ফরহাদ মজহার : আধিপত্যবাদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একজন বুদ্ধিজীবী
লিখেছেন লিখেছেন কাউসার আরিফ ১৩ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:২৯:৪৬ রাত
মুক্ত চিন্তার বুদ্ধিজীবী, কবি, গবেষক,
সংগঠক ফরহাদ মজহার যে কোনো সময়
গ্রেফতার হচ্ছেন! এই খবর এখন সর্বত্র
আলোচিত। একজন সমাজ চিন্তক,
রাষ্ট্রনীতির উদ্ভাবক
হিসেবে সমসাময়িক সময়ে তার
চিন্তা দেশের
সীমানা ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগে।
আমরা অনেকেই তার সব চিন্তার
সঙ্গে একমত নাও হতে পারি এটাই
গণতন্ত্রের স্বাভাবিক রূপ। যদিও
তিনি নিজেকে বুদ্ধিজীবী বলতে নারাজ,
তবুও এখন তিনি অগ্রগণ্যদের মধ্যে অন্যতম।
এজন্য জেল-জুলুমের শিকারও হয়েছেন।
একজন বুদ্ধিজীবী তার
জায়গা থেকে যখন ইনসাফের
কথা বলেন, তখন স্বৈরশাসকদের পক্ষ
থেকে জেল-জুলুম-নির্যাতন
সত্যপন্থীদের জন্য একটি উপঢৌকন বটে।
গুম, খুন, গণহত্যা, হামলা-মামলা, যখন
দেশের জনগণের নিত্যসঙ্গী। গণতন্ত্র আর
মানবাধিকার যখন সরকারি বাহিনীর
বুটের তলায় পিষ্ট। দেশের সম্মানিত
ব্যক্তিরা যখন তিরস্কৃত, লাঞ্ছিত,
অপমানিত।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের
নামে সবাইকে যখন চালানো হয় চরম
নির্যাতন। তার থেকে যেন রেহাই
পাচ্ছেন না কেউই। ১/১১ থেকে যার
যাত্রা শুরু হয়েছিল চলছে এখনও।
যে সময়ে আমার মতো একজন ক্ষদ্র
নাগরিককে নিজের মতপ্রকাশ
করতে গিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার
শিকার হতে হয় (পরে অবশ্য হাইকোর্ট
মামলাটি বাতিল করেছে)।
সে জালেম দানব সরকারের দুঃশাসনের
প্রতিবাদ করতে গিয়ে জনাব ফরহাদ
মজহারের মতো মানুষ নির্যাতন-
নিপীড়নের শিকার হওয়া আশ্চর্যের
ব্যাপার নয়। মুক্ত চিন্তার
অধিকারী অকুতোভয় কলম সৈনিক মাহমুুদুর
রহমান, যখন কারাগারে আবদ্ধ,
সাংবাদিক সাগর-রুনিসহ সাংবাদিক
ও মানবাধিকার কর্মীরা যখন নিজের
জীবন দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই
করছেন। তখন সেই কাতারের অগ্রনায়ক
ফরহাদ মাজহার যদি গ্রেফতার হন,
রিমান্ডে নিয়ে চালানো হয়
নির্যাতন, তাহলেও অবাক হওয়ার
কী আছে? এই অরাজক
রাষ্ট্রে বলতে হবে তাহলে তিনি অনেক
দেরিতেই কারাগারে যাচ্ছেন!
সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন
করা কিংবা কারাবরণের
হুমকি সত্ত্বেও একজন নির্বাসিত
বুদ্ধিজীবী নিজের সততা, চিন্তা ও
বিবেকের দৃঢ়তার কাছে নতিস্বীকার
না করার কত দুঃসাহস দেখাতে পারেন,
অ্যাডওয়ার্ড ডব্লিউ সাঈদ
হয়তো শতাব্দীর
সাক্ষী কিনা তা অনাগত ভবিষ্যত্
বলে দেবে। তিনি তার
রিপ্রেজেন্টেশনস্ অব দ্য ইনটেলেকচুয়াল
গল্পে লিখেছেন, ‘যেসব
বুদ্ধিজীবী জনগণের অধিকারের জন্য
সোচ্চার।
যারা জীবনবাজি রেখে নিজের
মতামত, মনোভাব, দর্শন উপস্থাপন ও
গ্রন্থিবদ্ধ করতে বদ্ধপরিকর।
যারা লজ্জাজনক প্রশ্নের
মুখোমুখি দাঁড়াতে সক্ষম।
যারা সরকারি কিংবা করপোরেশনের
সুবিধা ও পান না। কিন্তু সর্বজনীন
নীতির ওপর ভিত্তি করে দায়িত্ব পালন
করেন।’ ফরহাদ মজহার তাদেরই একজন।
জুলিয়ান বেন্দার ও তার বিখ্যাত বই যে,
ঞযব ঃত্বধংড়হ ড়ভ ঃযব
রহঃবষষবপঃঁধষং অংকন করেছেন,
বুদ্ধিজীবীর অস্তিত্ব পৃথিবীর সর্বত্র।
জাতীয় সীমানা কিংবা নৃতাত্ত্বিক
আত্মপরিচিতির দ্বারা তাদের
পরিধি সীমাবদ্ধ নয়। ফরহাদ মজহার এখন
সেই সীমানায় দণ্ডায়মান। জ্যাক
দেরিদা তার চিন্তাধারার
প্রশংসা করেছেন,
তাকে জেলে দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ
করেছিলেন সেই ১৯৯৫ সালে। আট বছর পর
ঠিক সেই বুদ্ধিজীবী আবার
অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে আছেন।
মানুষ মাত্রই তার নিজস্ব মত
থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সমাজের
প্রতিটি বিতর্ক রচনা ও এর
সমাধানে বুদ্ধিজীবীদের
ভূমিকা অগ্রবর্তী। এ কারণে তাদের
সম্মানের জায়গাটুকু
যেমনি আলাদা আবার প্রতিপক্ষের
তির্যক সমালোচনাও সহ্য করতে হয়
তাদের। তারা এ সমাজেরই একজন হলে ও
তাদের কর্ম এগিয়ে রেখেছে সবার
আগে। ফরহাদ মজহার তেমনই একজন মানুষ।
যিনি একজন সমাজচিন্তক, কবি, নিজস্ব
ভঙ্গিতে যিনি স্বীয়
কর্মসম্পাদনে বেশি আনন্দ উপভোগ করেন।
চলনে বলনে পোশাকে,
যিনি সাদাসিধে ও মার্জিত।
জ্ঞানের গভীরতায় যাকে অতিক্রম
করা বড়ই কঠিন। অন্যের মতের
প্রতি তিনি মোটেই অশ্রদ্ধা দেখান
না।
ফরহাদ মজহার বিবৃতিতে সেই কথাই
জাতির সামনে তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, দলবাজ সাংবাদিকদের
ক্ষুদ্র একটি অংশ ফ্যাসিস্ট মুসোলিনির
গেস্টাপো বাহিনীর ভূমিকা পালন
করছে। নিজেদের সাংবাদিক
বলে দাবি করে অথচ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও
সহিংসতার প্রত্যক্ষ
সহযোগী হিসেবে সাংবাদিক মহলের
কলঙ্ক হিসেবে যারা পরিচিত,
গণমাধ্যমের
মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সেসব দলবাজ
সাংবাদিকের ক্ষুদ্র একটি অংশ
আমাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার
দাবি জানিয়েছে। রাষ্ট্রকে তার সব
হিংস্রতাসহ নাগরিকদের দমন-পীড়ন ও
নির্যাতনের উসকানিদাতা এ মহলের
জঘন্য তত্পরতার নিন্দা জানানোর
ভাষা আমার জানা নেই। এরা অন্যের
বাক-ব্যক্তি মতপ্রকাশের স্বাধীনতায়
বিশ্বাস করে না।
তদুপরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক
স্বার্থে নাগরিকদের বক্তব্য ভুল ও
বিকৃতভাবে প্রচার, তাদের
বিরুদ্ধে জিঘাংসা,
প্রতিহিংসা প্রদর্শন ও নিজেদের
হাতে গণমাধ্যম থাকায় ক্রমাগত
উসকানি দিয়েই তারা ক্ষান্ত
থাকেনি, থানা পুলিশ করে ‘দৃষ্টান্তমূলক
শাস্তি’র দাবি জানাচ্ছে, তাদের আর
যাই হোক কোনোভাবেই সাংবাদিক
বলা যায় না। এরা সাংবাদিকতার
নীতিমালা মানে না, মূলত
ভূমিকা পালন করে রাষ্ট্রীয় পুলিশের।
বাংলাদেশের রাজনীতির চরম
সঙ্কটকালে বিরোধী মত ও
চিন্তাকে দমন-নিপীড়নের জন্য
এরা বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের
সন্ত্রাস ও সহিংসতার সম্প্রসারিত
শক্তি হিসেবে ফ্যাসিস্ট মুসোলিনির
গেস্টাপো বাহিনীর ভূমিকা পালন
করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক
পরিস্থিতিকে অস্থির, অস্থিতিশীল,
সঙ্কটাপন্ন ও সহিংস করে তুলছে। এই
গেস্টাপো বাহিনীর
বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের সব
কর্মীকে আমি রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান
জানাই। ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সেদিনের
টকশোতে আমার আসল বক্তব্য বাদ
দিয়ে একাত্তর টিভিতে উসকানিমূলক
আলোচনার পর
পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার
যারা চালিয়ে যাচ্ছিল তাদের
মিথ্যা ফানুস ফুটো হয়ে যায় যখন,
আসলে আমি কী বলেছি তা সবাই
টিভি ক্লিপে দেখেন। আমি ২৮
অক্টোবর ইটিভিতে পরিষ্কার
বলেছি ‘আমি স্বভাবত কখনোই চাইব
না কেউ পটকা, নিন্দা বা ঢিলও যেন
গণমাধ্যমের ওপর ছুড়ুক। গণমাধ্যম কর্মীদের
কাছে মিথ্যুকদের
চেহারা ধরে পড়ে যাওয়ায় এখন
তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। এদের
মিথ্যাচার ধরা পড়ার পরও এদের
প্রতিটি বক্তব্যের সুস্পষ্ট জবাব দেয়ার
পরও তারা লজ্জিত ও
ক্ষমা প্রার্থনা না করে এখন বলছে,
আমার জবাবে সন্তুষ্ট নয়।
এরা আমাকে গ্রেফতার করাতে চায়,
নির্যাতন করাতে চায়, আমার বাক-
ব্যক্তি চিন্তার স্বাধীনতা হরণ
করতে চায়। তাদের প্রতিহিংসাপরায়ণ
চক্রান্ত ধরা পড়ে যাওয়ার পরও এই
সংঘবদ্ধ
ফ্যাসিস্টরা থামতে চাইছে না।
ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তারা আমার কণ্ঠ
স্তব্ধ করতে চায়। তাদের এ খায়েশ পূরণ
হবে না। আমি এই হিংস্র বাহিনীর
তীব্র নিন্দা জানাই’ (০৫/১১/১৩ দৈনিক
আমার দেশ)
জনাব ফরহাদ মাজহারের এই বক্তব্য কি শুধু
নিজেকে আড়াল করার জন্য?
না বাস্তবতা! যা অ্যাডওয়ার্ড এস.
হারম্যান ও নোয়াম চমস্কি রচিত
ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট :
পলিটিক্যাল ইকোনমি অব দ্য মাস
মিডিয়া গ্রন্থটিতে দেখিয়েছেন,
মূলধারার প্রভাবশালী গণমাধ্যম কর্তৃক
প্রচারিত সংবাদ
কিভাবে জনমতকে শাসকগোষ্ঠীর
রাজনৈতিক স্বার্থের গণ্ডিতেই
বেধে রাখার তত্পরতায় নিয়োজিত।
আমাদের তথ্যমন্ত্রী এখন সেই হীন লড়াই
চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রখ্যাত
সাংবাদিক জুলিয়াস হ্যারিস ও
স্ট্যানলি জনসন বলেছেন, ‘সংবাদ
হচ্ছে সব চলতি ঘটনার সংমিশ্রণ,
যে বিষয়টিতে সাধারণ মানুষের
কৌতূহল
আছে এবং পাঠককে আগ্রহী করে তোলে তাই
সংবাদ।’ সংবাদপত্র একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ
স্তম্ভ। এই মৌলিক স্তম্ভ ধারণ
করতে হবে সততা আর দেশপ্রেমের ওপর
ভিত্তি করে। দেশের উন্নতি,
অগ্রগতি এবং আমাদের এগিয়ে যাওয়ার
পেছনে প্রিন্টমিডিয়া ও ইলেকট্রনিকস
মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
আমাদের সমাজে কিছু ভালো গণমাধ্যম
ও সত্ পেশাদার সাংবাদিক
না থাকলে আমরা এত দূর আসতে পারতাম
না। কিন্তু এক শ্রেণীর প্রিন্ট ও
ইলেকট্রনিক মিডিয়া অতিমাত্রায়
রাজনীতিকরণ, তোষামোদ,
চাটুকারিতা, মিথ্যাচার ও সিন্ডিকেট
নিউজে জড়িয়ে পড়েছে। গণমাধ্যম
জাতীয় ঐক্যও মূল্যবোধের পথ দেখানোর
পরিবর্তে যদি অসত্য বানোয়াট ও
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর
পরিবেশন করে হিংসা-বিদ্বেষ
বিভক্তিকে উসকিয়ে দেয়! যেসব
মিডিয়া তথ্য সন্ত্রাস, উসকানি,
হিংস্রতার মিথ্যা গল্প তৈরি করে তরুণ
প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে সেসব
মিড়িয়া কি আমাদের বন্ধু হতে পারে?
ফরহাদ মজহার সেসব মিডিয়ার চক্ষুশূল।
আমাদের অনেক মিডিয়ার মালিকই
শিল্পপতি এবং দুর্নীতির
অভিযোগে অভিযুক্ত। মিডিয়ার
মালিকদের রয়েছে রাজনৈতিক আনুগত্য।
আজকাল কিছু গণমাধ্যম
রাজনীতিবিদদের থেকে কয়েক কদম
এগিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার
চেষ্টা করছে। এখন তো আমাদের দেশের
ছোট একটি শিশুও জানে কোন
পত্রিকা ও চ্যানেল কোন
মতাদর্শে বিশ্বাসী। আমাদের
শাহবাগিরা সেই
কাজটি করে দিয়েছে। আমাদের
জাতি বিভক্তির এই সর্বনাশা কাজের
খেসারত দিতে হবে অনেকদিন ধরে।
কারণ বিকৃত সংবাদ পৃথিবীতে অনেক
বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। নিউইয়র্ক
জার্নালের প্রকাশক র্যাডলফ হার্স্ট
বিকৃত সংবাদ পরিবেশন
করে আমেরিকা ও স্পেনের মধ্যে যুদ্ধ
বাধিয়ে দিয়েছিলেন।
ব্লগার নামের নাম সর্বস্ব
একটি সংগঠনের
ব্যানারে শাহবাগে গণজাগরণ
নামে জাতি বিধ্বংসী মঞ্চের
সৃষ্টি হয়েছে। এর নাটাই হলো রাষ্ট্রের
বাইরে। এই
সমাবেশে ফ্যাসিবাদী ভাষায়
ডানপন্থী সংবাদপত্র, গণমাধ্যমের
বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও বয়কটের ডাক
পত্রিকার কপিতে আগুন দিয়ে বিকৃত
উল্লাস আর নৃত্য দেশবাসী প্রত্যক্ষ
করেছে। দিন যত যাচ্ছে ততই শাহবাগ
ঘিরে চলা কর্মসূচির
আড়ালে শাসকগোষ্ঠীর
সুদূরপ্রসারী ফায়দা তোলার সুস্পষ্ট
মতলবের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। ‘জবাই
কর’, ‘ফাঁসি চাই’, ‘হামলা কর’, বাতিল কর’
‘উত্খাত কর’ স্লোগান ছিল মূলত
অসাম্প্রদায়িকতা, আর মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার
কালো কাপড়ে মোড়ানো পৃথিবীর
সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও মানবতাবিরোধী,
জাতিবিনাশী উচ্চারণ। এ নেতিবাচক
স্লোগান প্রায় একমাস ধরে মিডিয়ার
অব্যাহত চালিয়ে সংবাদ মাধ্যমের
বিশ্বাসযোগ্যতা ধূলোয়
মিশিয়ে দিয়েছে। কিছু
মিডিয়া শাহবাগি আয়োজকদের ওইসব
অপকর্মের নিন্দার
পরিবর্তে উসকানি দিয়ে সংবাদ
পরিবেশন করে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান
নিয়েছে। এই লাশের দায় কার?
উন্মাদনা সৃষ্টিকারী সেই
মিডিয়াগুলো কি এর দায়
এড়াতে পারবে? ভারতীয়
উপমহাদেশে রাজনৈতিক
বিক্ষোভে একদিনে পুলিশের
গুলিতে এত মানুষ হত্যার নজির নেই। কিছু
মিডিয়া এটিকে চিহ্নিত করল
সহিংসতা হিসেবে। ভয়ঙ্কর ও
বেমানান দিক হলো মিডিয়া খুন
হওয়া মানুষদের পরিচয়
নিয়ে খেলেছে অব্যাহত লুকোচুরি।
উল্টো নির্যাতিতদের
সাজিয়েছে জনতার ওপর
হামলাকারী হিসেবে।
মিডিয়া বিক্ষোভকে বানালো তাণ্ডব!
ধর্মীয় বইপুস্তক কোরআন হাদিস
হলো ‘জিহাদি’ বই! দলীয়
মিটিং হলো নাশকতার পরিকল্পনা!
যেসব সংবাদমাধ্যম এই তথ্যের সঙ্গে সুর
মিলিয়ে আসছে অব্যাহতভাবে তাদের
কোনো সমালোচনা করা যাবে না?
ফরহাদ মজহার সেই নাগরিক দায়িত্বটিই
পালন করেছেন।
শাহবাগ থেকে ওঠা সব দাবিই সরকার
পূরণ করে চলছে। এই
মঞ্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ
পোদ্দার বলেছেন, রাজধানীর
কারওয়ানবাজারে অবস্থিত আমার দেশ
কার্যালয় গুড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের
কথা। ‘রাজাকারদের পত্রিকা আমার
দেশ-এর কোনো সাংবাদিককে এ
সমাবেশে ঢুকতে দেয়া হবে না।
পত্রিকাটির
কোনো সংবাদিককে পেলেই আক্রমণ
করতে হবে।’
সমাবেশে আওয়ামীপন্থী লেখক ড.
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. আনোয়ার
হোসেন সবচেয়ে বেশি উসকানিমূলক
বক্তব্য দেন। জয়বাংলা বলে বক্তব্য শুরু
করে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন,
শিবিরকে প্রতিহত করতে আমাদের
রাস্তায়
লাঠিসোটা নিয়ে নামতে হবে। ডা.
প্রাণ গোপাল দত্ত ও
আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী ও
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক
ড. আনিসুজ্জামান,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিক
উল্লাহ খান গংরা বলবেন কী?
শাহবাগে গিয়ে হত্যা, হামলা আর
দখলের
উসকানি দিয়ে আপনারা কি মানবাধিকার
লঙ্ঘন করেননি? ধিক! তাদের বিবেকের
এ বন্দীদশাকে। প্রকাশ্য জবাই করার
স্লোগান মিডিয়ায় প্রচার করে উল্লাস
করা হয়। হত্যা করার এমন উসকানি আইনের
কোন মানদণ্ডে পড়ে, জাফর ইকবাল
গংরা তা বলতে পারবেন কি? আর এই
উসকানির মধ্যে দিয়ে যত হত্যা,
সহিংসতা ঘটবে তার দায়
কি ইন্ধনদাতারা এড়াতে পারবেন? এই
উসকানিতে এরই মধ্যেই শাপলা চত্বরসহ
নানাস্থানে শত শত তাজা প্রাণ
ঝরে পড়ছে প্রতিনিয়ত। যাদের
উসকানিতে এত মায়ের বুক খালি হলো,
তারা যদি শাহবাগের
উসকানিদাতাদের
বিরুদ্ধে মামলা করে, ক্ষমতার
জোরে আজকে মুক্তি পেলেও আল্লাহর
আদালত থেকে আপনার রেহাই পাবেন
কি? তর্কের খাতিরে যদি ধরি জনাব
ফরহাদ মজহারের বক্তব্যে কিছু
মিডিয়া আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু
শাহবাগে যাদের প্রকাশ্য উসকানির
কারণে শত শত মানুষকে হত্যা, গণহত্যা,
দিগন্ত, ইসলামিক
টিভি কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল ও
আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ, ব্যাংক, বীমা,
লুট, বাড়িঘরে হামলা চালানো হলো,
এর উসকানিদাতাদের কবে গ্রেফতার
করা হবে? আজ যারা ফাঁসি আর
গ্রেফতারের এমন জিগির তুলছেন
তাদের গ্রেফতারের দাবিও একদিন
এদেশের জনগণ তুলতে পারে। সাধু
সাবধান! সাবধান। ‘এক মাঘে শীত যায়
না।’
বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের
কালো থাবা আইন-আদালত,
মানবাধিকার, সংবাদপত্রকে ভেদ
করে এখন ফরহাদ মজহারদের শরীর পর্যন্ত
উদ্যত। যুগে যুগে শাসকগোষ্ঠী যখন
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সামাল
দিতে ব্যর্থ হয়েছে তখনই ফ্যাসিবাদের
আশ্রয় নিয়েছে। ফ্যাসিবাদের দুই প্রধান
মহানায়ক ছিল ইতালির
বেনিটো মুসোলিনি এবং জার্মানির
অ্যাডলফ হিটলার। মূলত শোষিত, মজলুম আর
নির্যাতিত শ্রেণীর আন্দোলন ও
শক্তিকে দমানোর জন্যই এর উদ্ভব হয়। এ
কাজে তারা প্রধান হাতিয়ার
হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে।
আজকের বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন
শাসকগোষ্ঠীর চরিত্রের সঙ্গে হিটলার
মুসোলিনির অমিল পাওয়া খুবই দুষ্কর।
ফরহাদ মজহার কোনো ব্যক্তি নন,
তিনি একটি প্রতিষ্ঠান,
মানবাধিকারের দেয়াল।
যিনি বর্তমান সময়ে নির্যাতন, অন্যায়
আর অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তাই
প্রতিটি বিবেকবান, মানবিকবোধ সম্পন্ন
নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার
পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে হবে।
আজ আওয়ামী লীগ সরকারের পদ্মা সেতু
দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি,
মানবাধিকারের লঙ্ঘন, দলীয় ও রাষ্ট্রীয়
সন্ত্রাসের শিকার যখন সমাজের সব
শ্রেণী ও পেশার মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতার
আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ
চালাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। এক ব্যক্তির
একগুঁয়েমির কারণে রাষ্ট্র যখন বিকল, তখন
সরকার একের পর এক দেশের সম্মানিত
ব্যক্তিদের ওপর জুলুম-নির্যাতন, গ্রেফতার,
হামলা-মামলা দিয়ে দেশপ্রেমিক
নাগরিকদের কণ্ঠরোধ করতে চায়। তাই
দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌত্ব, গণতন্ত্র
ও ইসলাম রক্ষার প্রয়োজনে আমজনতাকেই
এ অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক
বিষয়: বিবিধ
১০২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন