নাস্তিক ও নাস্তিক্যবাদ
লিখেছেন লিখেছেন আনোয়ার আলী ০৩ জুন, ২০১৫, ১১:৩৯:২০ সকাল
নাস্তিক্যবাদ কি নতুন কিছু ?
বিভিন্ন রূপে এবং আঙ্গিকে পৃথিবীতে নাস্তিক্যবাদ অতীতে যেমন ছিল, এখনো ঠিক তেমনইভাবে বিরাজিত। নাস্তিক্যবাদীরা এখনো যেসব প্রশ্ন করেন, অতীতেও সেই আঙ্গিকের প্রশ্নই ছিল। যুগে যুগে বহু নবী রসুল তাদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। এমন নয় যে, বর্তমানকালে বিজ্ঞানের প্রসারে নাস্তিক্যবাদ বাড়ছে, বরং নাস্তিক্যবাদ বর্তমানকালের চেয়ে অতীতে আরো বেশী আকারে বিরাজিত ছিল। অতীত এবং বর্তমান সকল যুগের নাস্তিকের প্রশ্নের ধরনও একই রকমের। বর্তমান কালে কেবল যুক্ত হয়েছে বিজ্ঞানের নামে বিবর্তনবাদ, যদিও বিবর্তনবাদ আসলে কোন বিজ্ঞান নয়, বরং একটা ধারনা এবং ইজম মাত্র।
পৃথিবীজুড়ে নাস্তিক বাড়ছে-
পিউ ফোরাম অন রিলিজিয়ন অ্যান্ড পাবলিক লাইফের দ্য গ্লোবাল রিলিজিয়াস ল্যান্ডস্ক্যাপ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৬৯০ কোটি বা ৮৪ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধর্মের অনুসারী। মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশের কোনো ধর্ম নেই; এরা নাস্তিক অথবা অজ্ঞেয়বাদি। আধ্যাত্মিক বিশ্বাস থাকলেও কোনো প্রতিষ্ঠিত ধর্মের সঙ্গে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই, তারাও ‘ধর্মহীনদের’ দলে পড়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ধর্মহীনদের মধ্যে অনেকেরই আবার ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক বিশ্বাস আছে। সৃষ্টিকর্তা বা অসীম ক্ষমতাধরের ওপর বিশ্বাস আছে ৭ শতাংশ ধর্মহীন চীনা, ৩০ শতাংশ ধর্মহীন ফরাসি ও ৬৮ শতাংশ ধর্মহীন মার্কিন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের।’
চীনের শতকরা প্রায় পঞ্চাশ ভাগ মানুষ কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নন। যেখানে গোটা বিশ্বের সর্বত্র গড়ে ১৬ ভাগ মানুষ নাস্তিক, সেখানে চীনে তাদের সংখ্যা শতকরা ৪৭ ভাগের উপর। জাপান, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাস্তিক। খৃষ্টান এবং মুসলমানদের পরেই তৃতীয় অবস্থানে থাকা ‘ধর্মহীন’ মানুষদের সংখ্যা বিশ্বে ১১০ কোটি। এদের ৬২ শতাংশই থাকে চীনে। আর জাপানের মোট জনগোষ্ঠীর ৫৭ শতাংশই কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। মুসলিম দেশগুলোতেও বাড়ছে নাস্তিকদের সংখ্যা। এমনকি কট্টর রক্ষণশীল মুসলিম দেশ সৌদি আরবেও নাস্তিকের সংখ্যা সে দেশের জনসংখ্যার ৫%। সৌদি আরবে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আমাদের বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। এখন আর হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ বা দাউদ হায়দাররা একা নন, সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে।
নাস্তিকদের প্রতিবন্ধকতা এবং তাদের সংগঠন:
নাস্তিকেরা খুব ভাল নেই। তারা খুব নির্বিঘেœ তাদের মতামত প্রকাশে পৃথিবীর অনেক দেশেই বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন। এমনকি পশ্চিমা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশেও তারা দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হয়ে আছেন। অনেক দেশে ব্ল্যাসফেমী আইনে তাদেরকে কারাগারেও নিক্ষেপ করা হয়। ঐসব দেশে নির্বাচন এলে প্রায় সব নেতাই পাদ্রি সাজতে চান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নয় যেন ধর্মীয় নেতা নির্বাচনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ধর্মীয় কারনের বাইরে রাজনৈতিক কারনেও নাস্তিকের নানা লাঞ্চনা ও বৈসৌম্যের শিকার হচ্ছেন। আমাদের দেশেও ধর্মীয় উগ্রবাদীরা বেশ কজন নাস্তিককে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। যদিও মুসলমানদের ধর্ম ইসলাম এধরনের হত্যাকান্ডকে সমর্থন করে না। জাতিসংঘের ১৯২টি দেশের মধ্যে ১৩টি দেশে ধর্মের বিরোধিতাকারী বা নাস্তিকদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়ে থাকে এবং সেগুলোর অধিকাংশই মুসলিম দেশ। দেশগুলো হলো, আফগানিস্তান, ইরান, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মৌরতানিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্থান, কাতার সৌদি আরব, সোমালিয়া, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়ামেন। এসব দেশে নাস্তিকেরা মুসলিম ঘরের সন্তান হয়ে থাকলে এবং মুসলিম নাম হলে বেশ বেকায়দায় পড়বে-এতে সন্দেহ নেই।
ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায় যারা, তারা মুর্তাদ। এদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া ইসলাম সমর্থন করে। কিন্তু যারা কখনো ইসলাম ধর্মের ভিতরে ছিলেনই না, তারা মুর্তাদ নন, বরং কাফির তথা অবিশ্বাসী। আমাদের দেশের মুসলিম নামের নাস্তিকেরা আসলে কেউই মুর্তাদ নন, তারা কখনো ইসলামে ছিলেন না। তারা শুরু থেকেই অবিশ্বাসী। কেউ কাফির হওয়ার কারনে শাস্তি পান না ইসলামী রাষ্ট্রে।
বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে নাস্তিকেরা তাদের খারাপ অবস্থা কাটিয়ে উঠছে। নাস্তিকদের সংগঠন বলে খ্যাত ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট এন্ড এথিক্যাল ইউনিয়নের (আইএইচইইউ) সংগঠনটি বিশ্বব্যাপী নাস্তিক, সংশয়বাদী ও ধর্মীয় বিষয়ে সন্দেহবাদীদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। তারা মানবাধিকারের নামে নাস্তিকদের স্বার্থ রক্ষা করে বিশ্বব্যাপী। পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে জাতিসংঘ পর্যন্ত কাজ করে এরা। বিশ্বের সকল নাস্তিক এখন এক সুত্রে গাথা। যুক্তরাষ্ট্রের মত রাষ্ট্রে তারা এথিয়েষ্ট টিভি নামে নাস্তিক টিভি পরিচালনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের অহিও শহরে নাস্তিকদের সভা-সমাবেশও হয়। আমাদের দেশের নাস্তিকেরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে থাকেন এই বলে যে, পীস টিভি বা ইসলামী টিভির মত আমাদেরকেও নাস্তিক টিভি চালাবার সুযোগ দিয়ে দেখুন, বাংলাদেশে কজন লোক আস্তিক থাকে!’ এখনই তারা নাস্তিক নামে চালাতে না পারলেও তাদের টিভির ভাষ্য হাজার গুনে বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন চ্যানেলে চলতে খুব একটা দেরী আছে বলে মনে হয় না।
নাস্তিকদের সম্পর্কে আল-কোরআন:
যেমন আল-কোরআনে বলা হয়েছে,
আপনি কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের উৎপীড়ন উপেক্ষা করুন ও আল্লাহর উপর ভরসা করুন। আল্লাহ কার্যনিবার্হীরূপে যথেষ্ট। (৩৩:৪৮)
আর কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহ তাআলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রুপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন। (৪:১৪০)
আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক। (৭:১৯৯)
বিষয়: বিবিধ
১৭৮০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যখন আল্লাহ তাআলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রুপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন। (৪:১৪০)
সুতরাং নাস্তিকদের এড়িয়ে চলায় বেটার।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপস্থাপন করার জন্য ধন্যাবাদ, আনোয়ার ভাই।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
তবে কিছু কিছু অতি চালাক মুসলিম আস্তিক তাদের আল্লার অতি পছন্দের ব্লাসফেমি বিষয়টিকে'ট্রিজন','রাস্ট্রদ্রোহিতা' 'গাদ্দারি' এসব ধানাইপানাই বলে পাশ কাটাতে চায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন