‘ইরানি সিনেমা হতে পারে হলিউড ফিল্মের একমাত্র বিকল্প’

লিখেছেন লিখেছেন Democratic Labor Party ০২ মে, ২০১৬, ০১:৩২:৩২ দুপুর

সিরাজুল ইসলাম, তেহরান থেকে



ইরানের প্রখ্যাত অভিনয় শিল্পী রেজা কিয়ানিয়ান। নামেই তার পরিচয়; অভিনয় তার কাছে শিল্প। নিজ নামে খ্যাত এই অভিনেতা সম্প্রতি বলেছেন, ইরানের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি হতে পারে হলিউডের সিনেমার একমাত্র বিকল্প। একইসঙ্গে তিনি ইরানের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে স্বাধীন ও প্রভাবশালী বলে মন্তব্য করেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বেশকিছু চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন যা সত্যিই আকর্ষণীয়।

রেজা কিয়ানিয়ান বিশ্বাস করেন, ইরানের সিনেমা অন্য দেশগুলোর জন্য ‘ফিল্মমেকিং মডেল’ এ পরিণত হয়েছে।

ইরানের এ বিখ্যাত অভিনেতা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার ও চলচ্চিত্র উৎসবে স্ট্যাচুয়েট পেয়েছেন। চলচ্চিত্রে চোখ ধাঁধানো ক্যারিয়ারে তিনি ইরানের বিখ্যাত পরিচালক বাহমান ফারমানারা, মাসুদ কিমিয়ায়ি, ইব্রাহিম হাতামিকিয়া এবং সামান মোকাদ্দামের সঙ্গে কাজ করেছেন।

সম্প্রতি ইরানের একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রেজা কিয়ানিয়ান সারা বিশ্বে ইরানের সিনেমার নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন। পূর্ব-পশ্চিমের পাঠকদের জন্য সে সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো:



Reza_Kianian_2015

ইরানি পত্রিকাটি কিয়ানিয়ানের কাছে জানতে চেয়েছিল, বিশ্বের স্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে আপনি ইরানি সিনেমার অবস্থানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন এবং সুইডেনের মতো দেশগুলোতে স্বাধীন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ছিল। জাপানও স্বতন্ত্র সিনেমা তৈরির চেষ্টা করেছে। কিন্তু এসব দেশের সিনেমাকে এখন আর স্বাধীন বলা যাবে না। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ইতালির মুভি ইন্ডাস্ট্রি যা ‘নিওরিয়েলিজম’ হিসেবে খ্যাত ছিল এখন তার আর অস্তিত্ব নেই। এর কারণ হচ্ছে- মার্কিন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ইতালির চলচ্চিত্র শিল্পের স্বাধীনতা গিলে খেয়েছে। অন্য কথায়- মার্কিন সিনেমা অন্য দেশের সিনেমার জাতীয় পরিচয় মুছে দিয়েছে।”



ইরানের সিনেমাকে হলিউডের একমাত্র বিকল্প মনে করছেন কেন?

আজকাল সারা বিশ্বে সিনেমার জগতে হলিউড আর বলিউড দুটি কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে বলিউড মূলত হলিউড দ্বারা উৎসাহিত হয়েছে। যেহেতু তৃতীয় কোনো ‘সিনে-হাব’ নেই সে কারণে তারা বিশ্ব চলচ্চিত্রের লাগাম নিজেদের হাতে ধরে রেখেছে অনেক বেশি শক্তভাবে। তারপরও ইরানি সিনেমা নিজের যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্য বলে মার্কিন সিনেমার বিকল্প হতে পারে। এই যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্যের কারণেই ইরানের সিনেমা নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতে চলেছে। এটাও উল্লেখ করার মতো বিষয় যে, ইরান যেকোনো দেশের চেয়ে এ ক্ষেত্রে বেশি পুরস্কার পেয়েছে। ইরানের সিনেমার নীতিমালা যে শিক্ষণীয় তা সবার জানা; বলার প্রয়োজন নেই। এসব কারণে আমরা উপসংহারে বলতে পারি, সারা বিশ্বে এখন ইরানের সিনেমা অত্যন্ত প্রভাবশালী।”

বিশ্বের অনেক দেশের সিনেমা তো আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়। তাহলে কেন ইরানের সিনেমাকে অনেক বেশি প্রভাবশালী বলে উল্লেখ করছেন?

“হংকং, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্কের মতো দেশ মাঝেমধ্যে আন্তর্জাতিক ইভেন্টে পুরস্কার পায়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ইরানের সিনেমা লাগাতারভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুরস্কার পেয়ে চলেছে। ইরানের এই প্রভাবশালী ভূমিকা অন্য দেশকে আমাদের মতো করে সিনেমা বানাতে উৎসাহিত করছে। গত কয়েক বছর ধরে জাপান ও ফ্রান্স ইরানের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে ধারণা নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করছে। আসলে সিনেমা জগতের ইরানের ফিল্ম এতটাই বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে যে, ইসরাইলও ইরানি সিনেমার বৈশিষ্ট্য অনুসরণে কয়েকটি ফিল্ম তৈরি করেছে।”



হলিউডের বিকল্প হতে চাইলে ইরানের মুভি ইন্ডাস্ট্রিতে কী ধরনের দক্ষতা আনা দরকার?

“প্রথমেই আমাদের মুভি ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।কিন্তু আমাদের অনেকের কাছেই এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। ফলে মনে হতেই পারে, জনগণকে সিনেমার দিকে আকৃষ্ট করার জন্য কোনো লক্ষ্য নেই। এছাড়া, নিজেদের সক্ষমতা ও সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের মধ্যে এক ধরনের অন্ধত্ব রয়েছে; অন্য দেশের যা আছে তার প্রশংসা করি বেশি। কিন্তু আমরা নিজেদের সিনেমার দিকে মনযোগ দিই না এবং সিনেমা হলে অতটা যাওয়াও হয় না। সে ক্ষেত্রে ইরানের গণমাধ্যমের উচিত হবে- জাতীয় মূল্যবোধ তুলে ধরার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা। এ জন্য আমাদেরকে গণমাধ্যমের রিপোর্টার কিংবা সাংবাদিক হওয়া জরুরি নয়। আমেরিকার জনগণ তাদের নিজেদের সিনেমা নিয়ে গর্বের সঙ্গে কথা বলে। এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এ সম্পর্কে তাদের কাছে ভালো তথ্যও থাকে। ইরানের চলচ্চিত্র শিল্প বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে। অতএব, আমাদের এ সাফল্য চিহ্নিত করা এবং তার স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সব রকমের প্রচেষ্টা থাকা দরকার।”

সোর্স:http://purboposhchimbd.news/2016/04/30/%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%B9%E0%A6%B2/

বিষয়: সাহিত্য

১১৬৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

367768
০২ মে ২০১৬ দুপুর ০২:১৬
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : ইরানী সিনেমা গুলো খুবই্ উন্নত মানেরই দেখেছি। সকল পর্যায়ের মানুষকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম। তাছাড়া তাদের নির্মিত সিনেমাতে একটা লক্ষ্য থাকে। বাংলাদেশের সিনেমা জগত যখন মুর্খ মানুষের হাতে যাওয়া শুরু করল দিন দিন অধঃপতন ও শুরু হল....
367799
০২ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:১৬
কুয়েত থেকে লিখেছেন : সিনেমা চরিত্র গঠনের মাধ্যম হতে পারে আমাদের দেশের সিনেমা নেংরামীতে নিমজ্জিত সৎ লোক সবখানেই প্রয়োজন ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File