তোমরা যা কর না, তা কেন বল ?

লিখেছেন লিখেছেন মন সমন ০৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:২৭:৫৩ রাত

'' মুমিনগণ !

তোমরা যা কর না ,

তা কেন বল ?

তোমরা যা কর না ,

তা বলা আল্লাহর কাছে

খুবই অসন্তোষজনক । ''

আল-কোরআন

( সূরা আছ্-ছফ )

বিষয়: বিবিধ

১৫২৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

203640
০৭ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৬:১৮
তহুরা লিখেছেন : ﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ﴾
২) হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা নিজেরা করো না?

.

﴿كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ﴾
৩) আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো যা করো না৷ ২

২. একথাটির একটি সাধারণ উদ্দেশ্য ও লক্ষ আছে যা এর শব্দসমূহ থেকেই প্রতিভাত হচ্ছে । এ ছাড়া একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ও লক্ষও আছে যা পরবর্তী আয়াতের সাথে এটিকে মিলিয়ে পড়লে বুঝা যায় । প্রথম উদ্দেশ্য ও লক্ষ হলো, একজন খাঁটি মুসলমানের কথা ও কাজে মিল থাকা উচিত । সে যা বলবে তা করে দেখাবে । আর করার নিয়ত কিংবা সৎ সাহস না থাকলে তা মুখেও আনবে না । এক রকম কথা বলা ও অন্য রকম কাজ করা মানুষের এমন একটি জঘন্য দোষ যা আল্লাহ তা'আলার দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত । যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করার দাবী করে তার পক্ষে এমন নৈতিক দোষ ও বদ স্বভাবে লিপ্ত হওয়া আদৌ সম্ভব নয় । নবী (সা) ব্যাখ্যা করে বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির মধ্যে এরূপ স্বাভাব থাকা প্রমাণ করে যে, সে মু'মিন নয় বরং মুনাফিক । কারণ তার এই স্বভাব মুনাফিকির একটি আলামত । একটি হাদীসে নবী (সা) বলেছেনঃ
----------------

"মুনাফিকের পরিচয় বা চিহ্ন তিনটি (যদিও সে নামায পড়ে এবং মুসলমান হওয়ার দাবী করে) । তাহলো, সে কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে এবং তার কাছে কোন আমানত রাখলে তা খিয়ানত করে । "(বুখারী ও মুসলিম) ।

তিনি অন্য একটি হাদীসে বলেছেনঃ

------------------

"চারটি স্বভাব এমন যা কোন ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া গেলে সে হবে খাঁটি মুনাফিক । আর যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব পাওয়া যাবে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকীর একটি স্বভাব বিদ্যমান । স্বভাবগুলো হলো , তার কাছে আমানত রাখা হলে সে খিয়ানত করে, কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে, এবং কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করলে নৈতিকতা ও দীনদারীর সীমালংঘন করে । " (বুখারী ও মুসলিম)

ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণ এ বিষয়ে মোটামুটি একমত যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সাথে যদি কোন ওয়াদা করে (যেমন কোন জিনিসের মানত করল) কিংবা মানুষের সাথে কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হয় অথবা কারো সাথে কোন বিষয়ে ওয়াদা করে আর তা যদি গোনাহের কাজের কোন প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা না হয় তাহলে পালন করে অবশ্য কর্তব্য । তবে যে কাজের প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা করা হয়েছে তা গোনাহর কাজ হলে সে কাজ করবে না ঠিকই কিন্তু তার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কসমের কাফ্ফারা আদায় করতে হবে । সূরা মায়েদার ৮৯ আয়াতে একথাটিই বলা হয়েছে । (আহকামুল কুরআন -জাস্সাস ও ইবনে আরাবী) ।

এটা হলো এ আয়াতগুলোর সাধারণ উদ্দেশ্য ও লক্ষ । এরপর থাকে এর সেই বিশেষ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য যে জন্য এ ক্ষেত্রে আয়াত কয়টি পেশ করা হয়েছে । পরবর্তী আয়াতটিকে এর সাথে মিলিয়ে পড়লেই সেই বিশেষ উদ্দেশ্য ও লক্ষ জানা যায় । যারা ইসলামের জন্য জীবনপাত করার লম্বা লম্বা ওয়াদা করতো কিন্তু চরম পরীক্ষার সময় আসলে জান নিয়ে পালাতো সেই সব বাক্যবাগিশদের তিরষ্কার করাই এর উদ্দেশ্য । দুর্বল ঈমানের লোকদের এই দুর্বলতার জন্য কুরআন মজীদের কয়েকটি স্থানে তাদের সমালোচনা করা হয়েছে । যেসন সূরা নিসার ৭৭ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ তোমরা সেই সব লোকদের প্রতি কি লক্ষ করেছ যাদের বলা হয়েছিল, নিজেদের হাতকে সংযত রাখা, নামায কায়েম কর এবং যাকাত দাও । এখন যেই তাদেরকে লড়াই করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে অমনি তাদের একটি দল মানুষকে এমন ভয় করতে আরম্ভ করেছে যা আল্লাহকে করা উচিত, কিংবা তার চেয়েও অধিক । তারা বলেঃ হে আল্লাহ, আমাদের জন্য লড়াইয়ের নির্দেশ কেন লিপিবদ্ধ করে দিলে৷ আমাদেরকে আরো কিছুদিনের জন্য অবকাশ দিলে না কেন৷ সূরা মুহাম্মাদের ২০ আয়াতে বলেছেনঃ যারা ঈমান এনেছে তারা বলেছিল, এমন কোন সূরা কেন নাযিল হচ্ছে না (যার মধ্যে হুকুম থাকবে) , কিন্তু যখন একটি সুস্পষ্ট অর্থবোধক সূরা নাযিল করা হলো যাতে যুদ্ধের উল্লেখ ছিল তখন তোমরা দেখলে যাদের মনে রোগ ছিল তারা তোমাদের দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন কাউকে মৃত্যু আচ্ছন্ন করে ফেলেছে । বিশেষ করে ওহুদ যুদ্ধের সময় এসব দুর্বলতা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছিল । সূরা আলে ইমরানের ১৩ থেকে ১৭ রুকূ' পর্যন্ত একাধারে এ বিষয়ের প্রতিই ইংগিত দেয়া হয়েছে ।

এ আয়াতগুলোতে যেসব দুর্বলতার সমালোচনা করা হয়েছে আয়াতগুলোর শানে নুযূল বর্ণনা প্রসংগে মুফাস্সিরগণ তার বিভিন্ন ধরন ও প্রকৃতি বর্ণনা করেছেন । ইবনে আব্বাস বলেনঃ মুলমানদের মধ্যে কিছু লোক ছিল যারা জিহাদ ফরয হওয়ার পূর্বে বলতঃ হায়! আল্লাহ তা'আলার কাছে যে কাজটি সবচেয়ে বেশী প্রিয় তা যদি আমরা জানতাম তাহলে তাই করতাম । কিন্তু যখন বলে দেয়া হলো, যে সেই কাজটি হলো জিহাদ, তখন নিজেদের কথা রক্ষা করা তাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ল । মুকাতিল ইবনে হাইয়ান বলেনঃ ওহুদের যুদ্ধে এসব লোক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হলে তারা নবীকে(সা) ফেলে রেখে জান নিয়ে পালিয়েছিল । ইবনে যায়েদ বলেনঃ বহু লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই মর্মে আশ্বাস দিত যে, আপনাকে যদি শত্রুর মুখোমুখি হতে হয় তাহলে আমরা আপনার সাথে থাকব । কিন্তু শত্রুর সাথে মুখোমুখি হওয়ার সময় আসলে তাদের ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি মিথ্যা প্রমাণিত হত । কাতাদা এবং দাহহাক বলেনঃ কোন কোন লোক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করত ঠিকই, কিন্তু তারা কোন কাজই করত না । কিন্তু যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে বড় গলায় বলতঃ আমি এভাবে লড়াই করেছি, আমি এভাবে হত্যা করেছি । এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা'আলা এই প্রকৃতির লোকদের তিরষ্কার করেছেন ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File