মুসলিম-জাহানের প্রথম বাদশাহ মুয়াবিয়া।
লিখেছেন লিখেছেন আনোয়ার আলী ১১ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:৪২:১৪ বিকাল
মুসলিম জাহানে সর্বপ্রথম রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিশিষ্ট সাহাবী আমির মুয়াবিয়া। তিনি ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার বিপরীতে গিয়ে রাজতন্ত্রের প্রচলন করে চিরস্থায়ী একটা বিতর্কের সৃষ্টি করে যান। আলীর খিলাফত মানতে মুয়াবিয়া রাজি ছিলেন না এবং মানেনওনি। এর পরিনামে সিফফিনের যুদ্ধ হয় এবং কৌশলে সে যুদ্ধে মুয়াবিয়া জয়লাভ করেন। প্রাদেশিক গর্ভনর হয়েও তিনি খলিফার হকদার বনে যান। আলীর দলেও ছিল ওসমান হত্যার সমর্থনকারীদের অনেকে। ইহুদী আবদুল্লাহ ইবনে সাবা মুসলিম ছদ্মবেশে নানা ষড়যন্ত্রে আলীর জীবনকে বিষিয়ে তুলেছিল। আলীর শাসনামলে মা আয়শা উষ্ট্রের পিঠে চড়ে যুদ্ধে বের হয়েছিলেন। সে যুদ্ধেও প্রায় দশ সহস্রাধিক মুসলমানের মৃত্যু হয়। মুয়াবিয়ার মত মা আয়শারও দাবি ছিল উসমান হত্যার বিচার আগে হোক। কিন্তু আলী চাইছিলেন আগে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। উসমান হত্যার বিষয়ে তিনিও মা আয়শার সাথে একমত ছিলেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে থাকেনি। তারা যুদ্ধ শুরু করে দেয়। আলী মা আয়শাকে যথাযথ সম্মান প্রদশর্ন করে বুঝাতে সক্ষম হওয়ায় মা আয়শা ফিরে যান এবং তৎপরবর্তীতে তিনি আর কখনোই রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে মাথা ঘামাননি। সিফফিনের যুদ্ধ, উষ্ট্রের যুদ্ধ এসবই ইসলামের ইতিহাসের ছাপ ছাপ কলঙ্ক। আর এই কলঙ্ক, ঝড়ঝঞ্জা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়াও জিহাদ এবং তা ইসলামের মহান শিক্ষারই অংশ।
ইসলামের ইতিহাসে দেশ শাসনের বিষয়টা শুরু হয়েছে রহমত ও নবুয়তের ভিত্তিতে (মহানবীর আমলে)। এরপর রহমত ও খেলাফতের ভিত্তিতে (খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ৩০ বছর)। আর এর পরই তা পরিণত হয় জুলুমবাজ রাজতন্ত্রে। এর ইংগিত ছিল হাদীস শরীফেও। (দেখুন আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৪৮, প্রথম প্রকাশ-২০০৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন)
ধর্মীয় বিশ্বাসের রকমফেরে যে যা-ই বলুক, আলীর সাথে মুয়াবিয়ার শত্রুতাকে অস্বীকার করা যায় না। পরস্পরের এই মতবিরোধে নানা ফেরকা সৃষ্টি হওয়ায় এবং পরবর্তীতে উভয়ের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্থাপিত হওয়ার প্রেক্ষিতে খারিজীরা ৪০ হিজরীর দিকে আলী, মুয়াবিয়া এবং আমরকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং কেবল আলীকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। আলীর মৃত্যুর সাথে সাথেই মুয়াবিয়া রাজতন্ত্রের পত্তন করেন। তিনি হন ইসলামী জাহানের প্রথম বাদশাহ। শুরু হয় উমাইয়া রাজতন্ত্রের যুগ।
বিষয়: বিবিধ
৩৯০২ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি লিখেছেনঃ সত্য তো ঢেকে রাখা যাবে না।
আমি লিখেছিলাম: কাপড়ের নিজে কিছু সত্য ঢেকে রাখতে হয়।
আর আপনি ডিলেট মারলেন। যাই হোক, ভালো থাকুন।
@শিয়াসাহেব, সাহাবী মুআবিয়া (রা) কি জুলুমবাজ?
যখন আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত মুয়াবীয়া (রাঃ) এর মাঝে ওসমান (রাঃ) এর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে দন্ধ চরমে। দুটি যুদ্ধও সংঘঠিত গেল, হাজার হাজার সাহাবী (রাঃ) ও জীবন দিলেন। (এক বর্ণনায় ৭০হাজার সাহাবী শহীদ হলেন)।
ঠিক এই মুহুর্তে রুমের বাদশা হযরত আমীরে মুয়াবীয়ার নিকট প্রস্তাব দিয়ে দূত পাঠালেন যে আপনি যদি চান, আমি এই মুহুর্তে লক্ষাধিক সৈন্য নিয়ে আলীর মোকাবেলায় আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি।
এমন প্রস্তাবের পর হযরত আমীরে মুয়াবীয়া দূতকে এই বার্তা দিয়ে ফেরত পাঠালেন যে, হে রুমের কুত্তা, আমার ও আলীর মধ্যকার ধন্ধ আমাদের একান্ত নিজেদের ব্যপার, তোর মত কুৃত্তার এ ব্যপারে মাথা ঘামানোর অধিকার নেই। যদি এ সম্পর্কে তোর অন্য কোন তৎপরতা শুনি, তবে আমি আলীর সঙ্গে এক হয়ে তোদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষনা দিব।
(আজকে যারা হযরত আমীরে মুয়াবীয়া (রাঃ) এর সমালোচনায় ব্যস্ত, তাদের জন্য আমীরে মুয়াবীয়াকে জানতে এই ঘটনাটিই যথেষ্ট।)
আমাদের উত্তরসূরী মহান সাহাবীগণ যদি এমন নীতি গ্রহন করতে পারেন, তবে বর্তমানে ইসলামের এই দূর্নিনে আমাদের ভূমিকা কি হওয়া উচিৎ?
নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছুটাছুটি করবো? নাকি নিজেরা আপসে সংশোধন হয়ে বাতিলের বিরুদ্ধে ঐক্য হয়ে কাজ করবো!
কোনটি ঈমানের দাবী ও সময়ের দাবী বিবেচনার সময় কি এখনো হয়নি!
মন্তব্য করতে লগইন করুন