ইয়াযিদকে কেন নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে?
লিখেছেন লিখেছেন আনোয়ার আলী ১৪ আগস্ট, ২০১৫, ০৭:৪৬:৫২ সন্ধ্যা
মুসলমানদের ইতিহাস সিরাত গ্রন্থগুলো থেকেই জানা প্রয়োজন। আমরা এখানে সে চেষ্টাই করব।
একথা সত্য যে, ইয়াযিদ ছিলেন বিখ্যাত সাহাবী হযরত মুয়াবিয়ার পুত্র। তিনি ছিলেন মুসলিম জাহানে চেপেবসা প্রথম বাদশাহ।
তার পরবর্তীতে মুসলিম জাহানে যত রাজা-বাদশাহরা এসেছেন, তারা তাদের বাদশাহীকে/রাজতন্ত্রকে ইসলামী প্রমাণে হযরত মুয়াবিয়ার দৃষ্টান্ত গ্রহন করেছেন এবং সাহাবীদের অতি সম্মান প্রমানে হাদীসকে কোরআনের চাইতেও বেশী প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন।
এ প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে। শীর্ষ মুসলিম দেশগুলো এখনো রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্যে ইসলামী আন্দোলনসহ যে কোন আন্দোলনকে ভয় পায়। তারা একদিকে এগুলোকে ফ্যাতনা ফ্যাসাদ নাম দিয়ে কঠোর হস্তে দমন করে, অন্যদিকে তাদের পক্ষে জনমত গঠনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশে কিছু সালাফী এবং দেওবন্দীরা মুসলমানদের সঠিক ইতিহাস শেখানোর নামে ইয়াযিদকে মুসলমান প্রমানে এবং নির্দোষ প্রমানের যথাসাধ্য চেষ্টা করে আসছেন।
তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নামে নানাভাবে চেষ্টা করছেন কারবালার ইতিহাসকে ম্লান করে এর গুরুত্বকে খাটো করার। ইনিয়ে বিনিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কায়দা করে বলতে চান, ইমাম হুসাইন ক্ষমতার লোভেই নাকি কুফায় গমন করেছিলেন। তার এই যাওয়াতে নাকি ইসলামের কোন কল্যাণ ছিল না। এটা নাকি হক আর বাতিলের যুদ্ধ ছিল না। (নাউজুবিল্লাহ)।
তারা ইয়াজিদের নৃশংসতাকে এবং ফোরাত নদীর পানি সরবরাহ বন্ধকে সহি নয় মর্মে প্রতিপন্ন করতেও তৎপর। কেউ কেউ কারবালার ঘটনাকে কেচ্ছা কাহিনী বলতেও দ্বিধা করেনি। ইনিয়ে বিনিয়ে তারা দলীল পেশ করেন কেবল দরবারী আলেমদের। তারা বুঝাতে চান, কারবালার ঘটনা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। এ নিয়ে মাতামাতি করে লাভ নেই। ইয়াযিদ হুসাইনের হত্যাকারী নয়। ইমাম হুসাইন মুসলিম জাতির নির্বাচিত আমীর বা খলীফা ছিলেন না। তাকে হত্যা করা যায়েয ছিল বলেও তারা কৌশলে মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেন। কোন কোন আলেম তো ইয়াযিদের প্রতি অতিরিক্ত ভক্তি দেখাতে গিয়ে তাকে ‘রাহমতুল্লাহ’ বলতেও কুন্ঠিত হননি। তবে এইসব দরবারী আলেমরা বড়ই ধূর্ত। তারা প্রথমেই হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর পক্ষে এমনভাবে বন্দনা করেন যে পড়ে মনে হবে তারা হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর খুবই ভক্ত এবং পক্ষের লোক। প্রথমেই বোঝাতে চেষ্টা করেন ইমাম হুসাইনের মহব্বতে তাদের কলিজা ভরপুর। কিন্তু ধূর্তামীর আশ্রয়ে 'প্রকৃত ইতিহাস' শেখাবার নামে এবং বড়ই চাতুর্য্যপূর্ণভাবে তারা ইয়াযিদের সাফাই গান। তারা হযরত ইমাম হুসাইনকে হত্যার জন্য হযরত ইমাম হুসাইনকেই দায়ী করেন। কেউ কেউ শীয়াদের দায়ী করেন। অথচ ঐসময় শীয়া মতবাদের সৃষ্টিই হয়নি। মোট কথা, যে কোনভাবেই যেন ইয়াযিদকে দায়ী করা না হয়। ইমাম হুসাইনের হত্যার দায় কুফাবাসীর উপরও চাপাতে চান। তারা বোঝাতে চান, ইমাম হুসাইন কুফাবাসীর ফাঁদে পড়ে ইয়াযিদের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন। অথচ কুফাবাসীদের প্ররোচনায় হুসাইন ইয়াযিদের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন-এমনটা কোন মুসলমানই মনে করেন না। বরং ইমাম হুসাইন ‘ইসলামী খেলাফতের পক্ষে’ এবং ‘রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে’ গর্জে উঠেছিলেন। এটাই প্রকৃত মুসলমানের কাজ। এটা ঠিক কুফাবাসীরা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তারা ইমাম পরিবারের সাথে চরম গাদ্দারী করেছে। তাদের এই গাদ্দারী টের পেয়েছিলেন বলেই অনেক সম্মানিত সাহাবী ইমাম হুসাইনকে রুখতে চেয়েছিলেন। ঐ সাহাবীরা কোনভাবেই ‘ইসলামী খেলাফত’ ব্যবস্থার বিপরীতে ‘রাজতন্ত্রকে’ সমর্থন করেছেন-এমন নয়।
দরবারী আলেমরা চরম ধূর্ততার আশ্রয়ে ইয়াযিদকে ভাল শাসক, ইসলামের খেদমতগার বলেও প্রতিপন্ন করতে চান। তাদের মতে ইয়াযিদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নাকি সহি নয়। তারা মানুষকে বোঝাতে চান, ইয়াযিদ হুসাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্দেশ দিলেও হুসাইনকে হত্যার নির্দেশ দেননি। পাঠক খেয়াল করুন ফাঁকিবাজিটা কোথায়। ইয়াযিদ যখন হুসাইনকে হত্যার ঘটনা শুনলেন তখন ইয়াযিদ ব্যথিত হয়েছিলেন বা হত্যাকারীকে শাস্তি দিয়েছিলেন এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না। দরবারীরা বলে বেড়ান যে, হুসাইনের ছিন্ন মস্তক ইয়াযিদের দরবারে এলে সেখানে নাকি কান্নার রোল পড়ে যায়। কিন্তু হত্যাকারীকে তো ক্ষমতা থেকে সরিয়েও দেননি এবং কোন শাস্তিও দেননি। গর্ভনর ওবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ তো তার স্বপদে বহাল তবিয়তেই ছিলেন। সিরাত গ্রন্থে তো সেরকমই লেখা আছে। তাহলে কি বোঝা গেলো?
ইমাম হুসাইন (রাঃ) কেন ইয়াজিদের বিরুদ্ধে গেলেন, মদিনা থেকে কেন বের হলেন নানাভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে তার জন্য ইমাম হুসাইনকে ক্ষমতালোভী আখ্যায়িত করে প্রকারান্তে তাকেই দোষী সাব্যস্থ্য করার অপচেষ্টাও কম হয়নি। তারা বলেন কুফায় যাওয়ার কারণেই ইয়াজিদ ইমাম হুসাইনকে শহীদ করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা বুঝাতে চান, অন্যায়ের বিরোধিতা করে হুসাইন ঠিক কাজ করেননি। ইয়াজিদের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে হুসাইনই অন্যায় কাজ করেছেন। তারা বলতে চান, মুসলিমরা ইয়াজিদের শাসনের উপর ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। হুসাইন এসে সেই ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। আবার কিছু সুবিধাবাদী আলেম বলেছেন, ইয়াজিদকে ভালও বলা যাবে না, আবার খারাপও বলা যাবে না। গোঁজামিলটা খেয়াল করুন। নবীর দৌহিত্রের হত্যাকারী জালিম শাসককে নাকি ভাল খারাপ কোনটাই বলা যাবে না। এই না বলার অর্থ কিন্তু ইয়াজিদকে সমর্থণ করাই। অনেকে কারবালার যুদ্ধকে হক ও বাতিলের যুদ্ধ নয় বলে অভিমত দিতেও কুন্ঠিত হলেন না। প্রকারান্তরে তারা বলতে চান, হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) হকের পক্ষে ছিলেন না (নাউজুবিল্লাহ)।
দরবারীরা আরো বুঝাতে চান রাজতন্ত্র তেমন খারাপ কিছু নয়। যুগে যুগে এইসব দরবারীরা নানাভাবে মুসলমানদের ‘সত্য ইতিহাস’ শেখাবার নামে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছেন। কারবালার প্রকৃত ইতিহাসকে তারা শীয়াদের অপপ্রচার শীয়া মতবাদ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। মানুষ যাতে এসব আমল না করে সে লক্ষ্যে তারা শীয়া শীয়া বলে জিগির তুলেছেন। কেননা কারবালার ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা মুমীনের মনে দাগ কাটেই। মানুষ জালিম রাজতন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। আর এই চেতনা ঠেকানোই দরবারী আলেমদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
বিষয়: বিবিধ
২০৭৯ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর হাদীস থেকে তো ইতিহাস জানা যায় না। মহানবীর ওফাতের অনেক পরের ঘটনা সিরাত গ্রন্থ থেকেই জানতে হয়। বিধর্মীদের লেখা ইতিহাস গ্রন্থ থেকে নয়।
১। ইমাম হুসাইনকে হত্যা করা।
২। মক্কা আক্রমন করা।
৩। মদীনা আক্রমন করা এবং নারীদের ধর্ষন করার অনুমতি দেয়া।
‘যারা ইয়াযিদকে সমর্থন করছে, তাদের রোজহাশর ইয়াযিদের সাথেই হবে।’ আপনার এ বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত।
একজন বিশ্বাসীর ঈমানের সাক্ষ্য, শাহাদাত।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছিঃ
* আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ্ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই।
* “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”র সাথে অন্য কোনো কালেমা যোগ করা যাবে না।
* “আদম রাসূলুল্লাহ্”, “নূহ রাসূলুল্লাহ্”, “ইব্রাহীম রাসূলুল্লাহ্”, “মূসা রাসূলুল্লাহ্”, “ঈসা রাসূলুল্লাহ্”, ও “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্”, কালেমায়ে “রিসালাত”।
* কালেমায়ে রিসালাতকে কখনো কালেমায়ে তাওহীদের সাথে একত্র করা চলবে না।
* কালেমায়ে রিসালাতকে সর্বাবস্থায় পৃথকভাবে বলতে ও লিখতে হবে।
* ক্বোরআনে বর্ণিত গুণাবলীর ঈমানদারগণ ক্বেয়ামত পর্যন্ত “রাদিয়াল্লাহু আনহুম”।
* “রাদিয়াল্লাহু আনহুম”-কে, যারা কোনো বিশেষ শ্রেণী ও যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছে, করছে বা করবে, তারা আল্লাহ, ক্বোরআন ও রাসূল সঃ-এর অমান্যকারী।
* ইসলাম গোটা মানব জাতির জন্য আল্লাহর একমাত্র দ্বীন, অন্য কোনো দ্বীন নেই।
* আখেরী নবী মুহাম্মাদ সঃ সকল মানুষের জন্য চূড়ান্ত আল্লাহ্র রাসূল।
* তাঁকে যারা ক্বোরেশী, হাশেমী ও আরবী বলে “গন্ডিবদ্ধ” করেছে বা করে, তারা মুস্লিম নয়।
* তাঁকে যারা বর্ণ, গোত্র ও যুগের উর্ধ্বে আল্লাহ্র শেষ নবী মানে, শুধু তারাই মুস্লিম। যারা আল্লাহর রাসূলদের অনুসরণে আল্লাহকে মানে, তারা মুস্লিম।
* যারা নবীদের নিচে রাব্বাই, হাওয়ারী ও সাহাবাদেরও নবীর মতো মানে বা মানতে হবে বলে, তারা আল্লাহ, ক্বোরআন ও নবীদের অমান্যকারী, অমুস্লিম।
* পৃথিবীতে একটিও ইসলামী রাষ্ট্র না থাকায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয় যে, বিশ্বে কোনো “মুস্লিম উম্মাহ্” নেই। যারা আছে, তারা মিথ্যা দাবিদার। তাদের উপর আল্লাহর গযব।
* পৃথিবীতে ব্যক্তি পর্যায়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কিছু লোক মুস্লিম আছে। সংগঠিত মুস্লিম নেই। আখেরী নবী সঃ কর্তৃক আল্লাহর দ্বীন ইসলাম পূর্ণতা লাভ করে।
* তাঁর মৃত্যুর পর পরীক্ষামূলকভাবে আবু বকর ও উমর তাদের সীমাবদ্ধ যোগ্যতা অনুযায়ী ইসলামের অনুশীলনী আরম্ভ করে। * আবু বকর ও উমরের আমলে আংশিকভাবে তা সফল হয়।
* ওসমানের আমলে নবী সঃ এর আদর্শের ইস্লাম হারিয়ে যায়।
* আলী এসে তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলে, তাকে স্ববংশে নির্মূল করে মূল ইস্লামকেই নির্বাসিত করা হয়।
* তারপর থেকে যে রাজতন্ত্র আরম্ভ হয়, তা ইস্লামের নামে রোমান সিজার ও পারস্য খসরুদের রাজ। ইসলাম নয়।
* উমর বিন্ আব্দুল আযীযের যুগ কুফর থেকে ইসলামে ফেরার একটি দৃষ্টান্ত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন