আমার দেখা শহীদ মীর কাশেম আলী!!

লিখেছেন লিখেছেন কাউসার আরিফ ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:০৩:১০ সকাল

রোযার তখন ১০-১২ টা চলছে। আকস্মিক ভাবেই একদিন বিকেল বেলা মীর কাশেম আলী ভাই কে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে(পুরাত,নাজিম উদ্দিন রোডের) আনা হয়।কারাগারে থাকা সকল ভাইদের মনেই উৎকণ্ঠা শুরু হয় কারন গুজব রটে ঈদের আগেই তাকে ফাঁসী দেয়া হবে।,এদিকে বাহিরের খবর খুব একটা পাওয়া যায়না।যতদুর শোনা যায় সে কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।বিশ্বস্ত সুত্রে খবর পাই যে ঈদের(রোজার) আগে মীর কাশেম আলী ভাইয়ের ফাঁসী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।তারপর থেকে প্রতিদিনই তার খোঁজ পেতাম ।তিনি থাকতেন ফাঁসীর সেলে আর আমরা থাকতাম ওয়ার্ডে। আস্তে আস্তে রোজা প্রায় শেষের দিকে চলে আসে কিন্তু দেখা করার কোন সুযোগ আসেনা।

ঈদের ঠিক আগের দিন খবর পাই যে মীর কাশেম আলী ভাই কেইস টেবিলের সামনে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করবেন।কিন্তু বাঁধা হয়ে দ্বাড়ায় স্থান।কারাগারে ৪ টি স্পটে নামাজের জন্য জায়গা ঠিক করা হয়,আমাদের স্থান হয় কারা-হাসপাতালের সামনে।দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে আমরা ঠিক করি যে কেইস টেবিলের সামনের স্থানেই ইদুল ফিতরের নামাজ আদায় করবো।

প্ল্যান মত ঈদুল ফিতরের দিনে সকাল সকাল সকলেই গোসল+ নাস্তা সেরে কেইস টেবিলের সামনে নামাজের জন্য জায়গায় ১ম কাতারে আমরা স্থান করে নেই।তখন আমরা ছিলাম প্রায় ৭০ জন।নামাজের সময় ঠিক করা হয় সকাল ৮.৩০ মিনিটে কিন্তু বাহির থেকে হুযুর আসতে বিলম্ব করে বলে নামাজ একটু দেরীতে শুরু হয়।বাহিরের হুযুর আসতে দেরী হয় বলে আমাদের এক ভাই বয়ান রাখেন।

এরই মাঝে মীর কাশেম আলী ভাইকে ফাঁসীর সেল থেকে নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থানে আনা হয়। মীর কাশেম আলী ভাইয়ের গায়ে পড়া ছিল সাদা পাঞ্জাবী, সাদা চেক লুংজ্ঞী , সাদা টুপি।তাকে দেখতে একদম জান্নাতী মানুষের মতই মনে হচ্ছিল তখন। আমাদের কে দেখেই উনার মুখে মুচকি হাসির আভা ফুটে উঠে। মীর কাশেম আলী ভাই বসেছিলেন একদম সামনের কাতারে।মীর কাশেম আলী ভাইয়ের বাম পাশে বসা ছিল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ভাই এবং ডান পাসে পাশে বসা ছিল ড.মোবারক হোসেন ভাই।নামাজ শেষে সবাইকে তার সাথে মোলাকাত করার সুযোগ করে দেয় কারা-প্রসাশন। একে একে সবাই মোলাকাত করে যখন আমার পালা আসে তখন চোখ দিয়ে পানি পরছে। মীর কাশেম আলী ভাই আমার পিঠ চাপড়াচ্ছিলেন আর একটা কথাই বলেছিলেন, ''''ভয় পেয়ো না,সত্যা-মিথ্যার দ্বন্দে সত্যর জয় সব সময় হবে-ইনশাল্লাহ দেখা হবে জান্নাতে''।উনার গা থেকে তখন সুগন্ধীর ঘ্রান পাওয়া যাচ্ছিল।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানতারিত হওয়ার কারনে মীর কাশেম আলী ভাইকে ২৬ই জুলাই নিয়ে যাওয়া হয় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আর আমাদের ২৯ই জুলাই নিয়ে যাওয়া হয় কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে।

জান্নাত দেখেনি তবে সেদিন জান্নাতি মানুষ ঠিকই দেখেছি।যারা ফাঁসীর রশি সামনে দেখেও তার কর্মীদের অভয় দেয় তাদের পক্ষেই ইসলামী আন্দোলন করা সাজে। হয়তো আর দেখা হবেনা মীর কাশেম আলী ভাইয়ের সাথে তবে ঈদের দিনে তার মুখে শোনা সেই কথা গুলো আমৃত্যু মনে থাকবে।

#হে আল্লাহ তুমি মীর কাশেম আলী ভাইকে তোমার মেহমান বানিয়ে নিও।

বিষয়: রাজনীতি

১৫৫৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377171
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১১:৪৩
শরীফ মিরাজ লিখেছেন : শহীদরা বিশ্বাসী মানুষদের কাছে প্রেরণার বাতিঘর হয়। যারা হত্যাকারী - তারা ইতিহাসে হত্যাকারী হিসাবে ঘৃণা কুড়াতে থাকে।
377172
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১১:৪৫
শান্তিপ্রিয় লিখেছেন : আল্লাহ তাকে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমীন
377173
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:৫০
কাহাফ লিখেছেন : "শহীদেরা কোন দিনই মরে না"
আল্লাহ মহান তাকে জান্নাতের মেহমান করে নিন,আমিন!
377179
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:০১
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আল্লাহ সবচেয়ে ন্যায়বিচারক। মীর কাশেম আলীকে তিনি শহীদ হিসেবে কবুল করে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন ইনশাল্লাহ।
377235
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০১:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
377250
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:১১
হতভাগা লিখেছেন : http://epaper.prothom-alo.com/view/dhaka/2016-09-04/1

উনি শহীদ খেতাবের অধিকারী হন কিভাবে নিজ অন্চলেরনিরীহ মুসলমানকে হত্যা করে ?

পাকিস্তানের হয়ে কাজ করেছিলেন বলে ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File