ভাগ্যিস রেযা খাঁ ৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হবার পূর্বেই মারা গিয়েছিল। অন্যথায় জীবিত থাকলে বিপ্লবী মুজাহিদদের লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন ভারত ভূমিতে রেযা খাঁর যে কি পরিণতি হত তা মহান আল্লাহ্ পাক-ই ভাল জানেন।
লিখেছেন লিখেছেন সরল মন ১৬ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৫২:৫৮ রাত
ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে ইংরেজ, শিখ ও হিন্দু এই তিন উগ্র সম্প্রদায় যখন সংখ্যালঘু মুসলমানদের জান-মাল ও ইজ্জতের উপর হামলা চালালো, যখন ইংরেজরা লক্ষ লক্ষ মুসলমানদেরকে অন্যায়ভাবে শহীদ করতে লাগলো, যখন তারা হাজার হাজার বিপ্লবী আলিমদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে পৈশাচিকতার উল্লাসে মেতে উঠলো, যখন শিখরা মুসলমানদের বস্তির পর বস্তি লুট করে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে মুসলমান কুমারী মেয়েদের ইজ্জত-সম্ভ্রম নষ্ট করছিল, যখন মসজিদগুলোকে শিখরা ঘোড়ার আস্তাবলে পরিণত করলো তখন দিল্লীর আজাদী আন্দোলনের মহাপুরুষ হযরত শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রকাশ্য ময়দানে ভারত বর্ষকে দারুল হরব বা শক্র কবলিতদেশ বলে ফতওয়া দিয়ে তাদের বিরূদ্ধে জিহাদ করা ফরয বলে ঘোষণা দিলেন। এবং উনার ছাত্র, ভক্ত ও অনুসারীদেরকে নিয়ে তিনি এমন এক শক্তিশালী সু-সজ্জিত মুজাহিদ বাহিনী তৈরী করেন যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পরবর্তীতে উনারই সুযোগ্য একমাত্র জাহেরী, বাতেনী কামালতে পরিপূর্ণ খলীফা আ’মীরুল মু’মিনীন, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি। কিন্তু হযরত শাহ্ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চিন্তা, চেতনাকেও উনার জামানায় কতিপয় হিংসুক আলিম সমাজ, ক্ষমতাবান দুনিয়ালোভী শাসকরা সহ্য করতে পারতো না। যারা ছিল অধিকাংশই ইংরেজ মদদপুষ্ট। তাদের মধ্যে উগ্র মেজাজী আক্বীদা সম্পন্ন খাঁ ছাহেবের পূর্বপূরুষ দিল্লীর শিয়া মন্ত্রী নজফ খাঁন হযরত শাহ্ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সবচাইতে অধিক বিরোধীতা করে। এই পাঠান খাঁন বংশীয় মন্ত্রী হযরত শাহ্ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বার বার অপদস্ত করার চেষ্ট করে। এমনকি শেষ পর্যন্ত উনাকে দিল্লী শহর থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করে।
এছারাও এই নীচ প্রকৃতির লোক, হযরত মীর্জা মাযহার জান জানান শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে পর্যন্ত শহীদ করে ফেলে। (নাউযুবিল্লাহ) পরবর্তীতে এই শিয়া মন্ত্রী নজফ খাঁনের উত্তর পুরুষ পাঠান বংশীয় আহমদ রেযা খাঁ হযরত শাহ্ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দীস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ভারতবর্ষকে দারুল হরব ফতওয়া দানের বিরোধীতা করে “এলামুল আলাম” কিতাব লিখে ভারত বর্ষকে দারুল ইসলাম বলে ঘোষণা করে এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা সম্পূর্ণ হারাম বলে ফতওয়া প্রচার করে বেড়ায়।
যেমন, এ সম্পর্কে “The Muslims of British India” গ্রন্থের ২৫৬ পৃষ্ঠায় লিখা আছে, “For every Alim who issued a Fatwa that India was Dar-ul-harb there would be one who dclared that it was Dar-ul islam.”
অর্থাঃ- “কেননা প্রত্যেক আলিম ভারতবর্ষকে “দারুল হরব” হিসেবে ফতওয়া দেয়া সত্বেও মাত্র এক ব্যক্তি (আহমদ রেযা খাঁ) যে নাকি একে “দারুল ইসলাম” হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলো।”
এছাড়াও উক্ত গ্রন্থের ৩২৫ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে,
“Ahmad raza Khan of bareilly issued Fatwa declaring India to be Darul islam.”
অর্থঃ- “বেরেলীর আহমদ রেযা খাঁ ভারত বর্ষকে দারুল ইসলাম হিসেবে ফতওয়া দিয়েছিলো।”
আমরা আশ্চর্য্য হয়ে যাই রেযা খাঁ এই ইংরেজ প্রীতি ও হক্কানী আলিম সমাজের বিরোধীতা দেখে। যেখানে ব্রিটিশ রাজশক্তি জানবাজ আজাদী আন্দোলনের মর্দে মুজাহিদদের গতি ধারাকে স্তব্ধ করার জন্য তাদের এক একজন সিংহ পুরুষকে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলিয়ে, মৃত্যুদন্ড দিয়ে ও দ্বীপান্তরে নির্বাসন দিয়ে যাচ্ছিলো, যখন “ইংরেজ খেদাও” ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিলো, ঠিক সেই মুহুর্তটিতেই রেযা খাঁ ইংরেজ প্রভুদের সন্তুষ্টির নিমিত্তে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, জিহাদ করা হারাম বলে ফতওয়া দিলো। রেযা খাঁ এখানেই থেমে থাকেনি বরং আরো এক ধাপ সামনে অগ্রসর হয়ে আজাদী আন্দোলনের বহু মুজাহিদ আলিমদের উপর কুফরী ফতওয়া জারী করে ও হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিদ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মত সর্বজনমান্য, বরণীয় বুযুর্গ আলিমদের দীর্ঘদিনের নকশাকৃত আন্দোলনের তেজস্বীতাকে স্তিমিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ পাক-এর আশেষ মেহেরবাণী যে, রেযা খাঁর সেই সময়কার ফতওয়া জনমনে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি। রেযা খাঁর অন্তরে কি লুকায়িত ছিল তা সত্যি ভাববার বিষয়। রেযা খাঁ কিসের নেশায় মুজাহিদদের রক্তে রঞ্জিত ভারত ভূমিতে ব্রিটিশ হুকুমত দেখতে চেয়েছিল?
ভাগ্যিস রেযা খাঁ ৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হবার পূর্বেই মারা গিয়েছিল অন্যথায় জীবিত থাকলে বিপ্লবী মুজাহিদদের লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন ভারত ভূমিতে রেযা খাঁর যে কি পরিণতি হত তা মহান আল্লাহ্ পাক-ই ভাল জানেন।
বিষয়: বিবিধ
১২৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন