কায়েদে আযম যেভাবে কংগ্রেস ছাড়লেন
লিখেছেন লিখেছেন Democratic Labor Party ১১ মে, ২০১৬, ১২:২০:৪২ দুপুর
কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ
কংগ্রেস ত্যাগ:
মেহতা ও গোখলের মৃত্যুর পর কংগ্রেসে জিন্নাহর মধ্যমপন্থি গোষ্ঠী দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়া দাদাভাই নওরোজি লন্ডনে থাকায় জিন্নাহ আরো কোনঠাটা হয়ে পড়েন। ১৯১৭ সালে নওরোজি লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। এরপরও জিন্নাহ কংগ্রেস ও লীগকে কাছাকাছি আনার চেষ্টা করে যান। ১৯১৬ সালে মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় দুই দলের মধ্যে লখনৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে বিভিন্ন প্রদেশে মুসলিম ও হিন্দু প্রতিনিধিদের কোটা নির্ধারিত হয়। চুক্তিটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা না গেলেও তা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে।[৩৩][২৪]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জিন্নাহ অন্যান্য ভারতীয় মধ্যপন্থিদের সাথে ব্রিটিশ পক্ষ সমর্থন করেন। তার আশা ছিল যে যুদ্ধকালীন সময়ে আনুগত্যের কারণে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রদান করবে। ১৯১৬ সালে অল ইন্ডিয়া হোম রুল লীগ প্রতিষ্ঠায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এনি বেসান্ত্, তিলকসহ অন্যান্য নেতাদের সাথে তিনি ভারতের জন্য স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানান। এতে কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মত ডমিনিয়ন হিসেবে স্বায়ত্তশাসন দাবি করা হয়। তবে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারে উৎসাহী ছিলেন না। ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মন্ত্রী এডুইন মন্টেগু তার স্মৃতিকথায় জিন্নাহকে "তরুণ, ভদ্র, আকর্ষণীয় চেহারা, স্পষ্টভাষী" হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[৩৪]
১৯১৮ সালে জিন্নাহ তার দ্বিতীয় স্ত্রী রতনবাই পেটিটকে বিয়ে করেন। রতনবাই তার চেয়ে ২৪ বছরের ছোট ছিলেন। তিনি ছিলেন জিন্নাহর বন্ধু অভিজাত পারসি পরিবারের সদস্য স্যার দিনশা পেটিটের মেয়ে।[১১]
মরিয়ম জিন্নাহ
এই বিয়ে নিয়ে রতনবাইয়ের পরিবার ও পারসি সম্প্রদায় এবং মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। রতনবাই পরিবারের অমতে ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর তার নাম হয় মরিয়ম জিন্নাহ। এর ফলে তাকে তার পরিবার ও পারসি সম্প্রদায় ত্যাগ করে। জিন্নাহ ও তার স্ত্রী বোম্বেতে বসবাস করতে থাকেন। তাদের একমাত্র সন্তান দিনা জিন্নাহ ১৯১৯ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন।[১১][৩৫] ১৯২৯ সালে রতনবাইয়ের মৃত্যুর পর জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহ তার ও তার সন্তানের দেখাশোনা করতেন।[৩৬]
১৯১৯ সালে ব্রিটিশ ও ভারতীয়দের মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এসময় ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল নাগরিক অধিকারের উপর যুদ্ধকালীন জরুরি নিয়ন্ত্রণের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। এর প্রতিবাদে জিন্নাহ কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করেন। এসময় ভারতজুড়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। অমৃতসরে জালিওয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। হত্যাকান্ডের সময় ব্রিটিশ বাহিনী প্রতিরোধ সভায় গুলি চালায় ফলে শতাধিক নিহত হয়। এরপর মহাত্মা গান্ধী সত্যাগ্রহের ডাক দেন। গান্ধীর আহ্বান হিন্দুদের কাছ থেকে বিরাট সমর্থন লাভে সমর্থ হয় এবং খিলাফত আন্দোলনে অংশ নেয়া মুসলিমদের কাছেও জনপ্রিয় হয়। ফলে মুসলিমরাও এতে যোগ দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশদের হাতে উসমানীয় খিলাফত বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। যুদ্ধের সময় মুসলিমদের পক্ষে কাজ করায় গান্ধী মুসলিমদের নিকট জনপ্রিয় ছিলেন। জিন্নাহ ও কংগ্রেসের অন্যান্য নেতাদের মত গান্ধী পশ্চিমা পোষাক পড়তেন না। এছাড়া ইংরেজির পরিবর্তে ভারতীয় ভাষা ব্যবহার করতেন। দেশীয় ধাচে গান্ধীর কার্যক্রম জনপ্রিয়তা লাভ করে। খিলাফত আন্দোলনে গান্ধীর সমর্থনকে জিন্নাহ বিরোধীতা করেন। একে তিনি ধর্মান্ধতা হিসেবে দেখতেন। এছাড়া সত্যাগ্রহকে তিনি রাজনৈতিক নৈরাজ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। জিন্নাহর বিশ্বাস ছিল সাংবিধানিক পদ্ধতিতেই স্বায়ত্তশাসন লাভ করা সম্ভব। তিনি গান্ধীর বিরোধীতা করেন তবে ভারতীয় জনমত এসময় গান্ধীর দিকে চলে যায়। ১৯২০ সালে নাগপুরে কংগ্রেসের অধিবেশনে জিন্নাহকে এক প্রতিনিধি ধমকান এবং স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত সত্যাগ্রহের প্রস্তাব তোলেন। একই শহরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশন জিন্নাহ যোগ দেননি। কংগ্রেসের সাথে মতপার্থক্যের কারণে জিন্নাহ এরপর কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন এবং মুসলিম লীগের সদস্য হিসেবে থেকে যান।[৩৭][৩৮]
সোর্স্:https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%A6_%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%80_%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B9
বিষয়: রাজনীতি
১২৬৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন