হাওয়ায় ভেসে চলা আমাদের সংস্কৃতি
লিখেছেন লিখেছেন এম আর রাসেল ২২ এপ্রিল, ২০১৪, ০৩:২৮:৪৪ দুপুর
পহেলা বৈশাখ মানেই যেন হাজরো লোকের ছোটাছুটি আর বাংগালিয়ানা প্রকাশের প্রতিযোগিতার এক মহোৎসব। ছোটবেলায় গ্রামের মেলাগুলোতে যাওয়ার জন্য থাকতাম পাগলপারা।সময়ের সাথে সাথে সেই পাগলপারা মনটা কেন জানি শান্ত হয়ে গেছে। শহরের যান্ত্রিকতার মাঝে গ্রামের সেই মধুর স্মৃতি খুঁজতে খুঁজতে আমি ক্লান্ত। ক্লান্ত শরীর আর শান্ত মন আজ ফিরে পেতে চাই সেই মধুর সময়,জানি তা আর আসবে না ফিরে তবুও মনের মাঝে আশা জিইয়ে রাখি।অনেক কিছুই পূরণ হওয়ার নয় তারপরও কেন জানি স্বপ্ন দেখতে আমার ভাল লাগে। অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও আমি দেখি সুন্দর আগামীকে। যাক সে কথা কিছু কিছু উৎসবে আমাদের জাতির উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে মনে হয় তারা কতই না সযত্নে নিজের সংস্কৃতিকে লালন করছে, কতই না পরম মমতায় করছে চর্চা আপন সংস্কৃতির। সত্যিই যদি এমনটি ঘটত তবে কতই না ভাল হত। কিন্তু আফসোস লোক দেখানো এসব ভালবাসা দুইদিন পরেই হাওয়া হয়ে উড়ে যায় । প্রখ্যাত মার্কিন ঐতিহাসিক Will Duran এক নিবন্ধে Culture বা সংস্কৃতির সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবেঃ সংস্কৃতি সভ্যতার অভ্যন্তর ও অন্তঃস্থল থেকে আপনা থেকেই উপচে উঠে ,যেমন ফুলবনে ফুল আপনা থেকেই ফুটে বের হয়ে আসে। আমাদের এই অনুভূতিগুলোও ফুল হয়ে ফুটে ঠিকই কিন্তু কুড়ি আসার আগেই ঝরে পরে যা অন্য কোন জাতির ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় না। জাতিপ্রেম অন্য কথায় দেশপ্রেম আজ যেন শুধুই মুখের বুলি আর লোক দেখানো কিছু কর্মকাণ্ডের প্রতিচ্ছবি। যে ছবিতে থাকে না কোন রূপ, থাকে না কোন সত্যিকারের মত ভাল লাগার কিছু। নিজের সংস্কৃতিকে ধারণ করে অন্য সংস্কৃতির চর্চা কখনই দূষণীয় নয় ।কে না চায় নিজেকে সবার সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে ? কিন্তু আফসোস আমরা সুযোগ পেয়েও সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে জানি না। জাতিপ্রেম, দেশপ্রেমের বুলি আওড়াতেই আমাদের সময় শেষ , প্রকৃত দেশপ্রেম চর্চার সময় কোথায় ? কিছুদিন আগে যখন আমাদের দেশে টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হল তখন আমরা দেখেছি নিজ দেশের শিল্পীদের আক্ষেপ ভরা কণ্ঠ যা নিয়ে প্ত্র পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে তা কারও অজানা নয়। অপরদিকে যখন ২০০৮ সালে বেইজিং এ অনুষ্ঠিত অলিম্পিক অনুষ্ঠান,২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আমাদের দেখিয়েছিল কিভাবে নিজের সংস্কৃতিকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক একজন মেজর জেনারেল বলেছিলেন ‘জাতি হিসেবে বাঙ্গালিরা খুবই সংস্কৃত মনা। শিল্পকলার প্রতি ভালবাসা তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তাদের সংগীতও ছন্দময় এবং ভাষাও মধুর’।এত সব মধুরতার মাঝে কিভাবে যেন কুসংস্কৃতি নামক বিষপোকার অনুপ্রবেশ ঘটেছে যা আমাদের মঙ্গল ও কল্যাণকর সমস্ত কিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে চলছে মহাসাগরের গর্ভে। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস বলেছেন, “আমাদের সংস্কৃতিতে আমাদের জনগণের আবহমান লালিত আদর্শ, বিশ্বাস, ইতিহাস, ঐতিহ্য, জীবনাচার ও জীবনপদ্ধতি বিধৃত হবে এটাই স্বাভাবিক।” কিন্তু নিজে বাঁচলে বাপের নাম গ্রামীণ অতি পরিচিত এই উক্তির মতই আমরা ভেসে চলেছি সময়ের স্রোতে। স্রোতের ছুটে চলা যে নিরন্তর তা আমরা সবাই জানি জানি না শুধু এই ছুটে চলা সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে।ফুলের যেমন সৌরভ, মানুষের তেমন সংস্কৃতি। এটি যেন জাতির ব্যক্তিত্ব।আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব আর দৃঢ় প্রত্যয়ই পারে আমাদের হাওয়ায় ভেসে চলা সংস্কৃতিকে স্থির করতে। আর হাওয়ায় ভেসে চলা নয় নিজের বুকে নিজের সংস্কৃতিকে ধারণ করে চলব আমি পথ এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার ।
বিষয়: বিবিধ
১২১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন