কোরআনের বৈজ্ঞানিক তথ্য

লিখেছেন লিখেছেন আনোয়ার আলী ০১ জুলাই, ২০১৫, ০৯:৩৬:৪৮ রাত

কোরআনে প্রায় সাড়ে সাতশর মত বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে। যা সাদা চোখেই বুঝা যায়। আরো কিছু তথ্য রয়েছে, যার রহস্য হয়তো আগামী বিজ্ঞান দিতে পারবে। পৃথিবীর বুকে কিছু আবিষ্কার হলেই মুসলমানেরা সেটা কোরআনের সাথে মিলিয়ে দেখেন। যদি মিলে যায়, কোরআনের প্রতি তার আস্থা আরো দৃঢ় হয়। মুসলমানেরা যেহেতু কোরআনেই বিশ্বাস করেন, সেহেতু যে কোন বৈজ্ঞানিক আবিস্কার তারা কোরআনের সাথেই মিলিয়ে দেখবেন এটা খুবই স্বাভাবিক কথা। বিগ্ ব্যাং থিউরী মুসলমানদের আবিষ্কার নয়, গ্রহ নক্ষত্রের ঘূর্নন, বহু বিশ্ব থাকার কথাও মুসলমানদের আবিস্কার নয়। এগুলো আবিস্কার হওয়ার পর মুসলমানেরা সেটা কোরআনের সাথে মিলিয়ে দেখেছেন। কোরআনের সাথে মিল পাওয়ায় সেসব তারা বিশ্বাস করেছেন। অথচ এসব নিয়ে নাস্তিকেরা মুসলমানদের উপহাস করেন এই বলে যে, পৃথিবীতে কোন কিছু আবিস্কার হলেই কেবল মুসলমানেরা সেটা কোরআনে খুঁজে পায়। ভাবখানা এমন যে বিজ্ঞান যেন নাস্তিকদের পৈত্রিক সম্পত্তি। তারা বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানীদের নাস্তিকতার সংজ্ঞার মধ্যে ফেলতে চান। বুঝাতে চান ধার্মিকেরা অন্ধ, ধর্ম আর বিজ্ঞান পরস্পরবিরোধী। অথচ নাস্তিকেরা যে আইনস্টাইনকে গুরু মানেন সেই বিজ্ঞানী আইনস্টাইনই বলেছেন, "Science without religion is lame, religion without science is blind".

সমস্যা হলো, নাস্তিকেরা পৃথিবীর অন্যান্য সকল ধর্মের সাথে ইসলামকেও গুলিয়ে ফেলেছেন। বিজ্ঞান কোনভাবেই কোরআনের বিপক্ষ নয়। কোরআনেই আছে ৭৫০-এর উপরে বৈজ্ঞানিক তথ্য। আজকের বিজ্ঞান যা আবিস্কার করছে, ১৪৫০ বছর আগে নাজিল হওয়া কোরআনে তা থাকা বিস্ময়ের বিষয় বৈকি। অথচ ঐযুগে রসায়ন, পদার্থ, মহাকাশ, সৃষ্টিতত্ত্ব ও অন্যান্য বিজ্ঞান সম্পর্কে মানুষের তেমন কোন জ্ঞান ছিল না। কোরআন মানুষকে বিজ্ঞান জানতে, চিন্তা এবং গবেষনা করতে উৎসাহ দিয়েছে। আসুন কোরআনের কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য দেখি-

Big Bang - "সত্য প্রত্যাখানকারীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলি ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অত:পর আমিউভয়কে পৃথক করে দিলাম" (আম্বিয়া : ৩০)

কানাডার সাবেক খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক ও অধ্যাপক ড. গ্যারি মিলার পবিত্র কোরআন সম্পর্কে গবেষণা করে বলেছেন,এই আয়াতটি নিয়ে চিন্তা-গবেষণার পর কোরআন যে ঐশী গ্রস্থ তা মেনে নিতে বাধ্য হই। যারা প্রচার চালায় যে কোরআন হচ্ছে হযরত মোহাম্মদ (সা.)’র নিজস্ব বক্তব্য তাদের দাবি নাকচ করার জন্য এই একটি আয়াতই যথেষ্ট।

মধ্যাকার্ষণ:

পবিত্র কোরআনের সূরা রাদের ২ নম্বর আয়াতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে ইশারা রয়েছে। এ আয়াতে বলা হয়েছে, “আল্লাহ, যিনি উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে অদৃশ্য স্তম্ভ দিয়ে বা দৃশ্যমান স্তম্ভ ছাড়াই। অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন ( তথা বিশ্ব পরিচালনার নিয়ন্ত্রণকে নিজ ক্ষমতার আওতায় এনেছেন) । এবং সূর্য ও চন্দ্রকে স্থাপন করেছেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন, নিদর্শনগুলো প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা স্বীয় পালনকর্তার সাথে সাক্ষাত সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।” [সূরা রাদ: ২ ]

সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব –

"আমি আকাশ নির্মান করিয়াছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা-সম্প্রসারণকারী" [রাজারিয়াত : ৪৭]

Black holes - "আমি শপথ করছি সেই জায়গার যেখানে তারকারাজি পতিত হয়। নিশ্চয়ই এটা একটা মহাসত্য, যদি তোমরাতা জানতে।" [সূরা ওয়াক্বিয়া : ৭৫, ৭৬]

Relativity - "ফেরেশতারা আর রুহেরা আল্লাহর দিকে উর্ধগামী হয়, এমন একদিনে যাহার পরিমান একহাজার বছরের সমান।" [সূরা মায়ারিজ : ৪], "তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কার্য পরিচালনা করেন, অত:পর তা তার কাছে পৌছবে এমন একদিনে, যাহার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান"। [সূরা সেজদাহ : ৫]

পর্বত পেরেকের ন্যায় কাজ করে –

"আমি কি করিনি ভূমিকে বিস্তৃত এবং পর্বতমালাকে পেরেকের মত করে" (সূরা নাবা: ৬,৭)

চাঁদ ও সূর্য:

‘তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন।’ [সুরা ইউনুস: ৫]

ছায়াপথ সৃষ্টির আগে প্রাথমিক গ্যাস পিন্ড

“তার পর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা কিছু ধূঁম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবী বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল আমরা সেচ্ছায় আসলাম। [সূরা হা-মীম সাজদাহ-১১]

সৃষ্টি তত্ত্ব:

আল্লাহ সব কিছুর সৃষ্টি করেছেন শূন্য থেকে [সুরা বাকারা: ১১৭] সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, শূণ্য থেকেই আপনাআপনি মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশনের মাধ্যমে।

পানি থেকে সকল প্রাণ তৈরি হয়েছে – [২১:৩০]

প্রতিটি প্রাণীর সৃষ্টি হয় নিয়ন্ত্রিত বিবর্তনের মাধ্যমে – ১৫:২৮, ২৪:৪৫, ৩২:৭-৯, ৭১:১৪।

পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে/বায়ুমন্ডলে প্রাণ আছে – ৪২:২৯। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন মেঘে অত্যন্ত উচুতেও বিপুল পরিমাণে অতি ক্ষুদ্র কীটাণু আছে।

ফরাসি দার্শনিক ও চিকিৎসক মরিস বুকাইলি তার “বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান” বইয়ে লিখেছেন, কোরআনের বিভিন্ন সূরায় সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে যেসব বক্তব্য এসেছে তার সবগুলোই আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি আরো লিখেছেন, মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনের ঘটনা সম্পর্কে কোরআনের দু’টি আয়াতে সংক্ষেপে বর্ণনা এসেছে। এর একটি হলো সূরা আম্বিয়ার ৩০ নম্বর আয়াত। যেখানে মহাবিস্ফোরণের কথা বলা হয়েছে।

অন্যটি হলো সূরা ফুস্সিলাতের ১১ নম্বর আয়াত যেখানে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের অস্তিত্বের কথা বলে। ওই আয়াতে এসেছে, “অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধোঁয়ার পুঞ্জবিশেষ, এরপর আকাশ ও পৃথিবীকে সৃষ্টি হতে নির্দেশ দেন। এখানে ধূম্রপুঞ্জ শব্দটি বিশ্বের আদিম অবস্থার সঠিক বর্ণনা দিচ্ছে, যা ছিল গরম গ্যাসের পিণ্ড যাতে বস্তুকণা দ্রুত ছোটাছুটি করছে, ধোঁয়ার মত। এ থেকে গ্রহ, নক্ষত্র ও পৃথিবী তৈরি হয়।”

মহাকাশ বিজ্ঞান

 দুই উদায়াচলের সৃষ্টি, আসমান ও জমিনের মাঝখানে যা কিছুর অবস্থান-[৫৫:১৭, ৭০:৪০, ৩৭:৫]

সূর্য নাগার পেতে পারে না চাঁদের এবং রাত আগে চলে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।[ সূরা ইয়াসিন -৪০]

সুর্য তার জন্যে নির্ধারিত এক সময়কাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করবে- [সুরা ইয়াসিন: ৩৮]

পৃথিবী এবং গ্রহ নক্ষত্র নিজস্ব অক্ষে ঘুরছে – ২৭:৮৮, ২১:৩৩, ৩৬:৪০।

সূর্যের নিজস্ব অক্ষ রয়েছে, এটি গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে ঘুরে – ৩৬:৪০, ২১:৩৩।

পৃথিবী সম্পূর্ণ গোল নয় বরং তা ডিমের মত উপরে নিচে চ্যাপ্টা – ৭৯:৩০, ৩৯:৫।

প্রথমে মহাকাশে সবকিছু ছিল ধোঁয়া, তারপর অভিকর্ষের প্রভাবে তা একত্র হয়ে পৃথিবীর মত গ্রহের জন্ম দিয়েছে – ৪১:১১।

পৃথিবীর সমস্ত পানি এসেছে মহাকাশ থেকে, পরিমিত ভাবে – ২৩:১৮। ধারণা করা হয় ধুমকেতু এবং উল্কার মাধ্যমে আদি পৃথিবীতে পানি এসেছে।

চাঁদ এবং সূর্যের আকৃতি এবং দূরত্ব সুনিয়ন্ত্রিত – ৫৫:৫।

আসমান ও জমির নিখুঁত সৃষ্টি (ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন) এবং দিবারাত্রির আবর্তন- [সুরা আল ইমরান:১৯০]

ভুগোল:

পানিচক্র সংক্রান্তে-সুরা যুমার: ২১, সুরা রূম: ২৪, সুরা মুমিনুন: ১৮, সুরা ত্বরিক: ১১,

বায়ু প্রবাহ মেঘপুঞ্জকে সঞ্জীবিত করে-সুরা হিজর:২২, সুরা রূম: ৪৮, সুরা আরাফ: ৫৭, সুরা রা’দ : ১৭, সুরা ফুরকান: ৪৮-৪৯, সুরা ইয়াসিন: ৩৪,

সমুদ্র বিজ্ঞান:

মিষ্টি ও নোনা পানির মাঝে রয়েছে বিভাজন-সুরা আর রহমান: ১৯-২০, সুরা নামল :৬১, সুরা ফুরকান: ৫৩

পদার্থ বিজ্ঞান

সময় আপেক্ষিক – [৩২:৫, ৭০:৪, ২২:৪৭]

প্রতিটি বস্তু তৈরি হয়েছে জোড়ায় – ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার – ৫১:৪৯।

পৃথিবীতে লোহার সৃষ্টি ও উপকারিতা-[আল হাদীদ:২৫]

নক্ষত্র যেখানে ধ্বংস হয় – ব্ল্যাকহোল – [সুরা ওয়াকেয়াহ:৭৫]

উজ্জল তারকা- যা অতি তীব্র ছিদ্রকারি গামারশ্মি বিচ্ছুরণ করে এবং সেকেন্ডে বহুবার ‘নক’ করে – [৮৬:১-৩]

বহু কক্ষ বিশিষ্ট আকাশ-[৫১:৭]

২০০৬ সালের পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আবিস্কার – মহাবিশ্বের সবকিছু সব জায়গায় সমান ভাবে ছড়িয়ে নেই বরং নির্দিষ্ট কিছু পথে মাকড়সার জালের বুননের মত ছড়িয়ে আছে।

আগুন জ্বালাবার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন তৈরি করে গাছের সবুজ পাতা – [৩৬:৮০]

মেঘের পানিতে মৃত জমিকে জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ রয়েছে –[৫০:৯, ২৫:৪৮-৪৯।

আবহাওয়া বিজ্ঞান

বাতাসের মাধ্যমে মেঘ ছড়ায় এবং মেঘের মাঝামাঝি মেঘের উপর মেঘ স্তরে স্তরে জমা হয়ে বৃষ্টির মেঘ তৈরি হয় – ২৪:৪৩, ৩০:৪৮।

বিদুৎ চমক, মেঘের গর্জন, মেঘমালা- [১৩:১২-১৩, ৭:৫৭]

আকাশে অনেক উচ্চতায় উঠার সময় অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস কষ্ট হয় এবং বুক সঙ্কীর্ণ হয়ে যায় – [৬:১২৫]

আকাশ পৃথিবীর জন্য একটি সুরক্ষিত ছাঁদ স্বরূপ বা বর্ম সরূপ যা পৃথিবীকে মহাকাশের ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মি থেকে রক্ষা করে – [২১:৩২, ২:২২]

বৃষ্টির পরিমান সুনিয়ন্ত্রিত – ৪৩:১১। উল্লেখ্য যে, পৃথিবীতে প্রতি বছর যে পরিমান বৃষ্টি হয় তার পরিমাণ ৫১৩ ট্রিলিয়ন টন এবং ঠিক সম পরিমান পানি প্রতি বছর বাস্প হয়ে মেঘ হয়ে যায়। এভাবে পৃথিবী এবং আকাশে পানির ভারসাম্য রক্ষা হয়।

ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক সাগরের মধ্যে লবনাক্ততার পার্থক্য আছে এবং তাদের মধ্যে একটি লবণাক্ততার বাঁধ রয়েছে যার কারনে আটলান্টিক সাগরের লবনাক্ত পানি ভূমধ্যসাগরের কম লবনাক্ত পানির সাথে মিশে যায় না এবং দুটি সাগরে দুই ধরনের উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বসবাস সম্ভব হয় – ৫৫:১৯-২০।

জীব বিজ্ঞান

মৌমাছির একাধিক পাকস্থলী আছে, কর্মী মৌমাছিরা স্ত্রী, পুরুষ নয়, মধুর অনেক ঔষধি গুণ আছে – [১৬:৬৮-৬৯]

গবাদি পশুর খাবার হজম হবার পর তা রক্তের মাধ্যমে একটি বিশেষ গ্রন্থিতে গিয়ে দুধ তৈরি করে যা আমরা খেতে পারি – ১৬:৬৬।

স্ত্রী পিপড়া তার পেটের কাছে অবস্থিত একটি অঙ্গ দিয়ে শব্দ করে অন্য পিপড়াদের সাথে কথা বলতে পারে এবং নির্দেশ দেয়, যা সাম্প্রতিক কালে মানুষের পক্ষে যন্ত্র ব্যবহার করে প্রমাণ করা গেছে। [২৭:১৮]

ফুল-ফল সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি (উদ্ভিদের পুরুষ এবং স্ত্রী লিঙ্গ আছে) – [১৩:৩]

গাছে সবুজ ক্লোরোফিল রয়েছে – ৬:৯৯।

পাখী ও প্রাণী দল বা সম্প্রদায় হিসেবে বাস করে

আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যতপ্রকার পাখী দু’ডানাযোগে উড়ে বেড়ায়,তারা সবাই তোমাদের মতই একেকটি সম্প্রদায় বা দল।”সূরা আল আনআম-৩৮

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণী ও পাখী দলীয়ভাবে বাস করে।অর্থাৎ তারা সংগঠিত এবং এক সাথে কাজ করে ও বাস করে।

পাখীর উড্ডয়ন

তারা কি উড়ন্ত পাখীকে দেখেনা? এগুলো আকাশের অন্তরীক্ষে আজ্ঞাধীন রয়েছে।আল্লাহ ছাড়া কেউ এগুলোকে আগলে রাখেনা।নিশ্চয়ই এতে বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।”সূরা নহল-৭৯

অন্য সূরায়ও পাখী সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।আল্লাহ বলেনঃ

“তারা কি লক্ষ্য করেনা,তাদের মাথার উপর উড়ন্ত পাখীকূলের প্রতি পাখা বিস্তারকারী ও পাখা সংকোচনকারী ?মেহেরবান আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন।তিনি সর্ব বিষয় দেখেন।”সূরা মূলক-১৯-২০

চিকিৎসা বিজ্ঞান

মানব শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ হয় পুরুষের বীর্য থেকে – ৫৩:৪৫-৪৬, ৭৫:৩৭।

মায়ের গর্ভ শিশুর জন্য একটি সুরক্ষিত জায়গা। এটি বাইরের আলো এবং শব্দ, আঘাত, ঝাঁকি থেকে রক্ষা করে, শিশুর জন্য সঠিক তাপমাত্রা তৈরি করে, পানি, অক্সিজেনের সরবরাহ দেয় – ২০:২৩, ১২:১৪।

মায়ের গর্ভে সন্তান কিভাবে ধাপে ধাপে বড় হয় তার নিখুঁত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যা কু’রআনের আগে অন্য কোন চিকিৎসা শাস্ত্রের বইয়ে ছিলনা – ২৩:১৩-১৪। যেমন প্রথমে শিশু একটি চাবানো মাংসের টুকরার মত থাকে, যা ইউটেরাসের গায়ে ঝুলে থাকে, তারপর প্রথমে হাড় তৈরি হয় এবং তারপর হাড়ের উপর মাসল তৈরি হয়, তারপর তা একটি মানব শিশুর বৈশিষ্ট্য পাওয়া শুরু করে।

মানব শিশুর প্রথমে শুনতে পায় তারপর দেখতে পায় – ৭৬:২। প্রথমে কান হয়, তারপর চোখ।

মানুষের দেহ মৃত্যুর বহু বছর পর পাথরের মত শক্ত ফসিল হয়ে যায় এবং লোহা (পাইরাইট) তৈরি হয় – ৪৯:৫১।

মানুষের আঙ্গুলের ছাপ প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন – ৭৫:৪।

মানুষকে প্রথম ভাষা ব্যবহার করা শেখানো হয়েছে এবং ভাষার জন্য অত্যাবশ্যকীয় স্বরনালী একমাত্র মানুষকেই দেওয়া হয়েছে – ৫৫:৩-৪।

লিঙ্গ নির্ধারণ

ভ্রূণের লিঙ্গ শুক্রের আকৃতি দ্বারা নির্ধারিত হয়,ডিম দ্বারা নয়।শিশু পুরুষ লিঙ্গ বা স্ত্রী লিঙ্গ যাই হোক না কেন তা নির্ভর করে xx অথবা xy জাতীয় ৩৩ জোড়া ক্রমোজমের উপর।যদি x বহনকারী শুক্র ডিমকে করে,তাহলে,ভ্রূণ হবে স্ত্রীলিঙ্গ এবং যদি তা y বহনকারী শুক্র হয়,তাহলে,ভ্রূণ হবে পুংলিঙ্গ।এ মর্মে আল্লাহ বলেনঃ

‘এবং তিনিই সুষ্টি করেন যুগল পুরুষ ও নারী।এক বিন্দু বীর্য থেকে যখন স্থলিত করা হয়।সূরা নাজম ৪৫-৪৬

এখানেও ‘নোতফা’শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে,যার অর্থ হল,সামান্য পরিমাণ তরল পদার্থ।আর (আরবী ) মানে ,স্থলিত বা নিক্ষিপ্ত।সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে,‘নোতফা’ দ্বারা শুক্রকেই বুঝানো হয়েছে।কেননা,শুক্রই স্থলিত বা নিক্ষিপ্ত হয়।

“সে কি স্থলিত বীর্য ছিলনা ?অতঃপর সে ছিল রক্তপিণ্ড,অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।” -সূরা কেয়ামাহ - ৩৭-৩৯

ভূতত্ত্ব/ইতিহাস

ইরাম নামে একটি শহরের কথা বলা আছে যেখানে অনেকগুলো পাথরের লম্বা স্তম্ভ আছে, যা কিনা ১৯৯২ সালে চ্যালেঞ্জার মহাকাশ যানের রাডার ব্যবহার করে মাটির নিচ থেকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে – ৮৯:৭।

মানব সভ্যতার উন্নতি ধারাবাহিক ভাবে হয়নি, বরং আগে কিছু জাতি এসেছিল যারা আমাদের থেকেও উন্নত ছিল, যারা ধ্বংস হয়ে গেছে – ৪০:৮২, ৩০:৯, ২০:১২৮।

কু’রআনে ফেরাউনের সময় মিশরে যে সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ, মহামারীর কথা বলা আছে, তা কু’রআন প্রকাশিত হবার হাজার বছর পরে আবিষ্কৃত একটি প্রাচীন হায়ারো গ্লিফিক লিপি ‘ইপুয়ার’-এ হুবহু একই ঘটনাগুলোর বর্ণনা পাওয়া গেছে, যা এর আগে কখনও জানা ছিলনা – ৭:১৩০, ৭:১৩৩, ২৬:৫৭-৫৯।

সাধারন বিজ্ঞান

আঙ্গুলের ছাপ

“মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড় সমূহ একত্রিত করব না ? বরং আমি তার আঙ্গুলগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম।” -সূরা কেয়ামাহ-৩-৪

উদ্ভিদ বিজ্ঞান

পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গ বিশিষ্ট গাছ

মানুষ আগে জানত যে,গাছের মধ্যেও পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গ আছে।কিন্তু উদ্ভিদ বিজ্ঞানের মতে প্রত্যেক গাছের মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গ আছে।এমনকি সমলিঙ্গ বিশিষ্ট গাছেরও পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গ আছে।আল্লাহ বলেনঃ

‘তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন উদ্ভিদ জোড়ায় জোড়ায় উৎপন্ন করেছি।’সূরা তোহা-৫৩

প্রত্যেক সৃষ্টিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে

আল্লাহ বলেনঃ

‘আমরা প্রত্যেক জিনিসকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। সূরা আয যারিয়াত-৪৯

এই আয়াত সকল কিছুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টির কথা বলেছে। মানুষ ছাড়াও প্রাণী,গাছ-পালা,ফল-ফলাদিতেও এই জোড়া লক্ষ্যনীয়। বিদ্যুতের মধ্যেও পজিটিভ ও নেগেটিভ অণু আছে যার মধ্যে ইলেকট্রন ও প্রোটন রয়েছে। আরো অনেক কিছুতেও অনুরুপ রয়েছে।

পবিত্র তিনি,যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে,মানুষকে এবং যা তারা জানেনা তার প্রত্যেককে জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন।[সূরা ইয়াসিন-৩৬]

গাণিতিক রহস্য

কোরআনের গানিতিক রহস্য আজো মানুষের মনে বিস্ময় জাগায়। অথচ নাস্তিকেরা যুক্তি দেখান যে, যে কোন বইয়েই এ ধরনের গানিতিক রহস্য পাওয়া যেতে পারে। এতে নাকি অবাক হওয়ার কিছু নেই।

কু’রআনে ‘একটি দিন’ (ইয়াওম) ঠিক ৩৬৫ বার আছে। এক বছর = ৩৬৫ দিন।

চাঁদ (কা’মার) আছে ২৭ বার। চাঁদ ২৭ দিনে একটি চক্র সম্পন্ন করে।

‘একটি মাস’ (সেহর) আছে ১২ বার। ১২ মাসে এক বছর।

‘ভুমি’ (আল-বের) ১২ বার এবং ‘সমুদ্র’ (আল-বাহর) ৩২ বার। ১২/৩২ = ০.৩৭৫। পৃথিবীতে ভুমির মোট আয়তন ১৩৫ মিলিয়ন বর্গ কিমি, সমুদ্র ৩৬০ মিলিয়ন বর্গ কিমি। ১৩৫/৩৬০ = ০.৩৭৫।

দুনিয়া ১১৫ বার এবং আখিরাত ঠিক ১১৫ বার আছে।

পুরুষ আছে ২৪ বার, নারী ২৪ বার।

শয়তান এবং ফেরেস্তা ঠিক ৮৮ বার করে আছে।

জান্নাত আছে ১০০০ বার, জাহান্নাম ১০০০ বার।

বল (কু’ল) এবং ‘তারা বলে’ (কা’লু) ঠিক ৩৩২ বার করে আছে।

জীবন আছে ১৪৫ বার, মৃত্যু আছে ১৪৫ বার।

 এরকম অনেক গুলো সমার্থক এবং বিপরীতার্থক শব্দ কু’রআনে ঠিক একই সংখ্যক বার আছে।

দুনিয়ার কোন গ্রন্থে এমনটা আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি, যা কোরআন বিশ্লেষনে দেখা গেছে।

নিশ্চয়ই আকাশগুলো এবং পৃথিবীর সৃষ্টি এবং দিন-রাতের আবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। (৩:১৯০)

বিষয়: বিবিধ

৪২৭৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

328224
০১ জুলাই ২০১৫ রাত ১০:২০
328234
০১ জুলাই ২০১৫ রাত ১১:৩০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আল কুরআন শুধু মানুষকে হিদায়াত দেওয়ার জন্য তার বিপুল সৃষ্টিকে অনুসন্ধান করতে বলে। অথচ ইসলাম বিরোধিরা বিজ্ঞান দিয়ে আল্লাহর অনস্তিত্ব প্রমান করতে চায়। অথচ বিজ্ঞান এর প্রধান সিমাবদ্ধতাই হচ্ছে এটা দৃষ্টিসীমার অগোচরে কিছু নিয়ে ভাবতে পারেনা।
আরেকটা বিষয় গ্রহ নক্ষত্র এর গতি প্রকৃতি সহ বিভিন্ন বিষয়ে মুসলিম বিজ্ঞনিরা ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অনেক গবেষনা করেছেন।
০২ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:১৬
270638
আনোয়ার আলী লিখেছেন : সাথে থাকার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File