দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা (ছোটগল্প)
লিখেছেন লিখেছেন বিকল কপোট্রন-এক্স রে ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:২০:০০ সন্ধ্যা
-তোমার তো এখানে বসে থাকার কথা ছিলনা। তবে এখানে কেন বসে আছ?
রাতুল কে শাসানোর মত করে কথা গুলো বলতে থাকে নীলা। পাক্কা ১৫ মিনিট ধরে পুরো পার্ক তন্ন তন্ন করে রাতুল কে খুজেছে নীলা। দুজনের দেখা করার কথা ছিল পার্কের অন্য কোনায় যেখানে অনেক গুলো ফুল গাছ আছে। লাল রঙের ফুল নীলার খুব পছন্দ। রাতুল নীলা কে সবসময় লাল রঙের ফুল দিয়েই প্রপোজ করে। পার্কে আসলে যখনই নীলার অভিমান হয় তখনই গাছ থেকে একটা লাল ফুল এনে নীলা কে দেয়। আজ সে ধরনের কোনো সুযোগ নেই। নীলার দিকে না তাকিয়েই রাতুল জবাব দিতে থাকে।
*এখানে অনেক ঘাস আছে তাই বসে আছি।
-তুমি কি ছাগল যে ঘাস দেখে বসতে হবে?
*আমি ঘাস দেখে বসিনি, ঘাসের উপর বসে আছি। চাইলে তুমিও বসতে পার।
-আমি তোমার মত ছাগল না।
*আমি জানি তুমি ছাগল না। ছাগলের স্ত্রী লিঙ্গ ছাগী।
-কি আমাকে তুমি ছাগী বললে!!!!????
*এখনো বলিনি। তবে ছাগলের বউ ছাগীই হয়।
-আমি তোমার বউ না।
*আমি তো বলিনি তুমি আমার বউ।
-এত কথা প্যাঁচাও কেন? তুমি একটা রামছাগল।
*রামছাগলের তুর্কি দাড়ি থাকে। আমি একদম ক্লিন শেভ।
-ওহ অসহ্য! কেন যে তোমার মত ইডিয়ট এর সাথে প্রেম করি?
*আমরা প্রেম করছি না। আমরা ঝগড়া করছি।
-তোমার মত #রামছাগলের সাথে আমার ঝগড়া করতে বয়েই গেছে?
*আমি একটু আগেই শেভ করে এসেছি। আমার দাড়ি উঠলে চাপ দাড়ি ওঠে তা তুমি জানো
-শেভ করেছ কেন? আমার চাপ দাড়িই ভাললাগে।
*তোমার মুখে কখনো দাড়ি দেখিনি। আগে তো জানতাম না তোমার দাড়ি হয়!!
-আমাকে কটা টাকা ধার দাও তো
*কি করবে?
-প্রথমে একটা পিস্তল আর গুলি কিনব। তারপর তোমাকে গুলি করে মারব। গরু কোথাকার। আমি কি আমার দাড়ির কথা বলেছি? >_<
*আমার কাছে সিগারেট কেনার টাকা থাকে। পিস্তল কেনার নয়
-কি তুমি সিগারেট খেয়েছ!!?? >_<
*সিগারেট খেলে ক্যান্সার হয়ে মরার সম্ভাবনা আছে। তোমাকে আর কষ্ট করে মারতে হবেনা।
-একদম অলক্ষুনে কথা বলবে না। গরু ছাগল ভেড়া কোথাকার, বসে বসে ঘাস খাও
প্রিয়তমার মুখ থেকে গরু ছাগল ভেড়া ডাক শুনতে খারাপ লাগে না। বরং ভালই লাগে। অন্যান্য প্রেমিকের মত রাতুলও তার ব্যাতিক্রম নয়। সব প্রেমিক অবশ্য সিগারেট খায় না। নীলা যেইসব বিষয়ে রেগে যায় রাতুল সেইগুলোই বেশি করে। এভাবে রাগানোর ভিতর একটা ভালবাসা থাকে। নীলা কে এভাবে রাগানোর অধিকার শুধু রাতুলেরই আছে।
*আমি ঘাস খাচ্ছিনা। আমি বাদাম খাচ্ছি।
-কই এতক্ষন তো খেয়াল করিনি! বাদাম কেন খাচ্ছ?
নীলার খেয়াল করার কথা না। কারন ও এখনো রাতুলের সামনে যায়নি। পেছন থেকেই কথা চালিয়ে যাচ্ছিল। তাই ঘাস খাওয়া আর বাদাম খাওয়ার পার্থক্য ধরতে পারেনি।
*বাদাম খেলে ত্বক ভাল হয়।
-হঠাত ত্বক ভাল করার নেশা চাপল কেন?
*আরেকটা প্রেম করব তাই
-তুমি আমাকে ছেড়ে আরেকটা ডাইনির সাথে প্রেম করবে!!??
ভালবাসার ভাগ কেও দিতে চায়না। নীলাও তার ব্যাতিক্রম নয়। রাতুল অন্য মেয়ের দিকে তাকালেই সেই মেয়ে নীলার কাছে ডাইনি।
*তুমি যে ডাইনি তাতো জানতাম না।
-আমি ডাইনি না, তুমি যার সাথে প্রেম করবে তাকে ডাইনি বলেছি।
নীলার প্রিয় রং নীল নয়, কালো। রাগে নীলার মুখের রং কালো হয়ে গেছে। নীল হওয়ার কথাও নয়। কারন নীল বিষাদের রং। নীলার মনে বিষাদ নেই। সেখানে শুধুই আছে রাতুলের ভালবাসা।
*ও ডাইনি না। ওর নাম নীলা
-থাকো পড়ে তোমার নীলা ফিলা কে নিয়ে। আমার সাথে কথা বলতে আসবে না।
রেগে গেলে নীলা নিজের নাম ভুলে যায়। রাতুল নীলা কে অযথা রাগাতে ভালবাসে এটা নীলাও জানে। "ভালবাসায় মান অভিমান না হলে ঠিক জমে না" এটা কোনো মনিষী বলেছেন কিনা নীলা বা রাতুল কারোরই জানা নেই। হয়ত জগতের কোনো প্রেমিক প্রেমিকারই জানা নেই। তবু সবাই মান অভিমানের খেলায় মেতে ওঠে। রাগারাগি মান অভিমান ভালবাসার মাঝে অলিখিত চুক্তি।
*আমার পাশে একটু বসবে? জায়গাটা পরিষ্কার আছে।
-না বসবো না। তুমি একটা ফাযিল। আমার মন নিয়ে খেলা করবে। আমার মন নরম। তাই যখন তখন তোমার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হবে।
*একটু বসো। আমি তোমার মন নিয়ে খেলব না। তোমার চুলগুলির সাথে দুষ্টুমি করবো। তোমার চুলের মিষ্টি ঘ্রানে মাতাল হয়ে যাব
-এহ শখ কত! আমি মাতাল ছেলেকে পছন্দ করিনা।
কথাটা বলতে বলতেই নীলা রাতুলের পাশে বসল। যখন ভালবাসাটা অনুভব করা যায় তখন প্রেমিক প্রেমিকা দুজনেই মাতাল হয়ে যায়। আবল তাবল কথা বলতে ভাল লাগে। নীলাও এখন মাতাল রাতুলের ভালবাসায়। আচ্ছা মাতালের স্ত্রী লিঙ্গ কি? না থাক। সব ক্ষেত্রে ব্যাকরন টানলে চলে না। ভালবাসার কোনো ব্যাকরন হয় না।
*ফুচকা খাবে? ফুচকা খেলে মাতাল হওয়ার চান্স নেই
-না। যা খাচ্ছিলে তাই খাব
বাদামের খোসাগুলো নীলার দিকে এগিয়ে দিল রাতুল। দু চারটা বাদামের খোসা মুখে চালান করে দিল নীলা। আস্ত একটা মাতাল মেয়ে। বাদামের খোসাও চেনে না। সেগুলো দিব্যি চাবিয়ে যাচ্ছে।
একটু দেরিতে চিনলেও রাতুল কে তাড়া দিতে দেরি করলো না নীলা।
পার্কে একটা ছেলে দৌড়াচ্ছে, একটা মেয়ের তাড়া খেয়ে। তারা হাপিয়ে গেলে ফুচকা ওয়ালার সামনে থামবে। ফুচকার খোসাগুলো বাদামের খোসার মত নয়। ওটা খাওয়া যায়। ভালবাসায় বিভোর জোড়া গুলো এভাবেই যুগে যুগে মাতলামির সংজ্ঞা বদলে দেবে।
বিষয়: সাহিত্য
১১৪৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন