‘‘আশুরা’’ রাজতন্ত্রীদের জন্যে একটা বিব্রতকর দিন।
লিখেছেন লিখেছেন আনোয়ার আলী ২৩ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:৫৬:৫৬ দুপুর
মুহররমের ১০ তারিখ এবং পুরা মহররম মাসই রাজতন্ত্রীদের জন্যে একটা বিব্রতকর মাস। কেননা হুসাইন ইসলামী খেলাফতের পক্ষে এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিলেন। কারবালার ঘটনার ১৩৭৬ বৎসর পর হয়ে গেছে। অথচ এখনো মুসলমানেরা হুসাইনের জন্যে কেঁদে বুক ভাসায়। হুসাইনের জন্যে আহাজারি করে। এটা কি কেবলই একটা ব্যক্তির প্রতি ভালবাসা? নাকি তার আদর্শ?
ইয়াযীদের আমল থেকে শুরু করে উমাইয়া বংশের পুরো রাজত্বকাল ধরেই রাজতন্ত্রকে ইসলামী প্রলেব দেয়ার কাজ শুরু হয় দরবারী আলেমদের দিয়ে। সেই সিলসিলা এখনো জারি আছে। উমাইয়া আমলে জুমার খুতবায় আলী এবং হুসাইনকে নানাভাবে দোষারোপ করা হতো। এমনকি গালাগালও করা হতো। পরবর্তীতে জনমত এর বিপক্ষে যাওয়ায় ধীরে ধীরে তার বিলুপ্তি ঘটেছে।
আজকালকার দরবারী আলেমরা নানা কায়দা কৌশলের আশ্রয়ে মুহররম মাসের নানা হাদীস বর্ণনা করলেও, কারবালার ঘটনা চেপে যান। বলেন কারবালার সাথে আশুরার কোন সম্পর্ক নেই। কারবালার ঘটনা কোন ঘটনাই নয়। আবার কেউবা হুসাইনের জন্যে দরদের ভান করেন এবং কারবালার ঘটনার জন্যে হুসাইনকেই দায়ী করে ইয়াযীদকে নির্দোষ প্রমাণের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হন। কোন কোন কুলাঙ্গার তো ইয়াযীদকে ‘রাহ’ বলেও সম্বোধন করেন।
তারা যুক্তি দেখান ইয়াযীদ তার আমল নিয়ে চলে গেছেন। তাকে মন্দ বলে কোন লাভ নেই। এটা বলেন না যে, আবু জেহেল আবু লাহাবও তো তাদের আমল নিয়ে চলে গেছেন। তাদের বিরুদ্ধে তেনারা গর্জে উঠেন কেন?
ইয়াযীদের পক্ষে তারা হাদীস থেকেও উদ্বৃতি দেন। এ সংক্রান্তে আল-বিদায় ওয়ান নিহায়া থেকে সরাসরি তুলে ধরলাম।
‘‘হাদীসে প্রমাণ রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, রোম সাম্রাজ্যে প্রথম যে সেনাদলটি যুদ্ধ করবে, তাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে ক্ষমা রয়েছে। আর এ সেনাদলটিকে রাসুল (সা) উম্মে হারাম (রা)এর ঘরে স্বপ্নে দেখেছিলেন। উম্মে হারাম (রা) বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের দলভূক্ত করেন। রাসুল (সা) বললেন, তুমি হবে প্রথম দলের যোদ্ধাদের অন্তর্ভূক্ত। উসমান ইবনে আফফানের (রা) এর আমলে ২৭ হিজরীতে সাইপ্রাস বিজয় হয়। আমীর মুয়াবিয়া (রা)-এর পরিচালিত সৈন্যদল যখন সাইপ্রাস যুদ্ধে রত ছিল তখন তাদের সাথে উম্মে হারাম (রা) যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। তারপর তিনি সাইপ্রাসে ইনতিকাল করেন। এরপর দ্বিতীয় সেনাবাহিনীর আমীর ছিলেন তার পুত্র ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়া। উম্মে হারাম (রা) ইয়াযীদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। এটা ছিল নবুওয়াতের অন্যতম প্রধান দলীল।’’
(আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৪১৯, প্রথম প্রকাশ-২০০৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন)
খেয়াল করুন, রোম সাম্রাজ্যে প্রথম যে সেনাদলটি যুদ্ধ করবে, কেবল তাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে ক্ষমা রয়েছে। ইয়াযীদ কিন্তু প্রথম সেনা দলের নন। ১ম সেনাদলটি যুদ্ধ করেছেন ২৭ হিজরীতে। ইয়াযীদ ছিলেন দ্বিতীয় সেনাদলের। রাজতন্ত্রের দরবারী আলেমেরা ইয়াযীদের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে এ হাদীসটিকে বরাবরই ব্যবহার করে আসছেন।
ইয়াযীদ কেবল হুসাইনের হত্যাকারীই নন। তিনি মক্কা ও মদীনা আক্রমনকারী। মদীনায় সাহাবী হত্যা ও নারীদের গণধর্ষনের অনুমতি দিয়ে তিনি মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে গেছেন মর্মে অনেক বিশিষ্ট আলেম অভিমত দিয়েছেন।
শীয়াদের কিছু শিরক-বিদআতী কর্মকান্ড দরবারী আলেমদের প্রচারণার প্রধান চালিকা শক্তি। শীয়াদের শিরক বিদআতের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে তারা কারবালার পুরো ইতিহাস বদলে দিতে ব্রতী হন। শীয়ারা এবং দরবারী আলেমরা এখন হাত ধরাধরি করে চলছেন কারবালার ইতিহাসকে পাল্টিয়ে দিতে। শীয়ারা ইসলাম পরিপন্থীভাবে হুসাইন দরদী, আর দরবারী আলেমরা ইয়াযীদ দরদী। পার্থক্য এই যে, শীয়ারা ইয়াযীদকে গালাগাল করেন, দরবারীরা হুসাইনকে সেটা করার সাহস করেন না।
বেহেস্তবাসী যুবকদের সর্দার ইমাম হুসাইনকে হত্যার দায়ে দায়ী ইয়াযীদকে মুসলমানদের কোনই প্রয়োজন নেই। তবে ইয়াযীদের প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রকে যারা বুকে ধারন করে এবং যারা এখনো রাজতন্ত্র চালু রেখেছে এবং যারা রাজতন্ত্রের উচ্ছিষ্টভোগী, রাজতন্ত্রকে ইসলামী প্রলেব দেয়ার নিমিত্তে ইয়াযীদকে নিদোর্ষ প্রমান করা তাদের একান্তই প্রয়োজন।
ইয়াযীদের পক্ষে দরবারী আলেমদের যুক্তি ধোপে টিকেনি, টিকছেও না। যুগে যুগে নানা কুযুক্তি দিয়ে তারা ইয়াযীদকে বৈধ করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু তাদের কোন চেষ্টাই যে সফল হয়নি, তা কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে?
বিষয়: বিবিধ
১৯৮০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন