টা ] স্মরণ করা, আপনার কথা ভাবনা-চিন্তা করার মত সময় আমাদের নেই, দুঃখিত । একথা বলছি একারণে যে, মৃত্যু দেয়ার পরও মানুষ মৃত্যু ভুলে থাকতে চায়, ভুলে যায়, অন্যায়- অত্যাচারে-অবিচারে-শোষণে পৃথিবীকেই জাহান্নাম বানিয়ে ছাড়ে । ভোগ-পেয়ালায় ছুটে তুফান-টর্নেডো, উল্লাস-উত্তেজনার তাৎক্ষণিক ক্ষণস্থায়ী স্নায়ুসুখ নিয়ে সুখী হতে চায়, বেঁচে থাকতে চায় মানুষ । মানুষের প্রকৃত অভাবের চেয়ে তার অভাববোধের মাত্রা বেশী । ফলে সে সবসময় অস্থির-তটস্থ থাকে এবং নিজেই নিজের শান্তিনষ্টের কারণ হয় । স্নিগ্ধ-অনাবিল
প্রকৃত শান্তি-আনন্দ প্রতিষ্ঠিত হয় না পৃথিবীতে । লক্ষ্যভ্রষ্ঠ হয় মানুষ ।
মানুষ স্রষ্টার প্রকাশ । স্রষ্টা নিজেকে প্রকাশিত করতে চেয়েছেন । প্রকাশিত হয়েছেন । মানুষের সাথে স্রষ্টার সম্পর্কের বিষয়টিই পৃথিবীর মানুষদের জন্যে মৌলিক বিষয়, মূলজ্ঞান । এবিষয়ে তেমন গবেষণা কোথায় ?
পদার্থবিজ্ঞানী স্টীফেন হকিং ঈশ্বরের মন বুঝতে চেয়েছেন ।
কীভাবে তিনি ঈশ্বরের ( সর্বজ্ঞানী, সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বশক্তিমান, মহান আল্লাহ্ তায়ালা ) মন বুঝবেন ? আল্লাহ্র মন বুঝতে চাইলে আল্লাহ্র কথা বুঝতে হবে, আল্লাহ্র কথায় দৃঢ়-পোক্ত-অটল বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে, মহান আল্লাহ্র কথাসমূহ হলো মহাপবিত্র মহাগ্রন্থ আল কোরআন । পৃথিবীর অনেক চিন্তাবিদ এবিষয়ে একমত যে, সমগ্র জ্ঞানের ( Total Wisdom ) বড় অংশকেই আড়ালে রাখা হয়েছে । আড়ালে রাখা সমগ্র জ্ঞানের বড় অংশের বিষয়ে কোনোদিনই মানুষ জানতে পারবে না । সৃষ্টির পূর্বের অনন্ত সময়ের বিষয়ে মানুষ কিছুই জানে না, জানা সম্ভব নয়, কারণ, তখনতো মানুষের সৃষ্টিই হয়নি । অবশ্য, একটি সুসংবাদ মহান আল্লাহ্ পাকের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে । আল্লাহ্ বলেছেন যে, ‘‘তোমরা আমার কাছে ( আল্লাহ্র কাছে ) জ্ঞান বাড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রার্থনা কর’’ । অর্থাৎ কিছু জ্ঞান মানুষের মধ্যে ( ধীশক্তিতে-প্রজ্ঞায়-মননে ) দেয়া হয়েছে সৃষ্টির শুরুতেই । সেই জ্ঞান মানুষের ধীশক্তিতে-প্রজ্ঞায়-মননে সুপ্তভাবে বিরাজমান । লালন-বিকাশ ও চর্চায় সেই জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে । সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বপ্রদাতা, সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহ্ পাক সম্পর্কিত জ্ঞান আল্লাহ্ পাকের নিকট থেকেই পাওয়া সম্ভব ; মুক্তচিন্তায় অসম্ভব । বুদ্ধি ও জ্ঞান-প্রজ্ঞা এক নয় । যাদের স্মৃতিশক্তি ভাল, মুখস্ত-বিদ্যায় পারদর্শী তাদেরকে বুদ্ধিমান বলা হয় । বুদ্ধিমানরা প্রজ্ঞাবান নয়, তাদের অন্তর্দৃষ্টি-দূরদৃষ্টি এবং সৃজনশীলতা নেই । পৃথিবীতে বুদ্ধিমান প্রাণী-মানুষের সংখ্যাই বেশী, বুদ্ধিমান দেশনেতাদের সংখ্যাই বেশী, জ্ঞানীদের সংখ্যা স্বল্প । আর একারণেই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বিভ্রান্ত, সত্যপথ খুঁজে পায় না, স্থায়ী সুখ-আনন্দের আল্লাহ্ময় জগতের সদস্য হতে পারে না, ক্ষণস্থায়ী স্নায়ু-সুখ, উত্তেজনা-উল্লাসজনিত বিকারসুখ, যৌনসুখ-উত্তেজনা, পেটুকতা, ক্রীড়া ( খেলাধুলা ) নিয়ে মাতামাতি, অর্থলিপ্সাজনিত বিকার-বিকৃতি ( হাজার কোটি টাকা কেউ কবরে নিয়ে যায় না, কিন্তু টাকার জন্যই পাগল সবাই, আরও চাই, আরও, টাকাই ধর্ম, টাকাই মা-বাপ, টাকাই সব তাদের কাছে, টাকাই তাদের বিকারগ্রস্থ মনের দেবতা, ভগবান, ঈশ্বর, স্রষ্টা, আল্লাহ্ । ) নিয়েই ব্যস্ত ও ব্যর্থ জগতের অধিকাংশ বুদ্ধিমান প্রাণীমানুষ ।
মানুষ অবশ্য এ রিস্ক-ঝুঁকি নিতে পারে যে, সে অকৃতজ্ঞ হবে, মূর্খ থাকবে ( বাস্তবেও তাই, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অকৃতজ্ঞ এবং মূর্খ, কারণ, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরই সত্য- ধর্মজ্ঞান নেই, সত্য-ধর্মজ্ঞান অর্জনে আগ্রহও নেই, তারা শুধু খায়-দায়-ল্যাদায়, যৌনকর্ম করে, টাকা উপার্জন করে, বাড়ি বানায়, সন্তান উৎপাদন করে, পশুজীবন লালন করে, পশুজীবন ধারণ করে, অবশেষে মারা যায় ) এবং সত্য-অস্বীকারকারী হবে । স্রষ্টা আল্লাহ্ পাককে খালি চোখে দেখা যায় না । বিমূর্ত সত্ত্বা হওয়ার কারণে এবং জ্ঞান ও শক্তির মাধ্যমে সমগ্র সৃষ্টিজগত পরিচালনা ও ধারণ করলেও স্রষ্টা আল্লাহ্র অবস্থান সৃষ্টিজগতের বাইরে । মহান আল্লাহ্ পাক শূন্যমণ্ডলে বিরাজমান এবং পবিত্র-আলোকিত মোমেনের ( সুদৃঢ়-অটল বিশ্বাসী মুসলমান, যিনি আল্লাহ্ পাককে একমাত্র মাবু’দ-ইলাহ-প্রভু-মালিক জানেন, মানেন এবং মুহাম্মদকে [সাঃ] রাসুলুল্লাহ [আল্লাহ্র রাসুল] স্বীকার করেন, সত্য-সাক্ষ্য দেন, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহকে [সাঃ] সত্যের একমাত্র মাপকাঠি-মানদণ্ড মেনে জীবনাদর্শ হিসেবে অনুসরণ করেন ) কলবে [ আত্মায় ] প্রতিফলিত-প্রকাশিত । মোমেনের আত্মা [ কলব ] আল্লাহ্র জন্য আয়না স্বরূপ ।
স্রষ্টা সৃষ্টিজগত থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে একথা বলা যায় না যে, এটা গাছ, এটা চাঁদ, এটা সূর্য, এটা গ্যালাক্সি-ছায়াপথ এবং ওই যে উনি হচ্ছেন আল্লাহ । এজন্যেই মানুষকে গায়েবে ( অদৃশ্যে ) বিশ্বাস করতে হয় ।
মানুষ রিস্ক [ঝুঁকি] নিয়ে স্রষ্টাকে [ আল্লাহ্কে ] অস্বীকার করলে সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বপ্রদাতা, সর্বশ্রেষ্ঠ, সকল ক্ষমতার একমাত্র মালিক আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন [ জগত সমূহের মালিক, প্রতিপালক ] মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে [ আখেরাতে ] ন্যায়বিচার করে পাপী- অকৃতজ্ঞ-অত্যাচারীদের কঠিন শাস্তি দেবেন [ দোজখের আগুনে নিক্ষেপ করবেন ] । মৃত্যুর পরে মানুষ তো আল্লাহ্র কাছে ফিরে আসছেই, ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেই । কাজেই এটাই কঠিন সত্য যে -- প্রবলেম মানুষের, বিপদ মানুষের, ঝুঁকি মানুষের, খারাপ অবস্থানে আছে মানুষ । আর একারণেই, “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে ...” – একথা বলে কোনো লাভ নেই, এ আকাঙ্ক্ষার বিন্দুমাত্র মূল্য নেই বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে, বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নেয়াই প্রজ্ঞার লক্ষণ । প্রজ্ঞাবান-পুণ্যবান ব্যক্তি [ মোমিন, মুসলমান ] জীবনের যে কোনো সময়ে পৃথিবীকে গুডবাই জানানোর জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবে, অটল-দৃঢ় থাকবে ।
কাজেই, মানুষকে তার নিজের অবস্থান ও অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য–তত্ত্ব –উপাত্ত পেতে হবে । মানুষের জন্যে সুসংবাদ এবং দুঃসংবাদ সমমাত্রায়-সমওজনে রয়েছে ।
জ্ঞানীগণ অতৃপ্ত হবেন বাস্তবতাকে পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্যে, অতৃপ্তিই জ্ঞানীকে ঊচ্চ আত্মিক-আধ্যাত্মিক স্তরে নিয়ে যাবে ।
বাগানে আঙ্গুর গাছে পাকা আঙ্গুর ঝুলে আছে । আমরা যদি আঙ্গুর না-খাই এবং না-বলি-যে, আঙ্গুর মিষ্টি ফল, খেলাম, স্রষ্টা আল্লাহ্কে ধন্যবাদ, তাহলেও কিন্তু আঙ্গুর ফলের মিষ্টতার বিষয়টি, ব্যাপারটি মিথ্যা হয়ে যায় না । কিন্তু খেয়ে যদি কৃতজ্ঞতা, শুকরিয়া, বিনয় প্রকাশ করে স্রষ্টা আল্লাহ্কে ধন্যবাদ দেই, তাহলে আঙ্গুর সৃষ্টি করার ব্যাপারটি, ঘটনাটি সার্থক হয় ।
তেমনিভাবে, আল্লাহ্র যাবতীয় গুণাবলী ও সত্ত্বার বিষয়ে জ্ঞানীগণের সত্য-সাক্ষ্য মহান আল্লাহকে অনুপ্রাণিত করে । নির্বিকার, অভাবহীন, ভ্রূক্ষেপহীন আল্লাহ্ পাক বলেছেন যে, আমার [ আল্লাহ্র ] সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আমি একাই [ অর্থাৎ সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, সর্বপ্রদাতা, সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহ্ নিজেই ] যথেষ্ঠ । কাজেই, মানুষের নিজের অবস্থান কোথায় এটা ভেবে দেখা খুবই জরুরী বিষয় ।
মানুষের মনোজগতে একধরনের ভয়মিশ্রিত আশ্রয়-আকাঙ্ক্ষা কাজ করে । মানুষ যখন স্রষ্টা আল্লাহ্র বিমূর্ত সত্ত্বায় আশ্রয়লাভের মানসিক-আত্মিক দৃঢ়তা-অটলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়, তখন একধরনের ভয়তাড়িত অবস্থায় এক মানুষ অন্য মানুষের কাছে আশ্রয় খুঁজে-খুঁজে হয়রান-ক্লান্ত-অবসাদগ্রস্থ হতে থাকে । [ “ ক্লান্তি আমার ক্ষমা কর প্রভু ’’ – কবি বলেছেন ]
দুর্বল মনের মানুষ অপেক্ষাকৃত সবল মনের মানুষের কাছে আশ্রয় চায় । এই আশ্রয়-আকাঙ্ক্ষা, দেহের টান–আকর্ষণ এবং বৈষয়িক স্বার্থচিন্তাকেই নারী-পুরুষ প্রেম/ভালবাসা মনে করে । বৃদ্ধ বয়সে এসে মানুষ মোহমায়ার এই বিষয়টি, পার্থিব জীবন যে ক্রীড়া-কৌতুকমাত্র এই বিষয়টি বুঝতে পারে, অবশ্য অধিকাংশ মানুষ তাও পারে না ।
কিন্তু প্রকৃত সত্য-উদ্ধারে, সত্যমণ্ডিত হয়ে সত্যজগতের সদস্য হওয়ার বিষয়টিতে অনেক দেরী হয়ে যায় । মোহ ও মিথ্যার ফানুসে উড়ে যায় প্রকৃত জীবনবোধ ।
মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায় । পাশ কাটাতে চায় । সম্পদ-ক্ষমতার মিথ্যা মুখোশে নিজেকে ঢেকে রাখে । অবশেষে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয় কিন্তু মানুষের ভুল ভাঙ্গে না । অধিকাংশ মানুষের এই পরাজয় ক্লান্তিকর, একঘেয়ে, দুঃখজনক । পৃথিবীর মানবজঙ্গলে দালানকোঠা অনেক উঠেছে, তথ্যপ্রবাহে ভেসে যাচ্ছে কম্পিউটার-স্ক্রিন কিন্তু সত্যপ্রবাহে ভেসে যেতে পারছে না মানুষ । পারছে না আল্লাহ্ময় সত্যজগতের, ন্যায়-শান্তি ও আনন্দজগতের সদস্য হতে ।
নোবেল বিজয়ী অকতাভিও পাজ মানুষের নৈঃসঙ্গতার কথা বলেছেন । তিনি বলেছেন, মানুষ মূলতঃ একা, মানুষ কখনোই তার একাকীত্ব অতিক্রম করতে পারে না । এতো মানুষের ব্যর্থতার কথা, পরাজয়ের কথা । পরাজয়ের কথা, পরাজয়ের সংবাদ নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই । নাটোরের বনলতা সেন কবি জীবনান্দ দাশকে দু’দণ্ডের শান্তি দিয়েছিলেন । দু’দণ্ডের বাইরে বাকি সময়ের বিষয়ে আমরা জানি না । প্রচলিত আছে যে, তিনি ট্রামের নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন । নির্জনতার কবি জীবনান্দ দাশের মত আমরা আত্মহত্যা করতে পারি না । আমাদেরকে হাঁসের মত জীবন যাপন করতে হবে । ময়লা পানিতে সাঁতার কেটে তীরে উঠে গা-ঝাড়া দিয়ে হাঁসের মতো ময়লা পানি ঝেড়ে ফেলতে হবে । অর্থাৎ নির্মোহ- নির্লোভ দৃষ্টিভঙ্গী/মনোভঙ্গী নিয়ে আমাদেরকে পৃথিবীতে বাস করতে হবে যেন পার্থিব লোভ-লালসা–মলিনতা–পঙ্কিলতা আমাদের মনকে স্পর্শ করতে না পারে ।
২১-০৭-২০০৩
ঢাকা, বাংলাদেশ ।
বিষয়: বিবিধ
১১১৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন