সম্মানীত সাহাবীরা কেন ইমাম হুসাইনকে কুফা যা্ওয়া রুখতে চেয়েছিলেন? ইয়াজিদ কারবালার হত্যাকান্ডের সাথে কতটুকু জড়িত ছিল?

লিখেছেন লিখেছেন আনোয়ার আলী ০২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:৩০:২৪ রাত

সম্মানীত সাহাবীরা কেন ইমাম হুসাইনকে কুফা যা্ওয়া রুখতে চেয়েছিলেন ?

ইমাম হুসাইন যখন কুফাবাসীর পত্র পেয়ে কুফায় যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন অনেক সম্মানীত সাহাবী তাকে যেতে নিষেধ করেছিলেন। তারা কুফাবাসীর বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন বলেই হুসাইনকে যেতে নিষেধ করেছিলেন। কোনভাবেই ইয়াজিদকে সমর্থণ করে নয়। কিন্তু তাদের এই নিষেধের বিষয়ে ইয়াজিদের সমর্থকেরা/রাজতন্ত্রপন্থীরা এটাকে ইয়াজিদের পক্ষে নানাভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে।

ইয়াজিদ কারবালার হত্যাকান্ডের সাথে কতটুকু জড়িত ছিল?

মাত্র ৩৭ বৎসর বয়সে ইয়াজিদের মৃত্যু ঘটে। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ার ৮ম খন্ডে তার একটা উক্তি দেখা যায়। তাহলো-মৃত্যু কালে সে প্রার্থনা করছে এই বলে যে, ‘‘হে আল্লাহ তুমি আমায় পাকড়াও করো না এই জন্যে যে যা আমি চাইনি এবং প্রতিরোধও করিনি। তুমি আমার ও ওবায়দুল্রাহ বিন জিয়াদের মধ্যে ফয়ছালা করো।’’ তার এই প্রার্থনায় সে নিজেই স্বীকার করেছে সে ঐ ঘটনার প্রতিরোধ করেনি। অথচ ইচ্ছা করলেই প্রতিরোধ করতে পারতো। এই হত্যাকান্ডে সে নিজের চাইতেও ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদকে বেশী দায়ী করেছে।

কিন্তু সত্য তো এটাই যে, এই হত্যাকান্ড তার অমতে হয়নি। হত্যাকারীকে সে কোন সাজাও দেয়নি। প্রতিরোধও করেনি। ঘটনা ঘটতে দিয়েছে এবং পৃথিবীর নৃশংসতম হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েও হত্যাকারীর পক্ষাবলম্বন করেছে। কোন শাস্তি দেয়নি। রাস্ট্রপ্রধান হিসাবে এ হত্যাকান্ডের দায় তারই। এক্ষেত্রে তাকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার মত কোন কিছুই ইতিহাস ঘেটে পাওয়া যায় না।

ইয়াজিদকে সমর্থনকারীদের সাথে মুসলমানের সম্পর্ক:

যারা নবীর দৌহিত্রের হত্যাকারী জালিম ইয়াজিদকে সমর্থণ করে, তাদের সাথে মুসলমানের একটাই সম্পর্ক, আর তা হলো তারা ইসলামের দুশমন। নবী পরিবারের দুশমন। মুসলমানরা একই সময় আলী ও তাঁর হত্যাকারীর অনুসারী এবং হুসাইন ও তাঁর হত্যাকারীর অনুসারী হতে পারে না; মুসলমানরা হয় আলীর সাথে নতুবা তার হত্যাকারীর সাথে অথবা হুসাইনের সাথে বা ইয়াযিদের সাথে। অনেকেই বলেন ইয়াজিদ তার আমল নিয়ে চলে গেছে তাকে খারাপ বলে কি লাভ? ফেরাউন, আবু লাহাব, আবু জেহেলও তো তাদের আমল নিয়ে চলে গেছে। ইসলামকে এবং নবীকে ভালবাসলে ঐসব দুরাচারী শয়তানদের ঘৃণা করতেই হবে। ভালকে যেমন ভাল বলতে হবে ঠিক তেমনি খারাপকে খারাপ বলাও ঈমানের দাবী।

পবিত্র সহি বুখারী হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি, তিনি হাসান বিন আলীকে কাঁধে নিয়ে বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমি একে ভালবাসি। সুতরাং তুমিও তাঁকে ভালবাসো এবং যে তাঁকে ভালবাসে তুমি তাকেও ভালবাসো।

বুখারী শরীফের আরেকটি হাদীসে বলা হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, এরা দুজন (হাসান ও হুসাইন) আমার দুনিয়ার দুটি ফুল।

তিরমিজী শরীফের আরেকটি হাদীসে বলা হয়েছে,

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

হাসান ও হুসাইন জান্নাতবাসী যুবকদের সরদার হবেন।

নবীজীর এই কলিজার টুকরাকে হত্যাকারী ইয়াজিদকে কোন মুসলমান সমর্থণ করতে পারেন না। ইয়াজিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অটুট রাখতে ইয়াজিদের নিদের্শে তার পাপিষ্ঠ সেনারা ইমাম হুসাইনকে হত্যা করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মোহ এমন জিনিস, ইয়াজিদ মুয়াবিয়ার (রাঃ) মত সাহাবার সন্তান হওয়া সত্বেও নবীজীর কলিজার টুকরা দৌহিত্রকে হত্যা করতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি। আর দরবারী আলেমদের কথা তো বলাই বাহুল্য। তারা যুগে যুগে তাদের রচিত তথাকথিত সঠিক ইতিহাস মানুষকে শেখাবার ও হজম করাবার নানা চেষ্টা করেছেন। ইমাম হুসাইনের গুনগান গেয়ে কৌশলে ইয়াজিদের পক্ষে বহু বইপুস্তক লিখেছেন। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে মুসলমানেরা বিভ্রান্ত হননি। যুগে যুগে তাদের শত সহস্র প্রচেষ্টা সত্বেও নবীর দৌহিত্রের হত্যাকারীকে কেউ মেনে নেননি।

হুসাইন (রাঃ)-কে কেন ইমাম বলা হয়?

পুরো মুসলিম বিশ্ব এক কথায় তাকে ইমাম বা নেতা মেনে নিয়েছেন। ইয়াজিদ জনতার উপর চেপে বসেছিল। ইয়াজিদ মুসলিম বিশ্বের নির্বাচিত নেতা ছিল না। সেই সময় থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা ইয়াজিদকে ইমাম বা নেতা হিসাবে মেনে নেয়নি নেবেও না। হুসাইনকে ইমাম বলার অর্থ ইয়াজিদকে স্বীকার না করা। ইমাম বা নেতা হুসাইনই। সেকারনে তখন থেকেই যুগে যুগে হুসাইন-এর নাম নেয়ার আগে 'ইমাম' বলা হয়। ইমাম হাসানকেও বিষ প্রয়োগে অত্যন্ত কৌশলে হত্যা করা হয়েছিল। তিনিও মুসলিম জাতির ইমাম। ইয়াজিদের বংশধরদের যতই গা জ্বলুক, কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা হাসান এবং হুসাইনকে ‘ইমাম’ হিসাবেই ঘোষনা দেবেন। আর অন্যদিকে নৃশংসতার প্রতীক ইয়াজিদের নামে আজ পর্যন্ত কোন মুসলমান সন্তানের নাম রাখা হয়নি, কেয়ামত পর্যন্ত হবেও না। যদিও মুসলিম নামধারী শীর্ষ দেশগুলোতে এজিদী শাসন এখনো বলবৎ রয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

১১৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File