কুকুরের কান্না ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন জেরিন সরকার ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০১:৪৬:১৮ রাত
দাদী বলত কুকুর কান্না করলে নাকি বুঝতে হবে বিপদ খুব সন্নিকটে, যে কোন বিপর্যয় আসতে পারে! আমি জানিনা তার কথার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা, বা কোন ঐতিহাসিক সত্য আছে কিনা, নাকি এগুলো স্রেফ কুসংস্কার!
আমাদের বাড়ীর পাশের কুকুর গুলোকে গত ১ বছর থেকেই দেখি প্রতিরাতেই একধরনের অদ্ভুত শব্দ করে। দাদী বলে কুকুর গুলো নাকি কান্না করে! কুকুরের এই কান্না শুনলেই সাথে সাথে দাদী দোয়া ইউনুস পড়ে আর হাত তুলে বলে হে আল্লাহ রক্ষা করো।
গত ১ বছরে দেশে সরাসরি পুলিশ-বিজিবি-RAB এর গুলিতে কত মানুষ যে নিহত হয়েছে তার সঠিক হিসাব হয়ত কেউই বলতে পারবে না। গুপ্ত হত্যা ও গুম হওয়ার সংখ্যাও প্রচুর। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে কত মানুষ খুন হয়েছে সেই সংখ্যাও গননা করে বলা সম্ভব নয়। দেশে মেয়াদ উত্তীর্ণ সরকার পুনরায় ক্ষমতা ধরে রাখার উদ্দেশ্যে বর্তমানে যে একদলীয় ও প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করেছে, এর ফলে জাতিসংঘ সহ দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো তাদের অনুদান ও সাহায্য বন্ধের পাশাপাশি বাংলাদেশের উপর অর্থনৈতিক অবরোধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের মতো তৃতীয়বিশ্বের উন্নয়নশীল ও ভঙ্গুর অর্থনীতির একটি দেশের উপর যদি আন্তর্জাতিক অবরোধ আরোপ করা হয় তবে বাংলাদেশের উপর কি ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে তা সচেতন ব্যক্তি মাত্রই বুঝবেন। আমদানী-রফতানী শুন্যের কোঠায় নেমে আসবে, খাদ্য দ্রব্যের জন্য দেশ ভারতের উপর পূর্ণমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, খাদ্য দ্রব্যের চরম উর্দ্ধগতি হবে যা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না, কল-কারখানা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হবে, দেশের মানুষ কাজ হারাবে, অভাবের কারনে দেশে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই-খুন শতগুনে বৃদ্ধি পাবে, নিজেকে রক্ষার জন্য গৃহযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠবে। সর্বোপরি দেশ ১৯৭৪ সালের মতো আরেকটি দূর্ভিক্ষের মুখোমুখি হবে। ১৯৭৪ সালে যারা মুজিবীয় দূর্ভিক্ষের মুখোমুখি হয়েছিলেন তারা নিশ্চয়ই সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি এখনও ভুলে যাননি।
বর্তমানে যারা আওয়ামীলীগের একদলীয় নির্বাচনকে সমর্থন করছেন বা এই কুকর্মের সাথে জড়িত আছেন, তাদের এটা মনে করার কোন কারন নেই যে, দেশ যদি দূর্ভিক্ষের মুখোমুখি হয় তবে, সরকারের পক্ষে থাকার কারনে দূর্ভিক্ষ তাদের কোন ক্ষতি করবে না। সবাইকে এটা মনে রাখা দরকার যে, কোন দূর্যোগ বা দূর্ভিক্ষ মানুষ বিচার করে বা ভাল-মন্দ বিচার করে আঘাত করে না। দেশের মানুষের পেটে যদি খাবার না থাকে তবে মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রনায় অন্যের সম্পদের উপর আঘাত করবেই। এর থেকে কেউই রেহাই পাবে না। হ্যাঁ, যারা অবৈধ উপায়ে কাড়ি কাড়ি অর্থ-বৈভবের মালিক হয়েছে তারা হয়ত অবস্থা বেগতিক দেখে বিদেশ পাড়ি জমাবে, কিন্তু বুভুক্ষ জনতা ক'জনকেই বা বিদেশে পালাতে দিবে সেটিও যথেষ্ট চিন্তার বিষয়।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, দাদী হয়ত ঠিকই বলেন, অবলা প্রানী নাকি ভবিষ্যৎ বুঝতে পারে! কুকুর গুলোর কান্না কি তবে সেই বিপদ আর বিপর্যয়েরই পূর্বাভাস দিচ্ছে?
বিষয়: বিবিধ
১২২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন