কোরআন মানুষের মুক্তচিন্তায় বাধা দেয়?

লিখেছেন লিখেছেন আনোয়ার আলী ০৩ জুন, ২০১৫, ১২:৩১:১৫ রাত



নাস্তিকেরা প্রায়শই যুক্তি দেন, ধর্ম বিশ্বাসীরা কোনভাবেই মুক্তমনা হতে পারে না। কেননা তারা ধর্মকেই অকাট্য মেনে বসে আছে। তাদের মাথায় আর কিছু ঢুকবে না। এসব কথায় যুক্তি আছে-কোন সন্দেহ নেই। পৃথিবীর অন্যান্য ধর্ম বিশ্বাসীদের সম্পর্কে জানি না, তবে ইসলামের ক্ষেত্রে একথাটা পুরোপুরি প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ মানুষকে জিজ্ঞাসা প্রবন হিসাবেই সৃষ্টি করেছেন। কোরআনে এই মহাবিশ্ব ও সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে এবং ভাবতে মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহর কুদরত সম্পর্কে চিন্তা করতে বলা হয়েছে। যারা জ্ঞান অর্জন করে আর যারা করে না তারা কি সমান? কোরআনে বলা হয়েছে, ‘--- যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? জ্ঞানবান লোকেরাই উপদেশ গ্রহন করতে পারে। [সুরা আঝ-ঝুমার, আয়াত: ৯] সুরা কামার-এ বলা হয়েছে, আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব কোন চিন্তাশীল আছে কি? [৫৪: ১৭] ‘এরা কি পৃথিবীতে ঘুরে ফিরে পর্যবেক্ষণ করেনি? [সুরা হজ্জ: আয়াত:৪৬]

আল্লাহ আসমান-জমিন, রাত-দিন এবং সকল সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা গবেষনা করতে বলে। সুরা আল বাকারার ১৬৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, নিঃসন্দেহে আসমান সমুহ ও যমীনের সৃষ্টির মাঝে, রাত দিনের এই আবর্তনের মাঝে, সাগরে ভাসমান জাহাজ সমুহে-যা মানুষের জন্যে কল্যাণকর দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, (এর সব কয়টিতে) আল্লাহতালার নিদর্শন মজুদ রয়েছে, (আরো রয়েছে) আল্লাহতালা আকাশ থেকে যা কিছু নাযিল করেন পানির মাঝে, ভূমির নির্জীব হওয়ার পর তিনি এ পানি দ্বারা তাতে নতুন জীবন দান করেন, অতপর এই ভূখন্ডে সব ধরনের প্রাণীর তিনি আবির্ভাব ঘটান, অবশ্যই বাতাসের প্রবাহ সৃষ্টি করার মাঝে এবং সে মেঘমালা -যা আসমান যমীনের বশীভূত করে রাখা হয়েছে, তার মাঝে সুস্থ বিবেকবান সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। [২: ১৬৪]

আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে বিবেকবান জ্ঞানীরা গবেষনা করবে। এই গবেষনাকে ইসলাম সব সময়ই অনুপ্রাণিত করেছে।

ইসলাম মুক্তচিন্তা, যুুক্তিবাদ, সত্যানুসন্ধান ও গবেষনার পক্ষে। ইসলাম আন্দাজে বা বদ্ধ ধারনায় বা অনুমানে নির্ভর করতে বলে না। বরং এগুলোকে নিন্দা করা হয়েছে। ‘অথচ এ ব্যাপারে তাদের কোনো জ্ঞানই নেই; তারা তো কেবল আন্দাজ অনুমানের উপর চলে। সত্যের মোকাবেলায় আন্দাজ অনুমান তো কোন কাজেই আসে না। [সুরা আন নাজম: আয়াত ২৮]

প্রশ্ন করেই জানতে হয়, জানার শেষ নেই। কেয়ামত পর্যন্ত চলবে এই জানার প্রক্রিয়া। ইসলাম কখনোই জানার পথকে রুদ্ধ করেনি। ইসলাম তার অভ্যূদয়ের প্রারম্ভ থেকেই চিন্তা ও গবেষনাকে অনুপ্রাণিত করে এসেছে। তবে এই ক্ষুদ্র গ্রহের মানুষ আসলেই সবকিছু জানতে পারবে না। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘---তার জানা বিষয় সমুহের কোনো কিছুই (তার সৃষ্টির) কারো জ্ঞানের সীমা পরিসীমার আয়ত্ত্বাধীন হতে পারে না। তবে কিছু জ্ঞান যদি তিনি কাউকে দান করেন (তবে তা ভিন্ন কথা)। [সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫] মানুষ এই মহাবিশ্বের সব কিছু জানতে পারবে না। সৃষ্টির সমস্ত রহস্য ভেদ হবে কেয়ামতের দিবসে। [সুরা আল যিলযাল, আয়াত: ৪]

আজকের এই বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীরাও বলছেন যে তারা আসলে অনেক কিছুই জানতে পারছেন না। জানার পরিমাণ মহাসাগরে মধ্যে এক বালতি পানির সমান মাত্র। তবে জানার জন্যে বিজ্ঞান কাজ করে চলেছে নিরলসভাবে। কোরআনে ৭৫০টির মত বৈজ্ঞানিক আয়াত রয়েছে, আজ পর্যন্ত তার কোনটিই মিথ্যা প্রমাণিত হয়নি।

কোরআন তথা ইসলাম মানুষের স্বাধীন চিন্তায় বাধা প্রদান করে না। মানুষকে প্রশ্ন করতেও নিরুৎসাহিত করে না। তবে সেটা একেবারে অবাধ নয়। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস থেকে সরে গেলে সে আর মুসলমান থাকে না। মুক্ত চিন্তার অর্থ এই নয় যে, ‘যেহেতু আমি আল্লাহকে দেখিনি তাই আল্লাহকে মানি না। পরকালকে দেখিনি, পরকাল মানি না।’ এরকম লাগামহীন মুক্তচিন্তার স্থান ইসলামে নেই। ইসলাম জ্ঞানকে উৎসাহিত করেছে তবে তা ইসলামের মুলনীতিকে ধসিয়ে দিয়ে নয়। রাস্তায় যেমন গাড়ী চালাবার স্বাধীনতা আপনার আছে ঠিকই, তবে ট্রাফিক আইন মান্য করেই। স্বাধীনতার নামে লাগামহীন চালানো নয়।

ইসলাম মানুষকে সত্য ও সুন্দর পথে আসার নসিহত করে, হিকমত তথা বুদ্ধিমত্তার সাথে বিতর্ক করতে বলে। [সুরা নাহল, আয়াত: ১২৫] কোরআনকে কেউ বিশ্বাস করবে কেউ করবে না [৩১: ৪০] আল্লাহ যদি চাইতেন তাহলে জেনেটিক কোড-এ একটু পরিবর্তন করে দিলেই পৃথিবীর সকল মানুষ বিশ্বাসী হয়ে যেতো। কিন্তু তিনি তা করেননি। [সুরা ইউনুস, আয়াত: ৯৯] ধর্মের ক্ষেত্রেও তিনি জবরদস্তি করতে নিষেধ করেছেন। [সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৬] ইসলাম-এ বিশ্বাসীরাই মুসলমান। এ বিশ্বাসকে ধারন করেই মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা ইসলামে আছে।

ইজমা এবং কিয়াস ইসলামের অন্যতম ভিত্তি। ইজমা এবং কিয়াস মুলতঃ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইসলামী ব্যাখ্যা। এর দ্বারা ইসলামে মুক্ত চিন্তার রূপরেখাটি আমরা বুঝতে পারি। তবে এখানেও শর্ত একটা, তাহলো কোরআনের মুলনীতির বাইরে যাওয়া চলবে না।

বিষয়: বিবিধ

১১১২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

324253
০৩ জুন ২০১৫ রাত ০১:০৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
মুক্ত চিন্তার অর্থ এই নয় যে প্রতিষ্ঠিত সত্য কে অস্বিকার করে নতুন কিছু উপস্থাপন করা। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মুক্তচিন্তার কোন অস্তিত্ব নাই। যেমন নাই গনিত এর ক্ষেত্রে। আসলে মুক্ত চিন্তার নামে শুধু নাস্তিকতাই ছড়ান হয়।
০৩ জুন ২০১৫ রাত ০১:৩১
265914
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : আপনি বলেছেন : “ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মুক্তচিন্তার কোন অস্তিত্ব নাই। যেমন নাই গনিত এর ক্ষেত্রে । “

আপনার কাছে এব্যাপারে দলীল ও প্রমাণ আশা করছি ।

324260
০৩ জুন ২০১৫ রাত ০২:০৮
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : নাস্তিকতা হলো একটি কুচিন্তা যারা সুস্থ চিন্তা করতে অক্ষয় তারাই কেবল নাস্তিকতা করে.....।
324287
০৩ জুন ২০১৫ সকাল ০৬:২২
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : আলহামদুল্লিলাহ। ভাল লাগলো। তবে নাস্তিকদের হাজার যুক্তি দিয়েও বোঝাতে পারবেন না।
324291
০৩ জুন ২০১৫ সকাল ০৬:৩৮
শেখের পোলা লিখেছেন : আলোচণা ভাল লাগলো৷ ধন্যবাদ৷
324303
০৩ জুন ২০১৫ সকাল ০৭:৫৪

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7228

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : দুইকান্দের ফেরেস্তা, জিবরাইল, জিন, ভুত, শয়তান, আল্লা, গাধার পিঠে মেরাজ গমন এসব কাল্পনিক বস্তুর বিরুদ্ধে মুক্ত চিন্তার অধিকার কোরান নামক পুস্তকে আছে কি?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File