১৫ই নভেম্বর পবিত্র আশুরা : কারবালার শোকাবহ দিন
লিখেছেন লিখেছেন ফুয়াদ ১৫ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৩৯:৫১ দুপুর
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। মুসলিম উম্মাহর জন্য তাত্পর্যময় ও শোকাবহ একটি দিন। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় দিনটি পালন করা হবে।
এই দিনটিকে মহান আল্লাহ তায়ালা ইতিহাসের অনেক ঘটনা দ্বারা তাত্পর্যপূর্ণ ও মহিমান্বিত করেছেন। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে কেয়ামত পর্যন্ত অসংখ্য ঘটনার দিন এটি।
তবে কারবালায় মহানবীর (সা.) নাতি হজরত ইমাম হোসেনের বিয়োগান্ত ঘটনায় এই দিনটি ব্যাপক পরিচিতি দিয়েছে। অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা স্বৈরশাসক ইয়াজিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হন তিনি।
হিজরি ৬১ সালের এ দিনে মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার ময়দানে শহীদ হয়েছিলেন।
সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে তারা শহীদ হয়েছিলেন। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের সুমহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে তাদের এ আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে।
শুধু মুসলমান নয়, বিশ্বের তাবত্ মানুষের কাছে দিনটি স্মরণীয় ও তাত্পর্যবহ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পবিত্র আশুরা পালিত হয়ে আসছে।
মানব ইতিহাসে বিশাল স্থান দখল করে আছে পবিত্র আশুরা দিবস। মহান আল্লাহ তায়ালা এ দিনেই আরশ, কুরসী, লওহ, কলম, আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এ দিনেই আদমকে (আ.) সৃষ্টি করে তাকে বেহেশতে স্থান দিয়েছেন।
হজরত নূহ (আ.) সাড়ে নয়শ’ বছর ধরে তৌহিদের বাণী প্রচারের পর যখন সে যুগের মানুষ আল্লাহর বিধি-নিষেধ পালনে অস্বীকৃতি জানায়, তখন নেমে আসে আল্লাহর গজব। ফলে হজরত নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায় ধ্বংস হয়েছে। শুধু রক্ষা পেয়েছে তৌহিদে বিশ্বাসী নূহ (আ)-এর অনুসারীরা। পবিত্র আশুরার দিনে মহাপ্লাবনের সময় হজরত নূহ (আ.)-এর নৌকা তার অনুসারীদের নিয়ে জুদি পাহাড়ের পাদদেশে এসে থেমেছিল। আজও তার ভগ্নাংশের নিদর্শন সেখানে পাওয়া যায়।
পবিত্র আশুরার দিনেই হজরত ইবরাহিম (আ.) তত্কালীন বাদশাহর শত বিধি-নিষেধ আর নজরদারির মধ্যেও জন্মগ্রহণ করেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে উদ্ধার লাভ করেন এই দিনে। আবার নিজের প্রাণাধিক ছেলে হজরত ইসমাঈলকে (আ.) আল্লহর অভিপ্রায়ে কোরবানি করতে প্রস্তুত হলে খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন পবিত্র আশুরার দিনে।
এদিনেই হজরত আইউব (আ.) কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। আশুরার পবিত্র দিনেই হজরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং কাফেরদের ষড়যন্ত্রের শিকার হলে আল্লাহ তাকে চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেন।
এদিনেই হজরত ইয়াকুব (আ.) তার হারানো ছেলে হজরত ইউসুফকে (আ.) ৪০ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন। পবিত্র আশুরার দিনে ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া শিশু মূসাকে গ্রহণ করেছিলেন। আবার স্বীয় কওমের লোকজনসহ হজরত মূসা (আ.) নীল নদ অতিক্রম করে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি লাভ করেন। পক্ষান্তরে ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে মারা যায়।
পবিত্র আশুরা সমগ্র জাহান সৃষ্টির দিন হিসেবে যেমনি স্বীকৃত, তেমনি এদিন কেয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে জগত্ ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। এদিনে এমনি বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং আরও হবে। আল্লাহর মহান নবী-রাসুলদের বাণী থেকে এসব ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
পবিত্র আশুরার দিন মুসলিম জাহানের জন্য যে কারণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, হৃদয়বিদারক ও স্মরণীয় তা হলো, এদিন স্বৈরাচারী ইয়াজিদ বাহিনী মহানবীর (সা.) প্রাণাধিক দৌহিত্র অকুতোভয় সৈনিক হজরত ইমাম হোসাইনকে (রা.) এবং তার পরিবারের একজন ব্যতীত সপরিবারে কারবালার মরু প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে।
আশুরা উপলক্ষে রোজা পালন করার কথা বলেছেন রাসুল (সা.)। এদিনে কোরআন তেলাওয়াত ও আলোচনার আয়োজন করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যায়।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বিন্ন্নি সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। মসজিদ, মাদরাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এছাড়া শিয়া সম্প্রদায় এদিন উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে।
এ উপলক্ষে রাজধানীর হোসনী দালান ইমামবাড়ায় চলছে জিয়ারত, মানত, ধর্মীয় পুস্তকের প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান।
রাজধানীতে আশুরার সবচেয়ে বড় আয়োজন হয় পুরান ঢাকার হোসেনী দালান ইমামবাড়ায়। দিনের মতো রাতেও এখানে চলে শোক মিছিল। এর সঙ্গে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরষের আগমনে মধ্যরাত পর্যন্ত ইমামবাড়ায় চলে প্রার্থনা, মাজার জিয়ারত আর ভক্তি-শ্রদ্ধা নিবেদন।
মূল মিছিলের মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার শেষ হবে এ পর্ব। মহররম ১০ তারিখের মূল মিছিলের জন্য মিছিলের আগেভাগেই নিয়ে রাখা হয়েছে প্রায় সব প্রস্তুতি। অনেকে আবার মহড়া সেরে নিচ্ছে মিছিলের অনুকরণে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, লোক সমাগমকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের মতো এবারও বসেছে মেলা। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বিষয়: বিবিধ
১০০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন