খাটি তাওবা
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুব হাসান র ৩০ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৩৮:০০ সকাল
‘ইস্তেগফার’ শব্দের অর্থ কৃত পাপকর্মের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহর অসংখ্য মহান গুণাবলির একটি হলো ক্ষমা। আল্লাহ তাআলা ‘গাফুরুর রাহিম’ অর্থাৎ তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু।সুতরাং মন থেকে দোয়া ও তাওবা করলে পরম করুনাময় মহান রাব্বুল আলামিন পাপ যতবড়ই হোক না ক্ষমা করে দেন ।
তাওবা কাকে বলে?
খারাপ কাজ-গুনাহ, পাপচার, অন্যায় অবিচার ও আল্লাহর নাফরমানি হতে ফিরে এসে, বান্দা নেক কাজ করার মাধ্যমে তার প্রভুর দিকে ফিরে আসাকে তাওবা বলা হয়। অনেক অজ্ঞ বা মূর্খ লোকেরা মনে করে তাওবা শুধু মাত্র খারাব কাজ বা গুনাহের কাজ থেকে ফিরে আসার দ্বারাই হয়ে থাকে। তাদের এ ধরনের ধারণা মোটেও ঠিক না। বরং, এখানে সঠিক, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য কথা হল, যে সব নেক আমল করার জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন তা ছেড়ে দেয়াও গুনাহ। যারা এ সব নেক আমালগুলো পালন করা ছেড়ে দেয় তাদের অবশ্যই তা ছেড়ে দেয়া হতে তাওবা করা এবং ফিরে আসা, নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে তাওবা করা হতে আরো বেশী গুরুত্বপুর্ণ।
তাওবা করার জন্য জন্য কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে, তাহলেই আল্লাহ তাআ'লা সেই তাওবা কবুল করবেন।
১. পাপ কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মুখে মুখে তাওবা করি, কয়েকদিন পর থেকে পাপ কাজটা ছেড়ে দেবো – এরকম হলে তাওবা হবে না।
২. অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ত্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করে তাঁর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩. অন্তরে ঐকাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেইগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
৪. লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত গুনাহ জন্য “ইস্তিগফার” করতে হবে (মাফ চাইতে হবে) + “তাওবা” করতে হবে (গুনাহ করা বন্ধ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে)।
৫. কারো হক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার হক ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা যেইভাবেই হোক, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে। উল্লেখ্য, তাওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু বান্দার কোনো হক নষ্ট করলে সেটা বান্দা মাফ না করলে তিনি মাফ করবেন না।
৬. অন্তরে আশা রাখতে হবে, যে আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহীম – অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুতরাং তিনি আমার তোওবা কবুল করবেন।
৭. তাওবা করার পরে প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে, এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি করে নেকীর কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
৮. যে পাপ কাজ থেকে তাওবা করা হলো (সমস্ত পাপ কাজ থেকেই তাওবা করা ফরয), কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজটা করে ফেললে সাথে সাথে আবার তাওবা করে সেটা থেকে ফিরে হবে। এইভাবে যখনই কোনো পাপ হবে সাথে সাথেই তাওবা করতে হবে, মৃত্যু পর্যন্ত।
৯. কারো তাওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে বুঝবেন? অনেক আলেম এ সম্পর্কে বলেনঃ কারো যদি তাওবা করার পরের জীবন আগের জীবন থেকে ভালো হয় অর্থাৎ পাপের কাজ অনেক কমে যায় ও ভালো কাজ বৃদ্ধি পায় তাহলে আশা করা যেতে পারে – তার তাওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে।
কিন্তু কারো যদি এমন না হয় অর্থাত, তাওবার আগের ও পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার তাওবাতে ত্রুটি আছে। তার উচিত হতাশ না হয়ে – বার বার আন্তরিকতার সাথে খালেস নিয়তে তাওবা করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আন্তরিক তাওবা করার তোওফিক দান করুন।
যেই দোয়া পড়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাওবা করতেন ও আমাদেরকে পড়তে বলছেনঃ
أَسْتَغْفِرُ اللهَ العَظِيْمَ الَّذِىْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লা-হাল আ’যীমাল্লাযী লা-ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া ইবাদতের আর কোন যোগ্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তাঁর কাছে তাওবা করছি।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“যেই ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়”।
(অর্থাৎ, সে যদি বড় রকমের গুনাহগার হয়, তবুও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন।)
তিরমিযী ৪/৬৯, আবুদাঊদ ২/৮৫, মিশকাত হা/২৩৫৩, হাদীসটি সহীহঃ সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭২৭।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে তাওবা করার তাওফিক দিন। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১২৫২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন