শুনতে না চাইলে সবাই একটু কান বন্ধ করুন!
লিখেছেন লিখেছেন জেরিন সরকার ১৬ মার্চ, ২০১৪, ০৩:১৪:৩৬ রাত
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, শেষ হলো মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে আগেই চলে যেতে বাধ্য করা হলো ভারতে। ভারত থেকে এলেন জেনারেল অরোরা, ১৬ ডিসেম্বরের বাংলাদেশের বিজয়টি অরোরার মাধ্যমে ভারতের হাতে তুলে দিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।
কি ঘটলো তা বাংলাদেশীরা বুঝলোই না। বুঝবে কি করে? সব শিক্ষিত বুদ্ধিজীবিদেরতো বিজয়ের আগেই হত্যা করা হলো। কে হত্যা করল? পালায়নরত পাকিস্থানীরা? নাকি বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ভারতীয়রা? ভাবুন, ভাবতে থাকুন।
১৯৭২ এলো, মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যকারী(!) ভারত পরীক্ষামূলক শব্দটি উচ্চারণ করে আটকে দিল ফারাক্কা বাঁধ। ৪২ বছর পার হয়ে গেলো, আজ অবধি পরীক্ষা আর শেষ হলো না। আবার তিস্তা ব্যরেজ আটকানো হলো, সোনারবাংলা শুকিয়ে হলো ধুধু বালুর চর।
বিডিয়ার বিদ্রোহ হলো, হত্যাযজ্ঞ হলো, অবশেষে খুজে পাওয়া যায় ভারতের ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশের বাহিনীর উপর ভারতের আধিপত্য, অথচ শাসক নিরব?
দেশে বিদ্যুৎ নেই, আমদানী করতে হবে, কিনতে হবে, ভাল কথা। কিন্তু তাই বলে অবিশ্বাস্য উচ্চমূল্যে ভারত থেকেই?
দেশে ক্রিকেটের ওয়ানডে বিশ্বকাপ হলো, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজক বাংলাদেশ অথচ দায়িত্ব পায় ভারতের কোম্পানী?
দেশে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, বিদ্যুৎ প্রয়োজন, তাই বলে ভারতে কথায় সুন্দরবন উজাড় করে সেখানেই?
সমুদ্রে গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তলোন করতে হবে, পৃথিবীতে আর কোন দেশ নেই, ভারতকেই ছেড়ে দিতে হবে সমুদ্রিক গ্যাস ব্লকগুলো?
দেশে শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে প্রতি বছর কোটি কোটি বই তুলে দিতে হবে। অবশ্যই প্রয়োজন। তাই বলে দেশের সব মুদ্রণ কারখানা বাদ দিয়ে ভারতকে টেন্ডার দিতে হবে? দেশের ব্যবসায়ীরা কি ঘাস খেয়ে বাঁচবে?
দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে, কখন হবে, কিভাবে হবে, নির্বাচন কমিশন কিভাবে কাজ করবে, তার ট্রেনিং দিবে ভারত? এটা কি ভারতের নির্বাচন নাকি বাংলাদেশের?
শিশুদের পোলিও, হাম-রুবেলা রোগের টিকা খাওয়াতে হবে, ভাল কথা। কিন্তু তাই বলে অখ্যাত ও দূর্নামযুক্ত ভারতীয় কোম্পানীর ওষুধ খাওয়াতে হবে আর ভবিষ্যতে শিশুদের বিকলাঙ্গ করে দিয়ে ধ্বংস করতে হবে?
ভারত ট্রানজিট চায়, তাই বলে ভারতকে ট্রানজিট দিতে হবে বিনামূল্যে, দেশ ধ্বংস করে, দেশের নদী হত্যা করে?
বলতে বলতে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। অধৈর্য্য হয়ে যাচ্ছি।
ভারতের অমর্ত্য সেন নোবেল পুরস্কার পায়, তাকে বাংলাদেশে ডেকে এনে বিরল সম্মান দেওয়া হয়। আর যখন বাংলাদেশের মোহাম্মদ ইউনুস নোবেল পুরস্কার পায়, তখন তার নামে ঠুকে দেওয়া হয় মামলা? কাকে খুশি করতে?
দেশের পোষাক শিল্পে চরম অস্থিরতা, বাজার হাতছাড়া হচ্ছে, বাজার চলে যাচ্ছে ভারতের হাতে, তবুও অস্থিরতা নিরসনে কোন পদক্ষেপ নেই। কার স্বার্থে দেশের বিরুদ্ধে এই মীরজাফরী?
দেশে টি-২০ বিশ্বকাপ হবে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজক বাংলাদেশ, অথচ মঞ্চ দখল করে ভারত? গান গায় ভারতের শিল্পীরা, নাচে ভারতের শিল্পীরা। আর বাংলাদেশের শিল্পীরা হয়ে যায় দর্শক। দেশে কি কোন শিল্পী নাই যে, ভারত থেকে শিল্পী ভাড়া করতে হবে কোটি কোটি টাকা দিয়ে? কার স্বার্থে, কোন হীন উদ্দেশ্যে দেশের সংস্কৃতিকে এই অবহেলা, দেশের শিল্পীদের এমন অপমান?
প্রতিটি পদে পদে, প্রতি মূহুর্তে নিজ দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ভারতের স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখতে কেন এই আয়োজন? মনের এই কষ্টগুলি এখন যন্ত্রনায় রূপ নিচ্ছে, আর মাথা ঠিক রাখতে পারছিনা, মুখ দিয়ে গালি বেরিয়ে আসছে, সবাই একটু কান বন্ধ করুন। শু...রের বাচ্চারা দালালী করতে করতে দেশের সবকিছুই আজ ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। আমাদের জাতিস্বত্তার অস্তিত্তটুকুও আজ ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা করেছে। একটা জাতিকে হীনম্মন্যতায় ডুবিয়ে দেয়ার জন্যে যা যা করার দরকার, তার সবই সম্পন্ন করা হয়েছে। সবকিছুতেই আমাদেরকে ভারতের উপর নির্ভরশীল করে তোলা হচ্ছে। কেন এই নির্ভরশীলতা, আমরা কি ভারতের কোন অঙ্গরাজ্য? কে করেছে এই হীন কাজ? কার স্বার্থে করেছে? কারা এই শু...রের বাচ্চাগুলো? দুখিঃত গালি দেওয়ার জন্য, মাফ করবেন।
আমরা যারা কথায়, লেখায় দেশপ্রেম দেখাই তাদেরও বা দোষ কম কিসের। তা না হলে, এসব বুঝতে পেরেও এখনও হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে রাস্তায় কেন বেরিয়ে পড়িনি ঐসব মিরজাফর আর নেন্দুপ দর্জিদের নির্বংশ করতে।
সেইসব লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পীদের উদ্দেশ্যে বলছি আজ কিছু কিছু শিল্পী বুঝতে শুরু করেছে যে, দেশের সংস্কৃতি ছিনতাই হতে চলেছে। যারা এখনও বুঝেননি তারা সঠিক পথে আসুন, টাকার লোভে আর টাকা খেয়ে ভারতের দালালি করবেন না। আর আপনারা যারা বুঝতে শুরু করেছেন তারা মিনমিন করবেন না, তারা দ্রুত এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিন, আওয়াজ তুলুন, প্রতিবাদ করুন। সবকিছু ছিনতাই হয়ে গেছে, বাকি আছে শুধু সংস্কৃতি, এটিকে রক্ষা করুন, নয়ত আমরা তরুণরা আপনাদের ক্ষমা করব না।
ভেবে দেখুন, ১৬ ডিসেম্বরের বাংলাদেশের বিজয়টি জেনারেল অরোরার মাধ্যমে ভারত নিজের হাতে তুলে নিয়েছিল নিজেদের বিজয় হিসেবে। তাইতো আজ ৪৩ বছর পরে ভারত সিনেমা তৈরী করে সেখানে ঘোষনা করে "১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে হিন্দুস্থান ও পাকিস্থানের মধ্যে ৩য় যুদ্ধ শেষ হয়েছিল, ৯০ হাজার পাকিস্থানী সৈন্য ভারতীয় আর্মির সামনে আত্নসমর্পন করেছিল, ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর কোন দেশের এত সৈন্য আত্নসমর্পনের নজির আর নেই। জন্ম হয় নতুন একটি দেশ, নাম বাংলাদেশ"।
কি ভরসা আছে, ৩০ বছর পর বলবে না যে, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্থানের ৩য় যুদ্ধ শেষে জন্ম হয়েছিল ভারতের নতুন একটি রাজ্যের, নাম বাংলাদেশ?
বিষয়: বিবিধ
১৩৬২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এতে করে - মুনাফিক, কাফের, মুশরিক যে অভিধায়ই আমরা আমাদের অধিকার হরনকারীদের চিহ্নিত করিনা কেন - আমরা তাদের সাথে বুঝা পড়া করতে যেমন সাচ্ছন্দ্য পাব - ঠিক তেমনি অধিকার রক্ষায় ডিভাইন সাপোর্ট ও স্যালভেশান ও পাব।
সো আসুন চিন্তার পরিপক্কতার জন্য আর্টিফিশিয়াল জাতি স্বত্তাবোধ হতে বের হই এবং মুসলিম জাতিস্বত্তাকে একটিভ করি - তাতে এই দুনিয়া ও আখেরাত দুটো ই আমাদের সামনে পরিষ্কার হবে। ধন্যবাদ এ্যাপিলিং ও আকর্ষনীয় লিখার জন্য।
সমসাময়িক স্বাধীন হওয়া দেশ গুলো উন্নতিতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে । আর বাংলাদেশ ক্রমশঃই পিছিয়ে যাচ্ছে ।
বাঙ্গালী যদি বীরের জাতি হয় তাহলে মালয়েশিয়ান/সিঙ্গাপুরিয়ান/ভিয়েতনামিয়ানরা কি ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন