মুক্তিযুদ্ধের গোপন উপাখ্যান (২)

লিখেছেন লিখেছেন নয়ন কুষ্টিয়া ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:৫৪:২৮ রাত

‘শিরায় শিরায় আগুন’ হাফিজুর রহমান এর লেখা বই থেকে কিছু অংশ কোট করা হলো। মানবতা বিরোধী অপরাধ কি শুধু পাক বাহিনী আর রাজাকাররাই করেছে নাকি মুক্তিযোদ্ধারাও করেছে। যুদ্ধাবস্থায় পক্ষ বিপক্ষ কেউ কম যায় না।

“তোমার কোলাবরেটরের বাড়িতে এক বছরের বাচ্চাও মেরে ফেলবে। গলার উপর পা তুলে দিয়ে চাপ দিয়ে ধরবে যতক্ষণ প্রাণ বায়ু বের না হয়। এভাবে সবাইকে হত্যা হরবে।” পৃ: ১৫

“মিরগঞ্জে বহুলোক পাক দালাল। ক্যাম্প সংলগ্ন অনেক দালালের বাড়ী। পাকিস্তানের আশেকান তারা।” পৃ: ২২

“ক্যাপ্টেন রশীদ সবাইকে দাঁড় করিয়ে রহমানকে নির্দেশ করে বলেন, ‘রহমান তুমি ঐ দালালের বাড়ি যাবে, চারপাশের প্রতিটি ঘরের গায়ে এক ব্যান পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেবে। আগুন আগুন বলে লোক ভিতরের উঠানে বের হওয়া মাত্র একটা গ্রেনেড মারবে উঠানে। সবাই আহত হলে দরজায় পাহারা বসিয়ে ভিরতে যাবে। প্রতিটি সদস্যকে গুলি করে হত্যা করবে। এক বছরের শিশুরও ছাড় নেই।” পৃ: ২২

“এই দালালেরা পাক সেনাদের চব্বিশ ঘন্টার সেবা দান করে। পাক সেনারা বের হয়ে কোন গ্রামে গেলে ইচ্ছামতো সেখান থেকে লোক ধরে আনতে শুরু করে। যাকে একবার ধরেছে সে আর বাড়ি ফেরেনি। যেদিন ধরা হয় ঐ দিনই তাদের হত্যা করা হয়। তাদের উপর চালানো হয় অমানুষিখ নির্যাতন। কাউকে এক সপ্তাহ, কাউকে দুই সপ্তাহ অত্যাচার করার পর বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয়। পাক সেনারা গ্রামে আক্রমনে গিয়ে যুবতী মেয়েদের ধরে দালালদের সহযোগিতায়। তাদের উপর চালানো হয় যৌন নীপিড়ন ও ধর্ষণ। বিশেষ করে পাক সেনা অফিসাররা এই অত্যাচার চালায়। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে যুবতীরা প্রায়ই অপ্রকৃতস্থ হয়ে যায়। তখন এরা হয় সিপাহীদের ভোগের সামগ্রী। সিপাহীরা তাদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। এ সকল অত্যাচারের কাহিনী চালালরা গ্রামে গ্রামে প্রচার করে। কাহিনী শুনে এলাকার জনমনে একটা বিরাট ভীতি কাজ করে।” পৃ: ৩৯

“সোবহান একটু সিরিয়াস হয়ে বললেন, আমি একটা দল করি আওয়ামী লীগ। আর এই দল এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সবকিছুই করছে।” পৃ: ৪৬

“আমরা যুদ্ধ করছি খরচ পত্র লাগে না? ষাট টাকা মাসে দেয় তাতে কি হয়? নৌকার ভাড়া, কত খরচ আছে না যুদ্ধের? টাকা পয়সা নিলাম। সোনা-রূপা নিলাম, কিছু পিতলের বাসন নিলাম। দেয়াল ঘড়ি একটা এনেছি। এগুলো জনাদ্দীতে গিয়ে বিক্রি করব।” পৃ: ৮৯

“আজ বাংলাদেশে মুসলিম লীগ নেই। কিন্তু পাক বাহিনীর দালালী করছে যারা, তারা মুসলিম লীগের প্রেতাত্মা শয়তান। তারা জনগণের উপর অত্যাচারের স্টীম রোলার চালাচ্ছে। যারা পাক সেনার বলে নিজেদের বলীয়ান করছে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে কায়েমী করে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। শহরে গ্রামে তারাই এখন মান্য গণ্য লোক। এ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ছাড়া শোষণ মুক্ত দেশ কখনোই গড়ে উঠতে পারে না। এখনই দালাল রাজাকারদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। যারা সংশোধন হরাব নয়, যাদের অপরাধ গুরুতর তাদের বিচার করে কঠোর শান্তি দিতে হবে। সমাজে তাদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে। বেঁচে থাকলেও যেন হায়েনারা চেহারা প্রকাশ করতে না পারে চিহ্নিত পারাজিত শক্তি। তারা সংখ্যায় কম।” পৃ: ৯৪

“বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধর নায়ক মুজিবনগর সরকার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সকল প্রস্তুতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। সাধারণ নির্বাচনের পর প্রায় সকল পার্টি সরাসরি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব মেনে নেয় এবং তাকে সমর্থন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের তারা নৈতিক সমর্থন দিয়েছে।” পৃ: ১০৪

“অন্য এক ক্যাম্পে থাকতে রহমান দেখেছিল এক নেতা একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ছাত্র ইউনিয়ন করে বলে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে ভারতীয় জেলে পুরে দিয়েছিল।” পৃ: ১১১

“তুই কলেমা পড় আমি তোর হেলমেট সহ মাথায় গুলি ধরে রাখি। কি রেজাল্ট হয়? শোনা যায় হেলমেটে গুলি লাগে না। পিছলে যায়। মিলিশিয়া লোকটাকে একটা গাছের সাথে পড়ে থাকা ডালে বসিয়ে রহমান তার মাথা লক্ষ করে গুলি চালালে হেলমেট ফুটো হয়ে মাথা ফুটা হয়ে ফেড়ে বুলেট বের হয়েছিল। রহমান কাছে গিয়ে বললো, মুসলমানি মরা মরলি শুয়োরের বাচ্চা। পাকিস্তান এসেছো দেশ ফেলে। মুসলমান ধিক্ তোর মুসলমানিত্ব।” পৃ: ১১৭

“মুসলীম লীগ সমর্থক ভদ্র পরিবারের সন্তান আশরাফ খান মুক্তিযোদ্ধাদের বিশ্বস্ততার সাথে সেবা সহযোগিতা দান করলো। একটা গুরুত্বপূর্ণ খবরও সংগ্রহ করে দিল।” পৃ: ১২৬

“আমি শুনেছি স্যার, টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান আর্মি সেক্টর কমান্ডারদের সাথে অনেক কম কানেকশন রেখেও বিশাল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের নামে তার বাহিনী শোনা যায়। তারও নাকি এচিভম্যান্ট ভাল।” পৃ: ১৪৮

বিষয়: বিবিধ

৯৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File