প্রথম আলো এদের নিয়েই লালনের 'সাধনা' নিয়ে আলোচনা করছে। লালনের জন্ম সম্পর্ক মিথ্যা তথ্য প্রচারের জন্য আবুল আহসান পরিচিত....!
লিখেছেন লিখেছেন Democratic Labor Party ২৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:০১:৩০ দুপুর
By Farhad Mazhar [from Facebook]
মুচকুন্দ দুবে লালন সাধক নন, তেমনি শামসুজ্জামান খান কিম্বা আবুল আহসান চৌধুরীও নন। কিন্তু প্রথম আলো এদের নিয়েই লালনের 'সাধনা' নিয়ে আলোচনা করছে। লালনের জন্ম সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রচারের জন্য আবুল আহসান পরিচিত।
ছবি টাঙানো হয়েছে নন্দলাল বসুর আঁকা কোন এক বাঊলের ছবি। এটা লালনের ছবি নয়। কিন্তু ভূয়া ছবি টাঙিয়ে দিয়ে বোঝাতে চাইছে এটাই লালনের ছবি। এই হোল লালন সম্পর্কে এদের জানাশোনার নমুনা।
একজন বাউলকে দেখলাম হলুদ কাপড় (স্যাফরন) পরে লালনের গান গাইছে। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে মহারাষ্ট্রের মেলাগাঁওয়ে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের বোমা হামলার পর থেকে 'স্যাফ্রন টেরর' বা হলুদ সন্ত্রাস নামে একটি পরিভাষার জন্ম হয়েছে। কারন এর পেছনে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী 'রাষ্ট্রীয় সেবক সঙ্ঘ' ও 'অভিনব ভারত' জড়িত বলে অভিযোগ আছে। হলুদ (saffron) সাম্প্রদায়িক হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের প্রতীকী রঙ।
তথ্য হিসাবে এইসব প্রথম আলোর জানা থাকা দরকার ছিল। হলুদের প্রতি লালনপন্থীদের কোন বিতৃষ্ণা নাই, কিন্তু এটা লালন সাধনার রঙ নয়। যেখানে লালনের সাধনা নিয়ে কথা হচ্ছে সেখানে সতর্ক থাকা উচিত ছিলো।
খবর পড়ে বুঝলাম লালনকে 'সুফি' কবি বানাবার চেষ্টা হয়েছে। কেন? ইসলাম খারাপ কিন্তু রুমির মতো সুফিরা ভালো -- এই রাজনীতি বোঝা কঠিন কিছু নয়।
লালন নিজেকে কোনদিনই 'সুফি' বলেন নি। বাঙলাদেশে এর বিশেষ অর্থ ও চর্চা আছে যার সঙ্গে লালনের কোন মিলই নাই। তাঁর কবিতায় আরবি ফারসি শব্দ থাকার কারণে তিনি সুফি নন। লালন ইসলামের কোন নতুন ব্যাখ্যা হাজির করেন নি। সেটা তাঁর কাজ ছিল না। সুলতানি আমলে ইসলামের জাতপাত বিরোধী রাজনীতি ও একত্ববাদ দ্বারা তিনি প্রভাবিত ছিলেন, সন্দেহ নাই, কিন্তু সেটা সুফিবাদ নয়। তিনি নদিয়ার ভাবের চর্চা করেছেন সেই দিক থেকে প্রচলিত সুফিবাদ -- অর্থাৎ যে কারণে লালনকে 'সুফি' বলে দাবি করা হয়, লালন সেই প্রকার সুফি কখনই ছিলেন না।
মনে রাখা দরকার লালনপন্থিদের কাছ থেকে সুফিরা ভালবাসা পান, কিন্তু তাঁরা 'গদিমান্য' নন। অর্থাৎ আল্লাহ ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বিচারেরে যে ফয়সালা সুফি নাম্নী ধারা বাংলাদেশ হাজির করে নদিয়া তাদের 'একত্ববাদী' গণ্য করে না। নদিয়া 'ফানাফিল্লাহ' চর্চা করে না। জিকির বা বৈষ্ণবদের 'নামাশ্রয়' নামকীর্তনকেও আমল করে না। আল্লা আছেন মানুষও আছে এই অনুমান থেকে নদিয়া শুরু করে না। কারণ এটা 'দ্বিত্ববাদ'' -- নদিয়ার চোখে একত্ববাদ নয়। দুনিয়াই একজনই আছেন, তিনিই আহাদ, তিনিই সত্য, আমরা তার লীলাকারী অংশ মাত্র -- আমরা তার দাস -- এটাই নদিয়ার ভাব। দাস্যভাব চর্চাই নদিয়ার সাধনার প্রধান দিক। আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে এশেক বা প্রেমের মধ্য দিয়ে মানুষের ফানা বা বিলয় ঘটে এটাও নদিয়ার তত্ত্ব না। 'নিজের মধ্যে নিজের বিলয় ঘটাতে পারলেই আল্লাকে পাওয়া যায়। আল্লা মানুষের মতো আসমানে কোথাও বসে নাই যে তাঁর সঙ্গে প্রেম করা যায়।
কোন্ নামে ডাকিলে তারে হৃদাকাশে উদয় হবে?
আপনায় আপনি ফানা হলে তারে পাওয়া যাবে
এই গান সুফিদের ফানাফিল্লাহর পর্যালোচনা।
ফলে লালনের 'সাধনা' সম্পর্কে আমাদের ঘনিষ্ঠ ও গভীর ভাবে না জেনে আলোচনা করা ঠিক না।
See the controversial report of Pothom Alo at:
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/gallery/811621/%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%A8-%E0%A6%AB%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%A8%E0%A6%BE
বিষয়: সাহিত্য
১২৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন