রাসেল ভাই ও কাকের কাকতালীয় কর্ম (ছোটগল্প)

লিখেছেন লিখেছেন বিকল কপোট্রন-এক্স রে ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:২৪:১০ সকাল

-ভাইজান সিগারেট দেই ?

*না থাক পরে খামুনে

-কিছু হইছে ভাইজান?

*না, তোরা থাক, আমি গেলাম।

রাসেল ভাইয়ের ভিতর মাস্তানি ভাবটা আর আগের মত নেই। কেমন

জানি চুপসে গেছেন তিনি। সিগারেটও আগের মত টানেন না। রাসেল

ভাইয়ের সিগারেটের প্রতি অনিহা অষ্টম আশ্চর্য্য ছাড়া কিছুই নয়।

প্রেমে পড়লে মানুষ সিগারেট বেশি খায় নয়তো কমিয়ে দেয়। রাসেল

ভাইয়ের সিগারেট থেকে পিছুটানের প্রধান কারন তানি আপু। পাড়ায়

২দিন এসেই রাসেল ভাইয়ের সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছেন।

রাসেল ভাই সুযোগে আছেন কেউ তানি আপুর সাথে খারাপ আচরন করলেই

চড় মেরে তার ২৮-৩০টা দাঁত ফেলে দেবে। সবার ৩২ টা দাঁত থাকেনা।

রাসেল ভাইয়েরও আক্কেল মাড়ি উঠেনি। আরো ভাবতে থাকেন, তানির

দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে তার চোখ কানা করে দেবে,

বাংলা সিনেমার নায়কের মতো তানি কে ভিলেনের হাত

থেকে রক্ষা করবে। ধ্যাত!! মাস্তানদের ভাবনা জুড়ে শুধুই মারামারি।

সেখানে রোমান্টিকতা নেই। তানি আপু মারামারি পছন্দ করেন না।

আজকাল তিনি চুলে স্পাইক করা ধরেছেন।

কালো চশমাটা চোখে দিয়ে তানি আপুর বাড়ির

সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছেন। তার চোখের দৃষ্টি তানি আপুর

বাসাকে কেন্দ্র করে তার ঘাড় টাকে অটোমেটিক বাম

দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। রাস্তা দিয়ে হাটতে হলে একটু সতর্কতার

সাথে হাটতে হয়। প্রেমে পড়লে চলাফেরার ট্রাফিক আইন মানা যায় না।

কপাল ভাল থাকলে কিছু কাকতালীয় ব্যাপার ঘটে যায়। এই

মুহূর্তে তানি আপুর ছাদে আগমন অনেকটা তেমন কিছুই। রাসেল ভাইয়ের

হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে, দৃষ্টি তার ছাদের দিকে। হঠাতই রাসেল ভাইয়ের

উষ্ঠা খাওয়ার মতো অবস্থা হল। রাস্তার খানাখন্দে বেধে তার

চটি স্যান্ডেল এর দফারফা হয়ে গেল। ট্রাফিক আইন

মেনে না চললে এমনি হয়। তানি আপুর অট্টহাসিতে রাসেল ভাই

নিজেকে খুব অসহায় মনে করছে। রাসেল ভাই নিজেকে অসহায়

ভাবছে এটাও কম হাস্যকর নয়। স্যন্ডেল জোড়া হাতে নিয়ে, তানি আপুর

বাসা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে, স্লো মোশন থেকে হাটার স্পীড

বাড়িয়ে দিয়ে রাসেল ভাই দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলেন।

আগের দিনের কথা ঠিকই মনে আছে । তাই রাসেল ভাই নতুন

জুতা কিনেছেন। হলুদ রঙয়ের জুতা। তানি আপুর বাসার

সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কোনোদিন স্যান্ডেল পায়ে থাকবেন

না প্রতিজ্ঞা করেছেন। হলুদ জুতা পায়ে দিয়ে তানি আপুর বাসার

ছাদের দিকে তাকিয়ে হাটছেন। তানি আপু হলুদ রং একদম পছন্দ করেনা।

একটা বিরক্তি নিয়ে বললেন "খ্যাত কোথাকার"। রাসেল ভাই তার

হিরোইক লুকের ভিতর কোনো খ্যাত খুজে পেলেন না। রাসেল ভাই খুব সুন্দর

হাসি দেয়া শিখেছেন। তানি আপুর দিকে তাকিয়ে সেটাই প্রয়োগ

করলেন। ঠিক সেই সময় ইলেকট্রিক তারের উপর বসে থাকা একটা কাক

প্রাকৃতিক কর্ম সারল। কিন্তু তার লক্ষ্যবস্তু ছিল রাসেল ভাইয়ের মাথা।

রাসেল ভাই মাথায় হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন ঠিক কি জিনিস

তার এতো সুন্দর স্পাইক নষ্ট করল। তানি আপুর হাসি আজকেও রাসেল

ভাইকে অসহায় করে ছাড়ল। এটা যে রাসেল ভাইয়ের হাসির প্রতিউত্তর

ছিল না সেটা রাসেল ভাই ভালই বুঝতে পেরেছেন। মুহূর্তেই তানি আপুর

বাসার ছাদের প্রতি দৃষ্টির চৌম্বকীয় আকর্ষণ নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল।

ব্যাটা কাক কে পেলে আস্ত চিবিয়ে খাবে রাসেল ভাই। ইশ কাক

টা যদি রাসেল ভাইয়ের হলুদ জুতা জোড়া কে সাদা করে দিত তাহলেও

একটা কাজের কাজ হত।

তানি আপুর হলুদ পছন্দ নয়। রাসেল ভাইয়ের লাল রং পছন্দ। একটা টকটকে লাল

রং এর ক্যাপ মাথায় দিয়ে তানি আপুর বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছেন।

আজকের প্রাইভেসি অনেক হার্ড। জুতা জোড়া ছেঁড়ার ভয় নেই, কাক

বেটা কিছু করলেও চুলের স্পাইক নষ্ট করতে পারবে না।

বর্ষাকালে রাস্তার খানাখন্দে অনেক কাদাপানি জমে আছে। খানাখন্দ

কে পাশে রেখে দৃষ্টির চৌম্বকীয় আকর্ষণ টাকে সক্রিয়

করে এগিয়ে চলেছেন রাসেল ভাই। ট্রাফিক আইন তিনি আজকেও মানছেন

না। হঠাত একটা মাইক্রোবাস রাস্তার কাদাপানি দিয়ে রাসেল ভাই

কে গোসল করিয়ে দিয়ে গেল। তানি আপুর হাসিটা আজ অতটা প্রবল নয়।

রাসেল বেচারার প্রতি কেমন যেন মায়া হচ্ছে।

ছুটে যাওয়া মাইক্রো কে একটা ধামকি দিয়ে রাসেল ভাই আজকেও দ্রুত

গতিতে হেটে চললেন। মনে মনে ভাবলেন "ব্যাটাকে আরেকবার

পেলে হয়"।

রাসেল ভাইয়ের হয়ত কপালটাই খারাপ। তাই বারবার তানি আপুর বাসার

সামনেই তার বিপদ হয়।

আজ তানি আপু রাসেল ভাই মুখোমুখি হেটে আসছেন। তাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব

১০০ মিটার এর বেশি নয়। রাসেল ভাইয়ের পায়ে জুতা আর মাথায় ক্যাপ

আজকেও আছে। বেচারার মন টাই খারাপ। কাদাপানি থেকে বাচার জন্য

ট্রাফিক আইন মেনেই হাটছেন। তানি আপু তার পাশ কাটানোর সময়

আচমকাই পিছলা খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। রাসেল ভাই দ্রুত তানি আপুর

হাত ধরে তাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাচালেন। রাসেল ভাই নিজেও

বুঝতে পারেন নি কিভাবে তার হাত তানি আপুর হাত কে ধরে ফেলল।

তানি আপুর মুখ লাল, লজ্জায় লাল। লজ্জাটা পিছলা খাওয়ার জন্য

না রাসেল ভাই তার হাত ধরার জন্য তা ঠিক বোঝা গেলনা। এবার

তানি আপু দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলেন। ধন্যবাদ টাও দিলেন না। হয়ত

ভুলে গেছেন।

এখন তানি আপুর হাসার জন্য রাসেল ভাইয়ের স্যান্ডেল ছেড়া লাগেনা,

ইলেকট্রিক তারে বসে থাকা কাক কেও প্রাকৃতিক র্ম করার জন্য রাসেল

ভাইয়ের মাথাকে বেছে নিতে হয় না।

-এই যে মিস্টার, বিয়ে বাড়ি থেকে আসছেন বুঝি?

রাসেল ভাই কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেল। তার বিশ্বাস হচ্ছে না তানি আপু

তাকে কথাটা বলছে।

*আমাকে?

-জ্বি আপ্নাকেই বলছি,বিয়ে বাড়ি থেকে আসলেন বুঝি?

*কই না তো, কেন?

-আপনার জুতা জোড়া হলুদ হয়ে আছে। ভাবলাম মাংসের ঝোল পড়েছে হয়ত।

মুচকি হাসি দিয়ে কথাগুলো বলল তানি আপু।

*ইয়ে মানে এটার কালার হলুদ।

-খ্যাত কোথাকার, এই গরমে কেউ জুতা পরে থাকে? লাল ক্যাপ পরেছেন

কেন? সাদা ক্যাপ পরতে পারেন নি?

*সাদা ক্যাপ কেন?

-সাদা ক্যাপে সাদা জিনিস পড়লে টের পাওয়া যায়না।

খ্যাত মার্কা রাসেল ভাই বিশাল চিন্তায় পড়ে গেল। তানি আপু

তাকে ডেকে কথা বলেছেন। নতুন চিন্তার বিষয় রাসেল ভাই

কে তিনি সাদা ক্যাপ পরতে বলেছেন।

পার্কে বসে আছেন তানি আপু আর রাসেল ভাই। আজ তার পায়ে হলুদ

জুতা বা মাথায় লাল ক্যাপ নেই।

*তুমি হলুদ রং পছন্দ করোনা কেন?"

-ওটা খ্যাত কালার। আপনাকে যদি আবারো হলুদ

জুতা পরতে দেখেছি তো খবর আছে।

*তোমার প্রিয় রং কি"

-সাদা

হঠাতই একটি কাক এবং রাসেল ভাইয়ের মাথা.................................

বিষয়: সাহিত্য

১৭৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File